মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
২৬- আদাব - শিষ্টাচার অধ্যায়
হাদীস নং: ৪৯৭২
১৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ
৪৯৭২। হযরত আবু মুসা (আশ্আরী [রাঃ]) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিয়াছেনঃ বৃদ্ধ মুসলমানকে সম্মান করা এবং এমন কোরআন সংরক্ষণকারীকে সম্মান করা—যে উহাতে বাড়াবাড়ি এবং উহার হক আদায়ে ত্রুটি করে না এবং ন্যায়পরায়ণ শাসককে সম্মান করা আল্লাহকে সম্মান করারই অন্তর্ভুক্ত। –আবু দাউদ ও বায়হাকী
وَعَنْ
أَبِي مُوسَى قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ مِنْ إِجْلَالِ الله إكْرامَ ذِي الشَّيبةِ المسلمِ وَحَامِلُ الْقُرْآنِ غَيْرَ الْغَالِي فِيهِ وَلَا الْجَافِي عَنْهُ وَإِكْرَامُ السُّلْطَانِ الْمُقْسِطِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالْبَيْهَقِيُّ فِي «شُعَبِ الْإِيمَانِ»
أَبِي مُوسَى قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ مِنْ إِجْلَالِ الله إكْرامَ ذِي الشَّيبةِ المسلمِ وَحَامِلُ الْقُرْآنِ غَيْرَ الْغَالِي فِيهِ وَلَا الْجَافِي عَنْهُ وَإِكْرَامُ السُّلْطَانِ الْمُقْسِطِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالْبَيْهَقِيُّ فِي «شُعَبِ الْإِيمَانِ»
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছে তিন শ্রেণীর লোকের প্রতি সম্মান প্রদর্শনকে আল্লাহর প্রতি সম্মান প্রদর্শন সাব্যস্ত করা হয়েছে। তারা হলো বৃদ্ধ লোক, কুরআনের বাহক ও ন্যায়পরায়ণ শাসক।
বৃদ্ধ লোককে সম্মান করা
إِكْرَامَ ذِي الشَّيْبةِ المُسْلِمِ (বৃদ্ধ মুসলিমকে সম্মান করা)। অর্থাৎ যে মুসলিম ব্যক্তির চুল- দাড়ি পেকে গেছে, বার্ধক্য পরিস্ফুট হয়ে গেছে, ইসলাম ও বার্ধক্যের কারণে তাকে যে সম্মান দেখায়, সে যেন আল্লাহ তাআলাকেই সম্মান দেখায়। সুতরাং আল্লাহ তাআলার প্রতি ভক্তি-সম্মান প্রদর্শনের দাবি হলো মজলিস-বৈঠকে প্রবীণ ও বয়স্ক মুসলিমদেরকে সম্মানজনক স্থানে বসানো, তাদের প্রতি ভক্তিপূর্ণ আচরণ করা, প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে তাদের যথাযথ সেবাযত্ন করা। যেমন হাত ধরে রাস্তা পার করিয়ে দেওয়া, যানবাহনে উঠতে সাহায্য করা, ওযূ-ইস্তিঞ্জায় আসানীর প্রতি লক্ষ রাখা ইত্যাদি।
আলেম, হাফেয ও কারীকে সম্মান করা।
وَحَامِلِ الْقُرآنِ غَيْرِ الْغَالي فِيهِ، والجَافي عَنْهُ (কুরআনের যে বাহক তাতে বাড়াবাড়ি করে না এবং তার প্রতি অবহেলাও প্রদর্শন করে না তাকে সম্মান করা)। কুরআনের বাহক বলতে কুরআন মাজীদের আলেম, কুরআন মাজীদের হাফেয ও কারীকে বোঝানো উদ্দেশ্য। কুরআন আল্লাহ তাআলার কালাম ও তাঁর শ্রেষ্ঠতম কিতাব। এর মর্যাদা জগতের সমস্ত কিতাবের উর্ধ্বে। এর সঙ্গে অন্য কোনও গ্রন্থকে তুলনা করা যায় না। এর মর্যাদার কারণে এর বাহকও মর্যাদাবান হয়ে যায়। তাদেরকে আখেরাতে আল্লাহ তাআলা যে সম্মান দান করবেন, সে সম্পর্কে এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে-
يُقَالُ لِصَاحِبِ الْقُرْآنِ اِقْرَأْ ، وَارْتَقِ، وَرَتِّلْ كَمَا كُنْتَ تُرَتِّلُ فِي الدُّنْيَا، فَإِنَّ مَنْزَلَكَ عِنْدَ آخِرِ آيَةٍ تَقْرَؤُهَا
‘কুরআনওয়ালাকে বলা হবে, পড় ও চড় এবং দুনিয়ায় তুমি যেমন তারতীলের সঙ্গে পড়তে সেভাবেই পড়তে থাক। তুমি সবশেষে যে আয়াত পড়বে, সেখানেই তোমার স্থান।২০৪
সুতরাং যারা কুরআন মাজীদের ইলম অর্জন করেছে, যারা কুরআনের হাফেয হয়েছে কিংবা যারা কুরআন মাজীদের সহীহ-শুদ্ধ পাঠসম্পর্কিত বিদ্যার্জন করে কারীর মর্যাদায় ভূষিত হয়েছে, প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য তাদের প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা-ভক্তি লালন করা। এ শ্রদ্ধাভক্তি আল্লাহ তাআলার প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তিরই দাবি। তাদের প্রতি অমর্যাদাকর আচরণ দ্বারা আল্লাহ তাআলাকেই অমর্যাদা করার নামান্তর। কেননা কুরআনের আলেম হওয়ার কারণে কাউকে অবজ্ঞা করলে তার অর্থ তো এটাই দাঁড়ায় যে, সে অবজ্ঞাকারীর অন্তরে কুরআন মাজীদের প্রতি কোনও ভক্তি-ভালোবাসা নেই। আল্লাহ তাআলার প্রতি কারও ভক্তি-ভালোবাসা থাকলে সে তার কালামকে ভক্তি না করে পারে কি? আজ মুসলিম সমাজের আত্মজিজ্ঞাসার বড় প্রয়োজন। উলামার প্রতি এ সমাজ যে দৃষ্টিভঙ্গি লালন করে তা আল্লাহভক্তির ঠিক কতখানি পরিচয় বহন করে?
এ হাদীছে কুরআন-বাহকের সম্মানপ্রাপ্তির জন্য দু'টি শর্ত আরোপ করা হয়েছে। একটি হলো কুরআনের মধ্যে গুলু বা বাড়াবাড়ি না করা, আর দ্বিতীয়টি হলো কুরআনের প্রতি অবহেলা প্রদর্শন না করা।
কুরআনের মধ্যে মানুষের তাত্ত্বিক বাড়াবাড়ি
কুরআনের মধ্যে গুলূ ও বাড়াবাড়ি করার বিভিন্ন দিক আছে। এর এক বাড়াবাড়ি হচ্ছে তাত্ত্বিক, আরেক বাড়াবাড়ি ব্যবহারিক। তাত্ত্বিক বাড়াবাড়ি হলো এর যে আয়াতের অর্থ আমাদের জানা নেই তার খোঁড়াখুঁড়িতে লিপ্ত হওয়া, যেমন মুতাশাবিহ আয়াত। কুরআন মাজীদের আয়াত দুই ভাগে বিভক্ত- মুহকাম ও মুতাশাবিহ। ইরশাদ হয়েছে- যেমন
هُوَ الَّذِي أَنْزَلَ عَلَيْكَ الْكِتَابَ مِنْهُ آيَاتٌ مُحْكَمَاتٌ هُنَّ أُمُّ الْكِتَابِ وَأُخَرُ
مُتَشَابِهَاتٌ
'(হে রাসূল!) সে আল্লাহই এমন সত্তা, যিনি তোমার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন, যার কিছু আয়াত মুহকাম, যার উপর কিতাবের মূল ভিত্তি এবং অপর কিছু আয়াত মুতাশাবিহ।২০৫
কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলার বিভিন্ন গুণের উল্লেখ করা হয়েছে। সেসব গুণ দ্বারা তাঁর অপার শক্তি ও মহা প্রজ্ঞা ফুটিয়ে তোলা উদ্দেশ্য। কোনও লোক যদি সে সকল গুণের হাকীকত ও সত্তাসারের দার্শনিক অনুসন্ধানে লিপ্ত হয়, তবে তার হয়রানি ও গোমরাহী ছাড়া আর কিছুই অর্জিত হবে না। কেননা সে তার সীমিত জ্ঞান-বুদ্ধি দ্বারা আল্লাহ তাআলার অসীম গুণাবলির রহস্য আয়ত্ত করতে চাচ্ছে, যা তার উপলব্ধির বহু ঊর্ধ্বের। যেমন আল্লাহ তাআলার একটি গুণ হলো শ্রবণশক্তি। আমাদের জন্য এতটুকু বিশ্বাসই যথেষ্ট যে, তাঁর এ গুণটি আছে। কিন্তু তিনি কিভাবে শোনেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। মানুষ কান দিয়ে শোনে। আল্লাহ মানুষের শ্রবণশক্তিকে তার কানের মধ্যে নিহিত রেখেছেন, তাই সে তার কান দ্বারা শোনে। মানুষ এতটুকুই বুঝতে সক্ষম যে, শুনতে কান লাগে। এখন সে যদি আল্লাহ তাআলার ক্ষেত্রেও এরকম চিন্তা করে যে, তাঁরও শুনতে কানের প্রয়োজন হয়, তবে তা হবে সৃষ্টির সঙ্গে স্রষ্টাকে তুলনা করার ভ্রষ্ট চিন্তা। আবার এ ভ্রষ্টতা থেকে বাঁচার জন্য যদি এ অনুসন্ধানে লিপ্ত হয় যে, তাহলে তিনি কিভাবে শোনেন, তবে তাও হবে বিভ্রান্তিকর জিজ্ঞাসা। কেননা তিনি কিভাবে শোনেন, কিভাবে বলেন বা কিভাবে দেখেন- এসব এমন বিষয়, যা মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধির অতীত। মানুষের জ্ঞানবুদ্ধির একটা সীমানা আছে। এসব বিষয় সে সীমানার অনেক অনেক উপরের। তাই সে তা কিভাবে বুঝতে সক্ষম হবে?
তাছাড়া মানবজীবনের কোনও ব্যবহারিক মাসআলা এর উপর নির্ভরশীলও নয়। এ জাতীয় বিষয় যেসব আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, তাকে ‘মুতাশাবিহ' আয়াত বলে, এমনিভাবে বিভিন্ন সূরার শুরুতে যে পৃথক পৃথক হরফ নাযিল করা হয়েছে (যেমন এ সূরারই শুরুতে আছে ‘আলিফ-লাম-মীম’) যাকে ‘আল-হুরূফুল মুকাত্তাআত' বলা হয়, তাও ‘মুতাশাবিহাত'-এর অন্তর্ভুক্ত। মুতাশাবিহাত সম্পর্কে কুরআন মাজীদের নির্দেশনা হলো, এর তত্ত্ব-তালাশের পেছনে না পড়ে মোটামুটিভাবে এর প্রতি ঈমান আনা, আর এর প্রকৃত মর্ম কী তা আল্লাহর উপর ছেড়ে দেওয়া।
এর বিপরীতে কুরআন মাজীদের অন্যান্য যে আয়াতসমূহ আছে তার মর্ম সুস্পষ্ট। প্রকৃতপক্ষে সেসকল আয়াতই মানুষের চলার পথ-নির্দেশ করে। এ রকম আয়াতকে "মুহকাম আয়াত বলে। একজন মুমিনের কর্তব্য বিশেষভাবে এ জাতীয় আয়াতে দৃষ্টি নিবন্ধ রাখা। মুতাশাবিহাতের পেছনে পড়া সম্পূর্ণ নিষেধ। তা সত্ত্বেও কেউ যদি তার পেছনে পড়ে, তবে তা হবে কুরআনের বিষয়বস্তু সম্পর্কে বাড়াবাড়িমূলক কৌতূহল ও নিষিদ্ধ 'গুল'। এটা বক্র হৃদয়ের পরিচায়ক। আল্লাহ তাআলা বলেন-
فَأَمَّا الَّذِينَ فِي قُلُوبِهِمْ زَيْغٌ فَيَتَّبِعُونَ مَا تَشَابَهَ مِنْهُ ابْتِغَاءَ الْفِتْنَةِ وَابْتِغَاءَ تَأْوِيلِهِ وَمَا يَعْلَمُ تَأْوِيلَهُ إِلَّا اللَّهُ وَالرَّاسِخُونَ فِي الْعِلْمِ يَقُولُونَ آمَنَّا بِهِ كُلٌّ مِنْ عِنْدِ رَبِّنَا وَمَا يَذَّكَّرُ إِلَّا أُولُو الْأَلْبَابِ
‘যাদের অন্তরে বক্রতা আছে, তারা সেই মুতাশাবিহ আয়াতসমূহের পেছনে পড়ে থাকে, উদ্দেশ্য ফিতনা সৃষ্টি করা এবং সেসব আয়াতের তাবীল খোঁজা, অথচ সেসব আয়াতের যথার্থ মর্ম আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। আর যাদের জ্ঞান পরিপক্ক তারা বলে, আমরা এর (সেই মর্মের) প্রতি বিশ্বাস রাখি (যা আল্লাহ তাআলার জানা)। সবকিছুই আমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে এবং উপদেশ কেবল তারাই গ্রহণ করে, যারা বুদ্ধিমান ।২০৬
গুলূ হতে পারে মুহকাম আয়াতেও। মুহকাম আয়াতের যে অর্থ ও ব্যাখ্যা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম থেকে বর্ণিত হয়ে এসেছে এবং উম্মতের সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকজন যা জেনে এসেছে তার বিপরীতে নিজস্ব ধ্যান-ধারণার সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য টানাহ্যাঁচড়া করে স্বতন্ত্র ব্যাখ্যা দাঁড় করানোর চেষ্টা করা একরকম গুলূ ও বাড়াবাড়ি বৈকি। টানাহ্যাঁচড়া করে দূর-দূরান্তের ব্যাখ্যা করতে চাইলে কুরআন মাজীদের কোনও আয়াতই অক্ষত থাকবে না। যে-কেউ যে-কোনও আয়াতে ছুরি চালাতে পারবে। এ যাবৎকাল যেসকল ভ্রান্ত দল-উপদলের সৃষ্টি হয়েছে, তা কেবল মুতাশাবিহ আয়াতকে অবলম্বন করেই হয়নি; বহু মুহকাম আয়াতের বাড়াবাড়িমূলক ব্যাখ্যাও এর জন্য দায়ী। কাজেই কুরআনের যেসকল বাহক এরকম বাড়াবাড়িতে লিপ্ত হয়, তারা কুরআনের বিশ্বস্ত বাহক নয়। অধিকাংশ বিদআতপন্থীই কুরআন মাজীদের প্রতি এ অবিশ্বস্ততার পরিচয় দিয়েছে। তারা দূর-দূরান্তের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ দ্বারা বহু মানুষকে সত্যিকার কুরআনপন্থী না বানিয়ে বিদআতের পথে পরিচালিত করেছে। তাই কুরআন- বাহক হওয়ার যে সম্মান ও মর্যাদা, তাও পাওয়ার কোনও অধিকার তারা রাখে না।
প্রকাশ থাকে যে, কুরআন তিলাওয়াতের ছাওয়াব পাওয়ার জন্য অর্থ বোঝা শর্ত নয়। একশ্রেণীর লোক এটিকে শর্ত মনে করে থাকে। কাজেই এটাও তাদের কুরআনের ক্ষেত্রে একরকম তাত্ত্বিক বাড়াবাড়ি।
কুরআনের মধ্যে ব্যবহারিক বাড়াবাড়ি
কুরআনের মধ্যে ব্যবহারিক বাড়াবাড়ি হলো- কুরআন যে আমলকে বৈধতা দান করেছে কিন্তু ফরয-ওয়াজিব করেনি, তাকে অবশ্যপালনীয় আমল বানানো; কুরআন যে আমলের জন্য বিশেষ কোনও শর্তারোপ করেনি, নিজের পক্ষ থেকে তাতে শর্ত যোগ করে দেওয়া; কুরআন বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতিতে যে আমলে বিশেষ কোনও ছাড় বা অবকাশ রেখেছে, সে আমলে সেই বিশেষ পরিস্থিতিতেও সাধারণ অবস্থার মত কোনওরূপ ছাড় বা অবকাশ গ্রহণ করতে না চাওয়া ইত্যাদি। আমলের ক্ষেত্রে এরূপ বাড়াবাড়ি দ্বারাও দীনের মধ্যে বিকৃতির অনুপ্রবেশ ঘটায়। তাই এরূপ বাড়াবাড়ি অবশ্যপরিত্যাজ্য। যারা এ বাড়াবাড়ি ছাড়তে রাজি নয়, তাদের এ কর্মপন্থা কুরআনের যথাযথ মর্যাদা রক্ষার অনুকূল নয় । তাই কুরআন-বাহকের জন্য নির্দিষ্ট মর্যাদাও তাদের প্রাপ্য নয়।
এমনিভাবে কুরআন তিলাওয়াতে সুর তোলার জন্য অতিরিক্ত কসরত করা, সঙ্গীতের মত সুরের লয়-তানে মনোযোগী হওয়া, হরফের মাখরাজ আদায়ে বাড়তি কষ্ট- ক্লেশ করা ইত্যাদি বিষয়গুলোও বাড়াবাড়ির মধ্যে পড়ে। এর থেকেও বিরত থাকা অতীব জরুরি। যেসকল কারী কুরআন তিলাওয়াতে এরূপ বাড়াবাড়ি করতে অভ্যস্ত, তারাও কুরআন-বাহকের মর্যাদায় অভিষিক্ত হওয়ার কোনও অধিকার রাখে না।
কুরআন মাজীদের প্রতি অবহেলা প্রদর্শন
এমনিভাবে কুরআন মাজীদের প্রতি অবহেলা প্রদর্শনও তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক উভয় রকমই হতে পারে। তাত্ত্বিক অবহেলা হলো- কুরআন মাজীদের অর্থ বুঝতে চেষ্টা না করা, কোনওমতে বুঝে ফেলাকেই যথেষ্ট মনে করা। আর ব্যবহারিক অবহেলা হলো- কুরআন তিলাওয়াতে গাফলাতি করা, কুরআনের শিক্ষা অনুযায়ী আমল না করে দুনিয়ার ভোগবিলাসে মত্ত থাকা। এরকম অবহেলার বিরুদ্ধেই তো আল্লাহ তাআলার সমীপে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অভিযোগ বর্ণিত হয়েছে-
وَقَالَ الرَّسُولُ يَارَبِّ إِنَّ قَوْمِي اتَّخَذُوا هَذَا الْقُرْآنَ مَهْجُورًا
‘আর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলবে, হে আমার প্রতিপালক! আমার সম্প্রদায় এ কুরআনকে পরিত্যক্ত করে রেখেছিল ।২০৭
কুরআনের প্রতি ঈমান না আনা যেমন কুরআনকে পরিত্যাগ করা, তেমনি কুরআন তিলাওয়াত না করা, তিলাওয়াত না শোনা, যার পক্ষে সম্ভব তার কুরআন বোঝার চেষ্টা না করা, অর্থের মধ্যে চিন্তাভাবনা না করা, কুরআন অনুযায়ী আমল না করা ইত্যাদি সবই কুরআন পরিত্যাগের মধ্যে পড়ে।
এটা কতইনা নিন্দনীয় কথা যে, এক ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা কুরআন পড়ার যোগ্যতা দিয়েছেন, তা সত্ত্বেও সে কুরআন পড়ে না। একজনকে কুরআনের ইলম দিয়েছেন, সে কুরআনের ইলম প্রচারও করে, তার প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে কুরআনের উদ্ধৃতিও দেয়, অথচ নিজে কুরআন অনুযায়ী আমল করে না। এটা ছিল ইহুদী জাতির বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ তাআলা তাদের নিন্দা করে বলেন-
مَثَلُ الَّذِينَ حُمِّلُوا التَّوْرَاةَ ثُمَّ لَمْ يَحْمِلُوهَا كَمَثَلِ الْحِمَارِ يَحْمِلُ أَسْفَارًا
‘যাদের উপর তাওরাতের ভার অর্পণ করা হয়েছিল, অতঃপর তারা সে ভার বহন করেনি (অর্থাৎ তাওরাতের বিধানাবলি পালন করার যে দায়িত্ব তাদের উপর অর্পণ করা হয়েছিল, তারা তা আদায় করেনি), তাদের দৃষ্টান্ত হলো ওই গাধা, যে কিতাব-পত্রের বোঝা বহন করে।২০৮
এরূপ নিন্দনীয় দৃষ্টান্ত থেকে বাঁচার লক্ষ্যে প্রত্যেক হাফেয, কারী ও আলেমের কর্তব্য নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াত করা এবং কুরআন অনুযায়ী আমল করতে সচেষ্ট থাকা।
ন্যায়পরায়ণ শাসককে সম্মান করা
তৃতীয় হলো- وإِكْرَامَ ذِي السُّلْطَانِ المُقْسِطِ (এবং ন্যায়পরায়ণ শাসককে সম্মান করা)। যে শাসক জনসাধারণের মধ্যে ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করে, নিজেও কারও প্রতি জুলুম করে না, জনগণকেও পারস্পরিক জুলুম-নিপীড়ন থেকে বিরত রাখে, আল্লাহ তাআলার কাছে তার মর্যাদা অপরিসীম। এক হাদীছ দ্বারা জানা যায়, হাশরের ময়দানে ন্যায়পরায়ণ শাসককে আরশের ছায়ায় স্থান দেওয়া হবে। অপর এক হাদীছে আছে-
إِنَّ الْمُقْسِطِينَ عِنْدَ اللهِ عَلَى مَنَابِرَ مِنْ نُورٍ، عَنْ يَمِينِ الرَّحْمَنِ عَزَّ وَجَلَّ، وَكِلْتَا يَدَيْهِ يَمِينٌ، الَّذِينَ يَعْدِلُونَ فِي حُكْمِهِمْ وَأَهْلِيهِمْ وَمَا وَلُوا
‘ন্যায়-ইনসাফকারীগণ আল্লাহর কাছে থাকবে নূরের মিম্বরের উপর, দয়াময় আল্লাহর ডান দিকে- তাঁর দু'হাতই ডান- যারা ন্যায়-ইনসাফ করে তাদের শাসনে, তাদের পরিবারবর্গের মধ্যে ও তাদের অধীনস্থদের মধ্যে।২০৯
আল্লাহ তাআলার কাছে যে ন্যায়পরায়ণ শাসকের এত উচ্চমর্যাদা, তাকে সম্মান করা বান্দারও কর্তব্য। ন্যায়পরায়ণ শাসককে সম্মান করলে আখেরাতেও সম্মান লাভ হবে। আর তাকে অসম্মান করলে আখেরাতে কঠিন দুর্ভোগের সম্মুখীন হতে হবে। এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে-
مَنْ أَكْرَمَ سُلْطَانَ اللهِ فِي الدُّنْيَا، أَكْرَمَهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، وَمَنْ أَهَانَ سُلْطَانَ اللَّهِ فِي الدُّنْيَا أَمَانَهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
‘যে ব্যক্তি দুনিয়ায় আল্লাহর (মনোনীত) শাসককে সম্মান করে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাকে সম্মানিত করবেন। আর যে ব্যক্তি দুনিয়ায় আল্লাহর (মনোনীত) শাসককে অসম্মান করে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাকে লাঞ্ছিত করবেন।’২১০
এটা তো স্পষ্ট যে, আল্লাহ তাআলার কাছে উচ্চমর্যাদা কেবল ওই শাসকের জন্যই নির্ধারিত, যিনি ন্যায়-ইনসাফের সঙ্গে শাসনকার্য পরিচালনা করেন। এরূপ শাসককেই মর্যাদা দেওয়া বান্দার কর্তব্য। পক্ষান্তরে যে শাসক জনগণের উপর জুলুম-নিপীড়ন চালায়, আল্লাহ তাআলার কাছে তার কোনও মর্যাদা নেই। আখেরাতে তাকে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন-
مَا مِنْ عَبْدٍ اسْتَرْعَاهُ اللَّهُ رَعِيَّةً، فَلَمْ يَحُطْهَا بِنَصِيحَةٍ، إِلَّا لَمْ يَجِدْ رَائِحَةَ الجَنَّةِ
‘আল্লাহ তাআলা তাঁর যে বান্দাকেই প্রজা-সাধারণের উপর তত্ত্বাবধায়ক বানান, অতঃপর সে কল্যাণকামিতার সঙ্গে তাদের রক্ষণাবেক্ষণ করে না, সে জান্নাতের সুবাসও পাবে না।২১১
আরেক হাদীছে আছে-
مَا مِنْ وَالٍ يَلِي رَعِيَّةً مِنَ المُسْلِمِينَ، فَيَمُوتُ وَهُوَ غَاشٌّ لَهُمْ، إِلَّا حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الجَنَّةَ
‘যে শাসকই মুসলিম প্রজা-সাধারণের কর্তৃত্ব লাভ করে, অতঃপর সে তাদের প্রতি জুলুম-অবিচারকারীরূপে মারা যায়, আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাত হারাম করেন।২১২
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. আল্লাহ তাআলার কাছে বৃদ্ধ মুসলিমের বিশেষ মর্যাদা আছে। তাদের সঙ্গে আমাদেরকে মর্যাদাপূর্ণ আচরণ করতে হবে।
খ. কুরআনের বাহক অর্থাৎ আলেম, হাফেয ও কারীর সঙ্গে শ্রদ্ধা-ভক্তিমূলক আচরণ করা চাই।
গ. যাকে আল্লাহ তাআলা কুরআনের বাহক বানিয়েছেন, তাকে অবশ্যই কুরআনভিত্তিক সর্বপ্রকার বাড়াবাড়ি থেকে বিরত থাকতে হবে।
ঘ. কুরআনের বাহক হওয়ার সৌভাগ্য যার লাভ হয়েছে তার কিছুতেই কুরআনের তিলাওয়াত ও অনুসরণ থেকে গাফেল হওয়া চলে না ৷
ঙ. ন্যায়পরায়ণ শাসকের প্রতি সম্মান বজায় রাখা উচিত।
চ. আল্লাহ তাআলার কাছে ওই শাসকেরই সম্মান আছে, যিনি ন্যায় ও ইনসাফের সঙ্গে দেশ শাসন করেন।
২০৪. সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ১৪৬৪; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২৯১৪; নাসাঈ, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৮০০২; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীছ নং ৩৪৭৯৩
২০৫. সূরা আলে ইমরান (৩), আয়াত ৭
২০৬. সূরা আলে ইমরান (৩), আয়াত ৭
২০৭. সূরা ফুরকান (২৫), আয়াত ৩০
২০৮. সূরা জুমুআ (৬২), আয়াত ৫
২০৯, সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৮২৭
২১০. মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২০৪৩৩; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৬৬৫৯; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৬৯৮৮; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২২২৪; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ২৪৬২
২১১. সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৭১৫০; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর, হাদীছ নং ৪৫৫
২১২. সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৭১৫১
বৃদ্ধ লোককে সম্মান করা
إِكْرَامَ ذِي الشَّيْبةِ المُسْلِمِ (বৃদ্ধ মুসলিমকে সম্মান করা)। অর্থাৎ যে মুসলিম ব্যক্তির চুল- দাড়ি পেকে গেছে, বার্ধক্য পরিস্ফুট হয়ে গেছে, ইসলাম ও বার্ধক্যের কারণে তাকে যে সম্মান দেখায়, সে যেন আল্লাহ তাআলাকেই সম্মান দেখায়। সুতরাং আল্লাহ তাআলার প্রতি ভক্তি-সম্মান প্রদর্শনের দাবি হলো মজলিস-বৈঠকে প্রবীণ ও বয়স্ক মুসলিমদেরকে সম্মানজনক স্থানে বসানো, তাদের প্রতি ভক্তিপূর্ণ আচরণ করা, প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে তাদের যথাযথ সেবাযত্ন করা। যেমন হাত ধরে রাস্তা পার করিয়ে দেওয়া, যানবাহনে উঠতে সাহায্য করা, ওযূ-ইস্তিঞ্জায় আসানীর প্রতি লক্ষ রাখা ইত্যাদি।
আলেম, হাফেয ও কারীকে সম্মান করা।
وَحَامِلِ الْقُرآنِ غَيْرِ الْغَالي فِيهِ، والجَافي عَنْهُ (কুরআনের যে বাহক তাতে বাড়াবাড়ি করে না এবং তার প্রতি অবহেলাও প্রদর্শন করে না তাকে সম্মান করা)। কুরআনের বাহক বলতে কুরআন মাজীদের আলেম, কুরআন মাজীদের হাফেয ও কারীকে বোঝানো উদ্দেশ্য। কুরআন আল্লাহ তাআলার কালাম ও তাঁর শ্রেষ্ঠতম কিতাব। এর মর্যাদা জগতের সমস্ত কিতাবের উর্ধ্বে। এর সঙ্গে অন্য কোনও গ্রন্থকে তুলনা করা যায় না। এর মর্যাদার কারণে এর বাহকও মর্যাদাবান হয়ে যায়। তাদেরকে আখেরাতে আল্লাহ তাআলা যে সম্মান দান করবেন, সে সম্পর্কে এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে-
يُقَالُ لِصَاحِبِ الْقُرْآنِ اِقْرَأْ ، وَارْتَقِ، وَرَتِّلْ كَمَا كُنْتَ تُرَتِّلُ فِي الدُّنْيَا، فَإِنَّ مَنْزَلَكَ عِنْدَ آخِرِ آيَةٍ تَقْرَؤُهَا
‘কুরআনওয়ালাকে বলা হবে, পড় ও চড় এবং দুনিয়ায় তুমি যেমন তারতীলের সঙ্গে পড়তে সেভাবেই পড়তে থাক। তুমি সবশেষে যে আয়াত পড়বে, সেখানেই তোমার স্থান।২০৪
সুতরাং যারা কুরআন মাজীদের ইলম অর্জন করেছে, যারা কুরআনের হাফেয হয়েছে কিংবা যারা কুরআন মাজীদের সহীহ-শুদ্ধ পাঠসম্পর্কিত বিদ্যার্জন করে কারীর মর্যাদায় ভূষিত হয়েছে, প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য তাদের প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা-ভক্তি লালন করা। এ শ্রদ্ধাভক্তি আল্লাহ তাআলার প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তিরই দাবি। তাদের প্রতি অমর্যাদাকর আচরণ দ্বারা আল্লাহ তাআলাকেই অমর্যাদা করার নামান্তর। কেননা কুরআনের আলেম হওয়ার কারণে কাউকে অবজ্ঞা করলে তার অর্থ তো এটাই দাঁড়ায় যে, সে অবজ্ঞাকারীর অন্তরে কুরআন মাজীদের প্রতি কোনও ভক্তি-ভালোবাসা নেই। আল্লাহ তাআলার প্রতি কারও ভক্তি-ভালোবাসা থাকলে সে তার কালামকে ভক্তি না করে পারে কি? আজ মুসলিম সমাজের আত্মজিজ্ঞাসার বড় প্রয়োজন। উলামার প্রতি এ সমাজ যে দৃষ্টিভঙ্গি লালন করে তা আল্লাহভক্তির ঠিক কতখানি পরিচয় বহন করে?
এ হাদীছে কুরআন-বাহকের সম্মানপ্রাপ্তির জন্য দু'টি শর্ত আরোপ করা হয়েছে। একটি হলো কুরআনের মধ্যে গুলু বা বাড়াবাড়ি না করা, আর দ্বিতীয়টি হলো কুরআনের প্রতি অবহেলা প্রদর্শন না করা।
কুরআনের মধ্যে মানুষের তাত্ত্বিক বাড়াবাড়ি
কুরআনের মধ্যে গুলূ ও বাড়াবাড়ি করার বিভিন্ন দিক আছে। এর এক বাড়াবাড়ি হচ্ছে তাত্ত্বিক, আরেক বাড়াবাড়ি ব্যবহারিক। তাত্ত্বিক বাড়াবাড়ি হলো এর যে আয়াতের অর্থ আমাদের জানা নেই তার খোঁড়াখুঁড়িতে লিপ্ত হওয়া, যেমন মুতাশাবিহ আয়াত। কুরআন মাজীদের আয়াত দুই ভাগে বিভক্ত- মুহকাম ও মুতাশাবিহ। ইরশাদ হয়েছে- যেমন
هُوَ الَّذِي أَنْزَلَ عَلَيْكَ الْكِتَابَ مِنْهُ آيَاتٌ مُحْكَمَاتٌ هُنَّ أُمُّ الْكِتَابِ وَأُخَرُ
مُتَشَابِهَاتٌ
'(হে রাসূল!) সে আল্লাহই এমন সত্তা, যিনি তোমার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন, যার কিছু আয়াত মুহকাম, যার উপর কিতাবের মূল ভিত্তি এবং অপর কিছু আয়াত মুতাশাবিহ।২০৫
কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলার বিভিন্ন গুণের উল্লেখ করা হয়েছে। সেসব গুণ দ্বারা তাঁর অপার শক্তি ও মহা প্রজ্ঞা ফুটিয়ে তোলা উদ্দেশ্য। কোনও লোক যদি সে সকল গুণের হাকীকত ও সত্তাসারের দার্শনিক অনুসন্ধানে লিপ্ত হয়, তবে তার হয়রানি ও গোমরাহী ছাড়া আর কিছুই অর্জিত হবে না। কেননা সে তার সীমিত জ্ঞান-বুদ্ধি দ্বারা আল্লাহ তাআলার অসীম গুণাবলির রহস্য আয়ত্ত করতে চাচ্ছে, যা তার উপলব্ধির বহু ঊর্ধ্বের। যেমন আল্লাহ তাআলার একটি গুণ হলো শ্রবণশক্তি। আমাদের জন্য এতটুকু বিশ্বাসই যথেষ্ট যে, তাঁর এ গুণটি আছে। কিন্তু তিনি কিভাবে শোনেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। মানুষ কান দিয়ে শোনে। আল্লাহ মানুষের শ্রবণশক্তিকে তার কানের মধ্যে নিহিত রেখেছেন, তাই সে তার কান দ্বারা শোনে। মানুষ এতটুকুই বুঝতে সক্ষম যে, শুনতে কান লাগে। এখন সে যদি আল্লাহ তাআলার ক্ষেত্রেও এরকম চিন্তা করে যে, তাঁরও শুনতে কানের প্রয়োজন হয়, তবে তা হবে সৃষ্টির সঙ্গে স্রষ্টাকে তুলনা করার ভ্রষ্ট চিন্তা। আবার এ ভ্রষ্টতা থেকে বাঁচার জন্য যদি এ অনুসন্ধানে লিপ্ত হয় যে, তাহলে তিনি কিভাবে শোনেন, তবে তাও হবে বিভ্রান্তিকর জিজ্ঞাসা। কেননা তিনি কিভাবে শোনেন, কিভাবে বলেন বা কিভাবে দেখেন- এসব এমন বিষয়, যা মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধির অতীত। মানুষের জ্ঞানবুদ্ধির একটা সীমানা আছে। এসব বিষয় সে সীমানার অনেক অনেক উপরের। তাই সে তা কিভাবে বুঝতে সক্ষম হবে?
তাছাড়া মানবজীবনের কোনও ব্যবহারিক মাসআলা এর উপর নির্ভরশীলও নয়। এ জাতীয় বিষয় যেসব আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, তাকে ‘মুতাশাবিহ' আয়াত বলে, এমনিভাবে বিভিন্ন সূরার শুরুতে যে পৃথক পৃথক হরফ নাযিল করা হয়েছে (যেমন এ সূরারই শুরুতে আছে ‘আলিফ-লাম-মীম’) যাকে ‘আল-হুরূফুল মুকাত্তাআত' বলা হয়, তাও ‘মুতাশাবিহাত'-এর অন্তর্ভুক্ত। মুতাশাবিহাত সম্পর্কে কুরআন মাজীদের নির্দেশনা হলো, এর তত্ত্ব-তালাশের পেছনে না পড়ে মোটামুটিভাবে এর প্রতি ঈমান আনা, আর এর প্রকৃত মর্ম কী তা আল্লাহর উপর ছেড়ে দেওয়া।
এর বিপরীতে কুরআন মাজীদের অন্যান্য যে আয়াতসমূহ আছে তার মর্ম সুস্পষ্ট। প্রকৃতপক্ষে সেসকল আয়াতই মানুষের চলার পথ-নির্দেশ করে। এ রকম আয়াতকে "মুহকাম আয়াত বলে। একজন মুমিনের কর্তব্য বিশেষভাবে এ জাতীয় আয়াতে দৃষ্টি নিবন্ধ রাখা। মুতাশাবিহাতের পেছনে পড়া সম্পূর্ণ নিষেধ। তা সত্ত্বেও কেউ যদি তার পেছনে পড়ে, তবে তা হবে কুরআনের বিষয়বস্তু সম্পর্কে বাড়াবাড়িমূলক কৌতূহল ও নিষিদ্ধ 'গুল'। এটা বক্র হৃদয়ের পরিচায়ক। আল্লাহ তাআলা বলেন-
فَأَمَّا الَّذِينَ فِي قُلُوبِهِمْ زَيْغٌ فَيَتَّبِعُونَ مَا تَشَابَهَ مِنْهُ ابْتِغَاءَ الْفِتْنَةِ وَابْتِغَاءَ تَأْوِيلِهِ وَمَا يَعْلَمُ تَأْوِيلَهُ إِلَّا اللَّهُ وَالرَّاسِخُونَ فِي الْعِلْمِ يَقُولُونَ آمَنَّا بِهِ كُلٌّ مِنْ عِنْدِ رَبِّنَا وَمَا يَذَّكَّرُ إِلَّا أُولُو الْأَلْبَابِ
‘যাদের অন্তরে বক্রতা আছে, তারা সেই মুতাশাবিহ আয়াতসমূহের পেছনে পড়ে থাকে, উদ্দেশ্য ফিতনা সৃষ্টি করা এবং সেসব আয়াতের তাবীল খোঁজা, অথচ সেসব আয়াতের যথার্থ মর্ম আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। আর যাদের জ্ঞান পরিপক্ক তারা বলে, আমরা এর (সেই মর্মের) প্রতি বিশ্বাস রাখি (যা আল্লাহ তাআলার জানা)। সবকিছুই আমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে এবং উপদেশ কেবল তারাই গ্রহণ করে, যারা বুদ্ধিমান ।২০৬
গুলূ হতে পারে মুহকাম আয়াতেও। মুহকাম আয়াতের যে অর্থ ও ব্যাখ্যা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম থেকে বর্ণিত হয়ে এসেছে এবং উম্মতের সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকজন যা জেনে এসেছে তার বিপরীতে নিজস্ব ধ্যান-ধারণার সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য টানাহ্যাঁচড়া করে স্বতন্ত্র ব্যাখ্যা দাঁড় করানোর চেষ্টা করা একরকম গুলূ ও বাড়াবাড়ি বৈকি। টানাহ্যাঁচড়া করে দূর-দূরান্তের ব্যাখ্যা করতে চাইলে কুরআন মাজীদের কোনও আয়াতই অক্ষত থাকবে না। যে-কেউ যে-কোনও আয়াতে ছুরি চালাতে পারবে। এ যাবৎকাল যেসকল ভ্রান্ত দল-উপদলের সৃষ্টি হয়েছে, তা কেবল মুতাশাবিহ আয়াতকে অবলম্বন করেই হয়নি; বহু মুহকাম আয়াতের বাড়াবাড়িমূলক ব্যাখ্যাও এর জন্য দায়ী। কাজেই কুরআনের যেসকল বাহক এরকম বাড়াবাড়িতে লিপ্ত হয়, তারা কুরআনের বিশ্বস্ত বাহক নয়। অধিকাংশ বিদআতপন্থীই কুরআন মাজীদের প্রতি এ অবিশ্বস্ততার পরিচয় দিয়েছে। তারা দূর-দূরান্তের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ দ্বারা বহু মানুষকে সত্যিকার কুরআনপন্থী না বানিয়ে বিদআতের পথে পরিচালিত করেছে। তাই কুরআন- বাহক হওয়ার যে সম্মান ও মর্যাদা, তাও পাওয়ার কোনও অধিকার তারা রাখে না।
প্রকাশ থাকে যে, কুরআন তিলাওয়াতের ছাওয়াব পাওয়ার জন্য অর্থ বোঝা শর্ত নয়। একশ্রেণীর লোক এটিকে শর্ত মনে করে থাকে। কাজেই এটাও তাদের কুরআনের ক্ষেত্রে একরকম তাত্ত্বিক বাড়াবাড়ি।
কুরআনের মধ্যে ব্যবহারিক বাড়াবাড়ি
কুরআনের মধ্যে ব্যবহারিক বাড়াবাড়ি হলো- কুরআন যে আমলকে বৈধতা দান করেছে কিন্তু ফরয-ওয়াজিব করেনি, তাকে অবশ্যপালনীয় আমল বানানো; কুরআন যে আমলের জন্য বিশেষ কোনও শর্তারোপ করেনি, নিজের পক্ষ থেকে তাতে শর্ত যোগ করে দেওয়া; কুরআন বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতিতে যে আমলে বিশেষ কোনও ছাড় বা অবকাশ রেখেছে, সে আমলে সেই বিশেষ পরিস্থিতিতেও সাধারণ অবস্থার মত কোনওরূপ ছাড় বা অবকাশ গ্রহণ করতে না চাওয়া ইত্যাদি। আমলের ক্ষেত্রে এরূপ বাড়াবাড়ি দ্বারাও দীনের মধ্যে বিকৃতির অনুপ্রবেশ ঘটায়। তাই এরূপ বাড়াবাড়ি অবশ্যপরিত্যাজ্য। যারা এ বাড়াবাড়ি ছাড়তে রাজি নয়, তাদের এ কর্মপন্থা কুরআনের যথাযথ মর্যাদা রক্ষার অনুকূল নয় । তাই কুরআন-বাহকের জন্য নির্দিষ্ট মর্যাদাও তাদের প্রাপ্য নয়।
এমনিভাবে কুরআন তিলাওয়াতে সুর তোলার জন্য অতিরিক্ত কসরত করা, সঙ্গীতের মত সুরের লয়-তানে মনোযোগী হওয়া, হরফের মাখরাজ আদায়ে বাড়তি কষ্ট- ক্লেশ করা ইত্যাদি বিষয়গুলোও বাড়াবাড়ির মধ্যে পড়ে। এর থেকেও বিরত থাকা অতীব জরুরি। যেসকল কারী কুরআন তিলাওয়াতে এরূপ বাড়াবাড়ি করতে অভ্যস্ত, তারাও কুরআন-বাহকের মর্যাদায় অভিষিক্ত হওয়ার কোনও অধিকার রাখে না।
কুরআন মাজীদের প্রতি অবহেলা প্রদর্শন
এমনিভাবে কুরআন মাজীদের প্রতি অবহেলা প্রদর্শনও তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক উভয় রকমই হতে পারে। তাত্ত্বিক অবহেলা হলো- কুরআন মাজীদের অর্থ বুঝতে চেষ্টা না করা, কোনওমতে বুঝে ফেলাকেই যথেষ্ট মনে করা। আর ব্যবহারিক অবহেলা হলো- কুরআন তিলাওয়াতে গাফলাতি করা, কুরআনের শিক্ষা অনুযায়ী আমল না করে দুনিয়ার ভোগবিলাসে মত্ত থাকা। এরকম অবহেলার বিরুদ্ধেই তো আল্লাহ তাআলার সমীপে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অভিযোগ বর্ণিত হয়েছে-
وَقَالَ الرَّسُولُ يَارَبِّ إِنَّ قَوْمِي اتَّخَذُوا هَذَا الْقُرْآنَ مَهْجُورًا
‘আর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলবে, হে আমার প্রতিপালক! আমার সম্প্রদায় এ কুরআনকে পরিত্যক্ত করে রেখেছিল ।২০৭
কুরআনের প্রতি ঈমান না আনা যেমন কুরআনকে পরিত্যাগ করা, তেমনি কুরআন তিলাওয়াত না করা, তিলাওয়াত না শোনা, যার পক্ষে সম্ভব তার কুরআন বোঝার চেষ্টা না করা, অর্থের মধ্যে চিন্তাভাবনা না করা, কুরআন অনুযায়ী আমল না করা ইত্যাদি সবই কুরআন পরিত্যাগের মধ্যে পড়ে।
এটা কতইনা নিন্দনীয় কথা যে, এক ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা কুরআন পড়ার যোগ্যতা দিয়েছেন, তা সত্ত্বেও সে কুরআন পড়ে না। একজনকে কুরআনের ইলম দিয়েছেন, সে কুরআনের ইলম প্রচারও করে, তার প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে কুরআনের উদ্ধৃতিও দেয়, অথচ নিজে কুরআন অনুযায়ী আমল করে না। এটা ছিল ইহুদী জাতির বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ তাআলা তাদের নিন্দা করে বলেন-
مَثَلُ الَّذِينَ حُمِّلُوا التَّوْرَاةَ ثُمَّ لَمْ يَحْمِلُوهَا كَمَثَلِ الْحِمَارِ يَحْمِلُ أَسْفَارًا
‘যাদের উপর তাওরাতের ভার অর্পণ করা হয়েছিল, অতঃপর তারা সে ভার বহন করেনি (অর্থাৎ তাওরাতের বিধানাবলি পালন করার যে দায়িত্ব তাদের উপর অর্পণ করা হয়েছিল, তারা তা আদায় করেনি), তাদের দৃষ্টান্ত হলো ওই গাধা, যে কিতাব-পত্রের বোঝা বহন করে।২০৮
এরূপ নিন্দনীয় দৃষ্টান্ত থেকে বাঁচার লক্ষ্যে প্রত্যেক হাফেয, কারী ও আলেমের কর্তব্য নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াত করা এবং কুরআন অনুযায়ী আমল করতে সচেষ্ট থাকা।
ন্যায়পরায়ণ শাসককে সম্মান করা
তৃতীয় হলো- وإِكْرَامَ ذِي السُّلْطَانِ المُقْسِطِ (এবং ন্যায়পরায়ণ শাসককে সম্মান করা)। যে শাসক জনসাধারণের মধ্যে ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করে, নিজেও কারও প্রতি জুলুম করে না, জনগণকেও পারস্পরিক জুলুম-নিপীড়ন থেকে বিরত রাখে, আল্লাহ তাআলার কাছে তার মর্যাদা অপরিসীম। এক হাদীছ দ্বারা জানা যায়, হাশরের ময়দানে ন্যায়পরায়ণ শাসককে আরশের ছায়ায় স্থান দেওয়া হবে। অপর এক হাদীছে আছে-
إِنَّ الْمُقْسِطِينَ عِنْدَ اللهِ عَلَى مَنَابِرَ مِنْ نُورٍ، عَنْ يَمِينِ الرَّحْمَنِ عَزَّ وَجَلَّ، وَكِلْتَا يَدَيْهِ يَمِينٌ، الَّذِينَ يَعْدِلُونَ فِي حُكْمِهِمْ وَأَهْلِيهِمْ وَمَا وَلُوا
‘ন্যায়-ইনসাফকারীগণ আল্লাহর কাছে থাকবে নূরের মিম্বরের উপর, দয়াময় আল্লাহর ডান দিকে- তাঁর দু'হাতই ডান- যারা ন্যায়-ইনসাফ করে তাদের শাসনে, তাদের পরিবারবর্গের মধ্যে ও তাদের অধীনস্থদের মধ্যে।২০৯
আল্লাহ তাআলার কাছে যে ন্যায়পরায়ণ শাসকের এত উচ্চমর্যাদা, তাকে সম্মান করা বান্দারও কর্তব্য। ন্যায়পরায়ণ শাসককে সম্মান করলে আখেরাতেও সম্মান লাভ হবে। আর তাকে অসম্মান করলে আখেরাতে কঠিন দুর্ভোগের সম্মুখীন হতে হবে। এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে-
مَنْ أَكْرَمَ سُلْطَانَ اللهِ فِي الدُّنْيَا، أَكْرَمَهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، وَمَنْ أَهَانَ سُلْطَانَ اللَّهِ فِي الدُّنْيَا أَمَانَهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
‘যে ব্যক্তি দুনিয়ায় আল্লাহর (মনোনীত) শাসককে সম্মান করে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাকে সম্মানিত করবেন। আর যে ব্যক্তি দুনিয়ায় আল্লাহর (মনোনীত) শাসককে অসম্মান করে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাকে লাঞ্ছিত করবেন।’২১০
এটা তো স্পষ্ট যে, আল্লাহ তাআলার কাছে উচ্চমর্যাদা কেবল ওই শাসকের জন্যই নির্ধারিত, যিনি ন্যায়-ইনসাফের সঙ্গে শাসনকার্য পরিচালনা করেন। এরূপ শাসককেই মর্যাদা দেওয়া বান্দার কর্তব্য। পক্ষান্তরে যে শাসক জনগণের উপর জুলুম-নিপীড়ন চালায়, আল্লাহ তাআলার কাছে তার কোনও মর্যাদা নেই। আখেরাতে তাকে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন-
مَا مِنْ عَبْدٍ اسْتَرْعَاهُ اللَّهُ رَعِيَّةً، فَلَمْ يَحُطْهَا بِنَصِيحَةٍ، إِلَّا لَمْ يَجِدْ رَائِحَةَ الجَنَّةِ
‘আল্লাহ তাআলা তাঁর যে বান্দাকেই প্রজা-সাধারণের উপর তত্ত্বাবধায়ক বানান, অতঃপর সে কল্যাণকামিতার সঙ্গে তাদের রক্ষণাবেক্ষণ করে না, সে জান্নাতের সুবাসও পাবে না।২১১
আরেক হাদীছে আছে-
مَا مِنْ وَالٍ يَلِي رَعِيَّةً مِنَ المُسْلِمِينَ، فَيَمُوتُ وَهُوَ غَاشٌّ لَهُمْ، إِلَّا حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الجَنَّةَ
‘যে শাসকই মুসলিম প্রজা-সাধারণের কর্তৃত্ব লাভ করে, অতঃপর সে তাদের প্রতি জুলুম-অবিচারকারীরূপে মারা যায়, আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাত হারাম করেন।২১২
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. আল্লাহ তাআলার কাছে বৃদ্ধ মুসলিমের বিশেষ মর্যাদা আছে। তাদের সঙ্গে আমাদেরকে মর্যাদাপূর্ণ আচরণ করতে হবে।
খ. কুরআনের বাহক অর্থাৎ আলেম, হাফেয ও কারীর সঙ্গে শ্রদ্ধা-ভক্তিমূলক আচরণ করা চাই।
গ. যাকে আল্লাহ তাআলা কুরআনের বাহক বানিয়েছেন, তাকে অবশ্যই কুরআনভিত্তিক সর্বপ্রকার বাড়াবাড়ি থেকে বিরত থাকতে হবে।
ঘ. কুরআনের বাহক হওয়ার সৌভাগ্য যার লাভ হয়েছে তার কিছুতেই কুরআনের তিলাওয়াত ও অনুসরণ থেকে গাফেল হওয়া চলে না ৷
ঙ. ন্যায়পরায়ণ শাসকের প্রতি সম্মান বজায় রাখা উচিত।
চ. আল্লাহ তাআলার কাছে ওই শাসকেরই সম্মান আছে, যিনি ন্যায় ও ইনসাফের সঙ্গে দেশ শাসন করেন।
২০৪. সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ১৪৬৪; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২৯১৪; নাসাঈ, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৮০০২; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীছ নং ৩৪৭৯৩
২০৫. সূরা আলে ইমরান (৩), আয়াত ৭
২০৬. সূরা আলে ইমরান (৩), আয়াত ৭
২০৭. সূরা ফুরকান (২৫), আয়াত ৩০
২০৮. সূরা জুমুআ (৬২), আয়াত ৫
২০৯, সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৮২৭
২১০. মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২০৪৩৩; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৬৬৫৯; শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৬৯৮৮; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২২২৪; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ২৪৬২
২১১. সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৭১৫০; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর, হাদীছ নং ৪৫৫
২১২. সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৭১৫১
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
