মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

২৯- সৃষ্টির সূচনা ও কিয়ামত পরবর্তী বর্ণনা

হাদীস নং: ৫৫৫৫
প্রথম অনুচ্ছেদ - হিসাব-নিকাশ, প্রতিশোধ গ্রহণ ও মীযানের বর্ণনা
৫৫৫৫। হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, সাহাবাগণ বলিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! কিয়ামতের দিন কি আমরা আমাদের রবকে দেখিতে পাইব? তিনি বলিলেনঃ দ্বিপ্রহরে মেঘমুক্ত আকাশে সূর্য দেখিতে কি তোমাদের মধ্যে পরস্পরে বাধা সৃষ্টি হয় ? তাহারা বলিলেন, না। তিনি আরও বলিলেন; মেঘমুক্ত আকাশে পূর্ণিমার রাত্রে পূর্ণ চাঁদ দেখিতে কি তোমাদের কোন প্রকারের অসুবিধা হয় ? তাহারা বলিলেন, না। অতঃপর তিনি বলিলেন; সেই মহান সত্তার কসম, যাহার হাতে আমার প্রাণ ! এই দুইটির কোন একটিকে দেখিতে তোমাদের যেই পরিমাণ অসুবিধা হয়, সেই দিন তোমাদের রবকে দেখিতে সেই পরিমাণ অসুবিধাও হইবে না। ইহার পর হুযূর (ﷺ) বলিয়াছেন, তখন আল্লাহ্ তা'আলা কোন এক বান্দাকে লক্ষ্য করিয়া বলিবেনঃ হে অমুক! আমি কি তোমাকে মর্যাদা দান করি নাই? আমি কি তোমাকে সর্দারী দান করি নাই? আমি কি তোমাকে বিবি দান করি নাই? আমি কি তোমার জন্য ঘোড়া ও উটকে অনুগত করিয়া দেই নাই? আমি কি তোমাকে এই সুযোগ দেই নাই যে, তুমি নিজ সম্প্রদায়ের নেতৃত্ব দিবে এবং তাহাদের নিকট হইতে এক-চুতর্থাংশ মাল ভোগ করিবে? জবাবে বান্দা বলিবে—হ্যাঁ, (আয় আমার পরওয়ারদিগার!) অতঃপর হুযূর (ﷺ) বলেন, তখন আল্লাহ্ তা'আলা বান্দাকে বলিবেনঃ আচ্ছা বল দেখি; তোমার কি এই ধারণা ছিল যে, তুমি আমার সাক্ষাৎ লাভ করিবে? বান্দা বলিবে না। এইবার আল্লাহ্ বলিবেনঃ (দুনিয়াতে) তুমি যেইভাবে আমাকে ভুলিয়া রহিয়াছিলে, আজ আমিও (আখেরাতে) অনুরূপভাবে তোমাকে ভুলিয়া থাকিব। (অর্থাৎ, তোমাকে আযাবে লিপ্ত রাখিব।) অতঃপর আল্লাহ্ তা'আলা দ্বিতীয় এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করিবেন, সেও অনুরূপ বলিবে। তারপর তৃতীয় এক ব্যক্তির সাথে সাক্ষাৎ করিবেন এবং তাহাকেও অনুরূপ কথা জিজ্ঞাসা করিলে সে বলিবে, হে পরওয়ারদিগার! আমি তোমার প্রতি, তোমার কিতাবের প্রতি এবং তোমার সমস্ত নবীগণের প্রতি ঈমান রাখিয়াছি, নামায পড়িয়াছি, রোযা রাখিয়াছি এবং দান-সদকা করিয়াছি। মোটকথা, সে সাধ্য পরিমাণ নিজের নেক কার্যসমূহের একটি তালিকা আল্লাহর সম্মুখে তুলিয়া ধরিবে। তখন আল্লাহ্ তা'আলা বলিবেনঃ আচ্ছা! তুমি তো তোমার কথা বলিলে, এখন—এখানেই দাঁড়াও, এক্ষুণি তোমার ব্যাপারে সাক্ষী উপস্থিত করিতেছি। এই কথা শুনিয়া বান্দা মনে মনে চিন্তা করিবে, এমন কে আছে যে, এখানে আমার বিরুদ্ধে সাক্ষী দিবে?
অতঃপর তাহার মুখে মোহর লাগাইয়া দেওয়া হইবে এবং তাহার রানকে বলা হইবে, তুমি বল, তখন তাহার রান, হাড়, মাংস প্রভৃতি এক একটি করিয়া বলিয়া ফেলিবে, উহারা যাহা যাহা করিয়াছিল। তাহার মুখে মোহর লাগাইয়া অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হইতে এই জন্য সাক্ষ্য গ্রহণ করা হইবে, যেন সেই বান্দা কোন ওযর আপত্তি পেশ করিতে না পারে। বস্তুতঃ যেই বান্দার কথা আলোচনা করা হইয়াছে, সে হইল মুনাফিক এবং এই কারণেই আল্লাহ্ তাহার প্রতি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হইবেন। —মুসলিম। আর হযরত আবু হোরায়রা কর্তৃক বর্ণিত হাদীস — يَدْخُلُ مِنْ أُمَّتِي الْجَنَّةَ তাওয়াক্কুলের অধ্যায়ে ইবনে আব্বাসের রেওয়ায়তে বর্ণনা করা হইয়াছে।
وَعَن أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ هَلْ نَرَى رَبنَا يَوْم الْقِيَامَة؟ قَالَ: «فَهَل تُضَارُّونَ فِي رُؤْيَةِ الشَّمْسِ فِي الظَّهِيرَةِ لَيْسَتْ فِي سَحَابَةٍ؟» قَالُوا: لَا قَالَ: «فَهَلْ تُضَارُّونَ فِي رؤيةالقمر لَيْلَةَ الْبَدْرِ لَيْسَ فِي سَحَابَةٍ؟» قَالُوا: لَا قَالَ: «فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَا تُضَارُّونَ فِي رُؤْيَةِ رَبِّكُمْ إِلَّا كَمَا تُضَارُّونَ فِي رُؤْيَةِ أَحَدِهِمَا» . قَالَ: فَيَلْقَى الْعَبْدَ فَيَقُولُ: أَيْ فُلْ: أَلَمْ أُكْرِمْكَ وَأُسَوِّدْكَ وَأُزَوِّجْكَ وَأُسَخِّرْ لَكَ الْخَيْلَ وَالْإِبِلَ وَأَذَرْكَ تَرْأَسُ وَتَرْبَعُ؟ فَيَقُولُ بَلَى قَالَ: أَفَظَنَنْتَ أَنَّكَ مُلَاقِيَّ؟ فَيَقُولُ لَا فَيَقُولُ: فَإِنِّي قَدْ أَنْسَاكَ كَمَا نَسِيتَنِي ثُمَّ يَلْقَى الثَّانِيَ فَذَكَرَ مِثْلَهُ ثُمَّ يَلْقَى الثَّالِثَ فَيَقُولُ لَهُ مثل ذَلِك فَيَقُول يارب آمَنْتُ بِكَ وَبِكِتَابِكَ وَبِرُسُلِكَ وَصَلَّيْتُ وَصُمْتُ وَتَصَدَّقْتُ ويثني بِخَير مااستطاع فَيَقُول: هَهُنَا إِذا. ثمَّ يُقَال الْآن تبْعَث شَاهِدًا عَلَيْكَ وَيَتَفَكَّرُ فِي نَفْسِهِ: مَنْ ذَا الَّذِي يَشْهَدُ عَلَيَّ؟ فَيُخْتَمُ عَلَى فِيهِ وَيُقَالُ لِفَخِذِهِ: انْطِقِي فَتَنْطِقُ فَخِذُهُ وَلَحْمُهُ وَعِظَامُهُ بِعَمَلِهِ وَذَلِكَ لِيُعْذِرَ مِنْ نَفْسِهِ وَذَلِكَ الْمُنَافِقُ وَذَلِكَ يسخطُ اللَّهُ عَلَيْهِ رَوَاهُ مُسلم وذُكر حَدِيث أبي: «يَدْخُلُ مِنْ أُمَّتِي الْجَنَّةَ» فِي «بَابِ التَّوَكُّلِ» بِرِوَايَة ابْن عَبَّاس
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান