মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

৩১- সাহাবায়ে কিরামের রাঃ মানাকিব ও ফাযায়েল

হাদীস নং: ৬০৭৭
দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - উসমান (রাঃ)-এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬০৭৭। হযরত আয়েশা (রাঃ) হইতে বর্ণিত, একদা নবী (ﷺ) হযরত ওসমান (রাঃ)-কে লক্ষ্য করিয়া বলিলেনঃ হে ওসমান! হয়তো আল্লাহ্ তা'আলা তোমাকে একটি জামা পরিধান করাইবেন। পরে লোকেরা যদি তোমার জামাটি খুলিয়া ফেলিতে চায়, তখন তুমি তাহাদের ইচ্ছানুযায়ী সেই জামাটি খুলিয়া ফেলিবে না। —তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ্ এবং তিরমিযী বলিয়াছেন, অত্র হাদীসটির প্রসঙ্গে একটি দীর্ঘ ঘটনা আছে।
وَعَنْ عَائِشَةَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «يَا عُثْمَانُ إِنَّهُ لَعَلَّ اللَّهَ يُقَمِّصُكَ قَمِيصًا فَإِنْ أَرَادُوكَ عَلَى خَلْعِهِ فَلَا تَخْلَعْهُ لَهُمْ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ فِي الحَدِيث قصَّة طَوِيلَة

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এখানে “জামা” দ্বারা উদ্দেশ্য করা হইয়াছে খেলাফত। আর “দীর্ঘ ঘটনা” দ্বারা সম্ভবত এই ঘটনার প্রতি ইংগিত করা হইয়াছে যে, এক সময় হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর পুত্র মুহাম্মদ খলীফা ওসমানের নিকট একটি চাকরীর জন্য আবেদন করিলে খলীফা তাহাকে মিসরের শাসক পদে নিযুক্ত করিয়া নিজ হাতে নিযুক্তিপত্র লিখিয়া দেন এবং তথাকার সাবেক শাসককে অপসারণ করেন। মুহাম্মদ যথাসময়ে কতিপয় সঙ্গীসহ রওয়ানা হইয়া যান। উক্ত কাফেলা পথে এক স্থানে বিশ্রামের জন্য অবতরণ করিলে তাহারা হঠাৎ দেখিতে পাইল, তাহাদের নিকট দিয়া একজন অশ্বারোহী অতি দ্রুত গতিতে মিসর অভিমুখে যাইতেছে। এই অশ্বারোহী কে? কেনই বা আমাদেরকে ডিংগাইয়া মিসরাভিমুখে দ্রুত যাইতেছে ? মুহাম্মদের মনে সন্দেহ জাগিল। সুতরাং তিনি লোক পাঠাইয়া উক্ত অশ্বারোহীর গতিপথে বাধা দিলেন। তল্লাশির পর তাহার কাছে খলীফা ওসমানের সীল-মোহরযুক্ত মিসরের শাসকের নামে লিখা একখানা পত্র পাওয়া গেল। উহাতে লিখা আছে—“মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর মিসর পৌঁছামাত্রই তাহাকে কতল করিয়া ফেলিবে।” সুতরাং এই চাঞ্চল্যকর ঘটনায় উক্ত কাফেলা পুনরায় মদীনায় ফিরিয়া আসিল । খলীফাকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করিলে তিনি এই পত্র সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলিয়া উল্লেখ করিলেন। মারওয়ান ছিল খলীফার ব্যক্তিগত সচিব, রাষ্ট্রীয় সীল মোহর তাহারই তত্ত্বাবধানে থাকিত। এই অমানবিক কুকর্মটি করিয়াছিল মারওয়ান। সত্য ঘটনাটি পরে প্রকাশ হইয়া পড়িলে বিদ্রোহীদল হযরত ওসমানকে গৃহবন্দী অবস্থায় অবরোধ করিয়া রাখিল এবং খেলাফত হইতে ইস্তেফা দেওয়ার জন্য জোর চাপ সৃষ্টি করিল। আলোচ্য হাদীসে এই ঘটনার প্রতি ইংগিত করা হইয়াছে। অবশেষে হযরত ওসমান বিদ্রোহীদের হাতেই শহীদ হন। ইন্না লিল্লাহি...........।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
মিশকাতুল মাসাবীহ - হাদীস নং ৬০৭৭ | মুসলিম বাংলা