মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
৩০- নবীজী সাঃ এর মর্যাদা ও শামাঈল অধ্যায়
হাদীস নং: ৫৯৬৪
- নবীজী সাঃ এর মর্যাদা ও শামাঈল অধ্যায়
তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ওফাতের পর সাহাবীদের মক্কাহ্ হতে হিজরত করা সম্পর্কে
৫৯৬৪। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) সুস্থ অবস্থায় প্রায়শ বলিতেন, প্রত্যেক নবীকে মৃত্যুর পূর্বে জান্নাতে তাঁহার নিবাস দেখাইয়া দেওয়া হয়, তারপর তাঁহাকে এখতিয়ার দেওয়া হয়। (অর্থাৎ, তিনি চাহিলে কিয়ামত পর্যন্ত দুনিয়ায় থাকিতে পারেন, আবার ইচ্ছা করিলে জান্নাতে গিয়া অবস্থান করিতে পারেন।) হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) যখন মৃত্যু-রোগে আক্রান্ত হন এবং তাঁহার মাথা ছিল আমার রানের উপর। এই সময় তিনি অচেতন হইয়া পড়িলেন। অতঃপর চৈতন্য ফিরিয়া আসিলে ঘরের ছাদের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করিলেন। তারপর বলিলেনঃ হে আল্লাহ্। উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন বন্ধুর সঙ্গে। তখন আমি মনে মনে বলিলাম, এখন তিনি আমাদের কাছে থাকা পছন্দ করিবেন না। আয়েশা (রাঃ) বলেন, আর আমি ইহা বুঝিতে পারিলাম, সুস্থ অবস্থায় তিনি যেই কথাটি বলিতেন, ইহা সেই কথারই বহিঃপ্রকাশ। আর সেই কথাটি হইল, প্রত্যেক নবীকে মৃত্যুর পূর্বে জান্নাতে তাঁহার নিবাস দেখাইয়া দেওয়ার পর তাঁহাকে এখতিয়ার দেওয়া হয়। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, নবী (ﷺ) সর্বশেষ এই বাক্যটি উচ্চারণ করেন, “আল্লা-হুম্মা আররাফীকাল আ'লা।” –মোত্তাঃ
كتاب الفضائل والشمائل
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ وَهُوَ صَحِيح: «لَنْ يُقْبَضَ نَبِيٌّ قَطُّ حَتَّى يُرَى مَقْعَدَهُ مِنَ الْجَنَّةِ ثُمَّ يُخَيَّرَ» . قَالَتْ عَائِشَةُ: فَلَمَّا نَزَلَ بِهِ ورأسُه على فَخذِي غُشِيَ عَلَيْهِ ثُمَّ أَفَاقَ فَأَشْخَصَ بَصَرُهُ إِلَى السَّقْفِ ثُمَّ قَالَ: «اللَّهُمَّ الرَّفِيقَ الْأَعْلَى» . قُلْتُ: إِذَنْ لَا يَخْتَارُنَا. قَالَتْ: وَعَرَفْتُ أَنَّهُ الْحَدِيثُ الَّذِي كَانَ يُحَدِّثُنَا بِهِ وَهُوَ صَحِيحٌ فِي قَوْلِهِ: «إِنَّهُ لَنْ يُقْبَضَ نَبِيٌّ قَطُّ حَتَّى يُرَى مَقْعَدَهُ مِنَ الْجَنَّةِ ثُمَّ يُخَيَّرَ» قَالَتْ عَائِشَةُ: فَكَانَ آخِرُ كَلِمَةٍ تَكَلَّمَ بِهَا النَّبِيُّ صلى الله عَلَيْهِ وَسلم: «اللَّهُمَّ الرفيق الْأَعْلَى» . مُتَّفق عَلَيْهِ
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছটিতে উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতকালীন অবস্থা বর্ণনা করেছেন। এতে উল্লেখ আছে, তিনি ওফাতকালে একটি বিশেষ দু'আ পড়ছিলেন।
দুয়াটি বিভিন্ন বর্ণনায় বিভিন্নভাবে বর্ণিত হয়েছে। সবচেয়ে বিস্তারিত হলো- «اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وارْحَمْنِي، وأَلْحِقْنِي بالرَّفِيقِ الأَعْلَى».
তিনি দু'আ করছিলেন- اللهم اغفرلي وارحمني (হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন। আমার প্রতি রহম করুন)। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন মা'সুম। তাঁর কোনও গুনাহ ছিল না। তা সত্ত্বেও তিনি এরূপ দু'আ করেছেন। এটা ছিল তাঁর বিনয়। ছিল আল্লাহ তা'আলার প্রতি চরম আত্মনিবেদন। ছিল আল্লাহ তা'আলার প্রতি পরম শ্রদ্ধা-ভক্তি ও তাঁর গৌরব-গরিমার প্রকাশ। এর মাধ্যমে তিনি নিজ উম্মতকেও শিক্ষা দিয়েছেন যে, মৃত্যুকালে আল্লাহ তা'আলার কাছে নিজ গুনাহের জন্য ক্ষমা চাওয়া ও তাঁর রহমতের আশাবাদী থাকা উচিত। যেই মহানবীর কোনও গুনাহ ছিল না আর তা সত্ত্বেও তিনি এভাবে রহমত ও মাগফিরাত কামনা করেছেন, তাঁর উম্মতের জন্য রহমত ও মাগফিরাতের কামনা কতইনা বেশি জরুরি, যখন তারা নানারকম গুনাহ ও পাপাচারে লিপ্ত থাকে।
দু'আটির শেষাংশ হল- وألحقني بالرفيق الأعلى (আমাকে মহান বন্ধুর সঙ্গে মিলিয়ে দিন)। الرفيق الأعلى এর দ্বারা যেমন আল্লাহ তা'আলাকে বোঝানো হয়, তেমনি জান্নাত ও জান্নাতের শ্রেষ্ঠতম বাসিন্দা আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামকেও বোঝানো হয়ে থাকে। সিদ্দীক, শহীদ ও সালিহগণও এর অন্তর্ভুক্ত। যেমন কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَالرَّسُولَ فَأُولَئِكَ مَعَ الَّذِينَ أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ مِنَ النَّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِينَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِينَ وَحَسُنَ أُولَئِكَ رَفِيقًا
'যারা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করবে, তারা সেইসকল লোকের সঙ্গে থাকবে, যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন, অর্থাৎ নবীগণ, সিদ্দীকগণ, শহীদগণ ও সালিহগণের সঙ্গে। কতইনা উত্তম সঙ্গী তারা!’ (সূরা নিসা, আয়াত ৬৯)
এ দু'আটি দ্বারা বাহ্যত মনে হয় তিনি মৃত্যু কামনা করেছিলেন। বস্তুত বিষয়টি সেরকম নয়। সাধারণভাবে মৃত্যুকামনা করা উচিত নয়। নিষেধ আছে। তিনি এর দ্বারা আল্লাহ তা'আলার ফয়সালায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তিনি তখন জানতে পেরেছিলেন যে, তাঁর আয়ু শেষ হয়ে গেছে। তাঁর জান কবজের ফয়সালা হয়ে গেছে। তিনি তা জানতে পেরেছিলেন ফিরিশতাদের আগমন দ্বারা। সাধারণ নেককারদেরও মৃত্যুর সময় সুসংবাদ দানকারী ফিরিশতাদের আগমন ঘটে। নবীগণের ক্ষেত্রে তো তা ঘটেই থাকে। এমনকি মৃত্যুর ফিরিশতা এসে নবীগণের কাছে জান কবজের অনুমতিও চেয়ে থাকে। হাদীছ দ্বারা এটা প্রমাণিত। তিনি যে নিজ মৃত্যু সম্পর্কে জানতে পেরেছিলেন তা প্রমাণ হয় এর দ্বারাও যে, তিনি নিজ কন্যা হযরত ফাতিমা যাহরা রাযি.-কে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছিলেন, আজকের পর তোমার পিতার আর কোনও কষ্ট নেই। তো যখন মৃত্যুর ফয়সালা হয়ে গেছে এবং জান কবজকারী ফিরিশতাগণও এসে গেছেন, তখন তাঁর জন্য এটাই স্বাভাবিক ছিল যে, তিনি সে ফয়সালায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করবেন এবং পরম বন্ধু আল্লাহ তা'আলা ও আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামের সঙ্গে মিলিত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করবেন। এ দু'আটি দ্বারা তিনি তাই করেছেন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. নবীগণও মানুষ। অপরাপর মানুষের মতো তাঁদেরও রোগ-ব্যাধি হয় এবং তাঁরাও মৃত্যুবরণ করেন।
খ. মৃত্যুকালে আল্লাহ তা'আলার কাছে নিজ গুনাহের জন্য মাগফিরাতের দু'আ করা উচিত এবং তাঁর রহমতের আশাবাদী থাকা উচিত।
দুয়াটি বিভিন্ন বর্ণনায় বিভিন্নভাবে বর্ণিত হয়েছে। সবচেয়ে বিস্তারিত হলো- «اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وارْحَمْنِي، وأَلْحِقْنِي بالرَّفِيقِ الأَعْلَى».
তিনি দু'আ করছিলেন- اللهم اغفرلي وارحمني (হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন। আমার প্রতি রহম করুন)। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন মা'সুম। তাঁর কোনও গুনাহ ছিল না। তা সত্ত্বেও তিনি এরূপ দু'আ করেছেন। এটা ছিল তাঁর বিনয়। ছিল আল্লাহ তা'আলার প্রতি চরম আত্মনিবেদন। ছিল আল্লাহ তা'আলার প্রতি পরম শ্রদ্ধা-ভক্তি ও তাঁর গৌরব-গরিমার প্রকাশ। এর মাধ্যমে তিনি নিজ উম্মতকেও শিক্ষা দিয়েছেন যে, মৃত্যুকালে আল্লাহ তা'আলার কাছে নিজ গুনাহের জন্য ক্ষমা চাওয়া ও তাঁর রহমতের আশাবাদী থাকা উচিত। যেই মহানবীর কোনও গুনাহ ছিল না আর তা সত্ত্বেও তিনি এভাবে রহমত ও মাগফিরাত কামনা করেছেন, তাঁর উম্মতের জন্য রহমত ও মাগফিরাতের কামনা কতইনা বেশি জরুরি, যখন তারা নানারকম গুনাহ ও পাপাচারে লিপ্ত থাকে।
দু'আটির শেষাংশ হল- وألحقني بالرفيق الأعلى (আমাকে মহান বন্ধুর সঙ্গে মিলিয়ে দিন)। الرفيق الأعلى এর দ্বারা যেমন আল্লাহ তা'আলাকে বোঝানো হয়, তেমনি জান্নাত ও জান্নাতের শ্রেষ্ঠতম বাসিন্দা আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামকেও বোঝানো হয়ে থাকে। সিদ্দীক, শহীদ ও সালিহগণও এর অন্তর্ভুক্ত। যেমন কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَالرَّسُولَ فَأُولَئِكَ مَعَ الَّذِينَ أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ مِنَ النَّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِينَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِينَ وَحَسُنَ أُولَئِكَ رَفِيقًا
'যারা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করবে, তারা সেইসকল লোকের সঙ্গে থাকবে, যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন, অর্থাৎ নবীগণ, সিদ্দীকগণ, শহীদগণ ও সালিহগণের সঙ্গে। কতইনা উত্তম সঙ্গী তারা!’ (সূরা নিসা, আয়াত ৬৯)
এ দু'আটি দ্বারা বাহ্যত মনে হয় তিনি মৃত্যু কামনা করেছিলেন। বস্তুত বিষয়টি সেরকম নয়। সাধারণভাবে মৃত্যুকামনা করা উচিত নয়। নিষেধ আছে। তিনি এর দ্বারা আল্লাহ তা'আলার ফয়সালায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তিনি তখন জানতে পেরেছিলেন যে, তাঁর আয়ু শেষ হয়ে গেছে। তাঁর জান কবজের ফয়সালা হয়ে গেছে। তিনি তা জানতে পেরেছিলেন ফিরিশতাদের আগমন দ্বারা। সাধারণ নেককারদেরও মৃত্যুর সময় সুসংবাদ দানকারী ফিরিশতাদের আগমন ঘটে। নবীগণের ক্ষেত্রে তো তা ঘটেই থাকে। এমনকি মৃত্যুর ফিরিশতা এসে নবীগণের কাছে জান কবজের অনুমতিও চেয়ে থাকে। হাদীছ দ্বারা এটা প্রমাণিত। তিনি যে নিজ মৃত্যু সম্পর্কে জানতে পেরেছিলেন তা প্রমাণ হয় এর দ্বারাও যে, তিনি নিজ কন্যা হযরত ফাতিমা যাহরা রাযি.-কে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছিলেন, আজকের পর তোমার পিতার আর কোনও কষ্ট নেই। তো যখন মৃত্যুর ফয়সালা হয়ে গেছে এবং জান কবজকারী ফিরিশতাগণও এসে গেছেন, তখন তাঁর জন্য এটাই স্বাভাবিক ছিল যে, তিনি সে ফয়সালায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করবেন এবং পরম বন্ধু আল্লাহ তা'আলা ও আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামের সঙ্গে মিলিত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করবেন। এ দু'আটি দ্বারা তিনি তাই করেছেন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. নবীগণও মানুষ। অপরাপর মানুষের মতো তাঁদেরও রোগ-ব্যাধি হয় এবং তাঁরাও মৃত্যুবরণ করেন।
খ. মৃত্যুকালে আল্লাহ তা'আলার কাছে নিজ গুনাহের জন্য মাগফিরাতের দু'আ করা উচিত এবং তাঁর রহমতের আশাবাদী থাকা উচিত।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)