মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
২৯- সৃষ্টির সূচনা ও কিয়ামত পরবর্তী বর্ণনা
হাদীস নং: ৫৭৩৫
- সৃষ্টির সূচনা ও কিয়ামত পরবর্তী বর্ণনা
তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির সূচনা ও নবী-রাসূলদের আলোচনা
৫৭৩৫হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, একদা আল্লাহর নবী (ﷺ) তাঁহার সাহাবীগণসহ বসা ছিলেন। এমন সময় একখণ্ড মেঘ তাহাদের উপর দিয়া অতিক্রম করিল। তখন নবী (ﷺ) জিজ্ঞাসা করিলেন, তোমরা কি জান ইহা কি? তাহারা বলিলেন, আল্লাহ্ ও তাঁহার রাসূল ভাল জানেন। তিনি বলিলেন, ইহা 'আনান', ইহা জমি সেচনকারী। ইহাকে আল্লাহ্ তা'আলা এমন এমন কওমের দিকে হাঁকাইয়া নিয়া যান, যাহারা তাহার শোকর করে না এবং তাঁহাকে ডাকেও না। অতঃপর হুযূর (ﷺ) বলিলেন; তোমরা কি জান, তোমাদের মাথার উপরে কি? তাহারা বলিলেন, আল্লাহ্ ও তাঁহার রাসূল ভাল জানেন। তিনি বলিলেন, ইহা রকী' (প্রথম আসমান) যাহা সুরক্ষিত ছাদ এবং স্থিরীকৃত। অতঃপর তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, তোমরা কি জান, তোমাদের এবং আসমানের মাঝখানের দূরত্ব কত? তাহারা বলিলেন, আল্লাহ্ ও তাঁহার রাসূল অধিক জানেন। তিনি বলিলেন, পাঁচ শত বৎসরের ব্যবধান। অতঃপর জিজ্ঞাসা করিলেন, তোমরা কি জান, উহার উপরে কি আছে ? তাহারা বলিলেন, আল্লাহ্ ও তাঁহার রাসূল অধিক জ্ঞাত। তিনি বলিলেন, দুইখানা আসমান রহিয়াছে—সেই দুইখানার মাঝখানের দূরত্ব হইল পাঁচ শত বৎসরের রাস্তা। এইভাবে তিনি আসমানের সংখ্যা সাতখানা বর্ণনা করিলেন এবং প্রত্যেক দুই আসমানের মাঝখানের দূরত্ব, আসমান ও যমীনের দূরত্বের সমান (অর্থাৎ, পাঁচ শত বৎসরের রাস্তা)। অতঃপর তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, তোমরা কি জান, উহার উপরে কি আছে ? তাহারা বলিলেন, আল্লাহ্ ও তাঁহার রাসূল অধিক জানেন। তিনি বলিলেন, উহার উপরে রহিয়াছে আল্লাহর আরশ, আরশ ও আসমানের মাঝখানের ব্যবধান হইল দুই আসমানের মধ্যে দূরত্বের সমান।
অতঃপর তিনি বলিলেন, তোমরা কি জান, তোমাদের নীচে কি? তাহারা বলিলেন, আল্লাহ্ ও তাঁহার রাসূল অধিক জানেন। তিনি বলিলেন, যমীন। ইহার পর তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, তোমরা কি জান ইহার নীচে কি? তাহারা বলিলেন, আল্লাহ্ ও তাঁহার রাসূল অধিক জানেন। তিনি বলিলেন, উহার নীচে আরেক যমীন এবং উভয় যমীনের মাঝখানের ব্যবধান হইল পাঁচ শত বৎসর। এমন কি তিনি যমীনের সংখ্যা সাতখানা বর্ণনা করিলেন এবং বলিলেন, প্রত্যেক দুই যমীনের মাঝখানে পাঁচ শত বৎসরের ব্যবধান। অতঃপর তিনি বলিলেন, সেই মহান সত্তার কসম যাঁহার হাতে মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর প্রাণ। যদি তোমরা একখানা রশি নীচে যমীনের দিকে ঝুলাইয়া দাও, উহা অবশ্যই আল্লাহর নিকটে যাইয়া পৌঁছিবে। অতঃপর তিনি কুরআনের এই আয়াতটি পাঠ করিলেন— هُوَ الْأَوَّلُ وَالْآخِرُ وَالظَّاهِرُ وَالْبَاطِنُ وَهُوَ بِكُلِّ شيءٍ عليم (অর্থাৎ, তিনি প্রথম, তিনি শেষ, তিনি প্রকাশ্য, তিনি গোপন)। —আহমদ ও তিরমিযী। ইমাম তিরমিযী বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এই আয়াতটি পাঠ করিয়া এই কথাটি বুঝাইতে চাহিয়াছেন যে, “নিকট পৌঁছিবে” দ্বারা উদ্দেশ্য হইল, আল্লাহর জ্ঞান, কুদ্রত ও ক্ষমতায় গিয়া পৌঁছিবে। কারণ, আল্লাহর জ্ঞান, তাঁহার ক্ষমতা এবং রাজত্ব সর্বস্থান বেষ্টিত এবং তিনি আরশের উপরেই বিরাজমান। যেমন, তাঁহার পবিত্র কিতাবে তিনি এইভাবেই নিজের পরিচিতি দান করিয়াছেন।
অতঃপর তিনি বলিলেন, তোমরা কি জান, তোমাদের নীচে কি? তাহারা বলিলেন, আল্লাহ্ ও তাঁহার রাসূল অধিক জানেন। তিনি বলিলেন, যমীন। ইহার পর তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, তোমরা কি জান ইহার নীচে কি? তাহারা বলিলেন, আল্লাহ্ ও তাঁহার রাসূল অধিক জানেন। তিনি বলিলেন, উহার নীচে আরেক যমীন এবং উভয় যমীনের মাঝখানের ব্যবধান হইল পাঁচ শত বৎসর। এমন কি তিনি যমীনের সংখ্যা সাতখানা বর্ণনা করিলেন এবং বলিলেন, প্রত্যেক দুই যমীনের মাঝখানে পাঁচ শত বৎসরের ব্যবধান। অতঃপর তিনি বলিলেন, সেই মহান সত্তার কসম যাঁহার হাতে মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর প্রাণ। যদি তোমরা একখানা রশি নীচে যমীনের দিকে ঝুলাইয়া দাও, উহা অবশ্যই আল্লাহর নিকটে যাইয়া পৌঁছিবে। অতঃপর তিনি কুরআনের এই আয়াতটি পাঠ করিলেন— هُوَ الْأَوَّلُ وَالْآخِرُ وَالظَّاهِرُ وَالْبَاطِنُ وَهُوَ بِكُلِّ شيءٍ عليم (অর্থাৎ, তিনি প্রথম, তিনি শেষ, তিনি প্রকাশ্য, তিনি গোপন)। —আহমদ ও তিরমিযী। ইমাম তিরমিযী বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এই আয়াতটি পাঠ করিয়া এই কথাটি বুঝাইতে চাহিয়াছেন যে, “নিকট পৌঁছিবে” দ্বারা উদ্দেশ্য হইল, আল্লাহর জ্ঞান, কুদ্রত ও ক্ষমতায় গিয়া পৌঁছিবে। কারণ, আল্লাহর জ্ঞান, তাঁহার ক্ষমতা এবং রাজত্ব সর্বস্থান বেষ্টিত এবং তিনি আরশের উপরেই বিরাজমান। যেমন, তাঁহার পবিত্র কিতাবে তিনি এইভাবেই নিজের পরিচিতি দান করিয়াছেন।
كتاب أحوال القيامة وبدء الخلق
وَعَنْهُ قَالَ: بَيْنَمَا نَبِيُّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَالِسٌ وَأَصْحَابُهُ إِذْ أَتَى عَلَيْهِمْ سَحَابٌ فَقَالَ نَبِيُّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «هَلْ تَدْرُونَ مَا هَذَا؟» . قَالُوا: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ. قَالَ: «هَذِهِ الْعَنَانُ هَذِهِ رَوَايَا الْأَرْضِ يَسُوقُهَا اللَّهُ إِلَى قَوْمٍ لَا يَشْكُرُونَهُ وَلَا يَدعُونَهُ» . ثمَّ قَالَ: «هَل تَدْرُونَ من فَوْقَكُمْ؟» قَالُوا: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ. قَالَ: «فَإِنَّهَا الرَّقِيعُ سَقْفٌ مَحْفُوظٌ وَمَوْجٌ مَكْفُوفٌ» . ثُمَّ قَالَ: «هَلْ تَدْرُونَ مَا بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهَا؟» قَالُوا: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ. قَالَ: «بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهَا خَمْسُمِائَةِ عَامٍ» ثُمَّ قَالَ: «هَلْ تَدْرُونَ مَا فَوْقَ ذَلِكَ؟» . قَالُوا: اللَّهُ ورسولُه أعلمُ. قَالَ: «سماءانِ بُعْدُ مَا بَيْنَهُمَا خَمْسُمِائَةِ سَنَةٍ» . ثُمَّ قَالَ كَذَلِكَ حَتَّى عَدَّ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ «مَا بَيْنَ كُلِّ سَمَاءَيْنِ مَا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ» . ثُمَّ قَالَ: «هَلْ تَدْرُونَ مَا فَوْقَ ذَلِكَ؟» قَالُوا: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ. قَالَ: «إِنَّ فَوْقَ ذَلِكَ الْعَرْشُ وَبَيْنَهُ وَبَيْنَ السَّمَاءِ بُعْدُ مَا بَيْنَ السَّماءين» . ثُمَّ قَالَ: «هَلْ تَدْرُونَ مَا تَحْتَ ذَلِكَ؟» . قَالُوا: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ. قَالَ: «إِنَّ تَحْتَهَا أَرْضًا أُخْرَى بَيْنَهُمَا مَسِيرَةُ خَمْسِمِائَةِ سَنَةٍ» . حَتَّى عدَّ سَبْعَ أَرضين بَين كلَّ أَرضين مسيرَة خَمْسمِائَة سنة قَالَ: «وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَوْ أَنَّكُمْ دَلَّيْتُمْ بِحَبْلٍ إِلَى الْأَرْضِ السُّفْلَى لَهَبَطَ عَلَى اللَّهِ» ثُمَّ قَرَأَ (هُوَ الْأَوَّلُ وَالْآخِرُ وَالظَّاهِرُ وَالْبَاطِنُ وَهُوَ بِكُلِّ شيءٍ عليم) رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ. وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: قِرَاءَةُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْآيَةَ تَدُلُّ على أَنه أَرَادَ الهبط عَلَى عِلْمِ اللَّهِ وَقُدْرَتِهِ وَسُلْطَانِهِ وَعِلْمُ اللَّهِ وَقُدْرَتُهُ وَسُلْطَانُهُ فِي كُلِّ مَكَانٍ وَهُوَ عَلَى الْعَرْش كَمَا وصف نَفسه فِي كِتَابه