আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৫০- নবীজীর সাঃ যুদ্ধাভিযানসমূহ

হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ৪০৩৯
২১৭৮. আবু রাফি আব্দুল্লাহ ইবনে আবুল হুকায়কের হত্যা। তাকে সাল্লাম ইবনে আবুল হুকায়কও বলা হত।
৩৭৪৪। ইউসুফ ইবনে মুসা (রাহঃ) .... বারা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আব্দুল্লাহ ইবনে আতীককে আমীর বানিয়ে তার নেতৃত্বে আনসারদের কপিতয় সাহাবীকে ইয়াহুদী আবু রাফির (হত্যার) উদ্দেশ্যে প্রেরণ করেন। আবু রাফি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)- কে কষ্ট দিত এবং এ ব্যাপারে লোকদের সাহায্য করত। হিজায ভূমিতে তার একটি দুর্গ ছিল। (সে সেখানে বসবাস করত) তারা যখন তার দুর্গের কাছে গিয়ে পৌঁছলেন তখন সূর্য ডুবে গিয়েছে এবং লোকজন নিজেদের পশু পাল নিয়ে রওয়ানা হয়েছে (নিজ নিজ বাড়ীর দিকে) আব্দুল্লাহ (ইবনে আতীক) তার সাথীদেরকে বললেন, তোমরা তোমাদের স্থানে বসে থাক। আমি চললাম ভিতরে প্রবেশ করার জন্য দ্বার রক্ষীর সাথে আমি (কিছু) কৌশল প্রদর্শন করব। এরপর তিনি সামনের দিকে এগিয়ে গিয়ে দরজার কাছে পৌঁছলেন এবং কাপড় দ্বারা নিজেকে এমনভাবে ঢাকলেন যেন তিনি প্রাকৃতিক প্রয়োজনে রত আছেন। তখন সবাই ভিতরে প্রবেশ করলে দ্বাররক্ষী তাকে ডেকে বলল, হে আব্দুল্লাহ, ভিতরে প্রবেশ করতে চাইলে প্রবেশ কর। আমি এখনই দরজা বন্ধ করে দেব।
আমি তখন ভিতরে প্রবেশ করলাম এবং আত্মগোপন করে রইলাম। সকলে ভিতরে প্রবেশ করার পর সে দরজা বন্ধ করে দিল এবং একটি পেরেকের সাথে চাবিটা লটকিয়ে রাখল। (আব্দুল্লাহ ইবনু আতীক (রাযিঃ) বলেন) এরপর আমি চাবিটার দিকে এগিয়ে গেলাম এবং চাবিটা নিয়ে দরজা খুললাম। আবু রাফির নিকট রাতের বেলা গল্পের আসর জমতো, এ সময় সে তার উপর তলার কামরায় অবস্থান করছিল। গল্পের আসরে আগত লোকজন চলে গেলে আমি সিঁড়ি বেয়ে তার কাছে গিয়ে পৌঁছলাম। এসময় আমি একটি করে দরজা খুলছিলাম এবং ভিতর থেকে তা আবার বন্ধ করে দিয়ে যাচ্ছিলাম, যাতে লোকজন আমার (আগমন) সম্বন্ধে জানতে পারলেও হত্যা না করা পর্যন্ত আমার নিকট পৌছতে না পারে। আমি তার কাছে গিয়ে পৌঁছলাম। এ সময় সে একটি অন্ধকার কক্ষে ছেলেমেয়েদের মাঝে শুয়েছিল। কক্ষের কোন অংশে সে শুয়ে আছে আমি তা বুঝতে পারছিলাম না। তাই আবু রাফি বলে ডাক দিলাম। সে বলল, কে আমাকে ডাকছ? আমি তখন আওয়াজটি লক্ষ্য করে এগিয়ে গিয়ে তরবারী দ্বারা প্রচন্ড জোরে আঘাত করলাম।
আমি তখন কাঁপছিলাম এ আঘাতে আমি তাকে কিছুই করতে পারলাম না। সে চিৎকার করে উঠলে আমি কিছুক্ষণের জন্য বাইরে চলে আসলাম। এরপর পুনরায় ঘরে প্রবেশ করে (কন্ঠস্বর পরিবর্তন করতঃ তার আপন লোকের ন্যায়) জিজ্ঞাসা করলাম, আবু রাফি এ আওয়াজ হল কিসের? সে বলল, তোমার মায়ের সর্বনাশ হোক। কিছুক্ষণ পূর্বে ঘরের ভিতর কে যেন আমাকে তরবারি দ্বারা আঘাত করেছে। আব্দুল্লাহ ইবনে আতীক বলেন, তখন আমি আবার তাকে ভীষণ আঘাত করলাম এবং মারাত্মকভাবে ক্ষত বিক্ষত করে ফেললাম। কিন্তু তাকে হত্যা করতে পারিনি। তাই তরবারির ধারালো দিকটি তার পেটের উপর চেপে ধরলাম এবং পিঠ পার করে দিলাম। এবার আমি নিশ্চিতরূপে অনুভব করলাম যে, এখন আমি তাকে হত্যা করতে সক্ষম হয়েছি। এরপর আমি এক এক দরজা খুলে নীচে নামতে শুরু করলাম নামতে নামতে সিঁড়ির শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছলাম। পূর্ণিমার রাত্র ছিল। (চাঁদের আলোতে তাড়াহুড়ার মধ্যে সঠিকভাবে অনুধাবন করতে না পেরে) আমি মনে করলাম, (সিঁড়ির সকল ধাপ অতিক্রম করে) আমি মাটির নিকটে এসে পড়েছি। (কিন্তু তখনও একটি ধাপ অবশিষ্ট ছিল) তাই নীচে পা রাখতেই আমি (আঁছাড় খেয়ে) পড়ে গেলাম। অমনিই আমার পায়ের গোছার হাড় ভেঙ্গে গেল।
(তাড়াহুড়া করে) আমি আমার মাথার পাগড়ী দ্বারা পা খানা বেঁধে নিলাম এবং একটু হেঁটে গিয়ে দরজা সোজা বসে রইলাম মনে মনে সিদ্ধান্ত করলাম, তার মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত অবগত না হয়ে আজ রাতে আমি এখান থেকে যাব না। ভোর রাতে মোরগের ডাক আরম্ভ হলে মৃত্যু ঘোষণাকারী প্রাচীরের উপর উঠে ঘোষণা করল, হিজায অধিবাসীদের অন্যতম ব্যবসায়ী আবু রাফীর মৃত্যু সংবাদ গ্রহণ কর। তখন আমি আমার সাথীদের নিকট গিয়ে বললাম, দ্রুত চল, আল্লাহ আবু রাফিকে হত্যা করেছেন। এরপর নবী কারীম (ﷺ)- এর নিকট গেলাম এবং সমস্ত ঘটনা খুলে বললাম। তিনি বললেন, তোমার পা টি লম্বা করে দাও। আমি আমার পা টি লম্বা করে দিলে তিনি উহার উপর স্বীয় হাত বুলিয়ে দিলেন। (এতে আমার পা এমন সুস্থ হয়ে গেল) যেন তাতে কোন আঘাতই পায়নি।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন