মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

২৬- আদাব - শিষ্টাচার অধ্যায়

হাদীস নং: ৪৭৩৭
৬. প্রথম অনুচ্ছেদ - হাঁচি দেয়া এবং হাই তোলা
৪৭৩৭। হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হইতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন : যখন তোমাদের কাহারও হাই আসে তখন সে যেন স্বীয় হাত দ্বারা নিজের মুখ বন্ধ করিয়া রাখে। কেননা, শয়তান মুখের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। —মুসলিম
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيُّ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ

: «إِذَا تَثَاءَبَ أَحَدُكُمْ فَلْيَمْسِكْ بِيَدِهِ عَلَى فَمه فإِنَّ الشيطانَ يدخلُ» . رَوَاهُ مُسلم

হাদীসের ব্যাখ্যা:

হাই তোলার সময় মানুষের মুখ অতিরিক্ত খুলে যায়। তাতে মুখের আদল বিকৃত হয়ে যায়। সেই বিকৃত চেহারা দেখলে শয়তান খুব খুশি হয়। তাতে শয়তানের উদ্যাম খুব বেড়ে যায়। বাইরের সে বিকৃতির সঙ্গে ভেতরটাও যাতে নষ্ট করে দেওয়া যায়, তাই সে হা করা মুখ দিয়ে ভেতরে ঢুকতে চায়। কোনও বাধা না পেলে ঢুকেই পড়ে। শয়তানকে মানুষের শিরা-উপশিরায় ঢুকে পড়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। যেমন এক হাদীছে আছে-
إِنَّ الشَّيْطَانَ يَجْرِي مِنَ الْإِنْسَانِ مَجْرَى الدَّمِ
'শয়তান মানুষের রক্তনালিতে প্রবাহিত হয়’।
(সহীহ বুখারী: ২০৩৮; সহীহ মুসলিম: ২১৭৪; জামে তিরমিযী: ১১৭২; নাসাঈ, আস সুনানুল কুবরা : ৩৩৪৩; সুনানে আবূ দাউদ: ২৪৭৫; সুনানে ইবনে মাজাহ : ১৭৮০; মুসান্নাফে আব্দুর রাযাক : ৮০৬৫; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ৮০০২; সুনানে দারিমী: ২৮২৪; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার: ১০৮; সহীহ ইবনে হিব্বান : ৩৬৭১ ; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ১৮৯;)

তবে শয়তানের অক্ষমতাও কম নয়। তাই তো আযানের শব্দ সে সইতে পারে না। ভেগে যায়। আ'উযুবিল্লাহ পড়লেও দূর হয়ে যায়। শয়তান তো ঢেকে রাখা পাত্রের ডাকনাও সরাতে পারে না। এমনকি পাত্রের উপর আড়াআড়িভাবে একটা লাঠিও যদি রেখে দেওয়া হয়, সেটা সরিয়েও পাত্রের খাবারে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
غطوا الإناء، وأوكوا السقاء، وأغلقوا الباب، وأطفئوا السراج، فإن الشيطان لا يحل سقاء، ولا يفتح بابا، ولا يكشف إناء، فإن لم يجد أحدكم إلا أن يعرض على إنائه عودا، ويذكر اسم الله، فليفعل
'তোমরা পাত্র ঢেকে রেখো। মশকের মুখ বেঁধে রেখো। দরজা বন্ধ করে রেখো। বাতি নিভিয়ে দিয়ো। শয়তান মশক খুলতে পারে না। দরজা খুলতে পারে না। পাত্রও খুলতে পারে না। তোমরা পাত্র ঢাকার জন্য যদি কিছুই না পাও, তবে অন্ততপক্ষে একটা লাঠি হলেও পাত্রের উপর বিসমিল্লাহ বলে আড়াআড়ি রেখে দিয়ো’। (সহীহ মুসলিম : ২০১২; সুনানে ইবন মাজাহ : ৩৪০৮; মুসনাদে আবু ইয়া'লা : ২২৫৮; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার : ১০৮১; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা : ১২১২: শু’আবুল ঈমান: ৫৬৫৮; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ৩০৬২)

শয়তানের সে অক্ষমতার প্রমাণ মেলে হাই তোলার ক্ষেত্রেও। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাই তোলার সময় মুখের উপর হাত রাখার হুকুম দিয়েছেন। বলেছেন, হাত রাখলে শয়তান ভেতরে প্রবেশ করতে পারবে না। কেন পারে না, হাত রাখার পরও কিছু না কিছু ফাঁক-ফোকর তো থাকেই? আসলে মানুষের কাছে শয়তান বড়ই দুর্বল। একটু বাধা পেলে সে আর সামনে বাড়তে পারে না। কিন্তু মানুষ তাকে বাধা কি দেয়? অধিকাংশ মানুষ তাকে বন্ধু বানিয়ে নেয়। সে যা চায় তাই করে। তাকে পথ করে দেয় যাতে সে তাকে দিয়ে যা ইচ্ছা তাই করাতে পারে। এটা বড়ই নির্বুদ্ধিতা আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে সুবুদ্ধি দিন। আমাদেরকে শয়তানের ফেরেব থেকে রক্ষা করুন। তাওফীক দিন যাতে আমরা শয়তানের বিরুদ্ধে সচেতন থাকতে পারি।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. হাই তোলার সময় মুখে হাত রাখা উচিত।

খ. শয়তান সুযোগ পেলে মানুষের ভেতর ঢুকে পড়ে। শয়তানকে সেই সুযোগ দেওয়া উচিত নয়। তাই শয়তান থেকে আত্মরক্ষার জন্য আমাদেরকে যেসব উপায় বাতলানো হয়েছে, আমাদেরকে অবশ্যই তা অবলম্বন করতে হবে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
মিশকাতুল মাসাবীহ - হাদীস নং ৪৭৩৭ | মুসলিম বাংলা