মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

৩১- সাহাবায়ে কিরামের রাঃ মানাকিব ও ফাযায়েল

হাদীস নং: ৬০৫০
তৃতীয় অনুচ্ছেদ - উমার ফারূক (রাঃ)-এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬০৫০। হযরত আনাস এবং ইবনে ওমর (রাঃ) হইতে বর্ণিত, হযরত ওমর (রাঃ) বলিয়াছেন, তিনটি বিষয়ে আমার সিদ্ধান্ত আমার রবের সিদ্ধান্তের অনুরূপ হইয়াছে। (এক) আমি বলিয়াছিলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! হযরত ইবরাহীমের দাঁড়ানোর স্থানটিকে আমরা যদি নামাযের জন্য নির্ধারণ করিয়া লইতাম। তখন নাযিল হইল— وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى (অর্থঃ নামায পড়ার জন্য ইবরাহীমের দাঁড়ানোর স্থানটিকে তোমরা নামাযের জন্য নির্ধারণ করিয়া লও)। (দুই) আমি বলিয়াছিলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার বিবিদের ঘরে নেককার ও বদকার হরেক রকমের লোক আসে। তাই আপনি যদি তাঁহাদেরকে পর্দা করিবার আদেশ করিতেন। ইহার পর পরই পর্দার আয়াত নাযিল হইল । (তিন) একবার নবী (ﷺ)-এর বিবিগণ (আয়েশা ও হাফসা) আত্মাভিমানবশত এক জোট হইয়াছিলেন। [ওমর (রাঃ) বলেন,] তখন আমি বলিলাম, (তোমরা নিজ আচরণ ত্যাগ কর, অন্যথায়) যদি নবী (ﷺ) তোমাদিগকে তালাক দিয়া দেন, তবে অচিরেই তাঁহার রব তোমাদের পরিবর্তে তোমাদের চাইতেও উত্তম স্ত্রী তাঁহাকে প্রদান করিতে পারেন। ইহার পর পরই অনুরূপ আয়াত নাযিল হইল।
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ
عَن أنس وَابْن عمر أَن عمر قَالَ: وَافَقْتُ رَبِّي فِي ثَلَاثٍ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ لَوِ اتَّخَذْنَا مِنْ مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى؟ فَنَزَلَتْ [وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى] . وَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ يَدْخُلُ عَلَى نِسَائِكَ الْبَرُّ وَالْفَاجِرُ فَلَوْ أَمَرْتَهُنَّ يَحْتَجِبْنَ؟ فَنَزَلَتْ آيَةُ الْحِجَابِ وَاجْتَمَعَ نِسَاءُ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْغَيْرَةِ فَقُلْتُ [عَسَى رَبُّهُ إِنْ طلَّقكنَّ أَن يُبدلهُ أَزْوَاجًا خيرا منكنَّ] فَنزلت كَذَلِك

হাদীসের ব্যাখ্যা:

বিবিদের আত্মাভিমান—এই প্রসঙ্গে ঘটনা হইল, নবী (ﷺ) মধু খাওয়া খুব পছন্দ করিতেন। একদা বিবি যয়নবের কাছে কোথাও হইতে কিছু মধু আসিয়াছিল, যখন নবী (ﷺ) বিবিগণের কক্ষে যাওয়ার পালাক্রমে বিবি যয়নবের ঘরে যাইতেন, তখন হযরত যয়নব (রাঃ) নবী (ﷺ)-কে সেই মধু পান করাইতেন। ইহাতে তাঁহার ঘরে স্বাভাবিক নিয়মের বেশী সময় অতিবাহিত হইত। হযরত আয়েশা ও হাফসা তাঁহার এই গৌণকে কেন্দ্র করিয়া সতীনসুলভ হিংসায় একটি জোট করিলেন যে, নবী (ﷺ) আমাদের (বিবিদের) মধ্যে যাহার কাছেই যাইবেন, সে যেন বলে, 'আপনার মুখ হইতে মাগাফীবের গন্ধ আসিতেছে।' “মাগাফীর” এক জাতীয় দুর্গন্ধময় ফুলদার ঘাস। সুতরাং বিবিগণ পূর্বের পরিকল্পনা মোতাবেক তাহাই করিলেন। ফলে নবী (ﷺ) মধু খাওয়া নিজের জন্য হারাম বলিয়া শপথ করিলেন। (সূরা-তাহরীম দ্রষ্টব্য)
বদরের কয়েদী প্রসঙ্গে ঘটনা হইল, বদরের কয়েদীদের কি করা যায়, এই ব্যাপারে নবী (ﷺ) সাহাবায়ে কেরামদের মতামত জানিতে চাহিলেন, হযরত ওমর (রাঃ) তাহাদের সকলকে কতল করিয়া ফেলিবার প্রস্তাব দিলেন। কিন্তু হযরত আবু বকর (রাঃ) ইহার বিপরীত প্রস্তাব দিলেন যে, কয়েদীদের অনেকেই আমাদের স্ব-গোত্রীয় ও আপনজন। সুতরাং তাহাদিগকে হত্যা না করিয়া বরং অর্থের বিনিময়ে মুক্তি দেওয়া হউক, এদিকে আমাদের নতুন রাষ্ট্রের অর্থেরও যথেষ্ট প্রয়োজন রহিয়াছে। নবী (ﷺ)-সহ অধিকাংশ সাহাবী হযরত ছিদ্দীকে আকবরের প্রস্তাবকে সমর্থন করিলেন এবং সেই মোতাবেক সমস্ত কয়েদীকে পণ্যের বিনিময়ে মুক্তি দিলেন, কিন্তু পরবর্তীতে এই প্রসঙ্গে যেই আয়াত নাযিল হইল, তাহাতে দেখা গিয়াছে, হযরত ওমর (রাঃ) যেই প্রস্তাব রাখিয়াছিলেন তাহাই আল্লাহ্ তা'আলার কাছে পছন্দনীয় ছিল।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
মিশকাতুল মাসাবীহ - হাদীস নং ৬০৫০ | মুসলিম বাংলা