আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৫০- নবীজীর সাঃ যুদ্ধাভিযানসমূহ

হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ৪০৪০
২১৭৮. আবু রাফি আব্দুল্লাহ ইবনে আবুল হুকায়কের হত্যা। তাকে সাল্লাম ইবনে আবুল হুকায়কও বলা হত।
৩৭৪৫। আহমদ ইবনে উসমান (রাহঃ) .... বারা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আবু রাফির (হত্যার) উদ্দেশ্যে আব্দুল্লাহ ইবনে আতীক ও আব্দুল্লাহ ইবনে উতবাকে একদল লোকসহ প্রেরণ করেন। যেতে যেতে তারা দুর্গের কাছে গিয়ে পৌঁছলে আব্দুল্লাহ ইবনে আতীক (রাযিঃ) তাদেরকে বলেন, তোমরা অপেক্ষা কর। আমি যাই, দেখি কি করে সুযোগ করা যায়। আব্দুল্লাহ ইবনে আতীক (রাযিঃ) বলেন, দুর্গের ভিতর প্রবেশ করার জন্য আমি কৌশল অবলম্বন করব। ইতিমধ্যে তারা একটি গাধা হারিয়ে ফেলল এবং একটি আলো নিয়ে এর সন্ধানে বের হল।
তিনি বলেন, আমাকে চিনে ফেলবে আমি এ আশঙ্কা করছিলাম। তাই (কাপড় দিয়ে) আমি আমার মাথা ও পা ঢেকে ফেললাম এবং এমনভাবে বসে রইলাম যেন আমি প্রাকৃতিক আবশ্যক মলমূত্র ত্যাগ করার জন্য বসেছি। এরপর দ্বার রক্ষী ডাক দিয়ে বলল, কেউ ভিতরে প্রবেশ করতে চাইলে এখনই দরজা বন্ধ করার আগে ভিতরে ঢুকে পড়ুন। আমি প্রবেশ করলাম এবং দুর্গের দরজার পার্শ্বে গাধা বাঁধার স্থানে আত্মগোপন করে থাকলাম।
আবু রাফির নিকট সবাই বসে রাতের খানা খেয়ে গল্পগুজব করল। এভাবে রাতের কিছু অংশ কেটে যাওয়ার পর সকলেই নিজ নিজ বাড়ীতে চলে গেল। যখন কোলাহল থেকে গেল এবং কোন নড়াচড়া শুনতে পাচ্ছিলাম না। তখন আমি বের হলাম। আব্দুল্লাহ ইবনে আতীক (রাযিঃ) বলেন, দুর্গের চাবি যে ছিদ্রপথে রাখা হয়েছিল তা আমি পূর্বেই দেখেছিলাম। তাই রক্ষিত স্থান থেকে চাবিটি নিয়ে আমি দুর্গের দরজাটি খুললাম।
তিনি বলেন, আমি মনে মনে ভাবলাম, কওমের লোকেরা যদি আমাকে দেখে ফেলে তাহলে সহজেই আমি (পালিয়ে) যেতে পারব। এরপর দুর্গের ভিতরে তাদের যত ঘর ছিল সবগুলোর দরজা আমি বাইরে থেকে বন্ধ করে দিলাম। এরপর সিঁড়ি বেয়ে আবু রাফির কক্ষে উঠলাম। বাতি নিভিয়ে দেয়া হয়েছিল বলে ঘরটি ছিল ভীষণ অন্ধকার। লোকটি কোথায়, কিছুতেই আমি তা বুঝতে পারছিলাম না। সুতরাং আমি তাকে ডাকলাম, হে আবু রাফি। সে বলল, কে ডাকছ? তিনি বলেন আওয়াজটি লক্ষ্য করে আমি একটু এগিয়ে গেলাম এবং তাকে আঘাত করলাম। সে চিৎকার করে উঠল। এ আঘাতে কোন কাজই হয়নি।
এরপর আবার আমি তার কাছে গেলাম, যেন আমি তাকে সাহায্য করব। আমি এবার স্বর পরিবর্তন করে বললাম, হে আবু রাফি, তোমার কি হয়েছে? সে বলল, কি আশ্চার্য ব্যাপার, তার মায়ের সর্বনাশ হোক, এইতো এক ব্যক্তি আমার ঘরে ঢুকে আমাকে তরবারি দ্বারা আঘাত করেছে, আব্দুল্লাহ ইবনে আতীক বলেন, তাকে লক্ষ্য করে পুনরায় আমি আঘাত করলাম, এবারও কোন কাজ হল না। সে চিৎকার করলে তার পরিবারের সবাই জেগে উঠল। তারপর পুনরায় আমি সাহায্যকারীর ভান করে কন্ঠস্বর পরিবর্তন করে তার দিকে এগিয়ে গেলাম। এসময় সে পিঠের উপর চিৎ হয়ে শুয়ে ছিল (এ দেখে) আমি তরবারির অগ্রভাগ তার পেটের উপর রেখে এমন জোরে চাপ দিলাম যে, আমি তার হাড়ের আওয়াজ শুনতে পেলাম। এরপর আমি কাঁপতে কাঁপতে সিঁড়ির নিকট এসে পৌঁছলাম। ইচ্ছা ছিল নেমে যাব।
কিন্তু (নামতে গিয়ে) আছাড় খেয়ে পড়ে গেলাম। এবং এতে আমার পা খানা ভেঙ্গে গেল। সাথে সাথে (পাগড়ী দিয়ে) আমি তা বেঁধে ফেললাম। এবং আস্তে আস্তে হেঁটে সাথীদের নিকট চলে এলাম। এরপর বললাম, তোমরা যাও এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে সুসংবাদ দাও। আমি তার মৃত্যু সংবাদ না শুনে আসব না। উষালগ্নে মৃত্যু ঘোষণাকারী (প্রাচীরে) উঠে বলল, আমি আবু রাফীর মৃত্যু সংবাদ ঘোষণা করছি। আব্দুল্লাহ ইবনে আতীক (রাযিঃ) বলেন, এরপর আমি উঠে চলতে লাগলাম। এ সময় আমার (পায়ে) কোন ব্যাথাই ছিল না। আমার সাথীরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- এর নিকট পৌঁছার আগেই আমি তাদের ধরে ফেললাম এবং (গিয়ে) রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- কে তার (আবু রাফির) মৃত্যুর সংবাদ জানালাম।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন