মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
৩১- সাহাবায়ে কিরামের রাঃ মানাকিব ও ফাযায়েল
হাদীস নং: ৬০০৩
তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কুরায়শ ও অন্যান্য গোত্রসমূহের গুণাবলি
৬০০৩। হযরত আবু নওফল মুআবিয়া ইবনে মুসলিম (রাঃ) বলেন, মদীনামুখী মক্কার গিরিপথে আমি হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে যুবাইর (রাঃ)-কে (অর্থাৎ, তাঁহার মৃত লাশ) দেখিতে পাই। তিনি বলেন, তাঁহার নিকট দিয়া কোরাইশ ও অন্যান্য বহু লোকই অতিক্রম করিয়া যাইতেছিল, অবশেষে হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর (রাঃ) তাঁহার পার্শ্ব দিয়া যাওয়ার বেলায় দাঁড়াইলেন এবং বলিলেন, “আসসালামু আলাইকা ইয়া আবা খুবাইব, আসসালামু আলাইকা ইয়া আবা খুবাইব, আসসালামু আলাইকা ইয়া আবা খুবাইব!” অতঃপর বলিলেন, জানিয়া রাখ! আল্লাহর কসম! নিশ্চয় আমি তোমাকে ইহা হইতে নিষেধ করিয়াছিলাম, জানিয়া রাখ! আল্লাহর কসম! নিশ্চয় আমি তোমাকে ইহা হইতে নিষেধ করিয়াছিলাম, জানিয়া রাখ! আল্লাহর কসম! নিশ্চয় আমি তোমাকে ইহা হইতে নিষেধ করিয়াছিলাম (অর্থাৎ, খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করা হইতে)। জানিয়া রাখ! আল্লাহর কসম! আমার জানামতে তুমি ছিলে অধিক রোযাদার, খুব বেশী এবাদত ও তাহাজ্জুদ-গোযার এবং আত্মীয়-স্বজনদের প্রতি সদ্ব্যবহারকারী। জানিয়া রাখ! আল্লাহর কসম! যেই দলের আকীদা ও ধারণায় তুমি মন্দ, প্রকৃতপক্ষে সেই দলই মন্দ। অপর এক রেওয়ায়তে আছে — (তিনি উপহাসের সুরে বলিয়াছেন,) হ্যাঁ, তাহারা খুব চমৎকার একটি গোষ্ঠী!
(বর্ণনাকারী বলেন,) ইহার পর হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর (রাঃ) তথা হইতে চলিয়া গেলেন। অতঃপর আব্দুল্লাহ্ (ইবনে ওমর)-এর উক্ত স্থানে দাঁড়ান এবং উল্লিখিত কথাগুলি বলার সংবাদটি হাজ্জাজের কাছে পৌঁছিলে তিনি ইবনে যুবাইরের লাশের কাছে লোক পাঠাইলেন এবং শূলির কাষ্ঠ হইতে লাশটি নামাইয়া ইহুদীদের কবরস্থানে ফেলিয়া দেওয়া হইল। ইহার পর হাজ্জাজ তাহার মাতা আসমা বিনতে আবু বকর (রাঃ)-কে তাহার কাছে ডাকিয়া পাঠাইল ; কিন্তু হযরত আসমা (রাঃ) তাহার নিকট আসিতে অস্বীকার করিলেন। অতঃপর হাজ্জাজ এই কথা বলিয়া পুনরায় লোক পাঠাইল যে, তাহাকে গিয়া বল! হয়তো তুমি স্বেচ্ছায় আমার নিকট আসিবে অথবা আমি তোমার কাছে এমন লোককে পাঠাইব, যে তোমার চুলের বেণী চাপিয়া ধরিয়া তোমাকে হেঁচড়াইয়া টানিয়া লইয়া আসিবে। বর্ণনাকারী বলেন, হযরত আসমা এইবারও আসিতে অস্বীকার করিলেন এবং বলিলেন, আল্লাহর কসম! আমি তোমার কাছে ততক্ষণ পর্যন্ত আসিব না, যে পর্যন্ত না তুমি এমন লোককে আমার কাছে পাঠাইবে, যে আমার চুলের বেণী ধরিয়া আমাকে হেঁচড়াইয়া নিয়া আসিবে। বর্ণনাকারী বলেন, এই কথা শুনিয়া হাজ্জাজ বলিল, তোমরা আমার জুতা দাও। অতঃপর সে তাহার জুতা পরিধান করিল এবং দ্রুত রওয়ানা হইল এবং হযরত আসমার নিকটে আসিয়া বলিল, আল্লাহর দুশমন (আব্দুল্লাহ্ ইবনে যুবাইর)-এর সাথে আমি যেই আচরণ করিয়াছি এই ব্যাপারে তুমি আমাকে কেমন পাইলে? উত্তরে তিনি বলিলেন, “আমি দেখিয়াছি, তুমি তাহার দুনিয়াকে ধ্বংস করিয়াছ, আর সে তোমার আখেরাতকে ধ্বংস করিয়া দিয়াছে।” আমার কাছে এই খবরও পৌঁছিয়াছে, তুমি নাকি তাহাকে (উপহাসস্বরূপ) বলিতেছ, হে দুই নেতাকওয়ালীর সন্তান! আল্লাহর কসম! আমিই সেই দুই নেতাকওয়ালী মহিলা। জানিয়া রাখ, উহার (আমার কোমরে বাঁধিবার দোপাট্টার) একখণ্ড দ্বারা রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ও হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর সফরের খাদ্য বাঁধিয়া তাঁহাদের সওয়ারীর গলায় ঝুলাইয়া দিতাম এবং অপর খণ্ড ঐ কাজে ব্যবহার করিতাম যাহা হইতে কোন নারী অমুখাপেক্ষী থাকিতে পারে না। (অর্থাৎ, গৃহের কাজ-কর্ম করিবার সময় মহিলারা নিজেদের কোমরে যেই কাপড় বা গামছা বাঁধিয়া রাখে, এক খণ্ড দ্বারা আমি তাহাই করিতাম।)
জানিয়া রাখ, একদা রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) আমাদিগকে বর্ণনা করিয়াছেন, সাকীফ গোত্রে এক চরম মিথ্যাবাদী ও এক মহাঅত্যাচারী জন্মগ্রহণ করিবে। সুতরাং সেই চরম মিথ্যুক (মোখতার)-কে আমরা ইতিপূর্বে দেখিয়াছি। আর আমার দৃঢ় বিশ্বাস তুমিই সেই মহা-অত্যাচারী যালিম। বর্ণনাকারী বলেন, হযরত আসমার মুখে উপরোক্ত কথাগুলি শুনিয়া হাজ্জাজ কোন প্রতিউত্তর না করিয়াই চলিয়া গেল। —মুসলিম
(বর্ণনাকারী বলেন,) ইহার পর হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর (রাঃ) তথা হইতে চলিয়া গেলেন। অতঃপর আব্দুল্লাহ্ (ইবনে ওমর)-এর উক্ত স্থানে দাঁড়ান এবং উল্লিখিত কথাগুলি বলার সংবাদটি হাজ্জাজের কাছে পৌঁছিলে তিনি ইবনে যুবাইরের লাশের কাছে লোক পাঠাইলেন এবং শূলির কাষ্ঠ হইতে লাশটি নামাইয়া ইহুদীদের কবরস্থানে ফেলিয়া দেওয়া হইল। ইহার পর হাজ্জাজ তাহার মাতা আসমা বিনতে আবু বকর (রাঃ)-কে তাহার কাছে ডাকিয়া পাঠাইল ; কিন্তু হযরত আসমা (রাঃ) তাহার নিকট আসিতে অস্বীকার করিলেন। অতঃপর হাজ্জাজ এই কথা বলিয়া পুনরায় লোক পাঠাইল যে, তাহাকে গিয়া বল! হয়তো তুমি স্বেচ্ছায় আমার নিকট আসিবে অথবা আমি তোমার কাছে এমন লোককে পাঠাইব, যে তোমার চুলের বেণী চাপিয়া ধরিয়া তোমাকে হেঁচড়াইয়া টানিয়া লইয়া আসিবে। বর্ণনাকারী বলেন, হযরত আসমা এইবারও আসিতে অস্বীকার করিলেন এবং বলিলেন, আল্লাহর কসম! আমি তোমার কাছে ততক্ষণ পর্যন্ত আসিব না, যে পর্যন্ত না তুমি এমন লোককে আমার কাছে পাঠাইবে, যে আমার চুলের বেণী ধরিয়া আমাকে হেঁচড়াইয়া নিয়া আসিবে। বর্ণনাকারী বলেন, এই কথা শুনিয়া হাজ্জাজ বলিল, তোমরা আমার জুতা দাও। অতঃপর সে তাহার জুতা পরিধান করিল এবং দ্রুত রওয়ানা হইল এবং হযরত আসমার নিকটে আসিয়া বলিল, আল্লাহর দুশমন (আব্দুল্লাহ্ ইবনে যুবাইর)-এর সাথে আমি যেই আচরণ করিয়াছি এই ব্যাপারে তুমি আমাকে কেমন পাইলে? উত্তরে তিনি বলিলেন, “আমি দেখিয়াছি, তুমি তাহার দুনিয়াকে ধ্বংস করিয়াছ, আর সে তোমার আখেরাতকে ধ্বংস করিয়া দিয়াছে।” আমার কাছে এই খবরও পৌঁছিয়াছে, তুমি নাকি তাহাকে (উপহাসস্বরূপ) বলিতেছ, হে দুই নেতাকওয়ালীর সন্তান! আল্লাহর কসম! আমিই সেই দুই নেতাকওয়ালী মহিলা। জানিয়া রাখ, উহার (আমার কোমরে বাঁধিবার দোপাট্টার) একখণ্ড দ্বারা রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ও হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর সফরের খাদ্য বাঁধিয়া তাঁহাদের সওয়ারীর গলায় ঝুলাইয়া দিতাম এবং অপর খণ্ড ঐ কাজে ব্যবহার করিতাম যাহা হইতে কোন নারী অমুখাপেক্ষী থাকিতে পারে না। (অর্থাৎ, গৃহের কাজ-কর্ম করিবার সময় মহিলারা নিজেদের কোমরে যেই কাপড় বা গামছা বাঁধিয়া রাখে, এক খণ্ড দ্বারা আমি তাহাই করিতাম।)
জানিয়া রাখ, একদা রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) আমাদিগকে বর্ণনা করিয়াছেন, সাকীফ গোত্রে এক চরম মিথ্যাবাদী ও এক মহাঅত্যাচারী জন্মগ্রহণ করিবে। সুতরাং সেই চরম মিথ্যুক (মোখতার)-কে আমরা ইতিপূর্বে দেখিয়াছি। আর আমার দৃঢ় বিশ্বাস তুমিই সেই মহা-অত্যাচারী যালিম। বর্ণনাকারী বলেন, হযরত আসমার মুখে উপরোক্ত কথাগুলি শুনিয়া হাজ্জাজ কোন প্রতিউত্তর না করিয়াই চলিয়া গেল। —মুসলিম
وَعَنْ أَبِي نَوْفَلٍ مُعَاوِيَةَ بْنِ مُسْلِمٍ قَالَ: رَأَيْتُ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ الزُّبَيْرِ عَلَى عَقَبَةِ الْمَدِينَةِ قَالَ فَجَعَلَتْ قُرَيْشٌ تَمُرُّ عَلَيْهِ وَالنَّاسُ حَتَّى مَرَّ عَلَيْهِ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ فَوقف عَلَيْهِ فَقَالَ: السَّلَامُ عَلَيْكَ أَبَا خُبَيْبٍ السَّلَامُ عَلَيْكَ أَبَا خُبَيْبٍ السَّلَامُ عَلَيْكَ أَبَا خُبَيْبٍ أَمَا وَاللَّهِ لَقَدْ كُنْتُ أَنْهَاكَ عَنْ هَذَا أَمَا وَاللَّهِ لَقَدْ كُنْتُ أَنْهَاكَ عَنْ هَذَا أَمَا وَاللَّهِ لَقَدْ كُنْتُ أَنْهَاكَ عَنْ هَذَا أَمَا وَاللَّهِ إِنْ كُنْتَ مَا عَلِمْتُ صَوَّامًا قَوَّامًا وَصُولًا لِلرَّحِمِ أَمَا وَاللَّهِ لَأُمَّةٌ أَنْتَ شَرُّهَا لَأُمَّةُ سَوْءٍ - وَفِي رِوَايَةٍ لَأُمَّةُ خَيْرٍ - ثُمَّ نَفَذَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ فَبَلَغَ الْحَجَّاجَ مَوْقِفُ عَبْدِ اللَّهِ وَقَوْلُهُ فَأَرْسَلَ إِلَيْهِ فَأُنْزِلَ عَنْ جِذْعِهِ فَأُلْقِيَ فِي قُبُورِ الْيَهُودِ ثُمَّ أَرْسَلَ إِلَى أُمِّهِ أَسْمَاءَ بِنْتِ أَبِي بَكْرٍ فَأَبَتْ أَنْ تَأْتِيَهُ فَأَعَادَ عَلَيْهَا الرَّسُولَ لَتَأْتِيَنِّي أَوْ لَأَبْعَثَنَّ إِلَيْكِ مَنْ يَسْحَبُكِ بِقُرُونِكِ. قَالَ: فَأَبَتْ وَقَالَتْ: وَاللَّهِ لَا آتِيكَ حَتَّى تَبْعَثَ إِلَيَّ من يسحبُني بقروني. قَالَ: فَقَالَ: أَرُونِي سِبْتِيَّ فَأَخَذَ نَعْلَيْهِ ثُمَّ انْطَلَقَ يَتَوَذَّفُ حَتَّى دَخَلَ عَلَيْهَا فَقَالَ: كَيْفَ رَأَيْتِنِي صَنَعْتُ بِعَدُوِّ اللَّهِ؟ قَالَتْ: رَأَيْتُكَ أَفْسَدْتَ عَلَيْهِ دُنْيَاهُ وَأَفْسَدَ عَلَيْكَ آخِرَتَكَ بَلَغَنِي أَنَّكَ تَقُولُ لَهُ: يَا ابْنَ ذَاتِ النِّطَاقَيْنِ أَنَا وَاللَّهِ ذَاتُ النِّطَاقَيْنِ أَمَّا أَحَدُهُمَا فَكُنْتُ أَرْفَعُ بِهِ طَعَامَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَطَعَامَ أَبِي بَكْرٍ مِنَ الدَّوَابِّ وَأَمَّا الْآخَرُ فنطاق المرأةِ الَّتِي لَا تَسْتَغْنِي عَنهُ أما أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَدثنَا: «أَن فِي ثَقِيف كذابا ومبيرا» . فَأَما الْكَذَّابُ فَرَأَيْنَاهُ وَأَمَّا الْمُبِيرُ فَلَا إِخَالُكَ إِلَّا إِيَّاه. قَالَ فَقَامَ عَنْهَا وَلم يُرَاجِعهَا. رَوَاهُ مُسلم
হাদীসের ব্যাখ্যা:
النطاق অর্থ, কোমরবন্দ। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ও আবু বকর (রাঃ)-এর হিজরতের সফরে হযরত আসমা (রাঃ) নিজের কোমরবন্দ কাপড়কে দ্বিখণ্ড করিয়া দুই কাজে ব্যবহার করিয়াছিলেন। তাই হুযূর (ﷺ) কৌতুক করিয়া তাঁহাকে যাতুন-নেতাকাইন (দুই কোমরবন্দওয়ালী) বলিয়া সম্বোধন করিয়াছিলেন। তখন হইতে আসমা (রাঃ) এই উপাধিতে প্রসিদ্ধ হইয়াছিলেন। হযরত আসমার জীবন ইতিহাস হইতে জানা গিয়াছে যে, পুত্র আবদুল্লাহর শাহাদতের দশদিন পর তিনি একশত বৎসর বয়সে ইনতেকাল করিয়াছেন এবং মৃত্যুকালে তাঁহার একটি দাঁতও পড়ে নাই। আল্লামা নববী বলিয়াছেন, একমাত্র খারেজী সম্প্রদায় ব্যতীত সমস্ত মাযহাবের আকীদা হইল, হযরত ইবনে যুবাইর (রাঃ) মযলুম ও নির্যাতিত অবস্থায় শহীদ হইয়াছেন (রাঃ)।
