মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

২৬- আদাব - শিষ্টাচার অধ্যায়

হাদীস নং: ৪৭১৪
৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - বসা, ঘুমানো ও চলাফেরা করা
৪৭১৪। হযরত কায়লা বিনতে মাখরামা (রাঃ) হইতে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)কে মসজিদে ‘কুরফুছা' অবস্থায় বসা দেখিয়াছেন। তিনি আরও বলেন, আমি যখন রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-কে এইরূপ বিনয়ী অবস্থায় দেখিলাম তখন ভয়-ভীতিতে আমি কাঁপিয়া উঠিলাম। –আবু দাউদ
وَعَن قيلة بنت مخرمَة أَنَّهَا رَأَتْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْمَسْجِدِ وَهُوَ قَاعِدٌ الْقُرْفُصَاءَ. قَالَتْ: فَلَمَّا رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمُتَخَشِّعَ أُرْعِدْتُ مِنَ الْفَرَقِ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

হাদীসের ব্যাখ্যা:

১. قرفصاء 'কুরফুছা' ইহা দুই নিয়মে বসা হইতে পারে। যথা— নিতম্ব যমীনে স্থাপন না করিয়া উভয় উরুকে পেটের সহিত চাপিয়া বসা। অর্থাৎ, উরুতে বসা। অথবা উভয় হাঁটু মাটির সহিত ঠেস দিয়া হাতের উভয় তালুকে বিপরীত দিকের বগলের নীচে চাপিয়া বসা।

২. ইহতিবা (الإحتباء) বেদুঈন আরবদের বসার একটি ভঙ্গি। এর অর্থ নিতম্বের উপরে ভর করে এভাবে বসা যে, দুই হাঁটু খাড়া থাকবে, উরু পেটের সঙ্গে মিশিয়ে রাখা হবে আর দুই হাত দিয়ে দুই পায়ের গোছা জড়িয়ে ধরা হবে। এরূপ বসাকে 'কুরফুসা'-ও বলা হয়ে থাকে। বেদুঈন আরবরা সাধারণত এভাবে বসত। শহরের লোকের সাধারণত এভাবে বসত না। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শহরে বাস করতেন। তা সত্ত্বেও তিনি মাঝেমধ্যে এভাবে বসতেন। তা ছিল তাঁর বিনয়ের পরিচায়ক। হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি. পবিত্র কা'বার চত্বরে তাঁকে এভাবে বসা অবস্থায় দেখেছেন। হযরত কায়লা বিনতে মাখরামা রাযি. যখন প্রথম মদীনা মুনাউওয়ারায় এসে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, তখন তাঁকে এভাবে বসে থাকতে দেখেন। তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল। মদীনার বাদশা। এতবড় বাদশাকে এরূপ বিনয়ের ভঙ্গিতে বসা অবস্থায় দেখে হযরত কায়লা রাযি.-এর অন্তরে দারুণ রেখাপাত করে। তিনি ভয়ে কেঁপে ওঠেন।

বড় ব্যক্তির বিনীত ভঙ্গি মানুষের অন্তরে প্রভাব বিস্তার করে। বড় ব্যক্তি সম্পর্কে মানুষের ধারণা থাকে তার সবকিছুই অন্যদের থেকে আলাদা হবে। অন্যদের ধরাছোঁয়ার ঊর্ধ্বে হবে। এরূপ ভাবনা নিয়ে যখন কেউ বড় কোনও ব্যক্তির সামনে যায় আর তখন দেখতে পায় তার ভাবভঙ্গি ও ধরন-ধারণ সাধারণ জনদের মতোই, তখন প্রথমে সে কেমন ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়। হযরত কায়লা রাযি.-এর ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল। তিনি ভয়ে কেঁপে ওঠেন। পরে যখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মধুর বচন শুনতে পান এবং তিনি তাঁকে শান্ত হতে বলেন, তখন তাঁর সে ভয় কেটে যায় এবং তিনি ধাতস্থ হন।

লোকে মনে করে অহংকার ও অহমিকাপূর্ণ আচরণ দ্বারা অন্যের উপর প্রভাব বিস্তার করা যায়। এটা ভুল ধারণা। সত্যিকারের প্রভাব বিস্তার বিনয় ও নম্রতা দ্বারাই হয়ে থাকে। এটা মানুষের মধ্যে ভক্তি-শ্রদ্ধা জন্মায়। মানুষকে কাছে টানে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ গুণেও ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ। তাঁর প্রতি সাহাবায়ে কেরামের নিবেদিতপ্রাণ হওয়ার একটা বড় কারণ ছিল তাঁর বিনয় ও নম্রতা।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

বিনয় ও নম্রতা ছিল নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি বিশেষ গুণ। তাঁর বসার ধরন-ধারণেও তা প্রকাশ পেত। ওঠা-বসা ও আচার-ব্যবহারে আমাদেরকেও এ গুণ রপ্ত করতে হবে।
২. ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান