মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

১৮- শরীআতের দন্ড বিধি অধ্যায়

হাদীস নং: ৩৫৬২
- শরীআতের দন্ড বিধি অধ্যায়
প্রথম অনুচ্ছেদ
৩৫৬২। হযরত বুরায়দা (রাঃ) বলেন, একদা হযরত মায়েয ইবনে মালেক (রাঃ) নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসিয়া বলিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমাকে পবিত্র করুন। তিনি বলিলেন: আক্ষেপ তোমার প্রতি, চলিয়া যাও, আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও এবং তওবা কর। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি চলিয়া গেলেন এবং সামান্য একটু দূরে যাইয়াই পুনরায় ফিরিয়া আসিলেন এবং আবারও বলিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমাকে পবিত্র করুন। নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এইবারও তাঁহাকে পূর্বের ন্যায় বলিলেন। এইভাবে তিনি যখন চতুর্থবার আসিয়া বলিলেন, তখন রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করিলেন, আচ্ছা! আমি তোমাকে কোন জিনিস হইতে পবিত্র করিব? তিনি বলিলেন, যিনা হইতে। তাহার কথা শুনিয়া রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাহাবাদিগকে) জিজ্ঞাসা করিলেন, এই লোকটি কি পাগল? লোকেরা বলিল, না তো? তিনি পাগল নহেন। তিনি আবার বলিলেন, লোকটি কি মদ পান করিয়াছে ? তৎক্ষণাৎ এক ব্যক্তি দাড়াইয়া তাহার মুখ শুঁকিয়া দেখেন; কিন্তু মদের কোন গন্ধ তাহার মুখ হইতে পাওয়া গেল না। অতঃপর তিনি তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, তুমি কি সত্যই যিনা করিয়াছ? তিনি বলিলেন, জি হ্যাঁ। ইহার পর তিনি রজমের নির্দেশ দিলেন, তখন তাহাকে রজম করা হইল। এই ঘটনার দুই তিন দিন পর রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাহাবাদের সম্মুখে আসিয়া বলিলেন: তোমরা মায়েয ইবনে মালেকের জন্য ইস্তেগফার কর (ক্ষমা প্রার্থনা কর)। কেননা, সে এমন তওবাই করিয়াছে, যদি উহা সমস্ত উম্মতের মধ্যে বিতরণ করিয়া দেওয়া হয়, তবে উহা সকলের জন্য যথেষ্ট হইবে।

অতঃপর আদ বংশের গামেদী গোত্রীয় একটি মহিলা আসিয়া বলিল, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমাকে পবিত্র করুন। তিনি বলিলেন: তোমার প্রতি আক্ষেপ। চলিয়া যাও, আল্লাহর কাছে ইস্তেগফার কর এবং তওবা কর। তখন মহিলাটি বলিল, আপনি মায়েয ইবনে মালেককে যেইভাবে ফিরাইয়া দিয়াছেন আমাকেও কি সেইভাবে ফিরাইয়া দিতে চান? দেখুন, আমার এই গর্ভ যিনার! তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, তুমি কি (সত্যই গর্ভবতী)? মহিলাটি বলিল, জি হা । অতঃপর তিনি বলিলেন যাও, তোমার পেটের বাচ্চা প্রসব হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা কর। বর্ণনাকারী বলেন, তখন আনসারী এক লোক মহিলাটির সন্তান প্রসব হওয়ার সময় পর্যন্ত তাহাকে নিজের তত্ত্বাবধানে লইয়া গেলেন। সন্তান প্রসব হওয়ার পর ঐ লোকটি নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে আসিয়া বলিল, হুযূর গামেদিয়া মহিলাটির গর্ত খালাস হইয়া গিয়াছে। এইবার তিনি বলিলেন এই শিশু বাচ্চাটিকে রাখিয়া আমরা মহিলাটিকে রজম করিতে পারিব না। এমতাবস্থায় যে, তাহাকে দুধ পান করাইবার মত কেহই নাই। এমন সময় আর একজন আনসারী দাঁড়াইয়া বলিল, হে আল্লাহর নবী! আমিই তাহার দুধ খাওয়ানোর ব্যবস্থা করিব। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তাহাকে রজম করিলেন।

অন্য এক রেওয়ায়তে আছে, নবী (ছাঃ) মহিলাটিকে বলিলেন তুমি চলিয়া যাও এবং সন্তান প্রসব হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা কর। অতঃপর সন্তান প্রসবের পর যখন আসিল, তখন বলিলেন, আবারও চলিয়া যাও এবং তাহাকে দুধ পান করাও এবং দুধ ছাড়ান পর্যন্ত অপেক্ষা কর। পরে যখন বাচ্চাটির দুধ খাওয়া বন্ধ হয়, তখন মহিলাটি বাচ্চার হাতে এক খণ্ড রুটির টুক্রা দিয়া তাহাকে সঙ্গে করিয়া হুযূর (ছাঃ)-এর খেদমতে উপস্থিত হইল। এইবার মহিলাটি বলিল, হে আল্লাহর নবী! এই দেখুন (বাচ্চাটির) দুধ ছোড়ান হইয়াছে, এমন কি সে নিজের হাতে খানাও খাইতে পারে। তখন হুযূর (ছাঃ) বাচ্চাটিকে একজন মুসলমানের হাতে তুলিয়া দিলেন। পরে মহিলাটির জন্য গর্ত খোঁড়ার নির্দেশ দিলেন। অতএব, তাহার জন্য বক্ষ পর্যন্ত গর্ত খনন করা হইল। তৎপর লোকদিগকে নির্দেশ করিলেন, তাহারা মহিলাটিকে রজম করিল। হযরত খালেদ ইবনে ওলীদ (রাঃ) সম্মুখে অগ্রসর হইয়া তাহার মাথায় একখণ্ড পাথর নিক্ষেপ করিতেই রক্ত ছিটিয়া আসিয়া তাঁহার মুখমণ্ডলের উপর পড়িল। তাই তিনি মহিলাটিকে ভৎসনা ও তিরস্কার করিয়া গাল-মন্দ করিলেন, (ইহা শুনিয়া) নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেনঃ হে খালেদ, থাম! সেই সত্তার কসম, যাঁহার হাতে আমার প্রাণ। অবশ্য মহিলাটি এমন (খালেছ) তওবা করিয়াছে, যদি কোন বড় যালেমও এই ধরনের তওবা করে, তাহারও মাগফেরাত হইয়া যাইবে। অতঃপর তিনি তাহার জানাযা পড়ার আদেশ করিলেন, অতঃপর তাহার জানাযা পড়া হইল এবং তাহাকে দাফনও করা হইল। মুসলিম
كتاب الحدود
وَعَنْ بُرَيْدَةَ قَالَ: جَاءَ مَاعِزُ بْنُ مَالِكٍ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ طَهِّرْنِي فَقَالَ: «وَيْحَكَ ارْجِعْ فَاسْتَغْفر الله وَتب إِلَيْهِ» . فَقَالَ: فَرَجَعَ غَيْرَ بَعِيدٍ ثُمَّ جَاءَ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ طَهِّرْنِي. فَقَالَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِثْلَ ذَلِكَ حَتَّى إِذَا كَانَتِ الرَّابِعَة قَالَه لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «فِيمَ أُطَهِّرُكَ؟» قَالَ: مِنَ الزِّنَا قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَبِهِ جُنُونٌ؟» فَأُخْبِرَ أَنَّهُ لَيْسَ بِمَجْنُونٍ فَقَالَ: «أَشَرِبَ خَمْرًا؟» فَقَامَ رَجُلٌ فَاسْتَنْكَهَهُ فَلَمْ يَجِدْ مِنْهُ رِيحَ خَمْرٍ فَقَالَ: «أَزَنَيْتَ؟» قَالَ: نَعَمْ فَأَمَرَ بِهِ فَرُجِمَ فَلَبِثُوا يَوْمَيْنِ أَوْ ثَلَاثَةً ثُمَّ جَاءَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «اسْتَغْفِرُوا لِمَاعِزِ بْنِ مَالِكٍ لَقَدْ تَابَ تَوْبَةً لَوْ قُسِّمَتْ بَيْنَ أُمَّةٍ لَوَسِعَتْهُمْ» ثُمَّ جَاءَتْهُ امْرَأَةٌ مِنْ غَامِدٍ مِنَ الْأَزْدِ فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ طَهِّرْنِي فَقَالَ: «وَيَحَكِ ارْجِعِي فَاسْتَغْفِرِي اللَّهَ وَتُوبِي إِلَيْهِ» فَقَالَتْ: تُرِيدُ أَنْ تَرْدُدَنِي كَمَا رَدَدْتَ مَاعِزَ بْنَ مَالِكٍ: إِنَّهَا حُبْلَى مِنَ الزِّنَا فَقَالَ: «أَنْتِ؟» قَالَتْ: نَعَمْ قَالَ لَهَا: «حَتَّى تَضَعِي مَا فِي بَطْنِكِ» قَالَ: فكَفَلَها رَجُلٌ مِنَ الْأَنْصَارِ حَتَّى وَضَعَتْ فَأَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: قَدْ وَضَعَتِ الغامديَّةُ فَقَالَ: «إِذاً لَا نرجُمها وندعُ وَلَدَهَا صَغِيرًا لَيْسَ لَهُ مَنْ يُرْضِعُهُ» فَقَامَ رَجُلٌ مِنَ الْأَنْصَارِ فَقَالَ: إِلَيَّ رَضَاعُهُ يَا نَبِيَّ اللَّهِ قَالَ: فَرَجَمَهَا. وَفِي رِوَايَةٍ: أَنَّهُ قَالَ لَهَا: «اذْهَبِي حَتَّى تَلِدِي» فَلَمَّا وَلَدَتْ قَالَ: «اذْهَبِي فَأَرْضِعِيهِ حَتَّى تَفْطِمِيهِ» فَلَمَّا فَطَمَتْهُ أَتَتْهُ بِالصَّبِيِّ فِي يَدِهِ كِسْرَةُ خُبْزٍ فَقَالَتْ: هَذَا يَا نَبِيَّ اللَّهِ قَدْ فَطَمْتُهُ وَقَدْ أَكَلَ الطَّعَامَ فَدَفَعَ الصَّبِيَّ إِلَى رَجُلٍ مِنَ الْمُسْلِمِينَ ثُمَّ أَمَرَ بِهَا فَحُفِرَ لَهَا إِلَى صَدْرِهَا وَأَمَرَ النَّاسَ فَرَجَمُوهَا فَيُقْبِلُ خَالِدُ بْنُ الْوَلِيدِ بِحَجْرٍ فَرَمَى رَأْسَهَا فَتَنَضَّحَ الدَّمُ عَلَى وَجْهِ خَالِدٍ فَسَبَّهَا فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «مهلا يَا خَالِد فو الَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَقَدْ تَابَتْ تَوْبَةً لَوْ تَابَهَا صَاحِبُ مَكْسٍ لَغُفِرَ لَهُ» ثُمَّ أَمَرَ بِهَا فصلى عَلَيْهَا ودفنت. رَوَاهُ مُسلم
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান