আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৫০- নবীজীর সাঃ যুদ্ধাভিযানসমূহ

হাদীস নং: ৩৭৭৩
আন্তর্জাতিক নং: ৪০৭২
২১৮৬. হামযা ইবনে আব্দুল মুত্তালিব (রাযিঃ)- এর শাহাদাত
৩৭৭৩। আবু জাফর মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ (রাহঃ) .... জাফর ইবনে আমর ইবনে উমাইয়া যামরী (রাহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উবাইদুল্লাহ ইবনে আদী ইবনে খিয়ার (রাহঃ)- এর সাথে ভ্রমণে বের হলাম। আমরা যখন হিমস নামক স্থানে পৌঁছলাম তখন উবাইদুল্লাহ (রাহঃ) আমাকে বললেন, ওয়াহশীর কাছে যেতে তোমার ইচ্ছা আছে কি? আমরা তাকে হামযা (রাযিঃ)- এর শাহাদাত বরণ করার ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করব। আমি বললাম, হ্যাঁ যাব। ওয়াহশী তখন হিমস শহরে বসবাস করতেন। আমরা তার সম্পর্কে (লোকদেরকে) জিজ্ঞাসা করলাম। আমাদের কে বলা হল ঐ তো তিনি তার প্রাসাদের ছায়ার মধ্যে পশমহীন মশকের মত স্থির হয়ে বসে আছেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা গিয়ে তার থেকে অল্প কিছু দূরে থামলাম এবং তাকে সালাম দিলাম। তিনি আমাদের সালামের উত্তর দিলেন।
জাফর (রাহঃ) বর্ণনা করেন, তখন উবাইদুল্লাহ (রাহঃ) তার মাথা পাগড়ি দ্বারা এমনভাবে আবৃত করে রেখেছিলেন যে, ওয়াহশী তার দুই চোখ এবং দুই পা ব্যতীত আর কিছুই দেখতে পাচ্ছিলেন না। এমতাবস্থায় উবাইদুল্লাহ (রাহঃ) ওয়াহশীকে লক্ষ্য করে বললেন, হে ওয়াহশী আপনি আমাকে চিনেন কি? বর্ণনাকারী বলেন, তিনি তখন তার দিকে তাকালেন এবং এরপর বললেন, না, আল্লাহর কসম! আমি আপনাকে চিনি না। তবে আমি এটুকু জানি যে, আদী ইবনে খিয়ার উম্মে কিতাল বিনত আবুল ঈস নামক এক মহিলাকে বিয়ে করেছিলেন। মক্কায় তার একটি সন্তান জন্মগ্রহণ করলে আমি তার দাই খোঁজ করছিলাম, তখন ঐ বাচ্চাকে নিয়ে তার মায়ের সাথে গিয়ে ধাত্রীমাতার কাছে তাকে সোপর্দ করলাম। সে দিনের সে বাচ্চার পা দু’টির মত যেন আপনার পা দু’টি দেখতে পাচ্ছি।
বর্ণনাকারী বললেন, তখন উবাইদুল্লাহ তার মুখের পর্দা সরিয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, হামযা (রাযিঃ)- এর শাহাদাত সম্পর্কে আমাদেরকে খবর দেবেন কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বদর যুদ্ধে হামযা (রাযিঃ) তুআইমা ইবনে আদী ইবনে খিযারকে হত্যা করেছিলেন। তাই আমার মনিব জুবাইর ইবনে মুতঈম আমাকে বললেন, তুমি যদি আমার চাচার প্রতিশোধস্বরূপ হামযা কে হত্যা করতে পার তাহলে তুমি আযাদ। রাবী বলেন, যে বছর উহুদ পাহাড় সংলগ্ন আইনাইন পাহাড়ের উপত্যকায় যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল সে যুদ্ধে আমি সকলের সাথে রওয়ানা হয়ে যাই। এরপর লড়াইয়ের জন্য সকলেই সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ালে (কাফির সৈন্যদলের মধ্য থেকে) সিবা নামক এক ব্যক্তি ময়দানে এসে বলল, দ্বন্দ্বযুদ্ধের জন্য কেউ কি প্রস্তুত আছ? ওয়াহশী বলেন, হামযা ইবনে আব্দুল মুত্তালিব (রাযিঃ) (বীর বিক্রমে) তার সামনে গিয়ে বললেন, হে মেয়েদের খতনাকারিণী উম্মে আনমারের পুত্র সিবা! তুমি কি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে দুশমনী করছ?
বর্ণনাকারী বলেন, এরপর তিনি তার উপর প্রচন্ড আঘাত করলেন, যার ফলে সে অতীত দিনের মত বিলীন হয়ে গেল। ওয়াহশী বলেন, আমি হামযা (রাযিঃ)- কে কতল করার উদ্দেশ্যে একটি পাথরের নীচে আত্মগোপন করে ওঁত পেতে বসেছিলাম। যখন তিনি আমার নিকটবর্তী হলেন তখন আমি আমার অস্ত্র দ্বারা এমন জোরে আঘাত করলাম যে, তার মূত্রথলি ভেদ করে নিতম্বের মাঝখান দিয়ে তা বেরিয়ে গেল। ওয়াহশী বলেন, এইটাই হল তাঁর শাহাদাতের মূল ঘটনা। এরপর সবাই ফিরে এলে আমিও তাদের সাথে ফিরে এসে মক্কায় অবস্থান করতে লাগলাম। এরপর মক্কায় ইসলাম প্রসার লাভ করলে আমি তায়েফ চলে গেলাম। কিছুদিনের মধ্যে তায়েফবাসিগণ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- এর কাছে দূত প্রেরণের ব্যবস্থা করলে আমাকে বলা হল যে, তিনি দূতদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন না। তাই আমি তাদের সাথে রওয়ানা হলাম এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- এর সামনে গিয়ে হাযির হলাম।
তিনি আমাকে দেখে বললেন, তুমি কি ওয়াহশী? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তুমিই কি হামযাকে হত্যা করেছিলে? আমি বললাম, আপনার কাছে যে সংবাদ পৌঁছেছে ব্যাপারটি তাই। তিনি বললেন, আমার সামনে থেকে তোমার চেহারা কি সরিয়ে রাখতে পার? ওয়াহশী বলেন, আমি তখন চলে আসলাম। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- এর ইন্‌তিকালের পর মুসাইলামাতুল কাযযাব (নবুওয়াতের মিথ্যা দাবীদার) আবির্ভূত হলে আমি বললাম, আমি অবশ্যই মুসাইলামার বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হব এবং তাকে হত্যা করে হামযা (রাযিঃ)-কে হত্যা করার ক্ষতিপূরণ করব। ওয়াহশী বলেন, তাই আমি লোকদের সাথে রওয়ানা করলাম। তার অবস্থা যা হওয়ার তাই হল।
তিনি বর্ণনা করেন যে, এক সময় আমি দেখলাম যে, হালকা কালো বর্ণের উটের ন্যায় উষ্কখুষ্ক চুলবিশিষ্ট এক ব্যক্তি একটি ভাঙ্গা প্রাচীরের আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে। তখন সাথে সাথে আমি আমার বর্শা দ্বারা তার উপর আঘাত করলাম। এবং তার বক্ষের উপর বসিয়ে দিলাম যে, তা দু কাঁধের মাঝখান দিয়ে বেরিয়ে পড়ল। এরপর আনসারী এক সাহাবী এসে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন এবং তরবারী দ্বারা তার মাথার খুলিতে প্রচন্ড আঘাত করলেন। আব্দুল্লাহ ইবনে ফজল (রাহঃ) বর্ণনা করেছেন যে, সুলাইমান ইবনে ইয়াসির (রাহঃ) আমাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ)- কে বলতে শুনেছেন যে, (মুসাইলামা নিহত হলে) ঘরের ছাদে উঠে একটি বালিকা বলছিল, হায়, হায়! আমিরুল মু’মিনীন (মুসাইলামা)-কে একজন কালো ক্রীতদাস হত্যা করল।
بَاب قَتْلِ حَمْزَةَ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ
4072 - حَدَّثَنِي أَبُو جَعْفَرٍ مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، حَدَّثَنَا حُجَيْنُ بْنُ المُثَنَّى، حَدَّثَنَا عَبْدُ العَزِيزِ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي سَلَمَةَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الفَضْلِ، عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ يَسَارٍ، عَنْ جَعْفَرِ بْنِ عَمْرِو بْنِ أُمَيَّةَ الضَّمْرِيِّ، قَالَ: خَرَجْتُ مَعَ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ عَدِيِّ بْنِ الخِيَارِ، فَلَمَّا قَدِمْنَا حِمْصَ، قَالَ لِي عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ عَدِيٍّ: هَلْ لَكَ فِي وَحْشِيٍّ، نَسْأَلُهُ عَنْ قَتْلِ حَمْزَةَ؟ قُلْتُ: نَعَمْ، وَكَانَ وَحْشِيٌّ يَسْكُنُ حِمْصَ، فَسَأَلْنَا عَنْهُ، فَقِيلَ لَنَا: هُوَ ذَاكَ فِي ظِلِّ قَصْرِهِ، كَأَنَّهُ حَمِيتٌ، قَالَ: فَجِئْنَا حَتَّى وَقَفْنَا عَلَيْهِ بِيَسِيرٍ، فَسَلَّمْنَا فَرَدَّ السَّلاَمَ، قَالَ: وَعُبَيْدُ اللَّهِ مُعْتَجِرٌ بِعِمَامَتِهِ، مَا يَرَى وَحْشِيٌّ إِلَّا عَيْنَيْهِ وَرِجْلَيْهِ، فَقَالَ عُبَيْدُ اللَّهِ: يَا وَحْشِيُّ أَتَعْرِفُنِي؟ قَالَ: فَنَظَرَ إِلَيْهِ ثُمَّ قَالَ: لاَ وَاللَّهِ، إِلَّا أَنِّي أَعْلَمُ أَنَّ عَدِيَّ بْنَ الخِيَارِ تَزَوَّجَ امْرَأَةً يُقَالُ لَهَا أُمُّ قِتَالٍ بِنْتُ أَبِي العِيصِ، فَوَلَدَتْ لَهُ غُلاَمًا بِمَكَّةَ، فَكُنْتُ أَسْتَرْضِعُ لَهُ، فَحَمَلْتُ ذَلِكَ الغُلاَمَ مَعَ أُمِّهِ فَنَاوَلْتُهَا إِيَّاهُ، فَلَكَأَنِّي نَظَرْتُ إِلَى قَدَمَيْكَ، قَالَ: فَكَشَفَ عُبَيْدُ اللَّهِ عَنْ وَجْهِهِ ثُمَّ قَالَ: أَلاَ تُخْبِرُنَا بِقَتْلِ حَمْزَةَ؟ قَالَ: نَعَمْ، إِنَّ حَمْزَةَ قَتَلَ طُعَيْمَةَ بْنَ عَدِيِّ بْنِ الخِيَارِ بِبَدْرٍ، فَقَالَ لِي مَوْلاَيَ جُبَيْرُ بْنُ مُطْعِمٍ: إِنْ قَتَلْتَ حَمْزَةَ بِعَمِّي فَأَنْتَ حُرٌّ، قَالَ: فَلَمَّا أَنْ خَرَجَ النَّاسُ عَامَ عَيْنَيْنِ، وَعَيْنَيْنِ جَبَلٌ بِحِيَالِ أُحُدٍ، بَيْنَهُ وَبَيْنَهُ وَادٍ، خَرَجْتُ مَعَ النَّاسِ إِلَى القِتَالِ، فَلَمَّا أَنِ اصْطَفُّوا لِلْقِتَالِ، خَرَجَ سِبَاعٌ فَقَالَ: هَلْ مِنْ مُبَارِزٍ؟ قَالَ: فَخَرَجَ إِلَيْهِ حَمْزَةُ بْنُ عَبْدِ المُطَّلِبِ، فَقَالَ: يَا سِبَاعُ، يَا ابْنَ أُمِّ أَنْمَارٍ مُقَطِّعَةِ البُظُورِ، أَتُحَادُّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ: ثُمَّ شَدَّ عَلَيْهِ، فَكَانَ كَأَمْسِ الذَّاهِبِ، قَالَ: وَكَمَنْتُ لِحَمْزَةَ تَحْتَ صَخْرَةٍ، فَلَمَّا دَنَا مِنِّي رَمَيْتُهُ بِحَرْبَتِي، فَأَضَعُهَا فِي ثُنَّتِهِ حَتَّى خَرَجَتْ مِنْ بَيْنِ وَرِكَيْهِ، قَالَ: فَكَانَ ذَاكَ العَهْدَ بِهِ، فَلَمَّا رَجَعَ النَّاسُ [ص:101] رَجَعْتُ مَعَهُمْ، فَأَقَمْتُ بِمَكَّةَ حَتَّى فَشَا فِيهَا الإِسْلاَمُ، ثُمَّ خَرَجْتُ إِلَى الطَّائِفِ، فَأَرْسَلُوا إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَسُولًا، فَقِيلَ لِي: إِنَّهُ لاَ يَهِيجُ الرُّسُلَ، قَالَ: فَخَرَجْتُ مَعَهُمْ حَتَّى قَدِمْتُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَلَمَّا رَآنِي قَالَ: «آنْتَ وَحْشِيٌّ» قُلْتُ: نَعَمْ، قَالَ: «أَنْتَ قَتَلْتَ حَمْزَةَ» قُلْتُ: قَدْ كَانَ مِنَ الأَمْرِ مَا بَلَغَكَ، قَالَ: «فَهَلْ تَسْتَطِيعُ أَنْ تُغَيِّبَ وَجْهَكَ عَنِّي» قَالَ: فَخَرَجْتُ فَلَمَّا قُبِضَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَخَرَجَ مُسَيْلِمَةُ الكَذَّابُ، قُلْتُ: لَأَخْرُجَنَّ إِلَى مُسَيْلِمَةَ، لَعَلِّي أَقْتُلُهُ فَأُكَافِئَ بِهِ حَمْزَةَ، قَالَ: فَخَرَجْتُ مَعَ النَّاسِ، فَكَانَ مِنْ أَمْرِهِ مَا كَانَ، قَالَ: فَإِذَا رَجُلٌ قَائِمٌ فِي ثَلْمَةِ جِدَارٍ، كَأَنَّهُ جَمَلٌ أَوْرَقُ ثَائِرُ الرَّأْسِ، قَالَ: فَرَمَيْتُهُ بِحَرْبَتِي، فَأَضَعُهَا بَيْنَ ثَدْيَيْهِ حَتَّى خَرَجَتْ مِنْ بَيْنِ كَتِفَيْهِ، قَالَ: وَوَثَبَ إِلَيْهِ رَجُلٌ مِنَ الأَنْصَارِ فَضَرَبَهُ بِالسَّيْفِ عَلَى هَامَتِهِ، قَالَ: قَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ الفَضْلِ: فَأَخْبَرَنِي سُلَيْمَانُ بْنُ يَسَارٍ، أَنَّهُ سَمِعَ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ، يَقُولُ: " فَقَالَتْ جَارِيَةٌ عَلَى ظَهْرِ بَيْتٍ: وَا أَمِيرَ المُؤْمِنِينَ، قَتَلَهُ العَبْدُ الأَسْوَدُ "
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)
সহীহ বুখারী - হাদীস নং ৩৭৭৩ | মুসলিম বাংলা