মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
২০- জিহাদের বিধানাবলী অধ্যায়
হাদীস নং: ৩৯৬৪
৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - যুদ্ধবন্দীদের বিধিমালা
৩৯৬৪। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাজদের দিকে কিছু অশ্বারোহী (সৈন্য) পাঠাইলেন। তাহারা বনী হানীফা গোত্রের এক ব্যক্তিকে ধরিয়া আনিল। তাহার নাম সুমামাহ্ ইবনে উসাল, ইয়ামামাবাসীদের সরদার। তাহারা তাহাকে মসজিদে নববী)-র একটি খামের সাথে বাধিয়া রাখিল। রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহার কাছে আসিলেন এবং তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, ওহে সুমামাহ্! তুমি কি মনে করিতেছ? সে বলিল, হে মুহাম্মাদ আমার ধারণা ভালই। যদি আপনি আমাকে কতল করেন, তাহা হইলে অবশ্যই আপনি একজন খুনীকে কতল করিবেন। আর যদি আপনি অনুগ্রহ করেন, তাহা হইলে একজন কৃতজ্ঞ ব্যক্তির উপরই অনুগ্রহ করিলেন। আর যদি আপনি মাল চান তাহা হইলে যাহা ইচ্ছা চাইতে পারেন, উহা আদায় করা হইবে। তাহার কথা শুনিয়া রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাকে (আজিকার মত তাহার নিজের অবস্থার উপর) ছাড়িয়া দিলেন। যখন পরের দিন আসিল, এইবারও হুযূর (ছাঃ) তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, ওহে সুমামাহ্। তোমার কি মনে হইতেছে ? সে জবাবে বলিল, তাহাই মনে হইতেছে যাহা আমি আপনাকে পূর্বেই বলিয়াছি। (অর্থাৎ) যদি আমার প্রতি মেহেরবানী করেন, তাহা হইলে একজন কৃতজ্ঞ ব্যক্তির উপর মেহেরবানী করিলেন। আর যদি আপনি কতল করেন, তাহা হইলে একজন খুনী লোককে কতল করিবেন। আর যদি মাল-সম্পদ চান, তাহা হইলে যাহা ইচ্ছা চাইতে পারেন, তাহা দেওয়া হইবে। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আজও তাহাকে (নিজের অবস্থার উপরে) ছাড়িয়া দিলেন। এইভাবে তৃতীয় দিন আসিল এইবারও হুযূর (ছাঃ) তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, ওহে সুমামাহ্। তোমার কি মনে হইতেছে? জওয়াবে সে বলিল, আমার তাহাই মনে হইতেছে যাহা আমি পূর্বেই আপনাকে বলিয়াছি। যদি আপনি আমার প্রতি অনুকম্পা প্রদর্শন করেন, তাহা হইলে একজন কৃতজ্ঞ ব্যক্তির উপরই অনুকম্পা করিলেন। আর যদি আপনি আমাকে হত্যা করেন, তাহা হইলে একজন খুনীকে হত্যা করিবেন। আর যদি আপনি মাল-সম্পদ চান, তাহা হইলে যতটা ইচ্ছা চাহিতে পারেন, উহা দেওয়া হইবে।
এইবার রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ( লোকদিগকে বলিলেন, তোমরা সুমামাহকে ছাড়িয়া দাও। (তাহাকে ছাড়িয়া দেওয়া হইল।) অতঃপর সে মসজিদের কাছে একটি খেজুর বাগানে গেল এবং সেখানে যাইয়া গোসল করিল। ইহার পর মসজিদে প্রবেশ করিয়া বলিয়া উঠিলঃ "আশহাদু আল লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আব্দুহু ওয়া রাসুলুহু।" (অতঃপর বলিল, হে মুহাম্মাদ! আল্লাহর কসম, পৃথিবীর বুকে আপনার চেহারা অপেক্ষা আর কাহারও চেহারা আমার নিকট অধিক ঘৃণিত ছিল না। কিন্তু এখন আপনার চেহারা আমার কাছে সবার চাইতে বেশী প্রিয় হইয়া গিয়াছে। আল্লাহর কসম! (ইতিপূর্বে) আপনার দ্বীন অপেক্ষা অধিক অপ্রিয় ও ঘৃণিত দ্বীন আমার কাছে আর কোনটিই ছিল না। কিন্তু এখন আপনার দ্বীনই আমার কাছে সর্বাপেক্ষা অধিক প্রিয় হইয়া গিয়াছে। আল্লাহর কসম! (ইহার আগে) আপনার শহরের চাইতে অধিক ঘৃণ্য শহর আর কোনটিই আমার কাছে ছিল না। কিন্তু এখন আপনার শহরটিই আমার কাছে সবচাইতে অধিক প্রিয় হইয়া গিয়াছে। আপনার অশ্বারোহীরা আমাকে এমন অবস্থায় পাকড়াও করিয়া আনিয়াছে, যখন আমি ওমরা করার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হইয়াছিলাম। এখন আপনি আমাকে কি করিতে হুকুম দেন? রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাকে সুসংবাদ শুনাইলেন এবং ওমরা পালন করার আদেশ করিলেন। ইহার পর যখন তিনি মক্কায় পৌঁছিলেন, তখন জনৈক ব্যক্তি তাহাকে বলিল, তুমি নাকি বে-দ্বীন হইয়া গিয়াছ? তিনি জওয়াবে বলিলেন, তাহা হইবে কেন; বরং আমি রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতে ইসলাম গ্রহণ করিয়াছি। আর আল্লাহর কসম! রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুমতি ছাড়া তোমাদের কাছে ইয়ামামা হইতে আর একটি গমের দানাও আসিবে না। --মুসলিম, বুখারী এই হাদীসটিকে আরও সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণনা করিয়াছেন।
এইবার রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ( লোকদিগকে বলিলেন, তোমরা সুমামাহকে ছাড়িয়া দাও। (তাহাকে ছাড়িয়া দেওয়া হইল।) অতঃপর সে মসজিদের কাছে একটি খেজুর বাগানে গেল এবং সেখানে যাইয়া গোসল করিল। ইহার পর মসজিদে প্রবেশ করিয়া বলিয়া উঠিলঃ "আশহাদু আল লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আব্দুহু ওয়া রাসুলুহু।" (অতঃপর বলিল, হে মুহাম্মাদ! আল্লাহর কসম, পৃথিবীর বুকে আপনার চেহারা অপেক্ষা আর কাহারও চেহারা আমার নিকট অধিক ঘৃণিত ছিল না। কিন্তু এখন আপনার চেহারা আমার কাছে সবার চাইতে বেশী প্রিয় হইয়া গিয়াছে। আল্লাহর কসম! (ইতিপূর্বে) আপনার দ্বীন অপেক্ষা অধিক অপ্রিয় ও ঘৃণিত দ্বীন আমার কাছে আর কোনটিই ছিল না। কিন্তু এখন আপনার দ্বীনই আমার কাছে সর্বাপেক্ষা অধিক প্রিয় হইয়া গিয়াছে। আল্লাহর কসম! (ইহার আগে) আপনার শহরের চাইতে অধিক ঘৃণ্য শহর আর কোনটিই আমার কাছে ছিল না। কিন্তু এখন আপনার শহরটিই আমার কাছে সবচাইতে অধিক প্রিয় হইয়া গিয়াছে। আপনার অশ্বারোহীরা আমাকে এমন অবস্থায় পাকড়াও করিয়া আনিয়াছে, যখন আমি ওমরা করার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হইয়াছিলাম। এখন আপনি আমাকে কি করিতে হুকুম দেন? রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাকে সুসংবাদ শুনাইলেন এবং ওমরা পালন করার আদেশ করিলেন। ইহার পর যখন তিনি মক্কায় পৌঁছিলেন, তখন জনৈক ব্যক্তি তাহাকে বলিল, তুমি নাকি বে-দ্বীন হইয়া গিয়াছ? তিনি জওয়াবে বলিলেন, তাহা হইবে কেন; বরং আমি রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতে ইসলাম গ্রহণ করিয়াছি। আর আল্লাহর কসম! রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুমতি ছাড়া তোমাদের কাছে ইয়ামামা হইতে আর একটি গমের দানাও আসিবে না। --মুসলিম, বুখারী এই হাদীসটিকে আরও সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণনা করিয়াছেন।
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: بَعَثَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَيْلًا قِبَلَ نَجْدٍ فَجَاءَتْ بِرَجُلٍ مِنْ بَنِي حَنِيفَةَ يُقَالُ لَهُ: ثُمَامَةُ بْنُ أُثَالٍ سَيِّدُ أَهْلِ الْيَمَامَةِ فَرَبَطُوهُ بِسَارِيَةٍ مِنْ سَوَارِي الْمَسْجِدِ فَخَرَجَ إِلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «مَاذَا عِنْدَكَ يَا ثُمَامَةُ؟» فَقَالَ: عنْدي يَا مُحَمَّد خير إِن نقْتل تَقْتُلْ ذَا دَمٍ وَإِنْ تُنْعِمْ تُنْعِمْ عَلَى شَاكِرٍ وَإِنْ كُنْتُ تُرِيدُ الْمَالَ فَسَلْ تُعْطَ مِنْهُ مَا شِئْتَ فَتَرَكَهُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى كَانَ الْغَدُ فَقَالَ لَهُ: «مَا عِنْدَكَ يَا ثُمَامَةُ؟» فَقَالَ: عِنْدِي مَا قُلْتُ لَكَ: إِنْ تُنْعِمْ تُنْعِمْ عَلَى شَاكِرٍ وَإِنْ تَقْتُلْ تَقْتُلْ ذَا دَمٍ وَإِنْ كنتَ تريدُ المالَ فسَلْ تعط مِنْهُ مَا شِئْتَ. فَتَرَكَهُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى كَانَ بَعْدَ الْغَدِ فَقَالَ لَهُ: «مَا عِنْدَكَ يَا ثُمَامَةُ؟» فَقَالَ: عِنْدِي مَا قُلْتُ لَكَ: إِنْ تُنْعِمْ تُنْعِمْ عَلَى شَاكِرٍ وَإِنْ تَقْتُلْ تَقْتُلْ ذَا دَمٍ وَإِنْ كُنْتَ تُرِيدُ الْمَالَ فَسَلْ تُعْطَ مِنْهُ مَا شِئْتَ. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَطْلَقُوا ثُمَامَةَ» فَانْطَلَقَ إِلَى نَخْلٍ قَرِيبٍ مِنَ الْمَسْجِدِ فَاغْتَسَلَ ثُمَّ دَخَلَ الْمَسْجِدَ فَقَالَ: أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَن مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ يَا مُحَمَّدُ وَاللَّهِ مَا كَانَ عَلَى وَجْهِ الْأَرْضِ وَجْهٌ أَبْغَضُ إِلَيَّ مِنْ وَجْهِكَ فَقَدْ أَصْبَحَ وَجْهُكَ أَحَبَّ الْوُجُوهِ كُلِّهَا إِلَيَّ وَاللَّهِ مَا كَانَ مِنْ دِينٍ أَبْغَضَ إِلَيَّ مِنْ دِينِكَ فَأَصْبَحَ دِينُكَ أَحَبَّ الدِّينِ كُلِّهِ إِلَيَّ وَوَاللَّهِ مَا كَانَ مِنْ بَلَدٌ أَبْغَضَ إِلَيَّ مِنْ بَلَدِكَ فَأَصْبَحَ بَلَدُكَ أَحَبَّ الْبِلَادِ كُلِّهَا إِلَيَّ. وَإِنَّ خَيْلَكَ أَخَذَتْنِي وَأَنَا أُرِيدَ الْعُمْرَةَ فَمَاذَا تَرَى؟ فَبَشَّرَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَمَرَهُ أَنْ يَعْتَمِرَ فَلَمَّا قَدِمَ مَكَّةَ قَالَ لَهُ قَائِلٌ: أَصَبَوْتَ؟ فَقَالَ: لَا وَلَكِنَّى أَسْلَمْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَاللَّهِ لَا يَأْتِيكُمْ مِنَ الْيَمَامَةِ حَبَّةُ حِنْطَةٍ حَتَّى يَأْذَنَ فِيهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. رَوَاهُ مُسلم وَاخْتَصَرَهُ البُخَارِيّ
হাদীসের ব্যাখ্যা:
ذادم ইহার কয়েকটি অর্থ হইতে পারে। (১) যে ব্যক্তিকে তাহারা কতল করিবে তাহার খুন অনেক মর্যাদাসম্পন্ন, সুতরাং তাহার রক্ত বৃথা যাইবে না, উহার প্রতিশোধ গ্রহণ করা হইবে। (২) সে সত্যই একজন খুনী ব্যক্তি, অনেক লোককে খুন করিয়াছে। কাজেই তাহাকে কতল করিলে অন্যায় হইবে না। অথবা (৩) এমন সম্মানিত ব্যক্তিকে কতল করা হইবে; যাহাকে কতল করা উচিত নহে।
فبشره —অর্থাৎ, ইসলাম গ্রহণ করার দরুন তোমার অতীতের সমস্ত গুনাহ্ মাফ হইয়া গিয়াছে। ফলে তুমি বিরাট কল্যাণের অধিকারী হইয়া গিয়াছ। صبأ অর্থঃ এক দ্বীন ত্যাগ করিয়া আরেক দ্বীন গ্রহণ করা। তবে সুমামাহ্ صابى হওয়ার অস্বীকার এই জন্য করিয়াছেন, যেহেতু কুফর কোন দ্বীনই নহে যে, তাহা হইতে বাহির হওয়ার প্রশ্ন উঠিতে পারে; বরং তিনি এখন হইতেই (সত্য ধর্ম) দ্বীনে ইসলাম গ্রহণ করিয়াছেন।
فبشره —অর্থাৎ, ইসলাম গ্রহণ করার দরুন তোমার অতীতের সমস্ত গুনাহ্ মাফ হইয়া গিয়াছে। ফলে তুমি বিরাট কল্যাণের অধিকারী হইয়া গিয়াছ। صبأ অর্থঃ এক দ্বীন ত্যাগ করিয়া আরেক দ্বীন গ্রহণ করা। তবে সুমামাহ্ صابى হওয়ার অস্বীকার এই জন্য করিয়াছেন, যেহেতু কুফর কোন দ্বীনই নহে যে, তাহা হইতে বাহির হওয়ার প্রশ্ন উঠিতে পারে; বরং তিনি এখন হইতেই (সত্য ধর্ম) দ্বীনে ইসলাম গ্রহণ করিয়াছেন।
