মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
১৯- রাষ্ট্রনীতি ও আদালত-বিচার অধ্যায়
হাদীস নং: ৩৬৯০
প্রথম অনুচ্ছেদ
৩৬৯০। হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আমর ইবনুল আস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন: ন্যায় নীতিবান বিচারক (কিয়ামতের দিন) আল্লাহর নিকট তাহার ডান পার্শ্বে নূরের (উজ্জ্বল জ্যোতির) মিম্বরের উপর অবস্থান করিবে। অবশ্য আল্লাহ্ তা'আলার উভয় পার্শ্বই ডান। তাহারাই সেই সমস্ত বিচারক বা শাসক, যাহারা নিজেদের বিচার-বিধানে, নিজেদের পরিবার-পরিজনে এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় (মোটকথা সর্বাবস্থায় এবং সর্বক্ষেত্রে) ইনসাফ ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করে। মুসলিম
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ الْمُقْسِطِينَ عِنْدَ اللَّهِ عَلَى مَنَابِرَ مِنْ نُورٍ عَنْ يَمِينِ الرَّحْمَنِ وَكِلْتَا يَدَيْهِ يمينٌ الذينَ يعدِلُونَ فِي حُكمِهم وأهليهم وَمَا ولُوا» . رَوَاهُ مُسلم
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছটিতে ন্যায়পরায়ণ লোকদের উচ্চ ফযীলতের কথা বর্ণিত হয়েছে। বলা হয়েছে যে- إِنَّ الْمُقْسِطِيْنَ عِنْدَ اللهِ على مَنَابِرَ مِنْ نُوْرٍ (নিশ্চয়ই ন্যায়-ইনসাফকারীগণ আল্লাহর কাছে নূরের মিম্বরে আসন গ্রহণ করবে)। উলামায়ে কেরামের অনেকেই বলেন। নূরের মিম্বর দ্বারা বাস্তবিক মিম্বর ও উচ্চ আসন বোঝানো হয়েছে। সত্যিকার অর্থেই ন্যায়-ইনসাফকারীদের জন্য আল্লাহর কাছে নূরের উচ্চ আসন প্রস্তুত থাকবে। তারা সেই আসনে সমাসীন হবে। কেউ বলেন, এর দ্বারা সত্যিকারের নূরের আসন বোঝানো উদ্দেশ্য নয়; বরং উচ্চমর্যাদা বোঝানো উদ্দেশ্য। অর্থাৎ আখিরাতে আল্লাহ তা'আল তাদেরকে অতি উচ্চমর্যাদা দান করবেন।
ন্যায়-ইনসাফ রক্ষা করার বিষয়টি অতি ব্যাপক। সকলের সঙ্গেই এর সম্পর্ক আছে। আপন আপন পরিমণ্ডলে প্রত্যেকেরই এমন বহু ক্ষেত্র রয়েছে, যাতে ন্যায় ও ইনসাফ রক্ষার প্রয়োজন পড়ে। তা রক্ষা করা না হলে কঠিন পাপ হয়। এ হাদীছটিতে বিশেষভাবে তিন শ্রেণির লোক সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তারা ইনসাফ রক্ষা করলে আল্লাহ তা'আলার কাছে উল্লিখিত মর্যাদা লাভ করবে। তাদের মধ্যে প্রথম হচ্ছে-
الَّذِيْنَ يَعْدِلُوْنَ فِي حُكْمِهِمْ (যারা ইনসাফ রক্ষা করে তাদের বিচার ও শাসনকার্যে)। حُكم এর অর্থ শাসন করা, বিচার করা। এ বাক্যে জানানো হয়েছে, যে শাসকগণ ন্যায় ও ইনসাফের সঙ্গে রাষ্ট্র পরিচালনা করে এবং যে বিচারকগণ তাদের বিচার-আচারে ন্যায়নিষ্ঠতার পরিচয় দেয়, আখিরাতে তারা নূরের মিম্বরে আসন গ্রহণ করবে বা অতি উচ্চমর্যাদার অধিকারী হবে।
তারপর বলা হয়েছে- وَأَهْلِيْهِمْ (এবং তাদের পরিবার-পরিজনে)। অর্থাৎ যে অভিভাবকগণ তাদের পরিবার-পরিজনের মধ্যে তাদের সংশ্লিষ্ট যাবতীয় বিষয়ে ইনসাফ রক্ষা করে, তারাও আখিরাতে উচ্চমর্যাদা লাভ করবে। বোঝা গেল যে স্বামী তার স্ত্রীর সঙ্গে ন্যায়সম্মত আচরণ করে, যে পিতা তার ছেলেমেয়েদের প্রতি ইনসাফ রক্ষা করে এবং এমনিভাবে যে-কোনও অভিভাবক তার অধীন ব্যক্তিবর্গের উপর ইনসাফের আচরণ করে, তার জন্য আখিরাতে উল্লিখিত ফযীলত ও মর্যাদার ওয়াদা রয়েছে। বোঝা গেল, কোনও কর্তারই কর্তৃত্ববাদিতার ছত্রচ্ছায়ায় তার অধীন ব্যক্তিবর্গের উপর অন্যায়-অবিচার করার অবকাশ নেই। যে ব্যক্তি তা করবে, সে উল্লিখিত ফযীলত থেকে যে বঞ্চিত হবে কেবল তাই নয়; কঠিন গুনাহগারও হবে।
সবশেষে বলা হয়েছে- وَمَا وَلَوْا (এবং যা-কিছুর উপর তারা দায়িত্বশীল তাতে)। এ কথাটি ব্যাপক। এতিমের অভিভাবক, ওয়াকফ সম্পত্তির মুতাওয়াল্লী, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন পদ ও দায়িত্বে নিযুক্ত ব্যক্তিবর্গসহ যে-কোনও কাজের তত্ত্বাবধায়ক ও দায়িত্বশীল ব্যক্তি এর অন্তর্ভুক্ত। তাদের উচিত নিজ নিজ দায়িত্বপালনের ক্ষেত্রে ন্যায়নিষ্ঠ থাকা।
যার উপর অন্য কারও কোনও দায়িত্ব অর্পিত নেই, তার উপর অন্ততপক্ষে তার নিজের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তো অর্পিত রয়েছে। অর্থাৎ প্রত্যেকেরই দায়িত্ব নিজেকে ধ্বংসের কবল হতে বাঁচানোর চেষ্টা করা, নিজ স্বাস্থ্য ও সময়ের হেফাজত করা এবং আখিরাতের শাস্তি হতে নিজেকে রক্ষা করা। যে ব্যক্তি তা করবে না, সে তার নিজের উপর অন্যায় ও বেইনসাফী করল। আর যে ব্যক্তি তা করবে, সে তার নিজের উপর ইনসাফের পরিচয় দিল। ফলে সেও আখিরাতে উল্লিখিত মর্যাদার অধিকারী হতে পারবে। আল্লাহ তা'আলা বড়ই দয়াময়। তিনি তাঁর দয়ার দরজা সকলের জন্যই খোলা রেখেছেন। আপন আপন পরিমণ্ডলে, সে পরিমণ্ডল ছোট-বড় যেমনই হোক না কেন, ন্যায় ও ইনসাফ রক্ষা করার দ্বারা যে-কেউ তাঁর কাছে উচ্চমর্যাদা লাভ করতে পারে। তবে হাঁ, দায়িত্বের তারতম্য অনুযায়ী ইনসাফ রক্ষার ফযীলতেও তারতম্য হবে বৈ কি। ক্ষুদ্র পরিমণ্ডলে ইনসাফ রক্ষা যত সহজ হয়, বৃহত্তর পরিমণ্ডলে ততো সহজ নয়। কাজেই রাষ্ট্রক্ষমতায় থেকে যে ব্যক্তি ইনসাফ রক্ষা করতে সক্ষম হবে, তার মর্যাদা অন্য সকলের তুলনায় যে অনেক বেশি হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. শাসক ও বিচারকের কিছুতেই ন্যায়-ইনসাফ রক্ষায় ত্রুটি করা উচিত নয়। সেরকম ত্রুটি না করলে তারা আল্লাহর কাছে অনেক উচ্চমর্যাদা লাভ করবে।
খ. প্রত্যেক গৃহকর্তার উচিত আপন গৃহের সকলের প্রতি ন্যায়-ইনসাফের আচরণ করা।
গ. যে-কোনও দায়িত্বশীলেরই আপন দায়িত্ব পালনে ইনসাফের পরিচয় দেওয়া উচিত।
ন্যায়-ইনসাফ রক্ষা করার বিষয়টি অতি ব্যাপক। সকলের সঙ্গেই এর সম্পর্ক আছে। আপন আপন পরিমণ্ডলে প্রত্যেকেরই এমন বহু ক্ষেত্র রয়েছে, যাতে ন্যায় ও ইনসাফ রক্ষার প্রয়োজন পড়ে। তা রক্ষা করা না হলে কঠিন পাপ হয়। এ হাদীছটিতে বিশেষভাবে তিন শ্রেণির লোক সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তারা ইনসাফ রক্ষা করলে আল্লাহ তা'আলার কাছে উল্লিখিত মর্যাদা লাভ করবে। তাদের মধ্যে প্রথম হচ্ছে-
الَّذِيْنَ يَعْدِلُوْنَ فِي حُكْمِهِمْ (যারা ইনসাফ রক্ষা করে তাদের বিচার ও শাসনকার্যে)। حُكم এর অর্থ শাসন করা, বিচার করা। এ বাক্যে জানানো হয়েছে, যে শাসকগণ ন্যায় ও ইনসাফের সঙ্গে রাষ্ট্র পরিচালনা করে এবং যে বিচারকগণ তাদের বিচার-আচারে ন্যায়নিষ্ঠতার পরিচয় দেয়, আখিরাতে তারা নূরের মিম্বরে আসন গ্রহণ করবে বা অতি উচ্চমর্যাদার অধিকারী হবে।
তারপর বলা হয়েছে- وَأَهْلِيْهِمْ (এবং তাদের পরিবার-পরিজনে)। অর্থাৎ যে অভিভাবকগণ তাদের পরিবার-পরিজনের মধ্যে তাদের সংশ্লিষ্ট যাবতীয় বিষয়ে ইনসাফ রক্ষা করে, তারাও আখিরাতে উচ্চমর্যাদা লাভ করবে। বোঝা গেল যে স্বামী তার স্ত্রীর সঙ্গে ন্যায়সম্মত আচরণ করে, যে পিতা তার ছেলেমেয়েদের প্রতি ইনসাফ রক্ষা করে এবং এমনিভাবে যে-কোনও অভিভাবক তার অধীন ব্যক্তিবর্গের উপর ইনসাফের আচরণ করে, তার জন্য আখিরাতে উল্লিখিত ফযীলত ও মর্যাদার ওয়াদা রয়েছে। বোঝা গেল, কোনও কর্তারই কর্তৃত্ববাদিতার ছত্রচ্ছায়ায় তার অধীন ব্যক্তিবর্গের উপর অন্যায়-অবিচার করার অবকাশ নেই। যে ব্যক্তি তা করবে, সে উল্লিখিত ফযীলত থেকে যে বঞ্চিত হবে কেবল তাই নয়; কঠিন গুনাহগারও হবে।
সবশেষে বলা হয়েছে- وَمَا وَلَوْا (এবং যা-কিছুর উপর তারা দায়িত্বশীল তাতে)। এ কথাটি ব্যাপক। এতিমের অভিভাবক, ওয়াকফ সম্পত্তির মুতাওয়াল্লী, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন পদ ও দায়িত্বে নিযুক্ত ব্যক্তিবর্গসহ যে-কোনও কাজের তত্ত্বাবধায়ক ও দায়িত্বশীল ব্যক্তি এর অন্তর্ভুক্ত। তাদের উচিত নিজ নিজ দায়িত্বপালনের ক্ষেত্রে ন্যায়নিষ্ঠ থাকা।
যার উপর অন্য কারও কোনও দায়িত্ব অর্পিত নেই, তার উপর অন্ততপক্ষে তার নিজের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তো অর্পিত রয়েছে। অর্থাৎ প্রত্যেকেরই দায়িত্ব নিজেকে ধ্বংসের কবল হতে বাঁচানোর চেষ্টা করা, নিজ স্বাস্থ্য ও সময়ের হেফাজত করা এবং আখিরাতের শাস্তি হতে নিজেকে রক্ষা করা। যে ব্যক্তি তা করবে না, সে তার নিজের উপর অন্যায় ও বেইনসাফী করল। আর যে ব্যক্তি তা করবে, সে তার নিজের উপর ইনসাফের পরিচয় দিল। ফলে সেও আখিরাতে উল্লিখিত মর্যাদার অধিকারী হতে পারবে। আল্লাহ তা'আলা বড়ই দয়াময়। তিনি তাঁর দয়ার দরজা সকলের জন্যই খোলা রেখেছেন। আপন আপন পরিমণ্ডলে, সে পরিমণ্ডল ছোট-বড় যেমনই হোক না কেন, ন্যায় ও ইনসাফ রক্ষা করার দ্বারা যে-কেউ তাঁর কাছে উচ্চমর্যাদা লাভ করতে পারে। তবে হাঁ, দায়িত্বের তারতম্য অনুযায়ী ইনসাফ রক্ষার ফযীলতেও তারতম্য হবে বৈ কি। ক্ষুদ্র পরিমণ্ডলে ইনসাফ রক্ষা যত সহজ হয়, বৃহত্তর পরিমণ্ডলে ততো সহজ নয়। কাজেই রাষ্ট্রক্ষমতায় থেকে যে ব্যক্তি ইনসাফ রক্ষা করতে সক্ষম হবে, তার মর্যাদা অন্য সকলের তুলনায় যে অনেক বেশি হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. শাসক ও বিচারকের কিছুতেই ন্যায়-ইনসাফ রক্ষায় ত্রুটি করা উচিত নয়। সেরকম ত্রুটি না করলে তারা আল্লাহর কাছে অনেক উচ্চমর্যাদা লাভ করবে।
খ. প্রত্যেক গৃহকর্তার উচিত আপন গৃহের সকলের প্রতি ন্যায়-ইনসাফের আচরণ করা।
গ. যে-কোনও দায়িত্বশীলেরই আপন দায়িত্ব পালনে ইনসাফের পরিচয় দেওয়া উচিত।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
