মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
২১- শিকার ও জবাইয়ের পশুর বিধান
হাদীস নং: ৪১১৮
- শিকার ও জবাইয়ের পশুর বিধান
২. প্রথম অনুচ্ছেদ - যেসব প্রাণী খাওয়া হালাল ও হারাম
৪১১৮। হযরত আবু সায়েব (রাঃ) হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা হযরত আবু সায়ীদ খুদরী (রাঃ)-এর নিকট গেলাম। আমরা তথায় বসা ছিলাম, এমন সময় হঠাৎ তাঁহার খাটের নীচে কোন কিছুর নড়াচড়া শুনিতে পাই। তাকাইয়া দেখিলাম, ঐখানে একটি সাপ। আমি তৎক্ষণাৎ উহাকে মারিবার জন্য উঠিয়া দাড়াইলাম। সে সময় হযরত আবু সায়ীদ নামায পড়িতেছিলেন। তিনি আমাকে বসিয়া থাকার জন্য ইংগিত করিলেন। আমি অমনি বসিয়া পড়িলাম। অতঃপর তিনি নামায শেষ করিয়া ঘরের একটি কক্ষের দিকে ইশারা করিয়া বলিলেন, তুমি কি ঐ কক্ষটি দেখিতেছ? আমি বলিলাম, জি হ্যাঁ! তখন তিনি বলিলেন, এই কক্ষে আমাদের বংশের এক যুবক থাকিত। সে ছিল সদ্য বিবাহিত দম্পতি। তিনি আরও বলেন, উক্ত যুবকটি সহ আমরা রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে খন্দকের যুদ্ধে শরীক হইয়াছিলাম। যুবকটি দ্বিপ্রহরে রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট হইতে অনুমতি লইয়া বাড়ীতে চলিয়া যাইত। (প্রতিদিনের নিয়মমাফিক) একদিন সে তাহার নিকট অনুমতি চাহিল। তখন রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাকে বলিলেন: তুমি তোমার হাতিয়ারখানা সঙ্গে লইয়া যাও। কেননা, আমি বনী কুরাইযার পক্ষ হইতে তোমার উপর আক্রমণের আশংকা করি। সুতরাং লোকটি নিজের হাতিয়ারসমেত বাড়ীর দিকে প্রত্যাবর্তন করিল। সে আসিয়াই দেখিতে পাইল, তাহার স্ত্রী (ঘরের) উভয় দ্বারের মাঝখানে দণ্ডায়মান। তাহাকে এই অবস্থায় দেখিয়া তাহার আত্মসম্ভ্রমে আঘাত লাগিল। ফলে সে তৎক্ষণাৎ তাহার দিকে বর্শা ছুড়িবার জন্য উদ্যত হইল। তাহার উদ্দেশ্য বুঝিতে পারিয়া সে (স্ত্রী) বলিয়া উঠিল, তুমি তোমার বর্শা গুটাইয়া নাও। ঘরের ভিতরে প্রবেশ করিয়া দেখ, কিসে আমাকে বাহিরে আসিতে বাধ্য করিয়াছে। লোকটি গৃহে প্রবেশ করিতেই দেখিল, প্রকাণ্ড একটি সাপ বিছানার উপর জড়ো হইয়া রহিয়াছে। তৎক্ষণাৎ সে বর্শা দ্বারা উহাকে আক্রমণ করিল এবং বর্শার ফলকে উহাকে বিধিয়া ফেলিল। অতঃপর ঘরের বাহিরে আনিয়া বর্শাটি মাটিতে গাড়িয়া রাখিল। এই অবস্থায় সাপটি তড়পাইয়া তাহার উপর আক্রমণ করিল। ইহার পর জানা যায় নাই তাহাদের উভয়ের মধ্যে কে আগে মৃত্যুবরণ করিয়াছে। সেই সাপ না যুবক। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর আমরা আসিয়া রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ঘটনাটি জানাইলাম এবং আরয করিলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ্।) আল্লাহর কাছে তাহার জন্য দো'আ করুন, যেন তিনি তাহাকে আমাদের জন্য জীবিত করিয়া দেন। তিনি বলিলেন: তোমরা তোমাদের সঙ্গীর জন্য আল্লাহর কাছে মাগফিরাত কামনা কর। অতঃপর তিনি বলিলেন, এই সমস্ত গৃহে কিছু আওয়ামের (বসবাসকারী জ্বিন ) থাকে। অতএব, যখনই তোমরা উহাদিগকে ঘরের মধ্যে দেখিতে পাও, তখনই উহাদিগকে ঘর ছাড়িয়া চলিয়া যাওয়ার জন্য তিনবার নির্দেশ দাও। ইহাতে যদি চলিয়া যায়, তবে উত্তম, অন্যথায় উহাদিগকে মারিয়া ফেল। কেননা, উহা কাফের। অতঃপর হুযূর (ছাঃ) লোকদিগকে সম্বোধন করিয়া বলিলেন, যাও, তোমরা তোমাদের সাথীকে দাফন কর। অপর এক রেওয়ায়তে বর্ণিত আছে, হুযূর (ছাঃ) বলিয়াছেন, মদীনায় বহু জ্বিন আছে। তাহাদের অনেকেই ইসলাম গ্রহণ করিয়াছে। সুতরাং যদি তোমরা উহাদের কোন একটিকে ঘরের মধ্যে দেখিতে পাও, তখন তিন দিন যাবৎ ঘর ছাড়িয়া চলিয়া যাইতে নির্দেশ দাও। আর ইহার পরও যদি দেখিতে পাও, উহাকে বধ করিয়া ফেল। কেননা, উহা শয়তান। —মুসলিম:
كتاب الصيد والذبائح
وَعَن أبي السَّائِب قَالَ: دَخَلْنَا عَلَى أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ فَبَيْنَمَا نحنُ جلوسٌ إِذ سمعنَا تَحت سَرِيره فَنَظَرْنَا فَإِذَا فِيهِ حَيَّةٌ فَوَثَبْتُ لِأَقْتُلَهَا وَأَبُو سَعِيدٍ يُصَلِّي فَأَشَارَ إِلَيَّ أَنِ اجْلِسْ فَجَلَسْتُ فَلَمَّا انْصَرَفَ أَشَارَ إِلَى بَيْتٍ فِي الدَّارِ فَقَالَ: أَتَرَى هَذَا البيتَ؟ فَقلت: نعم فَقَالَ: كَانَ فِيهِ فَتًى مِنَّا حَدِيثُ عَهْدٍ بِعُرْسٍ قَالَ: فَخَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى الْخَنْدَقِ فَكَانَ ذَلِكَ الْفَتَى يَسْتَأْذِنُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِأَنْصَافِ النَّهَارِ فَيَرْجِعُ إِلَى أَهْلِهِ فَاسْتَأْذَنَهُ يَوْمًا فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «خُذْ عَلَيْكَ سِلَاحَكَ فَإِنِّي أَخْشَى عَلَيْكَ قُرَيْظَةَ» . فَأَخَذَ الرَّجُلُ سِلَاحَهُ ثُمَّ رَجَعَ فَإِذَا امْرَأَتُهُ بَيْنَ الْبَابَيْنِ قَائِمَةٌ فَأَهْوَى إِلَيْهَا بِالرُّمْحِ لِيَطْعَنَهَا بِهِ وَأَصَابَتْهُ غَيْرَةٌ فَقَالَتْ لَهُ: اكْفُفْ عَلَيْكَ رُمْحَكَ وَادْخُلِ الْبَيْتَ حَتَّى تَنْظُرَ مَا الَّذِي أَخْرَجَنِي فَدَخَلَ فَإِذَا بِحَيَّةٍ عَظِيمَةٍ مُنْطَوِيَةٍ عَلَى الْفِرَاشِ فَأَهْوَى إِلَيْهَا بِالرُّمْحِ فَانْتَظَمَهَا بِهِ ثُمَّ خَرَجَ فَرَكَزَهُ فِي الدَّارِ فَاضْطَرَبَتْ عَلَيْهِ فَمَا يُدْرَى أَيُّهُمَا كَانَ أَسْرَعَ مَوْتًا: الْحَيَّةُ أَمِ الْفَتَى؟ قَالَ: فَجِئْنَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَذَكَرْنَا ذَلِكَ لَهُ وَقُلْنَا: ادْعُ اللَّهَ يُحْيِيهِ لَنَا فَقَالَ: «اسْتَغْفِرُوا لِصَاحِبِكُمْ» ثُمَّ قَالَ: «إِنَّ لِهَذِهِ الْبُيُوتِ عَوَامِرَ فَإِذَا رأيتُم مِنْهَا شَيْئا فحرِّجوا عَلَيْهَا ثَلَاثًا فإنْ ذَهَبَ وَإِلَّا فَاقْتُلُوهُ فَإِنَّهُ كَافِرٌ» . وَقَالَ لَهُمْ: «اذْهَبُوا فَادْفِنُوا صَاحِبَكُمْ» وَفِي رِوَايَةٍ قَالَ: «إِنَّ بالمدينةِ جِنَّاً قد أَسْلمُوا فَإِذا رأيتُم مِنْهُم شَيْئًا فَآذِنُوهُ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ فَإِنْ بَدَا لَكُمْ بَعْدَ ذَلِكَ فَاقْتُلُوهُ فَإِنَّمَا هُوَ شَيْطَانٌ» . رَوَاهُ مُسلم
হাদীসের ব্যাখ্যা:
লোকদের ধারণা ছিল, লোকটি মরিয়া যায় নাই; বরং বিষক্রিয়ায় সংজ্ঞা হারাইয়া অচেতন অবস্থায় পড়িয়া রহিয়াছে। যেমন, সাপকাটা লোক সম্পর্কে আমরা সাধারণত এরূপ ধারণা পোষণ করিয়া থাকি। আর হুযূর (ﷺ) তাহাদের ধারণা পাল্টাইয়া বলিলেন, সে মৃত্যু বরণ করিয়াছে। দো'আ তাহাকে জীবিত করিতে পারিবে না; বরং তাহার জন্য মাগফিরাত কামনা করাই উচিত।