মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
২৯- সৃষ্টির সূচনা ও কিয়ামত পরবর্তী বর্ণনা
হাদীস নং: ৫৭০৮
- সৃষ্টির সূচনা ও কিয়ামত পরবর্তী বর্ণনা
প্রথম অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির সূচনা ও নবী-রাসূলদের আলোচনা
৫৭০৮। হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, একবার একজন মুসলমান ও একজন ইহুদী পরস্পরে গালাগালিতে লিপ্ত হইল। মুসলমান লোকটি বলিল, সেই মহান সত্তার কসম। যিনি মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে সমগ্র জগতের উপর মনোনীত করিয়াছেন। তখন ইহুদী বলিয়া উঠিল; কসম সেই সত্তার। যিনি মুসা (আঃ)-কে সারা জাহানের উপর মনোনীত করিয়াছেন। (এই কথাটি শুনামাত্রই) মুসলমান লোকটি তৎক্ষণাৎ ইহুদীর গালে একটি থাপ্পড় মারিল। অতঃপর সেই ইহুদী নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট যাইয়া তাহার ও মুসলমান লোকটির মধ্যে সংঘটিত ব্যাপারটি তাঁহাকে জানাইল। তখন নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলমান লোকটিকে ডাকাইয়া আনিলেন এবং ঘটনাটির সত্যতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিলেন, সেও ঘটনাটি (আদ্যোপান্ত) বর্ণনা করিল। তখন নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন, 'আমাকে মুসা (আঃ)-এর উপর প্রাধান্য দিতে যাইও না। কেননা, কিয়ামতের দিন সমস্ত মানুষই বেহুঁশ হইয়া পড়িবে, আমিও তাহাদের সহিত বেহুঁশ থাকিব। তবে আমিই সর্বপ্রথম হুঁশ ফিরিয়া পাইতেই দেখিব, মুসা (আঃ) আরশের একপাশ ধরিয়া রহিয়াছেন। তবে আমি জানি না, তিনিও বেহুঁশ হইয়াছেন এবং আমার আগেই হুঁশপ্রাপ্ত হইয়াছেন অথবা তিনি তাহাদেরই অন্তর্ভুক্ত, যাহাদিগকে মহান আল্লাহ্ (বেহুঁশ হওয়া হইতে) বাদ রাখিয়াছেন।
অপর এক বর্ণনায় আছে—নবী (ছাঃ) বলিয়াছেন: আমি জানি না, 'তুর' পাহাড়ের ঘটনার দিন তিনি যে বেহুঁশ হইয়াছিলেন, উহা হিসাবে রাখা হইয়াছে (এবং উহার বিনিময়ে আজ এখানে আদৌ বেহুঁশ হন নাই) অথবা আমার আগেই তিনি হুঁশ ফিরিয়া পাইয়াছেন? তিনি আরও বলিয়াছেন; “আমি ইহাও বলিব না যে, কোন ব্যক্তি হযরত ইউনুস ইবনে মাত্তা অপেক্ষা উত্তম।
অপর এক বর্ণনায় আছে—নবী (ছাঃ) বলিয়াছেন: আমি জানি না, 'তুর' পাহাড়ের ঘটনার দিন তিনি যে বেহুঁশ হইয়াছিলেন, উহা হিসাবে রাখা হইয়াছে (এবং উহার বিনিময়ে আজ এখানে আদৌ বেহুঁশ হন নাই) অথবা আমার আগেই তিনি হুঁশ ফিরিয়া পাইয়াছেন? তিনি আরও বলিয়াছেন; “আমি ইহাও বলিব না যে, কোন ব্যক্তি হযরত ইউনুস ইবনে মাত্তা অপেক্ষা উত্তম।
كتاب أحوال القيامة وبدء الخلق
وَعَنْهُ قَالَ: اسْتَبَّ رَجُلٌ مِنَ الْمُسْلِمِينَ وَرَجُلٌ مِنَ الْيَهُودِ. فَقَالَ الْمُسْلِمُ: وَالَّذِي اصْطَفَى مُحَمَّدًا عَلَى الْعَالَمِينَ. فَقَالَ الْيَهُودِيُّ: وَالَّذِي اصْطَفَى مُوسَى عَلَى الْعَالَمِينَ. فَرَفَعَ الْمُسْلِمُ يَدَهُ عِنْدَ ذَلِكَ فَلَطَمَ وَجْهَ الْيَهُودِيِّ فَذَهَبَ الْيَهُودِيُّ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَخْبَرَهُ بِمَا كَانَ من أمره وأمرِ الْمُسلم فَدَعَا النَّبِي صلى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمُسْلِمَ فَسَأَلَهُ عَنْ ذَلِكَ فَأَخْبَرَهُ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تُخَيِّرُونِي عَلَى مُوسَى فَإِنَّ النَّاسَ يُصْعَقُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَأُصْعَقُ مَعَهُمْ فَأَكُونُ أَوَّلَ مَنْ يُفِيقُ فَإِذَا مُوسَى بَاطِشٌ بِجَانِبِ الْعَرْشِ فَلَا أَدْرَى كَانَ فِيمَنْ صُعِقَ فَأَفَاقَ قَبْلِي أَوْ كَانَ فِيمَنِ اسْتَثْنَى اللَّهُ.» . وَفِي رِوَايَةٍ: فَلَا أَدْرِي أَحُوسِبَ بِصَعْقَةِ يَوْمِ الطُّورِ أَوْ بُعِثَ قَبْلِي؟ وَلَا أَقُولُ: أَنَّ أَحَدًا أَفْضَلَ مِنْ يُونُسَ بنِ مَتَّى
হাদীসের ব্যাখ্যা:
অর্থাৎ, আল্লাহ্ তা'আলা যাঁহাদেরকেই নবুওতের দ্বারা সম্মানিত করিয়াছেন, তাঁহারা সকলেই মর্যাদাসম্পন্ন। আল্লাহর নিকটে তাঁহারা تِلْكَ الرُّسُلُ فَضَّلْنَا بَعْضَهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ অর্থাৎ, এই রাসূলগণ এমন যে, আমি তাঁহাদের একজনকে অন্যজনের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়াছি। কিন্তু আমাদের জন্য নির্দেশ হইল, لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِّن رُّسُلِهِ অর্থাৎ, আমরা তাঁহার রাসূলগণের কাহারও মধ্যে পার্থক্য করি না। তবে যদিও হুযূর (ﷺ) আশরাফুল আম্বিয়া এবং সহীহ্ হাদীস ও নস্ দ্বারা ইহা প্রমাণিত। কিন্তু এখানে নবীদের মধ্যে তুলনামূলক মর্যাদা বর্ণনা করিতে নিষেধ করা হইয়াছে, যদ্দ্বারা অন্যের সম্মানের হানি হইতে পারে। আর কিয়ামতের দিন বেহুঁশী হইতে কাহাকে কাহাকে রেহাই দেওয়া হইবে তাহা আল্লাহ্ই ভাল জানেন। এই ব্যাপারে কোরআনে বর্ণিত হইয়াছে, وَنُفِخَ فِي الصُّورِ فَصَعِقَ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَمَن فِي الْأَرْضِ إِلَّا مَن شَاءَ اللَّهُ [অর্থাৎ, আর (কিয়ামত দিবসে) শিঙ্গায় ফুৎকার দেওয়া হইবে, তখন আসমানসমূহ ও যমীনের অধিবাসীগণ হতজ্ঞান হইয়া পড়িবে, কিন্তু আল্লাহ্ যাহাকে চাহেন (সে উহা হইতে রক্ষা পাইবে)।] অবশ্য কেহ কেহ বলিয়াছেন, আরশ বহনকারী ফেরেশতাগণ বেহুঁশ হইবেন না।