মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

১০- যাবতীয় দোয়া-যিক্‌র

হাদীস নং: ২২২৩
দোআ পর্বঃ
প্রথম অনুচ্ছেদ
২২২৩। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন। প্রত্যেক নবীকে একটি বিশেষ দোআর অধিকার দেওয়া হইয়াছে যাহা কবুল করা হয়। প্রত্যেক নবী শীঘ্র শীঘ্র দুনিয়াতেই তাহার দো'আ চাহিয়াছেন, আর আমি আমার দো'আ কেয়ামত পর্যন্ত মুলতবী রাখিয়াছি আমার উম্মতের শাফাআতরূপে। ইনশাআল্লাহ্ উহা আমার উম্মতের প্রত্যেক ব্যক্তির প্রতি পৌঁছিবে, যে আল্লাহর সহিত কিছুকে শরীক না করিয়া মরিয়াছে। —মুসলিম। তবে বুখারীর বর্ণনা অপেক্ষা কম।
كتاب الدَّعْوَات:
اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لِكُلِّ نَبِيٍّ دَعْوَةٌ مُسْتَجَابَةٌ فَتَعَجَّلَ كُلُّ نَبِيٍّ دَعْوَتَهُ وَإِنِّي اخْتَبَأْتُ دَعْوَتِي شَفَاعَةً لِأُمَّتِي إِلَى يومِ القِيامةِ فَهِيَ نَائِلَةٌ إِنْ شَاءَ اللَّهُ مَنْ مَاتَ مِنْ أُمَّتِي لَا يُشْرِكُ بِاللَّهِ شَيْئًا» . رَوَاهُ مُسلم وللبخاري أقصر مِنْهُ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

কোরআনে রহিয়াছেঃ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ "তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব।”
'দো'আ’—অর্থ ডাকা, প্রার্থনা করা, ভিক্ষা মাগা। ছোটর বড়র নিকট শব্দ করিয়া বিনয়ের সাথে কিছু চাওয়া। শরীঅতে ইহার অর্থ, ঐরূপে আল্লাহর নিকট চাওয়া।
আল্লাহর নিকট কিছু না চাহিয়া তাহার মর্জির উপর ছাড়িয়া দেওয়াকেই কোন কোন সূফী দরবেশ উত্তম বলিয়াছেন। ইহা তাহাদের 'ফানাফিল্লাহ'র কারণেই হইয়াছে। কোরআন-হাদীস অনুসারে দেখা যায়, দো'আ করাই উত্তম। অনেক নবীর দো'আর বিবরণ কোরআনে রহিয়াছে। আমাদের নবী আলাইহিসসালামও বহু দো'আ করিয়াছেন। সুতরাং দো'আ করা নবীগণের সুন্নত।
নবী করীম (ﷺ) হইতে যেসকল দো'আ বর্ণিত হইয়াছে, সেসকল দো'আকে 'দো'আয়ে মাসুরা' বলে। দো'আয়ে মাসুরা দ্বারা দোআ করাই উত্তম। কারণ, সকলের পক্ষে দো'আর শব্দ নির্বাচন করা সহজ নহে। একবার নবী করীম (ﷺ) এক সাহাবীকে সবরের দোআ করিতে শুনিয়া বলিয়াছিলেন, তুমি তো আল্লাহর নিকট বিপদ মাগিতেছ। কেননা, সবর বিপদেই করা হয়। তবে কোন বিশেষ ব্যাপারে মন খুলিয়া নিজের আবেগ জাহির করার জন্য নিজের মাতৃভাষায় দোআ করাও জায়েয আছে। দো'আয়ে মাসুরার অর্থ জানিয়া লওয়া উচিত। অন্যথায় দো'আয় মনোযোগ হইবে না।
দোআয় কতক নিয়ম পালন করিতে হয়। অন্যথায় উহা কবুল হয় না। দো'আর নিয়মঃ
(১) দো'আ খুব মনোযোগের সাথে করিবে। অমনোযোগী মনের দো'আ আল্লাহ্ কবূল করেন না। অমনোযোগী মন লইয়া আল্লাহর দরবারে হাত উঠান বড় বেআদবী।
(২) কবুলের পূর্ণ বিশ্বাসের সাথে দো'আ করিবে। কেননা, মানুষের বিশ্বাসের নিকটই আল্লাহ্। যে যাহা তাহার প্রতি বিশ্বাস করে, তিনি তাহার প্রতি তাহাই করেন।
(৩) নিশ্চয়তা ও দৃঢ়তার সাথে দোআ করিবে। 'যদি তোমার ইচ্ছা হয় দাও'—এইরূপ বলিবে না। কেননা, দান করিতে আল্লাহকে বাধা দেওয়ার কেহই নাই। অবশ্য কোন ক্ষেত্রে বলা যাইতে পারে যে, 'যদি ইহা আমার পক্ষে মঙ্গলজনক হয়—দাও!'
(৪) দো'আর সাথে হাত উঠাইবে এবং দো'আর গুরুত্ব অনুসারে উঠাইবে। সিনা বরাবর, কাঁধ বরাবর বা পূর্ণ হাত প্রসারিত করিবে। হাতের ভিতর দিক নিজের চেহারার দিকে রাখিবে।
(৫) ফলের জন্য তাড়াতাড়ি করিবে না। যখন দান করিলে বান্দার পক্ষে উহা মঙ্গলকর হয়, তখনই তিনি দান করেন। সুতরাং বরাবর দো'আ করিতে থাকিবে। ছাড়িয়া দিবে না।
(৬) দোআর শুরুতে আল্লাহর কিছু সানা-সিফত বর্ণনা করিবে এবং শেষের দিকে নবী করীমের উপর কিছু দরূদ ভেজিবে। হাদীসে আছে, দরূদ ব্যতীত দো'আ মুলতবী থাকে।
(৭) উত্তম সময় ও উত্তম স্থানে দোআ করিতে চেষ্টা করিবে। যথা, শেষ রাতে, নামাযের পর ও তেলাওয়াতের পর এবং মসজিদে ও মক্কায়।
(৮) ওযূর সাথে দো'আ করিবে ও সম্ভবপর হইলে কেবলামুখী হইয়া দো'আ করিবে। ইহা উত্তম।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
মিশকাতুল মাসাবীহ - হাদীস নং ২২২৩ | মুসলিম বাংলা