মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

১৪- বিবাহ-শাদী সম্পর্কিত অধ্যায়

হাদীস নং: ৩৩০৪
- বিবাহ-শাদী সম্পর্কিত অধ্যায়
১৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - লিআন
৩৩০৪। হযরত সাহল ইবনে সাদ সায়েদী (রাঃ) বলেন, একদিন উয়াইমের আজলানী আসিয়া বলিল, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনি কি বলেন, যদি কোন ব্যক্তি তাহার স্ত্রীর সাথে অপর ব্যক্তিকে পায়, তবে কি সে তাহাকে হত্যা করিবে? অতঃপর নিহতের আত্মীয়গণ তাহাকে হত্যা করিবে অথবা সে কি করিবে? রাসুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেনঃ তোমার ও তোমার স্ত্রীর (ন্যায় ব্যক্তিদের) ব্যাপারেই (সূরা নূরের লেআনের আয়াতটি) নাযিল করা হইয়াছে। যাও, তোমার স্ত্রীকে লইয়া আস। সাহুল বলেন, তাহারা আসিয়া মসজিদে লেআন করিল আর আমি তখন লোকের সাথে রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট ছিলাম। যখন তাহারা 'লেআন' হইতে অবসর গ্রহণ করিল, উয়াইমের বলিল, ইহার পর যদি আমি তাহাকে রাখি তাহা হইলে ধরিতে হইবে যে, আমি তাহার প্রতি মিথ্যা আরোপ করিয়াছি। অতঃপর সে তাহাকে তিন তালাক দিয়া দিল। এ সময় রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন, যদি সে কালো এবং কালো কালো পুতলী, বড় বড় নিতম্ব ও মোটা মোটা নালাওয়ালা সন্তান প্রসব করে তবে মনে করিব যে, উয়াইমের নিশ্চয় সত্য বলিয়াছে; আর যদি ওহরার ন্যায় লাল টুকটুকে সন্তান প্রসব করে তবে মনে করিব যে, উয়াইমের তাহার প্রতি মিথ্যা আরোপ করিয়াছে। রাবী বলেন, রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উয়াইমেরের সমর্থনে সন্তানের যেরূপ বর্ণনা দান করিয়াছিলেন, সে সেইরূপ সস্তানই প্রসব করিল। অতঃপর সন্তানকে তাহার মাতার নামেই ডাকা হইতে লাগিল। —মোত্তাঃ
كتاب النكاح
بَابُ اللِّعَانِ: الْفَصْل الأول
عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ السَّاعِدِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنهُ قَالَ: إِن عُوَيْمِر الْعَجْلَانِيَّ قَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَرَأَيْتَ رَجُلًا وجدَ معَ امرأتِهِ رجُلاً أيقْتُلُه فيَقْتُلُونه؟ أمْ كَيفَ أفعل؟ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «قدْ أُنْزِلُ فِيكَ وَفِي صَاحِبَتِكَ فَاذْهَبْ فَأْتِ بِهَا» قَالَ سَهْلٌ: فَتَلَاعَنَا فِي الْمَسْجِدِ وَأَنَا مَعَ النَّاسِ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمَّا فَرَغَا قَالَ عُوَيْمِرٌ: كَذَبْتُ عَلَيْهَا يَا رسولَ اللَّهِ إِن أَمْسكْتُها فطلقتها ثَلَاثًا ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: انْظُرُوا فَإِنْ جَاءَتْ بِهِ أَسْحَمَ أَدْعَجَ الْعَيْنَيْنِ عَظِيمَ الْأَلْيَتَيْنِ خَدَلَّجَ السَّاقَيْنِ فَلَا أَحسب عُوَيْمِر إِلَّا قَدْ صَدَقَ عَلَيْهَا وَإِنْ جَاءَتْ بِهِ أُحَيْمِرَ كَأَنَّهُ وَحَرَةٌ فَلَا أَحْسِبُ عُوَيْمِرًا إِلَّا قَدْ كَذَبَ عَلَيْهَا فَجَاءَتْ بِهِ عَلَى النَّعْتِ الَّذِي نَعْتُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ تَصْدِيقِ عُوَيْمِرٍ فَكَانَ بَعْدُ يُنْسَبُ إِلَى أمه

হাদীসের ব্যাখ্যা:

লেআন ও যেনার অপবাদ

লেআন—অর্থ, একে অন্যকে অভিশাপ করা। শরীআতে ইহার অর্থ, যে ব্যক্তি আপন স্ত্রীকে ব্যভিচারের অপবাদ দিয়াছে, অথচ চারি জন সাক্ষী উপস্থিত করিতে পারে নাই, তাহার চারিবার আল্লাহ্র নামে শপথ করিয়া বলা, নিশ্চয় আমি সত্যবাদী এবং পঞ্চমবার বলা, আমার প্রতি আল্লাহর 'লা'নত' হউক যদি আমি মিথ্যাবাদী হই। এইরূপে স্ত্রী যদি তাহাকে মিথ্যাবাদী মনে করে, তাহারও চারিবার আল্লাহর নামে শপথ করিয়া বলা, আমার স্বামী মিথ্যাবাদী এবং পঞ্চমবার বলা, আমার উপর আল্লাহর ‘গযব' হউক যদি সে (স্বামী) সত্যবাদী হয়। কোরআনে রহিয়াছে “যাহারা নিজেদের স্ত্রীদেরকে ব্যভিচারের অপবাদ দেয় আর তাহাদের নিজেরা ব্যতীত তাহাদের নিকট কোন সাক্ষী না থাকে, তবে তাহাদের একের চারিবার আল্লাহর নামে সাক্ষ্য দিতে হইবে যে, সে নিশ্চয় সত্যবাদী এবং পঞ্চমবার বলিবে, তাহার উপর আল্লাহর লা'নত যদি সে মিথ্যাবাদী হয়। আর স্ত্রীর উপর হইতে শাস্তি এইরূপে বিদূরিত হইবে যে, সে চারিবার আল্লাহর নামে সাক্ষ্য দিবে, নিশ্চয় সে (স্বামী) মিথ্যাবাদী এবং পঞ্চমবার বলিবে, আমার উপর আল্লাহর ‘গযব' হউক যদি সে সত্যবাদী হয়।” (সূরা নূর, আয়াত ৬–৯)
এইরূপ লেআনের পর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আপনা আপনিই বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটিয়া যায়। কাযীর নির্দেশের অপেক্ষা রাখে না। ইমাম মালেক, শাফেয়ী ও ফকীহ্ সাধারণের ইহাই মত। কিন্তু ইমাম আবু হানীফার মতে ইহা কাযীর নির্দেশসাপেক্ষ। কিন্তু সকলের মতেই ইহাদের মধ্যে আর কখনও বিবাহবন্ধন হইতে পারে না।

(ক) উয়াইমের লাল গোরা ব্যক্তি ছিলেন। (খ) ওহরা—লাল রঙের এক প্রকার কীট। (গ) সে তাহাকে তিন তালাক দিয়া দিল। — ইমাম শাফেয়ীর মতে উয়াইমের জানিত না যে, স্বয়ং 'লেআন' দ্বারাই বিবাহ বিচ্ছেদ হইয়া যায়, তাই সে তালাক দিয়াছিল।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান