মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

২৬- আদাব - শিষ্টাচার অধ্যায়

হাদীস নং: ৪৬৬২
১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সালাম
৪৬৬২। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলিয়াছেনঃ যখন আল্লাহ্ তা'আলা হযরত আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করিলেন এবং তাঁহার মধ্যে রূহ্ ফুঁকিলেন—তখন তিনি হাঁচি দিলেন এবং বলিলেন, 'আল্-হামদুলিল্লাহ্ ! এই বলিয়া আল্লাহর নির্দেশে তাঁহার শোকর আদায় করিলেন। ইহার জবাবে তাঁহার রব বলি লেনঃ ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ্’ (অর্থাৎ, আল্লাহ্ আপনার প্রতি অনুগ্রহ করুন। এরপর বলিলেন,) হে আদম! ঐ যে দেখ একদল ফিরিশতা বসিয়া আছেন, তাহাদের কাছে যাও এবং বল আসসালামু আলাইকুম'। তিনি গিয়া বলিলেন, আসসালামু আলাইকুম। জওয়াবে তাঁহারা বলিলেন, “আলাইকাস্ সালামু ওয়ারাহমাতুল্লাহ্।' অতঃপর তিনি তাঁহার প্রভুর কাছে ফিরিয়া আসিলেন। তখন আল্লাহ্ তা'আলা বলিলেনঃ ইহাই তোমার ও তোমার সন্তানদের মধ্যে পরস্পরের সালাম ও দো'আ। অতঃপর আল্লাহ্ তা'আলা আদম (আঃ)-কে বলিলেনঃ তখন তাঁহার উভয় হাত মুষ্টিবদ্ধ অবস্থায় ছিল, এই হস্তদ্বয়ের মধ্যে যেটিই তোমার ইচ্ছা— পছন্দ কর। তখন আদম (আঃ) বলিলেন, আমি আমার প্রভুর ডান হাতকেই পছন্দ করিলাম—অথচ আমার প্রভুর উভয় হাতই ডান এবং বরকতময়। তারপর আল্লাহ্ তা'আলা হাতের মুষ্টি খুলিলেন। উহার মধ্যে রহিয়াছে আদম ও তাঁহার সন্তান-সন্ততিগণ। তখন আদম (আঃ) জিজ্ঞাসা করিলেন, হে আমার প্রভু ! ইহারা কাহারা? আল্লাহ্ উত্তরে বলিলেনঃ ইহারা তোমার সন্তান-সন্ততিগণ। আদম (আঃ) দেখিতে পাইলেন—তাহাদের প্রত্যেকেরই দুই চক্ষুর মাঝখানে লিখা রহিয়াছে তাহাদের বয়স কাল। তিনি ইহাদের মধ্যে এমন এক ব্যক্তিকে দেখিতে পাইলেন, যে সকলের চাইতে উজ্জ্বল অথবা নবী (ﷺ) বলিয়াছেনঃ সে সর্বাপেক্ষা উজ্জ্বল। তখন আদম (আঃ) জিজ্ঞাসা করিলেন, হে আমার প্রভু! এই লোকটি কে ? বলিলেনঃ ইনি তোমার পুত্র দাউদ (আঃ), আমি তাহার বয়স চল্লিশ বৎসর লিখিয়াছি। তখন আদম (আঃ) বলিলেন, হে আমার প্রভু! তাহার বয়স আরও বৃদ্ধি করিয়া দিন। আল্লাহ্ বলিলেনঃ আমি তো তাহার জন্য ইহাই লিপিবদ্ধ করিয়াছি। আদম (আঃ) বলিলেন, আচ্ছা! আমি আমার বয়স হইতে ষাট বৎসর তাহার জন্য দান করিলাম। তখন আল্লাহ্ বলিলেনঃ ইহা তোমার খুশী।
হুযূর (ﷺ) বলেনঃ অতঃপর যতদিন আল্লাহর ইচ্ছা ছিল ততদিন হযরত আদম (আঃ) বেহেশতে অবস্থান করিলেন। তারপর একসময় তাঁহাকে তথা হইতে বাহির করা হইল। (অপর দিকে) আদম (আঃ) তাঁহার বয়সের বৎসরগুলি গণনা করিতেছিলেন। এরপর (যখন তাঁহার বয়স শেষ হইয়া গেল,) একদিন মৃত্যুদূত আসিয়া তাঁহার কাছে উপস্থিত হইলেন। আদম (আঃ) দূতকে বলিলেন, তুমি তো খুব তাড়াতাড়ি আসিয়া গিয়াছ? কেননা, আমার বয়স তো এক হাজার বৎসরই লিপিবদ্ধ করা হইয়াছে। উত্তরে মৃত্যুদূত বলিলেনঃ হ্যাঁ, আপনি ঠিকই বলিয়াছেন। কিন্তু আপনি যে আপনার সন্তান দাউদ (আঃ)-কে ষাট বৎসর দান করিয়াছেন। তখন হযরত আদম (আঃ) উহা অস্বীকার করিয়া বসিলেন। ফলে, তাঁহার সন্তানরাও (এই ধরনের) অস্বীকার করিতে থাকে। আর আদম ([আঃ] স্বীয় অঙ্গীকার) ভুলিয়া গিয়াছিলেন, তাই তাঁহার সন্তানগণও ভুলিয়া যায়। হুযুর (ﷺ) বলিয়াছেনঃ সেই দিন হইতেই লিখিয়া রাখা এবং সাক্ষী নির্ধারণের নির্দেশ দেওয়া হয়। – তিরমিযী
الْفَصْل الثَّالِث
عَنْ

أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَمَّا خَلَقَ اللَّهُ آدَمَ وَنَفَخَ فِيهِ الرُّوحَ عَطَسَ فَقَالَ: الْحَمْدُ لِلَّهِ فَحَمِدَ اللَّهَ بِإِذْنِهِ فَقَالَ لَهُ رَبُّهُ: يَرْحَمُكَ اللَّهُ يَا آدَمَ اذْهَبْ إِلَى أُولَئِكَ الْمَلَائِكَةِ إِلَى مَلَأٍ مِنْهُمْ جُلُوسٍ فَقُلِ: السَّلَامُ عَلَيْكُمْ. فَقَالَ: السَّلَامُ عَلَيْكُمْ. قَالُوا: عَلَيْكَ السَّلَامُ وَرَحْمَةُ اللَّهِ. ثُمَّ رَجَعَ إِلَى رَبِّهِ فَقَالَ: إِنَّ هَذِهِ تَحِيَّتُكَ وَتَحِيَّةُ بَنِيكَ بَيْنَهُمْ. فَقَالَ لَهُ اللَّهُ وَيَدَاهُ مَقْبُوضَتَانِ: اخْتَرْ أَيَّتَهُمَا شِئْتَ؟ فَقَالَ: اخْتَرْتُ يَمِينَ رَبِّي وَكِلْتَا يَدَيْ رَبِّي يَمِينٌ مُبَارَكَةٌ ثُمَّ بَسَطَهَا فَإِذَا فِيهَا آدَمُ وَذُرِّيَّتُهُ فَقَالَ: أَيْ رَبِّ مَا هَؤُلَاءِ؟ قَالَ: هَؤُلَاءِ ذُرِّيَّتُكَ فَإِذَا كُلُّ إِنْسَانٍ مَكْتُوبٌ عُمْرُهُ بَين عَيْنَيْهِ فَإِذا فيهم رجلٌ أضوؤهُم - أَوْ مِنْ أَضْوَئِهِمْ - قَالَ: يَا رَبِّ مَنْ هَذَا؟ قَالَ: هَذَا ابْنُكَ دَاوُدُ وَقَدْ كَتَبْتُ لَهُ عُمْرَهُ أَرْبَعِينَ سَنَةً. قَالَ: يَا رَبِّ زِدْ فِي عُمْرِهِ. قَالَ: ذَلِكَ الَّذِي كَتَبْتُ لَهُ. قَالَ: أَيْ رَبِّ فَإِنِّي قَدْ جَعَلْتُ لَهُ مِنْ عُمْرِي سِتِّينَ سَنَةً. قَالَ: أَنْتَ وَذَاكَ. قَالَ: ثُمَّ سَكَنَ الْجَنَّةَ مَا شَاءَ اللَّهُ ثُمَّ أُهْبِطَ مِنْهَا وَكَانَ آدَمُ يَعُدُّ لِنَفْسِهِ فَأَتَاهُ مَلَكُ الْمَوْتِ فَقَالَ لَهُ آدَمُ: قَدْ عَجَّلْتَ قَدْ كَتَبَ لِي أَلْفَ سَنَةٍ. قَالَ: بَلَى وَلَكِنَّكَ جَعَلْتَ لِابْنِكَ دَاوُدَ سِتِّينَ سَنَةً فَجَحَدَ فَجَحَدَتْ ذُرِّيَّتُهُ وَنَسِيَ فَنَسِيَتْ ذُرِّيَّتُهُ قَالَ: «فَمن يؤمئذ أَمر بِالْكتاب وَالشُّهُود» رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

অপর এক হাদীসে বর্ণিত হইয়াছে, হযরত আদম (আঃ) চল্লিশ বৎসরই দান করিয়া ছিলেন। প্রকৃতপক্ষে দুইবারে ষাট বৎসর দিয়াছিলেন। প্রথমে চল্লিশ এবং পরে বিশ বৎসর। বর্ণনাকারী এখানে একসাথে ষাট বৎসর বর্ণন করিয়াছেন। 'সন্তান পিতারই প্রতিকৃতি', এই সূত্রেই বলা হইয়াছে যে, আদমের ভুল ও অস্বীকারের প্রক্রিয়া তাঁহার সন্তানের মধ্যে তখন হইতেই চলিয়া আসিতেছে।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
মিশকাতুল মাসাবীহ - হাদীস নং ৪৬৬২ | মুসলিম বাংলা