আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৫০- নবীজীর সাঃ যুদ্ধাভিযানসমূহ

হাদীস নং: ৩৯৮৬
আন্তর্জাতিক নং: ৪৩২১ - ৪৩২২
২২১৮. মহান আল্লাহর বাণীঃ এবং হুনায়নের যুদ্ধের দিন যখন তোমাদেরকে (মুসলমানদিগকে) উৎফুল্ল করেছিল তোমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা, কিন্তু তা তোমাদের কোন কাজে আসেনি এবং বিস্তৃত হওয়া সত্ত্বেও পৃথিবী তোমাদের জন্য সংকুচিত হয়ে গিয়েছিল শেষে তোমরা পৃষ্ঠ-প্রদর্শন করে পলায়ন করেছিলে। এরপর আল্লাহ তার কাছ থেকে তার রাসুল ও মু’মিনের উপর প্রশান্তি বর্ষণ করেন এবং (তাদের সাহায্যার্থে) এমন এক সৈন্যবেহিনী নাযিল করেন যাদেরকে তোমরা দেখতে পাওনি এবং তিনি তাদের দ্বারা কাফেরদিগকে শাস্তি প্রদান করেছেন। এটাই কাফিরদের কর্মফল। এরপরও (মু’মিনদের মধ্যে) যার প্রতি তিনি ইচ্ছা করবেন তার ক্ষেত্রে তিনি ক্ষমাপরায়ণও হতে পারেন। আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু (৯ঃ ২৫-২৭)
৩৯৮৬। আব্দুল্লাহ ইবনে ইউসুফ (রাহঃ) .... আবু কাতাদা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুনায়নের বছর আমরা নবী কারীম (ﷺ)- এর সঙ্গে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম। আমরা যখন (যুদ্ধের জন্য) শত্রুদের মুখোমুখি হলাম তখন মুসলিমদের মধ্যে বিশৃংখলা দেখা দিল। এ সময় আমি মুশরিকদের এক ব্যক্তিকে দেখলাম সে মুসলিমদের এক ব্যক্তিকে পরাভূত করে ফেলেছে। তাই আমি কাফের লোকটির পশ্চাৎ দিকে গিয়ে তরবারি দিয়ে তার কাঁধ ও ঘাড়ের মধ্যবর্তী শক্ত শিরার উপর আঘাত হানলাম এবং লোকটির পরিহিত লৌহ বর্মটি কেটে ফেললাম। এ সময় সে আমার উপর আক্রমণ করে বসলো এবং আমাকে এত জোরে চাপ দিয়ে জড়িয়ে ধরল যে, আমি আমার মৃত্যুর গন্ধ অনুভব করতে লাগলাম। এরপর লোকটিই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লো আর আমাকে ছেড়ে দিল।
এরপর আমি উমর [ইবনুল খাত্তাব (রাযিঃ)]-এর কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, লোকজনের (মুসলিমদের) কি হল, (যে সবাই বিশৃংখল হয়ে গেলো)? তিনি বললেন, মহান ও শক্তিশালী আল্লাহর ইচ্ছা। এরপর সবাই (আবার) ফিরে এলো (এবং মুশরিকদের উপর হামলা চালিয়ে যুদ্ধে জয়ী হল) যুদ্ধের পর নবী কারীম (ﷺ) (এক স্থানে) বসলেন এবং ঘোষণা দিলেন, যে ব্যক্তি কোন মুশরিক যোদ্ধাকে হত্যা করেছে এবং তার কাছে এর প্রমাণ রয়েছে তাঁকে তার (নিহত ব্যক্তির) পরিত্যক্ত সব সম্পদ প্রদান করা হবে। এ ঘোষণা শুনে আমি (দাঁড়িয়ে সবাইকে লক্ষ করে) বললাম, আমার পক্ষে সাক্ষ্য দেওয়ার মতো কেউ আছে কি? (কিন্তু কোন জবাব না পেয়ে) আমি বসে পড়লাম।
আবু কাতাদা (রাযিঃ) বলেনঃ (তারপর) আবার নবী কারীম (ﷺ) অনুরূপ ঘোষণা দিলেন। আমি দাঁড়িয়ে বললাম, আমার পক্ষে সাক্ষ্য দেওয়ার মতো কেউ আছে কি? কিন্তু (এবারও কোন সাড়া না পেয়ে) আমি বসে পড়লাম। নবী কারীম (ﷺ) তারপর অনুরূপ ঘোষণা দিলে আমি দাঁড়ালাম। আমাকে দেখে তিনি বললেন, আবু কাতাদা! তোমার কি হয়েছে? আমি তাঁকে ব্যাপারটি জানালাম। এ সময়ে এক ব্যক্তি বললো, আবু কাতাদা (রাযিঃ) ঠিকই বলেছেন, তবে নিহত ব্যক্তির পরিত্যক্ত দ্রব্যগুলো আমার কাছে আছে। সুতরাং সেগুলো আমাকে দিয়ে দেওয়ার জন্য আপনি তাঁকে সম্মত করে দিন।
তখন আবু বকর (রাযিঃ) বললেন, না, আল্লাহর শপথ, তা হতে পারে না। আল্লাহর সিংহদের এক সিংহ যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করেছে তার যুদ্ধলব্ধ দ্রব্যাদি তোমাকে দিয়ে দেয়ার ইচ্ছা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) করতে পারেন না। নবী কারীম (ﷺ) বললেন, আবু বকর (রাযিঃ) ঠিকই বলছে। সুতরাং এসব দ্রব্য তুমি তাঁকে (আবু কাতাদা) দিয়ে দাও। [আবু কাতাদা (রাযিঃ) বলেন] তখন সে আমাকে পরিত্যক্ত দ্রব্যগুলো দিয়ে দিল। এ দ্রব্যগুলোর বিনিময়ে আমি বনী সালিমার এলাকায় একটি বাগান খরিদ করলাম। আর ইসলাম কবুল করার পর এটাই ছিল প্রথম উপার্জিত মাল যা দিয়ে আমি আমার অর্থের বুনিয়াদ রেখেছি।
অপর সনদে লাইস (রাহঃ) আবু কাতাদা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুনাইন যুদ্ধের দিন আমি দেখতে পেলাম যে, একজন মুসলিম এক মুশরিকের সাথে লড়াই করছে। অপর এক মুশরিক মুসলিম ব্যক্তির পেছন দিক থেকে তাকে হত্যা করার জন্য আক্রমণ করছে। আমি আক্রমণকারীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়লাম। সে আমাকে আঘাত করার জন্য তার হাত উঠাল। আমি তার হাতের উপর আঘাত করলাম এবং তা কেটে ফেললাম। সে আমাকে ধরে সজোরে চাপ দিল। এমনকি আমি (মৃত্যুর) ভয় পেয়ে গেলাম। এরপর সে আমাকে ছেড়ে দিল ও সে দুর্বল হয়ে পড়ল। আমি তাকে আক্রমণ করে মেরে ফেললাম। মুসলিমগণ পালাতে লাগলেন। আমিও তাঁদের সাথে পালালাম। হঠাৎ লোকদের মাঝে উমর ইবনুল খাত্তাব (রাযিঃ)- কে দেখতে পেয়ে আমি তাকে বললাম, লোকজনের অবস্থা কি? তিনি বললেন, আল্লাহর যা ইচ্ছা তাই হয়েছে। এরপর লোকেরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- এর নিকট ফিরে এলেন।
তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, “যে মুসলিম ব্যক্তি (শত্রুদলের) কাউকে হত্যা করেছে বলে প্রমাণ পেশ করতে পারবে নিহত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পদ সে-ই পাবে। আমি যে একজনকে হত্যা করেছি সে ব্যাপারে আমি দাঁড়িয়ে সাক্ষী খুঁজতে লাগলাম। কিন্তু আমার পক্ষে সাক্ষ্য দেওয়ার কাউকে পেলাম না। তখন আমি বসে পড়লাম। এরপর আমি ঘটনাটি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- এর কাছে বর্ণনা করলাম। তখন তাঁর সঙ্গীদের একজন বললেন, উল্লিখিত নিহত ব্যক্তির (পরিত্যক্ত) হাতিয়ার আমার কাছে আছে। তা আমাকে দিয়ে দেওয়ার জন্য আপনি তাকে সম্মত করে দিন। তখন আবু বকর (রাযিঃ) বললেন, না, তা হতে পারে না। আল্লাহর সিংহদের এক সিংহ যে আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূলের পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করেছে তাকে না দিয়ে এ কুরাইশী দুর্বল ব্যক্তিকে তিনি [নবী কারীম (ﷺ)] দিতে পারেন না। রাবী বলেন, এরপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দাঁড়ালেন এবং আমাকে তা দিয়ে দিলেন। আমি এর দ্বারা একটি বাগান খরিদ করলাম। আর ইসলাম কবুল করার পর এটাই ছিল প্রথম উপার্জিত মাল, যা দিয়ে আমি আমার অর্থের বুনিয়াদ রেখেছি।
بَابُ قَوْلِ اللَّهِ تَعَالَى: {وَيَوْمَ حُنَيْنٍ إِذْ أَعْجَبَتْكُمْ كَثْرَتُكُمْ فَلَمْ تُغْنِ عَنْكُمْ شَيْئًا وَضَاقَتْ عَلَيْكُمُ الأَرْضُ بِمَا رَحُبَتْ ثُمَّ وَلَّيْتُمْ مُدْبِرِينَ ثُمَّ أَنْزَلَ اللَّهُ سَكِينَتَهُ} إِلَى قَوْلِهِ: {غَفُورٌ رَحِيمٌ
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يُوسُفَ، أَخْبَرَنَا مَالِكٌ، عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ، عَنْ عُمَرَ بْنِ كَثِيرِ بْنِ أَفْلَحَ، عَنْ أَبِي مُحَمَّدٍ، مَوْلَى أَبِي قَتَادَةَ عَنْ أَبِي قَتَادَةَ، قَالَ خَرَجْنَا مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم عَامَ حُنَيْنٍ، فَلَمَّا الْتَقَيْنَا كَانَتْ لِلْمُسْلِمِينَ جَوْلَةٌ، فَرَأَيْتُ رَجُلاً مِنَ الْمُشْرِكِينَ، قَدْ عَلاَ رَجُلاً مِنَ الْمُسْلِمِينَ، فَضَرَبْتُهُ مِنْ وَرَائِهِ عَلَى حَبْلِ عَاتِقِهِ بِالسَّيْفِ، فَقَطَعْتُ الدِّرْعَ، وَأَقْبَلَ عَلَىَّ فَضَمَّنِي ضَمَّةً وَجَدْتُ مِنْهَا رِيحَ الْمَوْتِ، ثُمَّ أَدْرَكَهُ الْمَوْتُ فَأَرْسَلَنِي، فَلَحِقْتُ عُمَرَ فَقُلْتُ مَا بَالُ النَّاسِ قَالَ أَمْرُ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ. ثُمَّ رَجَعُوا وَجَلَسَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ " مَنْ قَتَلَ قَتِيلاً لَهُ عَلَيْهِ بَيِّنَةٌ فَلَهُ سَلَبُهُ ". فَقُلْتُ مَنْ يَشْهَدُ لِي ثُمَّ جَلَسْتُ ـ قَالَ ـ ثُمَّ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم مِثْلَهُ فَقُمْتُ فَقُلْتُ مَنْ يَشْهَدُ لِي ثُمَّ جَلَسْتُ قَالَ ثُمَّ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم مِثْلَهُ، فَقُمْتُ فَقَالَ " مَالَكَ يَا أَبَا قَتَادَةَ ". فَأَخْبَرْتُهُ. فَقَالَ رَجُلٌ صَدَقَ وَسَلَبُهُ عِنْدِي، فَأَرْضِهِ مِنِّي. فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ لاَهَا اللَّهِ، إِذًا لاَ يَعْمِدُ إِلَى أَسَدٍ مِنْ أُسْدِ اللَّهِ يُقَاتِلُ عَنِ اللَّهِ وَرَسُولِهِ صلى الله عليه وسلم فَيُعْطِيَكَ سَلَبَهُ. فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " صَدَقَ فَأَعْطِهِ ". فَأَعْطَانِيهِ فَابْتَعْتُ بِهِ مَخْرَفًا فِي بَنِي سَلِمَةَ، فَإِنَّهُ لأَوَّلُ مَالٍ تَأَثَّلْتُهُ فِي الإِسْلاَمِ.
وَقَالَ اللَّيْثُ حَدَّثَنِي يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ، عَنْ عُمَرَ بْنِ كَثِيرِ بْنِ أَفْلَحَ، عَنْ أَبِي مُحَمَّدٍ، مَوْلَى أَبِي قَتَادَةَ أَنَّ أَبَا قَتَادَةَ، قَالَ لَمَّا كَانَ يَوْمُ حُنَيْنٍ نَظَرْتُ إِلَى رَجُلٍ مِنَ الْمُسْلِمِينَ يُقَاتِلُ رَجُلاً مِنَ الْمُشْرِكِينَ، وَآخَرُ مِنَ الْمُشْرِكِينَ يَخْتِلُهُ مِنْ وَرَائِهِ لِيَقْتُلَهُ، فَأَسْرَعْتُ إِلَى الَّذِي يَخْتِلُهُ فَرَفَعَ يَدَهُ لِيَضْرِبَنِي، وَأَضْرِبُ يَدَهُ، فَقَطَعْتُهَا، ثُمَّ أَخَذَنِي، فَضَمَّنِي ضَمًّا شَدِيدًا حَتَّى تَخَوَّفْتُ، ثُمَّ تَرَكَ فَتَحَلَّلَ، وَدَفَعْتُهُ ثُمَّ قَتَلْتُهُ، وَانْهَزَمَ الْمُسْلِمُونَ، وَانْهَزَمْتُ مَعَهُمْ، فَإِذَا بِعُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ فِي النَّاسِ، فَقُلْتُ لَهُ مَا شَأْنُ النَّاسِ قَالَ أَمْرُ اللَّهِ، ثُمَّ تَرَاجَعَ النَّاسُ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " مَنْ أَقَامَ بَيِّنَةً عَلَى قَتِيلٍ قَتَلَهُ فَلَهُ سَلَبُهُ ". فَقُمْتُ لأَلْتَمِسَ بَيِّنَةً عَلَى قَتِيلِي، فَلَمْ أَرَ أَحَدًا يَشْهَدُ لِي فَجَلَسْتُ، ثُمَّ بَدَا لِي، فَذَكَرْتُ أَمْرَهُ لِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ رَجُلٌ مِنْ جُلَسَائِهِ سِلاَحُ هَذَا الْقَتِيلِ الَّذِي يَذْكُرُ عِنْدِي فَأَرْضِهِ مِنْهُ. فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ كَلاَّ لاَ يُعْطِهِ أُصَيْبِغَ مِنْ قُرَيْشٍ، وَيَدَعَ أَسَدًا مِنْ أُسْدِ اللَّهِ يُقَاتِلُ عَنِ اللَّهِ وَرَسُولِهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ فَقَامَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَأَدَّاهُ إِلَىَّ، فَاشْتَرَيْتُ مِنْهُ خِرَافًا فَكَانَ أَوَّلَ مَالٍ تَأَثَّلْتُهُ فِي الإِسْلاَمِ.
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
সহীহ বুখারী - হাদীস নং ৩৯৮৬ | মুসলিম বাংলা