মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

৩০- নবীজী সাঃ এর মর্যাদা ও শামাঈল অধ্যায়

হাদীস নং: ৫৮৬৯
- নবীজী সাঃ এর মর্যাদা ও শামাঈল অধ্যায়
প্রথম অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা
৫৮৬৯। হযরত বারা ইবনে আযেব তাঁহার পিতা হইতে বর্ণনা করেন, (পিতা-পুত্র দুই জনই প্রখ্যাত সাহাবী) একদা হযরত আযেব হযরত আবু বকর (রাঃ)-কে বলিলেন, হে আবু বকর। আমাকে বলুন তো, যেই রাত্রে আপনি রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সহিত (হিজরতের উদ্দেশ্যে) সফর করিয়াছিলেন, সেই সফরে আপনারা কিরূপ করিয়াছিলেন? আবু বকর (রাঃ) বলিলেন, আমরা এক রাত্র এবং পরবর্তী দিন পথ চলিতে থাকি। অবশেষে যখন দ্বিপ্রহর হইল এবং পথঘাট এতটা শূন্য হইয়া পড়িল যে, একটি প্রাণীও উহাতে যাতায়াত ও চলাফেরা করিতেছে না। এমন সময় বিরাট একটি লম্বা পাথর আমাদের নজরে পড়িল। উহার একপার্শ্বে ছিল ছায়া। সেখানে সূর্যের রোদ পড়িত না। তখন আমরা তথায় অবতরণ করিলাম এবং আমি নিজ হাতে নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য কিছুটা জায়গা সমতল করিলাম, যাহাতে তিনি শয়ন করিতে পারেন। অতঃপর আমি একখানা (চামড়ার) চাদর বিছাইয়া দিয়া বলিলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি শুইয়া পড়ুন। আমি আপনার (নিরাপত্তার) জন্য এইদিক ঐদিক বিশেষভাবে খেয়াল রাখিব। তখন রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) শুইয়া পড়িলেন। আমি বাহির হইয়া চতুর্দিক হইতে তাহাকে পাহারা দিতে লাগিলাম। হঠাৎ আমি দেখিতে পাইলাম, একজন মেষচারক তাহার বকরীর পাল লইয়া পাথরটির দিকে অগ্রসর হইতেছে। আমি বলিলাম, তোমার বকরী গুলির মধ্যে কি দুধ আছে। সে বলিল, হ্যাঁ। আমি বলিলাম, তুমি কি তাহা (আমাদের জন্য) দোহন করিবে? সে বলিল, হ্যাঁ। অতঃপর সে একটি বকরী ধরিয়া আনিল। তারপর সে একটি পাত্রে কিছু দুধ দোহন করিল। এইদিকে আমার নিকটও একটি পাত্র ছিল, যাহা আমি নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য সঙ্গে করিয়া লইয়া আসিয়াছিলাম, যেন উহা দিয়া তিনি তৃপ্তি সহকারে পানি পান করিতে এবং ওযু করিতে পারেন। অতঃপর আমি (দুধের পেয়ালাটি হাতে করিয়া) নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসিলাম। কিন্তু তাহাকে ঘুম হইতে জাগান ভাল মনে করিলাম না। কিছুক্ষণ পরে আমি তাঁহাকে জাগ্রত অবস্থায় পাইলাম। ইত্যবসরে আমি দুধের সহিত (তাড়াতাড়ি ঠাণ্ডা করিবার উদ্দেশ্যে) কিছু পানি মিশ্রিত করিলাম। ইহাতে দুধের নিম্নভাগ পর্যন্ত ঠাণ্ডা হইয়া গেল। ইহার পর আমি বলিলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্। পান করুন। তিনি পান করিলেন, ইহাতে আমি খুবই সন্তুষ্ট হইলাম। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) বলিলেন, আমাদের রওয়ানা হওয়ার সময় কি এখনও হয় নাই? আমি বলিলাম, হ্যাঁ হইয়াছে। হযরত আবু বকর বলেন, সূর্য ঢলিয়া যাওয়ার পর আমরা রওয়ানা হইলাম। এইদিকে সুরাকা ইবনে মালেক আমাদের অনুসরণ করিয়াছিল। আমি (তাহাকে দেখিতে পাইয়া বলিলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্। (শত্রু) আমাদের নিকটে আসিয়া পড়িয়াছে। তিনি বলিলেন, চিন্তা করিও না। মহান আল্লাহ্ তা'আলা আমাদের সঙ্গে আছেন। ইহার পর নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুরাকার জন্য বদ-দোআ করিলেন। ফলে তাহার ঘোড়াটি তাহাকে লইয়া পেট পর্যন্ত শক্ত মাটিতে গাড়িয়া গেল। তখন সুরাকা বলিয়া উঠিল, আমার বিশ্বাস তোমরা আমার প্রতি বদ-দোআ করিয়াছ। অতএব, (আমার আবেদন,) তোমরা আল্লাহর নিকট আমার জন্য দো'আ কর, আল্লাহ্ই তোমাদের সাহায্যকারী। আমি তোমাদিগকে ওয়াদা দিতেছি যে, তোমাদের অন্বেষণকারীদিগকে ফিরাইয়া দিব। তখন নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহার জন্য দো'আ করিলেন। ফলে সে মুক্তি পাইল। তারপর (ফিরিবার পথে) যাহার সাথেই তাহার দেখা হইত তাহাকে সে বলিত, আমি তোমাদের কাজ সারিয়া আসিয়াছি। (অর্থাৎ, আমি যথেষ্ট খোঁজাখুঁজি করিয়াছি, তাহারা সেই দিকে নাই। এমনিভাবে যাহার সাথেই তাহার সাক্ষাৎ হইত, তাহাকেই সে ফিরাইয়া দিত। মোত্তাঃ
كتاب الفضائل والشمائل
وَعَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ عَنْ أَبِيهِ أَنَّهُ قَالَ لِأَبِي بَكْرٍ: يَا أَبَا بَكْرٍ حَدِّثْنِي كَيْفَ صَنَعْتُمَا حِينَ سَرَيْتَ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: أَسْرَيْنَا لَيْلَتَنَا وَمِنَ الْغَدِ حَتَّى قَامَ قَائِمُ الظَّهِيرَةِ وَخَلَا الطَّرِيقُ لَا يَمُرُّ فِيهِ أَحَدٌ فَرُفِعَتْ لَنَا صَخْرَةٌ طَوِيلَةٌ لَهَا ظِلٌّ لَمْ يَأْتِ عَلَيْهَا الشَّمْسُ فَنَزَلْنَا عِنْدَهَا وَسَوَّيْتُ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَكَانًا بِيَدَيَّ يَنَامُ عَلَيْهِ وَبَسَطْتُ عَلَيْهِ فَرْوَةً وَقُلْتُ نَمْ يَا رسولَ الله وَأَنَا أَنْفُضُ مَا حَوْلَكَ فَنَامَ وَخَرَجْتُ أَنْفُضُ مَا حَوْلَهُ فَإِذَا أَنَا بِرَاعٍ مُقْبِلٍ قُلْتُ: أَفِي غنمكَ لبنٌ؟ قَالَ: نعم قلتُ: أفتحلبُ؟ قَالَ: نَعَمْ. فَأَخَذَ شَاةً فَحَلَبَ فِي قَعْبٍ كُثْبَةً مِنْ لَبَنٍ وَمَعِي إِدَاوَةٌ حَمَلْتُهَا لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَرْتَوَى فِيهَا يَشْرَبُ وَيَتَوَضَّأُ فَأَتَيْتُ الْنَبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَكَرِهْتُ أَنْ أُوقِظَهُ فَوَافَقْتُهُ حَتَّى اسْتَيْقَظَ فَصَبَبْتُ مِنَ الْمَاءِ عَلَى اللَّبَنِ حَتَّى بَرَدَ أَسْفَلُهُ فَقُلْتُ: اشْرَبْ يَا رَسُولَ اللَّهِ فَشَرِبَ حَتَّى رضيت ثمَّ قَالَ: «ألم يَأن الرحيل؟» قلتُ: بَلى قَالَ: فارتحلنا بعد مَا مَالَتِ الشَّمْسُ وَاتَّبَعَنَا سُرَاقَةُ بْنُ مَالِكٍ فَقُلْتُ: أُتِينَا يَا رَسُولَ اللَّهِ فَقَالَ: «لَا تَحْزَنْ إِنَّ اللَّهَ مَعَنَا» فَدَعَا عَلَيْهِ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَارْتَطَمَتْ بِهِ فَرَسُهُ إِلَى بَطْنِهَا فِي جَلَدٍ مِنَ الْأَرْضِ فَقَالَ: إِنِّي أَرَاكُمَا دَعَوْتُمَا عَلَيَّ فَادْعُوَا لِي فَاللَّهُ لَكُمَا أَنْ أَرُدَّ عَنْكُمَا الطَّلَبَ فَدَعَا لَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَنَجَا فَجَعَلَ لَا يلقى أحدا إِلا قَالَ كفيتم مَا هَهُنَا فَلَا يَلْقَى أَحَدًا إِلَّا رَدَّهُ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান