মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

৮- রোযার অধ্যায়

হাদীস নং: ২০৬৭
৬. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - নফল সিয়াম প্রসঙ্গে
২০৬৭। হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হইতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) (হিজরত করিয়া) মদীনায় আগমন করিলেন, ইহুদীগণকে দেখিলেন, তাহারা আশুরার তারিখে রোযা রাখে। হুযূর তাহাদের জিজ্ঞাসা করিলেনঃ এই যে দিন — যাহাতে তোমরা রোযা রাখ—ইহা কি? তাহারা বলিল, ইহা একটি মহান দিন। ইহাতেই আল্লাহ্ তা'আলা হযরত মুসা ও তাহার কওমকে মুক্তি দিয়াছেন এবং ফেরআউন ও তাহার কওমকে নিমজ্জিত করিয়াছেন । অতএব, হযরত মুসা ইহার শোকরিয়াস্বরূপ রোযা রাখিয়াছিলেন অতঃপর আমরাও রাখি। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিলেনঃ আমরাই তোমাদের অপেক্ষা হযরত মুসার অধিকতর আপন ও অধিকতর হকদার। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ইহাতে (পূর্ববৎ) রোযা রাখিলেন এবং আমাদিগকেও রোযা রাখিতে নির্দেশ দিলেন। —মোত্তাঃ
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدِمَ الْمَدِينَةِ فَوَجَدَ الْيَهُودَ صِيَامًا يَوْمَ عَاشُورَاءَ فَقَالَ لَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا هَذَا الْيَوْمُ الَّذِي تَصُومُونَهُ؟» فَقَالُوا: هَذَا يَوْمٌ عَظِيمٌ: أَنْجَى اللَّهُ فِيهِ مُوسَى وَقَوْمَهُ وَغَرَّقَ فِرْعَوْنَ وَقَوْمَهُ فَصَامَهُ مُوسَى شُكْرًا فَنَحْنُ نَصُومُهُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «فَنَحْنُ أَحَقُّ وَأَوْلَى بِمُوسَى مِنْكُمْ» فَصَامَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَمَرَ بصيامه

হাদীসের ব্যাখ্যা:

'তোমাদের অপেক্ষা আমরাই মূসার অধিকতর আপন' – কেননা, তোমরা তাঁহার পর নবী ওযাইর (ইজর)-কে আল্লাহর পুত্র বলিয়া শেরকী করিয়াছ। হযরত ঈসা ও আমার প্রতি ঈমান না আনিয়া তাহার নির্দেশ অমান্য করিয়াছ — যাহা আপনজনের কাজ নহে। অপর পক্ষে নবী হিসাবে আমি তাঁহার ভাই। অতএব, তাঁহার মুক্তিতে শোকরিয়া আদায় করার আমি এবং আমার উম্মতই বেশী হকদার।
মদীনায় ইহুদীগণের দেখাদেখিই হুযুর আশুরার রোযা রাখা আরম্ভ করেন নাই; বরং মক্কায়ও তিনি উহা রাখিতেন। তাহাদের জিজ্ঞাসা করিলেন কেবল তাহাদের মুখে তাহাদের নিজস্ব বক্তব্য শুনার জন্যই। তিরমিযীতে আছে, বিবি আয়েশা (রাঃ) বলেন, জাহেলিয়াত যুগে (মক্কায়) কোরাইশরা আশুরার তারিখে রোযা রাখিত এবং রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-ও উহা রাখিতেন, যখন তিনি মদীনায় পৌঁছিলেন, তখনও তিনি (প্রথম বছর) রোযা রাখিলেন এবং লোকদিগকে রোযা রাখিতে বলিলেন; কিন্তু যখন (দ্বিতীয় হিজরীতে) রমযানের রোযা ফরয হইল, উহাই ফরযরূপে রহিল এবং আশুরার রোযা ত্যাগ করা হইল। এখন যে চাহে উহা রাখিতে পারে আর যে চাহে উহা ছাড়িতে পারে। ইমাম মুহাম্মদের মোআত্তায় রহিয়াছে, রমযানের রোযার পূর্বে আশুরার রোযা ফরয ছিল। অতঃপর রমযানের রোযা উহাকে মনসুখ করিয়া দিয়াছে। এখন উহা নফল। ইমাম আবু হানীফা এবং ওলামা সাধারণের ইহাই মত।
জাহেলিয়াত যুগের কোরাইশরা এজন্যই আশুরার রোযা রাখিত যে, তাহাদের পূর্বপুরুষ হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-কে আল্লাহ্ তা'আলা ঐ তারিখেই নমরূদের নির্যাতন হইতে মুক্তি দিয়াছিলেন।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
মিশকাতুল মাসাবীহ - হাদীস নং ২০৬৭ | মুসলিম বাংলা