মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

২২- খাদ্যদ্রব্য-পানাহার সংক্রান্ত অধ্যায়

হাদীস নং: ৪২১১
দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৪২১১। হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হইতে বর্ণিত, একদা নবী (ﷺ)-এর সম্মুখে এক পাত্র সারীদ আনা হইল। তখন তিনি লোকদিগকে বলিলেনঃ তোমরা উহার পার্শ্ব হইতে খাও, মধ্য হইতে খাইও না। কেননা, খাদ্যের বরকত মাঝখানেই অবতীর্ণ হয়। —তিরমিযী, ইবনে মাজাহ্ ও দারেমী। ইমাম তিরমিযী বলিয়াছেন, এই হাদীসটি হাসান ও সহীহ্।
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَنَّهُ أُتِيَ بِقَصْعَةٍ مِنْ ثَرِيدٍ فَقَالَ: «كُلُوا مِنْ جَوَانِبِهَا وَلَا تَأْكُلُوا مِنْ وَسَطِهَا فَإِنَّ الْبَرَكَةَ تَنْزِلُ فِي وَسَطِهَا» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَالدَّارِمِيُّ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيثٌ حسن صَحِيح

হাদীসের ব্যাখ্যা:

১. রুটি টুকরা টুকরা করিয়া ঝোলের মধ্যে ভিজাইয়া রাখিয়া যে খাবার প্রস্তুত করা হয়, উহাকে সারীদ বলে। ইহা আরবদের অতি প্রিয় খাদ্য।

২. এ হাদীছটিতে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাত্রের মাঝখান থেকে না খেয়ে পাশ থেকে খেতে বলেছেন এবং এর কারণ বলেছেন- الْبَرَكَةُ تَنْزِلُ وَسَطَ الطَّعَامِ (বরকত খাবারের মাঝখানে অবতীর্ণ হয়)। প্রশ্ন হচ্ছে, বরকত কী এবং খাদ্যে বরকত বলতে কী বোঝায়?
‘বরকত’-এর শাব্দিক অর্থ বৃদ্ধি। পরিভাষায় বরকত বলতে কোনও বস্তুতে আল্লাহপ্রদত্ত কল্যাণকে বোঝায়। কোনও বস্তুতে আল্লাহপ্রদত্ত কল্যাণ সাধিত হয় অদৃশ্যভাবে এবং তা হয় অগণিত ও অভাবনীয় পন্থায়। যে বস্তুতে এরূপ অদৃশ্য বৃদ্ধি ও কল্যাণ পাওয়া যায়, তাকে বলা হয় মুবারক এবং বলা হয় এ বস্তুতে বরকত আছে। আল্লাহ তা'আলা বান্দাকে বরকত দান করেন ঈমান ও তাকওয়ার ভিত্তিতে। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ الْقُرَى آمَنُوا وَاتَّقَوْا لَفَتَحْنَا عَلَيْهِمْ بَرَكَاتٍ مِنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ
‘যদি সে সকল জনপদবাসী ঈমান আনত ও তাকওয়া অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের জন্য আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী থেকে কল্যাণধারা মুক্ত করে দিতাম। (সূরা আ'রাফ (৭), আয়াত ৯৬)
অর্থাৎ সবদিক থেকে সবরকম কল্যাণ খুলে দেওয়া হত। আকাশ থেকে প্রয়োজনমাফিক বৃষ্টি বর্ষিত হত। ভূমি থেকে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে ফসল উৎপন্ন হত। তা দ্বারা মানুষ সত্যিকারভাবে উপকৃত হত। জীবনে শান্তি লাভ হত। অশান্তি ও পেরেশানি থেকে মুক্তি পাওয়া যেত। এটাই বরকত।

দুনিয়ায় বস্তুসামগ্রীর ভেতর বরকত হয় দু'ভাবে। কখনও মূল বস্তুই বৃদ্ধি পায় এবং সে বৃদ্ধি চোখে দেখা যায়। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের জীবনে এমন বরকত অনেক দেখা গিয়েছে। আবার কখনও বস্তু বৃদ্ধি পায় না, কিন্তু তার উপকার ও ফল বৃদ্ধি পায়, যেমন অল্প খাদ্যে বহু লোকের তৃপ্ত হয়ে যাওয়া। একগ্লাস দুধ দ্বারা বহুজনের পেট ভরে যাওয়া। সাহাবায়ে কেরামের জীবনে এরও বহু দৃষ্টান্ত আছে। কোনও পোশাক দীর্ঘ দিনেও না ছেঁড়া, কোনও ঘর বহুকাল টিকে থাকা, কোনও আসবাবপত্র দীর্ঘকাল ব্যবহার করতে পারা ইত্যাদি ব্যাপারগুলোও এ জাতীয় বরকতের অন্তর্ভুক্ত।

এ বরকত মূলত লাভ হয় অদৃশ্যভাবে আল্লাহর কুদরতে। আল্লাহ তা'আলা বান্দাকে তা দান করেন ঈমান ও তাকওয়ার ভিত্তিতে। এজন্যই যে ব্যক্তি প্রকৃত মু'মিন, সামান্য একটু খাবার খেয়েও উপরে বর্ণিত খাদ্যের উদ্দেশ্যসমূহ তার অর্জিত হয়ে যায়। অর্থাৎ অল্প খাবারেই তার পেট ভরে যায় এবং সে পরিতৃপ্তি লাভ করে। সামান্য একটু খাবারেই তার শরীরে যথেষ্ট শক্তি অর্জিত হয়। সাহাবায়ে কেরাম সম্পর্কে বর্ণিত আছে, এক-একটি খেজুর খেয়ে তাঁরা অমিত বিক্রমে যুদ্ধ করতেন। এটা বরকতেরই ফল। যার মধ্যে তাকওয়া-পরহেযগারী নেই সে এ বরকত থেকে বঞ্চিত থাকে। ফলে অনেক খেয়েও তার তৃপ্তি হয় না। ভালো দামি খাবারেও সে স্বাদ পায় না। ভালো ভালো খাবার খায়, অথচ শরীরে শক্তি পায় না। যে খাবারে নানারকম উপকার লাভ হওয়ার কথা, তার জন্য তা বিভিন্ন ক্ষতির কারণ হয়ে যায়। তা এ কারণেই হয় যে, তার খাবারে বরকত থাকে না।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. বরকতের বিষয়টি সত্য। এতে বিশ্বাস রাখতে হবে।

খ. খাবারের মাঝখানে বরকত নাযিল হয়। তাই প্রথমে মাঝখান থেকে না খেয়ে পাত্রের কিনারা থেকে খাওয়া শুরু করতে হবে।
২. ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
মিশকাতুল মাসাবীহ - হাদীস নং ৪২১১ | মুসলিম বাংলা