মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

৩০- নবীজী সাঃ এর মর্যাদা ও শামাঈল অধ্যায়

হাদীস নং: ৫৮৪১
প্রথম অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর নুবুওয়্যাতপ্রাপ্তি ও ওয়াহীর সূচনা
৫৮৪১। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি সর্বপ্রথম অহীর সূচনা হয় সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে। তিনি যেই স্বপ্নই দেখিতেন তাহা ভোরের আলোর মতই ফলিত। ইহার পর তাহার নিকট নির্জনতা পছন্দনীয় হইতে লাগিল। তাই তিনি একাধারে কয়েকদিন পর্যন্ত নিজের পরিবার-পরিজনদের নিকট হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া হেরা পর্বতের গুহায় নির্জন পরিবেশে আল্লাহর এবাদতে মগ্ন থাকিতে লাগিলেন। আর এই উদ্দেশ্যে তিনি কিছু খাবার সঙ্গে লইয়া যাইতেন। উহা শেষ হইয়া গেলে তিনি বিবি খাদীজা (রাঃ)-এর নিকট ফিরিয়া আসিয়া আবার ঐ পরিমাণ কয়েক দিনের জন্য কিছু খাবার সঙ্গে লইয়া যাইতেন। অবশেষে হেরা গুহায় থাকাকালে তাহার নিকট সত্য (অহী) আসিল। জিবরাঈল ফিরিশতা তথায় আসিয়া তাঁহাকে বলিলেন, 'পড়ুন।' রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) বলিলেনঃ আমি তো পড়িতে পারি না। তিনি বলেন, ফিরিশতা তখন আমাকে ধরিয়া এমন জোরে চাপিলেন যে, ইহাতে আমি চরম কষ্ট অনুভব করিলাম। অতঃপর তিনি আমাকে ছাড়িয়া দিয়া বলিলেন, 'পড়ুন।' আমি বলিলাম, আমি তো পড়িতে পারি না। তখন তিনি দ্বিতীয়বার আমাকে ধরিয়া আবারও খুব জোরে চাপিলেন। এইবারও আমি ভীষণ কষ্ট অনুভব করিলাম। ইহার পর তিনি আমাকে ছাড়িয়া দিয়া বলিলেন, ‘পড়ুন!” এইবারও আমি বলিলাম, আমি পড়িতে পারি না। নবী (ছাঃ) বলেন, ফিরিশতা তৃতীয় বার আমাকে ধরিয়া দৃঢ়ভাবে চাপিয়া ধরিলেন। এইবারও আমি বিশেষভাবে কষ্ট পাইলাম । অতঃপর তিনি আমাকে ছাড়িয়া দিয়া বলিলেন: (অর্থাৎ, "আপনার রব-এর নামে পড়ুন। যিনি সৃষ্টি করিয়াছেন। জমাট রক্ত হইতে যিনি মানুষকে সৃষ্টি করিয়াছেন। পড়ুন! আর আপনার রব সর্বাপেক্ষা বেশী সম্মানিত। তিনিই কলম দ্বারা এলম শিখাইয়াছেন। তিনি মানুষকে উহাই শিখাইয়াছেন যাহা সে জানিত না।" অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত আয়াতগুলি আয়ত্ত করিয়া ফিরিয়া আসিলেন। তখন তাহার হৃদয় কাঁপিতেছিল। তিনি বিবি খাদীজার নিকট আসিয়া বলিলেন আমাকে চাদর দিয়া ঢাকিয়া দাও আমাকে চাদর দিয়া ঢাকিয়া দাও। তখন তিনি তাহাকে চাদর দিয়া ঢাকিয়া দিলেন। অবশেষে তাঁহার ভীতি কাটিয়া গেলে তিনি বিবি খাদীজার কাছে ঘটনা বর্ণনা করিয়া বলিলেন (আল্লাহর কসম।) আমি আমার নিজের জীবন সম্পর্কে আশংকাবোধ করিতেছি। তখন বিবি খাদীজা (সান্ত্বনা দিয়া দৃঢ়তার সাথে বলিলেন, আমি আল্লাহর কসম করিয়া বলিতেছি। এইরূপ কখনও হইতে পারে না। আল্লাহ্ তা'আলা কখনই আপনাকে অপমানিত করিবেন না। কারণ, আপনি আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদ্ব্যবহার করেন, সর্বদা সত্য কথা বলেন, আপনি অক্ষমদের বোঝা বহন করেন। নিঃস্বদিগকে উপার্জন করিয়া সাহায্য করেন, অতিথিদের মেহমানদারী করেন এবং প্রকৃত বিপদগ্রস্তদিগকে সাহায্য করেন।

ইহার পর বিবি খাদীজা রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ)-কে সঙ্গে লইয়া আপন চাচাত ভাই ওরাকা ইবনে নওফল-এর নিকট চলিয়া গেলেন। (ওরাকা ঈসায়ী ধর্ম গ্রহণ করিয়াছিলেন।) খাদীজা তাহাকে বলিলেন, হে চাচাত ভাই। তোমার ভাতিজা কি বলে তাহা একটু শোন। তখন ওরাকা তাহাকে লক্ষ্য করিয়া বলিলেন, হে ভাতিজা, তুমি কি দেখিয়াছ। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাহা দেখিয়াছিলেন তাহা সবিস্তারে বর্ণনা করিলেন। ঘটনা শুনিয়া ওরাকা তাঁহাকে বলিলেন, এই তো সেই রহস্যময় ফিরিশতা (জিবরাঈল), যাঁহাকে আল্লাহ্ তা'আলা হযরত মুসা (আঃ)-এর নিকট পাঠাইয়াছিলেন। হায়! আমি যদি তোমার নবুওতকালে বলবান যুবক থাকিতাম। হায়! আমি যদি সেই সময় জীবিত থাকিতাম যখন তোমার কওম তোমাকে মক্কা হইতে বাহির করিয়া দিবে। তখন রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন; তাহারা. কি সত্যই আমাকে বাহির করিয়া দিবে? ওরাকা বলিলেন, হ্যাঁ, তুমি যাহা লইয়া দুনিয়াতে আসিয়াছ, অনুরূপ কোন কিছু লইয়া যেই ব্যক্তিই আসিয়াছে, তাহার সাথে শত্রুতাই করা হইয়াছে। আমি তোমার সেই যুগ পাইলে সর্বশক্তি দিয়া তোমার সাহায্য করিব। ইহার অব্যবহিত পর ওরাকা ওফাত পাইয়া গেলেন। এদিকে অহীর আগমনও বন্ধ হইয়া গেল। মোত্তাঃ
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: أَوَّلُ مَا بُدِئَ بِهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنَ الْوَحْيِ الرُّؤْيَا الصَّادِقَةُ فِي النَّوْمِ فَكَانَ لَا يَرَى رُؤْيَا إِلَّا جَاءَتْ مِثْلَ فَلَقِ الصُّبْحِ ثُمَّ حُبِّبَ إليهِ الخَلاءُ وكانَ يَخْلُو بغارِ حِراءٍ فيتحنَّثُ فِيهِ - وَهُوَ التَّعَبُّدُ اللَّيَالِيَ ذَوَاتِ الْعَدَدِ - قَبْلَ أَنْ يَنْزِعَ إِلَى أَهْلِهِ وَيَتَزَوَّدَ لِذَلِكَ ثُمَّ يَرْجِعَ إِلَى خَدِيجَةَ فَيَتَزَوَّدَ لِمِثْلِهَا حَتَّى جَاءَهُ الْحَقُّ وَهُوَ فِي غَارِ حِرَاءٍ فَجَاءَهُ الْمَلَكُ فَقَالَ: اقْرَأْ. فَقَالَ: «مَا أَنَا بِقَارِئٍ» . قَالَ: فَأَخَذَنِي فَغَطَّنِي حَتَّى بَلَغَ مِنِّي الْجَهْدُ ثُمَّ أَرْسَلَنِي فَقَالَ: اقْرَأْ. فَقُلْتُ: مَا أَنَا بِقَارِئٍ فَأَخَذَنِي فَغَطَّنِي الثَّانِيَةَ حَتَّى بَلَغَ مِنِّي الْجَهْدَ ثُمَّ أَرْسَلَنِي فَقَالَ: اقْرَأْ. فَقُلْتُ: مَا أَنَا بِقَارِئٍ. فَأَخَذَنِي فَغَطَّنِي الثَّالِثَةَ حَتَّى بَلَغَ مِنِّي الْجهد ثمَّ أَرْسلنِي فَقَالَ: [اقرَأْ باسمِ ربِّكَ الَّذِي خَلَقَ. خَلَقَ الْإِنْسَانَ مِنْ عَلَقٍ. اقْرَأْ وَرَبُّكَ الْأَكْرَمُ. الَّذِي عَلَّمَ بِالْقَلَمِ. عَلَّمَ الْإِنْسَانَ مَا لم يعلم] . فَرجع بِهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَرْجُفُ فُؤَادُهُ فَدَخَلَ عَلَى خَدِيجَةَ فَقَالَ: «زَمِّلُونِي زَمِّلُونِي» فَزَمَّلُوهُ حَتَّى ذَهَبَ عَنْهُ الرَّوْعُ فَقَالَ لخديجةَ وأخبرَها الخبرَ: «لَقَدْ خَشِيتُ عَلَى نَفْسِي» فَقَالَتْ خَدِيجَةُ: كَلَّا وَاللَّهِ لَا يُخْزِيكَ اللَّهُ أَبَدًا إِنَّكَ لَتَصِلُ الرَّحِمَ وَتَصْدُقُ الْحَدِيثَ وَتَحْمِلُ الْكَلَّ وَتَكْسِبُ الْمَعْدُومَ وتقْرِي الضيفَ وَتُعِينُ عَلَى نَوَائِبِ الْحَقِّ ثُمَّ انْطَلَقَتْ بِهِ خَدِيجَةُ إِلَى وَرَقَةَ بْنِ نَوْفَلٍ ابْنِ عَمِّ خَدِيجَةَ. فَقَالَتْ لَهُ: يَا ابْنَ عَمِّ اسْمَعْ مِنِ ابْنِ أَخِيكَ. فَقَالَ لَهُ وَرَقَةُ: يَا ابْنَ أَخِي مَاذَا تَرَى؟ فَأَخْبَرَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَبَرَ مَا رَأَى. فَقَالَ وَرَقَةُ: هَذَا هُوَ النَّامُوسُ الَّذِي أَنْزَلَ اللَّهُ عَلَى مُوسَى يَا لَيْتَنِي فِيهَا جَذَعًا يَا لَيْتَنِي أَكُونُ حَيًّا إِذْ يُخْرِجُكَ قَوْمُكَ. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَوَ مُخْرِجِيَّ هُمْ؟» قَالَ: نَعَمْ لَمْ يَأْتِ رَجُلٌ قَطُّ بِمِثْلِ مَا جِئْتَ بِهِ إِلَّا عُودِيَ وَإِنْ يُدْرِكْنِي يَوْمُكَ أَنْصُرُكَ نَصْرًا مُؤَزَّرًا. ثُمَّ لَمْ يَنْشَبْ وَرَقَةُ أَنْ تُوَفِّيَ وَفَتَرَ الوحيُ. مُتَّفق عَلَيْهِ
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
মিশকাতুল মাসাবীহ - হাদীস নং ৫৮৪১ | মুসলিম বাংলা