মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

২০- জিহাদের বিধানাবলী অধ্যায়

হাদীস নং: ৩৯২৬
৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - কাফির রাষ্ট্রপ্রধানদের নিকট পত্র প্রেরণ ও ইসলামের প্রতি আহবান
৩৯২৬। হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হইতে বর্ণিত, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসলামের দিকে আহ্বান জানাইয়া হযরত দেহিয়া কালবীর মাধ্যমে কায়সার (রোম সম্রাট)-এর নামে পত্র প্রেরণ করেন এবং দেহিয়া কালবীকে নির্দেশ দেন যে, উহা যেন বসরার শাসনকর্তার হাতে অর্পণ করেন, বসরার শাসনকর্তা উহা যেন কায়সারের নিকট পৌঁছাইয়া দেয়। উহাতে লিখা ছিল, “পরম করুণাময় অতিশয় দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করিতেছি। আল্লাহর বান্দাহ ও তাঁহার রাসূল মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর পক্ষ হইতে রোমের মহান শাসনকর্তা হিরাকিল (হিরাক্লিয়াস)-এর প্রতি। যাহারা হেদায়ত গ্রহণ করিয়াছে তাহাদের প্রতি সালাম। আমি তোমার নিকট ইসলামের দাওয়াত পেশ করিতেছি। ইসলাম গ্রহণ কর, শান্তিতে থাকিবে, আর (এই জন্য) ইসলাম গ্রহণ কর, আল্লাহ্ তোমাকে দ্বিগুণ পুরস্কার ( সওয়ার) প্রদান করিবেন। আর যদি তুমি ইসলাম হইতে মুখ ফিরাইয়া নেও, তাহা হইলে সকল প্রজার পাপের বোঝাও তোমাকে বহন করিতে হইবে। হে কিতাবী সম্প্রদায়। তোমরা এমন এক কথার দিকে আস, যাহাতে আমরা ও তোমরা সমবিশ্বাসী। আর তাহা হইল আমরা সকলে মিলিয়া এক আল্লাহ্ ছাড়া আর কাহারও ইবাদত করিব না। আর তাঁহার সাথে অন্য কিছুকেই অংশীদার সাব্যস্ত করিব না এবং আমাদের কেহই আল্লাহ্ ছাড়া একে অন্যকে রব হিসাবে গ্রহণ করিব না। যদি তাহারা এই কথাগুলি মানিয়া না লয়, তবে বলিয়া দাও, তোমরা সাক্ষী থাক যে, আমরা মুসলমান। (অর্থাৎ, আমরা পূর্ববর্তী আকীদা ও বিশ্বাসে অটল রহিয়াছি।)” —মোত্তাঃ
মুসলিমের রেওয়ায়তের মধ্যে তিনটি বাক্যের পরিবর্তন আছে। যেমন, আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদের পক্ষ হইতে। (অর্থাৎ, আব্দুল্লাহ্ শব্দ নাই) ইয়ারিসিয়্যীন (অর্থাৎ, হামযার স্থলে ইয়া) এবং (দাইয়াতিল ইসলামের স্থলে) দেআয়াতিল ইসলাম রহিয়াছে।
بَابُ الْكِتَابِ إِلَى الْكُفَّارِ وَدُعَائِهِمْ إِلَى الْإِسْلَامِ: الْفَصْل الأول
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَتَبَ إِلَى قَيْصَرَ يَدْعُوهُ إِلَى الْإِسْلَامِ وَبَعَثَ بِكِتَابِهِ إِلَيْهِ دِحْيَةَ الْكَلْبِيَّ وَأَمَرَهُ أَنْ يَدْفَعَهُ إِلَى عَظِيمِ بُصْرَى لِيَدْفَعَهُ إِلَى قَيْصَرَ فَإِذَا فِيهِ: بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ مِنْ مُحَمَّدٍ عَبْدِ اللَّهِ وَرَسُولِهِ إِلَى هِرَقْلَ عَظِيمِ الرُّومِ سَلَامٌ عَلَى مَنِ اتَّبَعَ الْهُدَى أَمَّا بَعْدُ فَإِنِّي أدْعوكَ بداعيَةِ الْإِسْلَامِ أَسْلِمْ تَسْلَمْ وَأَسْلِمْ يُؤْتِكَ اللَّهُ أَجَرَكَ مَرَّتَيْنِ وَإِنْ تَوَلَّيْتَ فَعَلَيْكَ إِثْمُ الْأَرِيسِيِّينَ وَ (يَا أَهْلَ الْكِتَابِ تَعَالَوْا إِلَى كَلِمَةٍ سَوَاءٍ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ أَن لَا نَعْبُدَ إِلَّا اللَّهَ وَلَا نُشْرِكَ بِهِ شَيْئًا وَلَا يَتَّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضًا أَرْبَابًا مِنْ دُونِ اللَّهِ فَإِنْ تَوَلَّوْا فَقُولُوا: اشْهَدُوا بِأَنَّا مُسْلِمُونَ)

مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ. وَفِي رِوَايَةٍ لِمُسْلِمٍ قَالَ:

مِنْ محمَّدٍ رسولِ اللَّهِ وَقَالَ: «إِثمُ اليريسيِّينَ» وَقَالَ: «بِدِعَايَةِ الْإِسْلَام»

হাদীসের ব্যাখ্যা:

ইসলামের প্রথম যুগে জনাব রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) মৌখিকভাবে অমুসলিমদিগকে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছাইতেন। অতঃপর হোদায়বিয়ার সন্ধির পর সপ্তম হিজরী হইতে বিভিন্ন দেশের অমুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদের নামে ইসলামের দাওয়াত সম্বলিত পত্র ও দূত প্রেরণ করেন। এই অধ্যায়ে উক্ত বিষয় সম্পর্কে কয়েকটি হাদীস বর্ণিত হইয়াছে।

কায়সার রোম সম্রাটের উপাধি, যেমন কিসরা পারস্য সম্রাটের উপাধি। তখনকার কায়সারের নাম ছিল হিরাকিল – (হিরাক্লিয়াস), সে মুসলমান হয় নাই ।
اجرك مرتين "দ্বিগুণ সওয়াব পাইবে।” কারণ, হুযূর (ﷺ)-এর দাওয়াত পৌঁছার আগে বৈধ খৃষ্টান ধর্মে থাকার কারণে একটি এবং পরে হুযূর (ﷺ)-এর প্রতি ঈমান স্থাপন করত ইসলাম ধর্ম গ্রহণের কারণে আর একটি সওয়াবের অধিকারী হইবে।
আরিসিয়্যীন—মূল অর্থ কৃষককুল। এইখানে প্রজাবৃন্দ উদ্দেশ্য করা হইয়াছে।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
মিশকাতুল মাসাবীহ - হাদীস নং ৩৯২৬ | মুসলিম বাংলা