মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
২৬- আদাব - শিষ্টাচার অধ্যায়
হাদীস নং: ৪৬৬৪
১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সালাম
৪৬৬৪। হযরত তোফায়েল ইবনে উবাই ইবনে কা'ব (রাঃ) হইতে বর্ণিত, তিনি প্রায়শঃ হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর (রাঃ)-এর নিকট যাওয়া-আসা করিতেন এবং ইবনে উমর (রাঃ)-ও তাঁহাকে সঙ্গে লইয়া ভোরে বাজারের দিকে যাইতেন। তোফায়েল বলেন, যখন আমরা বাজারের দিকে যাইতাম তখন আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর (রাঃ)-এর এই অভ্যাস ছিল যে, তিনি যখনই কোন মামুলী দোকানদার, যে কোন বিক্রেতা, মিসকীন এবং অন্য কোন ব্যক্তির নিকট দিয়া গমন করিতেন তাহাকেই সালাম করিতেন। তোফায়েল বলেন, (আমার নিয়মমাফিক একদিন আমি আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর (রাঃ)-এর নিকট গেলাম এবং তিনি আমাকে সঙ্গে লইয়া বাজারের দিকে যাইতে চাহিলেন। তখন আমি তাঁহাকে বলিলাম, আপনি বাজারে যাইয়া কি করিবেন? আপনি তো কোন বিক্রেতার কাছেও থামেন না, কোন পণ্যদ্রব্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসাও করেন না, কোন জিনিসের দাম-দস্তুর করেন না, এমনকি বাজারে কোন স্থানে একটু বসেনও না। (অতএব আপনার বাজারে যাইয়া লাভ কি ?) সুতরাং আসুন। আমাদেরকে নিয়া এখানে কোথাও বসুন, আমরা হাদীসের আলোচনা করি। তোফায়েল বলেন, তখন আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর (রাঃ) আমাকে বলিলেনঃ হে পেটুক! তোফায়েলের পেট তুলনামূলক কিছুটা বড়ই ছিল। (তাই তাহাকে পেটুক বলিয়া সম্বোধন করিলেন), আমি শুধুমাত্র সালাম করার উদ্দেশ্যেই সকালে বাজারে যাই এবং যাহার সাথে আমার সাক্ষাৎ হয় তাহাকে সালাম করি। —মালেক ও বায়হাকী-শো'আবুল ঈমানে
وَعَن الطفيلِ
بن أُبي بن كعبٍ: أَنَّهُ كَانَ يَأْتِي ابْنَ عُمَرَ فَيَغْدُو مَعَهُ إِلَى السُّوقِ. قَالَ فَإِذَا غَدَوْنَا إِلَى السُّوقِ لَمْ يَمُرَّ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ عَلَى سَقَّاطٍ وَلَا عَلَى صَاحِبِ بَيْعَةٍ وَلَا مِسْكِينٍ وَلَا أَحَدٍ إِلَّا سَلَّمَ عَلَيْهِ. قَالَ الطُّفَيْلُ: فَجِئْتُ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ يَوْمًا فَاسْتَتْبَعَنِي إِلَى السُّوقِ فَقُلْتُ لَهُ: وَمَا تَصْنَعُ فِي السُّوقِ وَأَنْتَ لَا تَقِفُ عَلَى الْبَيْعِ وَلَا تَسْأَلُ عَن السّلع وتسوم بِهَا وَلَا تَجْلِسُ فِي مَجَالِسِ السُّوقِ فَاجْلِسْ بِنَا هَهُنَا نتحدث. قَالَ: فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ: يَا أَبَا بَطْنٍ - قَالَ وَكَانَ الطُّفَيْلُ ذَا بَطْنٍ - إِنَّمَا نَغْدُو مِنْ أَجْلِ السَّلَامِ نُسَلِّمُ عَلَى مَنْ لَقِينَاهُ. رَوَاهُ مَالك وَالْبَيْهَقِيّ فِي «شعب الْإِيمَان»
بن أُبي بن كعبٍ: أَنَّهُ كَانَ يَأْتِي ابْنَ عُمَرَ فَيَغْدُو مَعَهُ إِلَى السُّوقِ. قَالَ فَإِذَا غَدَوْنَا إِلَى السُّوقِ لَمْ يَمُرَّ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ عَلَى سَقَّاطٍ وَلَا عَلَى صَاحِبِ بَيْعَةٍ وَلَا مِسْكِينٍ وَلَا أَحَدٍ إِلَّا سَلَّمَ عَلَيْهِ. قَالَ الطُّفَيْلُ: فَجِئْتُ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ يَوْمًا فَاسْتَتْبَعَنِي إِلَى السُّوقِ فَقُلْتُ لَهُ: وَمَا تَصْنَعُ فِي السُّوقِ وَأَنْتَ لَا تَقِفُ عَلَى الْبَيْعِ وَلَا تَسْأَلُ عَن السّلع وتسوم بِهَا وَلَا تَجْلِسُ فِي مَجَالِسِ السُّوقِ فَاجْلِسْ بِنَا هَهُنَا نتحدث. قَالَ: فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ: يَا أَبَا بَطْنٍ - قَالَ وَكَانَ الطُّفَيْلُ ذَا بَطْنٍ - إِنَّمَا نَغْدُو مِنْ أَجْلِ السَّلَامِ نُسَلِّمُ عَلَى مَنْ لَقِينَاهُ. رَوَاهُ مَالك وَالْبَيْهَقِيّ فِي «شعب الْإِيمَان»
হাদীসের ব্যাখ্যা:
১. তোফায়েলের ধারণা ছিল অহেতুক বাজারে ঘোরাফেরা করার চাইতে একজন রাসুলের সাহাবীর কাছে বসিয়া কিছু দ্বীনী কথা-বার্তা আলোচনা করাটাই উত্তম। আর ইবনে উমরের কথার তাৎপর্য হইল, আল্লাহর বান্দাদিগকে সালাম করা দ্বীনী আলোচনা করা হইতে তুচ্ছ নহে।
২. তুফায়ল একজন তাবি'ঈ। তিনি বিখ্যাত সাহাবী হযরত উবাঈ ইবন কা'ব রাযি.- এর পুত্র। হযরত উবাঈ ইবন কা'ব রাযি. হযরত উছমান রাযি.-এর খেলাফতকালে হিজরী ৩২ সনে ইন্তিকাল করেন। তাঁর পুত্র তুফায়লের ইন্তিকাল হয় হিজরী ৮১ সনে। পিতার ইন্তিকালের পর প্রায় ৫০ জীবিত ছিলেন। মহান পিতার সাহচর্যে তিনি দীনের শিক্ষালাভের পাশাপাশি জীবন গড়ারও সুযোগ পেয়েছিলেন। পিতা ছিলেন একজন বড় আলেম সাহাবী। সেই সূত্রে তাঁর নিজেরও ইলমের প্রতি বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ছিল। কাজেই পিতার মৃত্যুর পর তিনি পিতার সতীর্থ অন্যান্য সাহাবীর কাছে আসা-যাওয়া করতেন। তাদের মধ্যে হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি. উল্লেখ্যযোগ্য। তিনি হিজরী ৭৩ ইন্তিকাল করেন। কাজেই তুফায়ল তাঁর দীর্ঘ সাহচর্যলাভের সুযোগ পেয়েছিলেন। তিনি তাঁর কাছে নিয়মিতই আসতেন। তিনি ইবন উমর রাযি.-এর বিশিষ্ট ছাত্রদের একজন। ছিলেন তাঁর খুব ঘনিষ্ঠ। ফলে হযরত ইবনে উমর রাযি. তার প্রাত্যহিক একটি বিশেষ কাজে তাকে সঙ্গে রাখতেন। তুফায়ল সে কাজটিরই বর্ণনা এখানে দিয়েছেন।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি.-এর কাজ ছিল প্রতিদিন সকালে বাজারে যাওয়া এবং বাজারে আসা লোকদের সালাম দেওয়া বা তাদের সালামের জবাব দেওয়া। সাধারণত বাজারে গিয়ে তাঁর কোনও কেনাকাটা করা হত না। তিনি বাজারে যাওয়ার সময় তুফায়লকেও সঙ্গে নিয়ে যেতেন। তিনি যে বাজারে কোনও কেনাকাটা করেন না আর তা সত্ত্বেও তিনি রোজ বাজারে যান, এ বিষয়টা তুফায়ল বিশেষভাবে লক্ষ করলেন। তিনি দেখলেন মানুষ বাজারে যেসব কারণে যায় তার কোনওটিই ইবন উমর রাযি. করেন না। না ছোট-বড় কোনও দোকানের সামনে দাঁড়ান, না কোনও মাল কেনেন, না কোনওটির দাম জিজ্ঞেস করেন, না কোনও গরীব-মিসকীনের কাছে দাঁড়ান আর না বাজারের কোনও বৈঠক ও আড্ডায় বসেন। যা করেন তা হল কেবল সালাম দেওয়া। তো অন্যান্য দিনের মতো একদিন সকালে যখন তুফায়ল এসে হাজির হলেন এবং ইবন উমর রাযি. তাকে বাজারে নিয়ে যেতে চাইলেন, তখন তিনি বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুললেন যে, শুধু শুধু কেন বাজারে যাওয়া? বাজারে যেসব কাজে মানুষ যায় তার কোনওটিই যখন আপনি করেন না, তখন যাওয়ার দরকার কী? তারচে' বসেন কথাবার্তা বলি। বলাবাহুল্য তাঁদের কথাবার্তা তো হত দীন সম্পর্কেই। বেহুদা কথা বলার মানুষ তাঁরা ছিলেন না। যা বলতেন তার মধ্যে অন্যদের জন্য শিক্ষা থাকত। হযরত ইবন উমর রাযি. যা বলবেন তা দ্বারা কুরআন-সুন্নাহ'র ইলম হাসিল হবে। তুফায়ল তো তাই চাইতেন। বাহ্যদৃষ্টিতে তার কাছে মনে হচ্ছিল বাজারে যাওয়ার দ্বারা বৃথা সময় নষ্ট হয়। তারচে' সময়টা ইলম অর্জনের জন্য ব্যয় করাই শ্রেয়।
কিন্তু হযরত ইবনে উমর রাযি. তো সাহাবী। তাঁর যে গভীর দৃষ্টি, তা তো অন্যদের থাকার কথা নয়। সুতরাং তিনি তুফায়লকে যে উত্তর দিলেন তা ছিল তার ভাবনার অতীত। তিনি তাকে অবাক করে দিয়ে বললেন, ওরে পেটুক! আমাদের বাজারে যাওয়া তো সালামের জন্য। অর্থাৎ পুণ্য সংগ্রহের জন্য।
আল্লাহু আকবার! কী উঁচু দৃষ্টিভঙ্গি। সকলে বাজারে যায় দুনিয়ার কাজে। যায় পণ্য কিনতে বা অন্য কোনও কাজে। কিন্তু হযরত ইবন উমর রাযি.-এর যাওয়া সেরকমের যান পুণ্য কিনতে। ছাওয়াব হাসিল করতে। বিনিময়ে তিনি ছাওয়াব অর্জন করেন। সালাম দিলে অন্ততপক্ষে দশ নেকী পাওয়া যায়। পূর্ণাঙ্গ সালামে পাওয়া যায় ত্রিশ নেকী। বাজারে বহু লোকের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। বিপুল সংখ্যক সালাম দেওয়া যায়। ফলে ছাওয়াবও অর্জিত হয় রাশি রাশি। এটা ঘরে বসে থাকার দ্বারা পাওয়া যায় না। কারণ ঘরে বসে থাকলে কতজন লোকের সঙ্গেই বা সাক্ষাৎ হবে? তাতে সালাম বিনিময় কতবার হওয়া সম্ভব? কাজেই সালাম বিনিময়ের মাধ্যমে বেশি ছাওয়াব অর্জন করতে চাইলে বাজারেই তো যেতে হবে। এ কারণেই তিনি রোজ বাজারে যেতেন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. দীন শিক্ষার সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ মাধ্যম মুত্তাকী পরহেযগার আলেমের সাহচর্য।
খ. বড় ব্যক্তির সন্তান হওয়ার কারণে এরকম পরিতুষ্টি বোধ করা উচিত নয় যে, দীনের বুঝ, দীনের ইলম, আমল ও আখলাক শেখার জন্য আমার অন্য কারও কাছে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
গ. সালাম বিনিময়ের দ্বারা বিপুল ছাওয়াব পাওয়া যায়। তাই বেশি বেশি সালাম দেওয়ায় অভ্যস্ত হওয়া উচিত।
ঘ. ঈমানী চেতনা ও সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি থাকলে দুনিয়াবী কাজের ক্ষেত্রসমূহ থেকেও ছাওয়াব কুড়ানো যায়।
২. তুফায়ল একজন তাবি'ঈ। তিনি বিখ্যাত সাহাবী হযরত উবাঈ ইবন কা'ব রাযি.- এর পুত্র। হযরত উবাঈ ইবন কা'ব রাযি. হযরত উছমান রাযি.-এর খেলাফতকালে হিজরী ৩২ সনে ইন্তিকাল করেন। তাঁর পুত্র তুফায়লের ইন্তিকাল হয় হিজরী ৮১ সনে। পিতার ইন্তিকালের পর প্রায় ৫০ জীবিত ছিলেন। মহান পিতার সাহচর্যে তিনি দীনের শিক্ষালাভের পাশাপাশি জীবন গড়ারও সুযোগ পেয়েছিলেন। পিতা ছিলেন একজন বড় আলেম সাহাবী। সেই সূত্রে তাঁর নিজেরও ইলমের প্রতি বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ছিল। কাজেই পিতার মৃত্যুর পর তিনি পিতার সতীর্থ অন্যান্য সাহাবীর কাছে আসা-যাওয়া করতেন। তাদের মধ্যে হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি. উল্লেখ্যযোগ্য। তিনি হিজরী ৭৩ ইন্তিকাল করেন। কাজেই তুফায়ল তাঁর দীর্ঘ সাহচর্যলাভের সুযোগ পেয়েছিলেন। তিনি তাঁর কাছে নিয়মিতই আসতেন। তিনি ইবন উমর রাযি.-এর বিশিষ্ট ছাত্রদের একজন। ছিলেন তাঁর খুব ঘনিষ্ঠ। ফলে হযরত ইবনে উমর রাযি. তার প্রাত্যহিক একটি বিশেষ কাজে তাকে সঙ্গে রাখতেন। তুফায়ল সে কাজটিরই বর্ণনা এখানে দিয়েছেন।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি.-এর কাজ ছিল প্রতিদিন সকালে বাজারে যাওয়া এবং বাজারে আসা লোকদের সালাম দেওয়া বা তাদের সালামের জবাব দেওয়া। সাধারণত বাজারে গিয়ে তাঁর কোনও কেনাকাটা করা হত না। তিনি বাজারে যাওয়ার সময় তুফায়লকেও সঙ্গে নিয়ে যেতেন। তিনি যে বাজারে কোনও কেনাকাটা করেন না আর তা সত্ত্বেও তিনি রোজ বাজারে যান, এ বিষয়টা তুফায়ল বিশেষভাবে লক্ষ করলেন। তিনি দেখলেন মানুষ বাজারে যেসব কারণে যায় তার কোনওটিই ইবন উমর রাযি. করেন না। না ছোট-বড় কোনও দোকানের সামনে দাঁড়ান, না কোনও মাল কেনেন, না কোনওটির দাম জিজ্ঞেস করেন, না কোনও গরীব-মিসকীনের কাছে দাঁড়ান আর না বাজারের কোনও বৈঠক ও আড্ডায় বসেন। যা করেন তা হল কেবল সালাম দেওয়া। তো অন্যান্য দিনের মতো একদিন সকালে যখন তুফায়ল এসে হাজির হলেন এবং ইবন উমর রাযি. তাকে বাজারে নিয়ে যেতে চাইলেন, তখন তিনি বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুললেন যে, শুধু শুধু কেন বাজারে যাওয়া? বাজারে যেসব কাজে মানুষ যায় তার কোনওটিই যখন আপনি করেন না, তখন যাওয়ার দরকার কী? তারচে' বসেন কথাবার্তা বলি। বলাবাহুল্য তাঁদের কথাবার্তা তো হত দীন সম্পর্কেই। বেহুদা কথা বলার মানুষ তাঁরা ছিলেন না। যা বলতেন তার মধ্যে অন্যদের জন্য শিক্ষা থাকত। হযরত ইবন উমর রাযি. যা বলবেন তা দ্বারা কুরআন-সুন্নাহ'র ইলম হাসিল হবে। তুফায়ল তো তাই চাইতেন। বাহ্যদৃষ্টিতে তার কাছে মনে হচ্ছিল বাজারে যাওয়ার দ্বারা বৃথা সময় নষ্ট হয়। তারচে' সময়টা ইলম অর্জনের জন্য ব্যয় করাই শ্রেয়।
কিন্তু হযরত ইবনে উমর রাযি. তো সাহাবী। তাঁর যে গভীর দৃষ্টি, তা তো অন্যদের থাকার কথা নয়। সুতরাং তিনি তুফায়লকে যে উত্তর দিলেন তা ছিল তার ভাবনার অতীত। তিনি তাকে অবাক করে দিয়ে বললেন, ওরে পেটুক! আমাদের বাজারে যাওয়া তো সালামের জন্য। অর্থাৎ পুণ্য সংগ্রহের জন্য।
আল্লাহু আকবার! কী উঁচু দৃষ্টিভঙ্গি। সকলে বাজারে যায় দুনিয়ার কাজে। যায় পণ্য কিনতে বা অন্য কোনও কাজে। কিন্তু হযরত ইবন উমর রাযি.-এর যাওয়া সেরকমের যান পুণ্য কিনতে। ছাওয়াব হাসিল করতে। বিনিময়ে তিনি ছাওয়াব অর্জন করেন। সালাম দিলে অন্ততপক্ষে দশ নেকী পাওয়া যায়। পূর্ণাঙ্গ সালামে পাওয়া যায় ত্রিশ নেকী। বাজারে বহু লোকের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। বিপুল সংখ্যক সালাম দেওয়া যায়। ফলে ছাওয়াবও অর্জিত হয় রাশি রাশি। এটা ঘরে বসে থাকার দ্বারা পাওয়া যায় না। কারণ ঘরে বসে থাকলে কতজন লোকের সঙ্গেই বা সাক্ষাৎ হবে? তাতে সালাম বিনিময় কতবার হওয়া সম্ভব? কাজেই সালাম বিনিময়ের মাধ্যমে বেশি ছাওয়াব অর্জন করতে চাইলে বাজারেই তো যেতে হবে। এ কারণেই তিনি রোজ বাজারে যেতেন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. দীন শিক্ষার সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ মাধ্যম মুত্তাকী পরহেযগার আলেমের সাহচর্য।
খ. বড় ব্যক্তির সন্তান হওয়ার কারণে এরকম পরিতুষ্টি বোধ করা উচিত নয় যে, দীনের বুঝ, দীনের ইলম, আমল ও আখলাক শেখার জন্য আমার অন্য কারও কাছে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
গ. সালাম বিনিময়ের দ্বারা বিপুল ছাওয়াব পাওয়া যায়। তাই বেশি বেশি সালাম দেওয়ায় অভ্যস্ত হওয়া উচিত।
ঘ. ঈমানী চেতনা ও সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি থাকলে দুনিয়াবী কাজের ক্ষেত্রসমূহ থেকেও ছাওয়াব কুড়ানো যায়।
২. ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
