মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

২৯- সৃষ্টির সূচনা ও কিয়ামত পরবর্তী বর্ণনা

হাদীস নং: ৫৫২১
- সৃষ্টির সূচনা ও কিয়ামত পরবর্তী বর্ণনা
প্রথম অনুচ্ছেদ - শিঙ্গায় ফুৎকার
৫৫২১। হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন : দুইটি ফুৎকারের মধ্যখানে ব্যবধান হইবে চল্লিশ। লোকেরা জিজ্ঞাসা করিল, হে আবু হোরায়রা। চল্লিশ দিন? তিনি বলিলেন, আমি উত্তর দিতে অস্বীকার করি। অর্থাৎ, আমি জানি না।) তাহারা জিজ্ঞাসা করিল, চল্লিশ মাস? তিনি বলিলেন, আমি উত্তর দিতে অস্বীকার করি। লোকেরা জিজ্ঞাসা করিল, চল্লিশ বৎসর। তিনি বলিলেন, আমি জবাব দিতে অস্বীকার করি। (অর্থাৎ, আমি সেই মুদ্দত সম্পর্কে অবগত নহি, সুতরাং সেই বিষয়ে আমি বলিতে পারি না। ) অতঃপর আল্লাহ্ তা'আলা আসমান হইতে বৃষ্টি বর্ষণ করিবেন, তখন মৃত দেহগুলি এমনভাবে জীবিত হইয়া উঠিবে, যেমনিভাবে (বৃষ্টির পানিতে) ঘাস-লতা ইত্যাদি গজাইয়া উঠে। অতঃপর হুযূর (ছাঃ) বলিয়াছেন; মেরুদণ্ডের নিম্নাংশের একটি হাড় ছাড়া মানবদেহের সমস্ত কিছুই মাটিতে গলিয়া বিলীন হইয়া যাইবে এবং কিয়ামতের দিন সেই হাড্ডি হইতে গোটা দেহের পুনর্গঠন করা হইবে। -মোত্তাঃ। আর মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় আছে— নবী (ছাঃ) বলিয়াছেন: মাটি আদম সন্তানের প্রতিটি অংশ খাইয়া ফেলিবে, তবে তাহার মেরুদণ্ডের নিম্নাংশ খাইবে না। উহা হইতেই মানবদেহ সৃষ্টি করা হইয়াছে এবং (কিয়ামতের দিন) ইহা হইতে তাহাকে পত্তন করা হইবে।
كتاب أحوال القيامة وبدء الخلق
بَاب النفخ فِي الصُّور: الْفَصْل الأول
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا بَيْنَ النَّفْخَتَيْنِ أَرْبَعُونَ» قَالُوا: يَا أَبَا هُرَيْرَةَ أَرْبَعُونَ يَوْمًا؟ قَالَ: أَبَيْتُ. قَالُوا: أَرْبَعُونَ شَهْرًا؟ قَالَ: أَبَيْتُ. قَالُوا: أَرْبَعُونَ سَنَةً؟ قَالَ: أَبَيْتُ. «ثُمَّ يَنْزِلُ اللَّهُ مِنَ السَّمَاءِ مَاءٌ فَيَنْبُتُونَ كَمَا يَنْبُتُ الْبَقْلُ» قَالَ: «وَلَيْسَ مِنَ الْإِنْسَانِ شَيْءٌ لَا يَبْلَى إِلَّا عَظْمًا وَاحِدًا وَهُوَ عَجْبُ الذَّنَبِ وَمِنْهُ يُرَكَّبُ الْخَلْقُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ. وَفِي رِوَايَةٍ لِمُسْلِمٍ قَالَ: «كُلُّ ابْنِ آدَمَ يَأْكُلُهُ التُّرَابُ إِلَّا عَجْبَ الذَّنَبِ مِنْهُ خُلِقَ وَفِيهِ يركب»

হাদীসের ব্যাখ্যা:

আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের এই আকীদা রহিয়াছে যে, ফেরেশতা হযরত ইস্রাফীল (আঃ) শিঙ্গায় ফুঁকিবেন এবং তৎক্ষণাৎ এই দুনিয়ায় মহাপ্রলয় ঘটিয়া যাইবে। কুরআনের বহু আয়াতে ইহার প্রমাণ স্পষ্টভাবে বিদ্যমান। তবে ‘নফখে সূর' অর্থাৎ, সিঙ্গায় ফুঁক কতবার দেওয়া হইবে এই সম্পর্কে কিছুটা মতভেদ রহিয়াছে। হযরত শাহ্ মুহাদ্দিসে দেহলবী (রহঃ) বলিয়াছেন, দুইবার ফুঁকিবেন। প্রথম ফুৎকারে আসমান ও যমীনে যাহাকিছু আছে সবকিছু ধ্বংস হইয়া যাইবে এবং দ্বিতীয় ফুৎকারে সমস্ত মৃত নিজ নিজ কবর হইতে বাহির হইয়া আসিবে এবং ময়দানে হাশরে একত্রিত হইবে। আবার কেহ কেহ বলেন, তিনবার ফুঁকিবেন। প্রথমবারে আসমান-যমীনের সকলেই ভীত-সন্ত্রস্ত হইয়া যাইবে। যেমন, কোরআনে উল্লেখ রহিয়াছে—

وَيَوْمَ يُنْفَخُ فِي الصُّوْرِ فَفَزِعَ مَنْ فِي السَّمَوَاتِ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ

২য় বারে সব মরিয়া যাইবে, وَنُفِخَ فِي الصُّورِ فَصَعِقَ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَمَن فِي الْأَرْضِ إِلَّا مَن شَاءَ اللَّهُ ۖ ثُمَّ نُفِخَ فِيهِ أُخْرَىٰ এবং ৩য় বারে সকলে জীবিত হইয়া হাশরের ময়দানে জমায়েত হইবে। যেমন, وَنُفِخَ فِي الصُّورِ فَإِذَا هُم مِّنَ الْأَجْدَاثِ إِلَىٰ رَبِّهِمْ يَنسِلُونَ- فَإِذَا هُمْ قِيَامٌ يَنظُرُونَ আল্লামা সুয়ূতী (রহঃ)-ও বলেন, তিনবার শিঙ্গায় ফুৎকার দেওয়া হইবে। যথা—নাফখাতুল ফাযা, নাফখাতুস্ সায়েক ও নাফখাতুল বা’স।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান