মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

১২- ক্রয় - বিক্রয়ের অধ্যায়

হাদীস নং: ২৯৭২
১৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - বাগান ও জমিনের বর্গা (পরস্পর সেচকার্য করা ও ভাগে কৃষিকাজ, বর্গাচাষ করা)
২৯৭২। হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর (রাঃ) হইতে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বরের বাগান ও যমীন খায়বরের ইহুদীদেরকে দিয়াছিলেন। তাহারা নিজেদের অর্থে উহাতে কাজ করিবে; আর রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহার ফলের আধা পাইবেন। —মুসলিম

বোখারীর বর্ণনায় আছে--- রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বরকে ইহুদীদের দিয়াছিলেন, তাহারা উহাতে মেহনত করিবে ও শস্য বুনিবে, আর তাহাদের জন্য উৎপাদনের অর্ধেক হইবে।
بَابُ الْمُسَاقَاةِ وَالْمُزَارَعَةِ: الْفَصْل الأول
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَفَعَ إِلَى يَهُودِ خَيْبَرَ نَخْلَ خَيْبَرَ وَأَرْضَهَا عَلَى أَنْ يَعْتَمِلُوهَا مِنْ أَمْوَالِهِمْ وَلِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَطْرُ ثَمَرِهَا. رَوَاهُ مُسْلِمٌ

وَفِي رِوَايَةِ الْبُخَارِيِّ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَعْطَى خَيْبَرَ الْيَهُودَ أَنْ يَعْمَلُوهَا ويزرعوها وَلَهُم شطر مَا يخرج مِنْهَا

হাদীসের ব্যাখ্যা:

বাগান ও যমীন বর্গা

“বাগান ও যমীন বর্গা দেওয়া’—মূলে ‘মুসাকা' ও ‘মুযারাআত' শব্দ রহিয়াছে। ‘মুসাকা” শব্দের অর্থ, উৎপাদিত ফলের এক নির্দিষ্ট অংশের বিনিময়ে কাহাকেও বাগানের তত্ত্বাবধান করিতে দেওয়া। ‘মুযারাআত' শব্দের অর্থ হইল, উৎপাদিত শস্যের এক নির্দিষ্ট অংশের বিনিময়ে কাহাকেও যমীন চাষ করিতে দেওয়া।
এই ব্যাপারে হাদীসে রাসূল বিভিন্ন। অতএব, ইমাম আ'যম আবু হানীফার মতে ইহা না-জায়েয। কারণ, ইহাতে চাষীর মজুরি অজানা। খেতে শস্য উৎপাদিত নাও হইতে পারে। পক্ষান্তরে ইমাম মালেক, শাফেয়ী, আহমদ ও আমাদের ইমাম আবু ইউসুফ এবং মুহাম্মদ শায়বানীর মতে ইহা জায়েয।
বাস্তবে ইহার প্রয়োজনও রহিয়াছে। কারণ, এমন কোন লোকের কাছে যমীন থাকিতে পারে যাহার চাষের ক্ষমতা নাই। যথা—রোগী, পঙ্গু, নাবালেগ ও বিধবা। আর বাহিরে এমন লোক থাকিতে পারে যাহার চাষের ক্ষমতা আছে, অথচ তাহার জমি নাই। হানাফী মাযহাবের 'ফতওয়া’ ইহারই উপর।
হানাফী মাযহাব মতে ইহার জায়েয সুরত তিনটি— (১) যমীন ও বীজ একজনের, আর গরু, লাঙ্গল ও পরিশ্রম অন্যজনের, (২) যমীন একজনের আর বাকী সব অন্যজনের এবং (৩) পরিশ্রম একজনের আর বাকী সব অন্যজনের। এছাড়া যমীন ও গরু একজনের এবং বাকী সব অন্যজনের; ইহাও জায়েয।
বর্গা জায়েয হওয়ার জন্য আরও বহু শর্ত শরীআতে রহিয়াছে। যেমন, কতদিনের জন্য বর্গা দেওয়া হইল তাহা নির্দিষ্ট থাকা এবং উৎপাদিত শস্য উভয়ের মধ্যে বণ্টিত হওয়া ইত্যাদি। যাহার বিস্তারিত বিবরণ ফেকাহর কিতাবে রহিয়াছে।
যেখানে বর্গাদারের উপর যুলুম হয় সেখানে সরকার ও সমাজের পক্ষে উহা দমন করা কর্তব্য। বর্গা একেবারে বন্ধ করিয়া দেওয়া ঠিক নহে। ইহার আবশ্যকতার উল্লেখ উপরে করা হইয়াছে। — অনুবাদক

খায়বরের কিছু অংশ বিনা অস্ত্রধারণে আর কিছু অস্ত্রধারণে বিজিত হয়। বিজিত ইহুদীগণ হুযুরের নিকট তথাকার বাগান ও যমীন বর্গা চাহিলে হুযূর তাহাদের নিকট উহা বর্গা দেন। এ হাদীস বর্গা জায়েযের পক্ষে একটি দলীল।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
মিশকাতুল মাসাবীহ - হাদীস নং ২৯৭২ | মুসলিম বাংলা