মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

৭- যাকাতের অধ্যায়

হাদীস নং: ১৭৭৩
- যাকাতের অধ্যায়
প্রথম অনুচ্ছেদ
১৭৭৩। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন: প্রত্যেক সোনা-রূপার অধিকারী ব্যক্তিই যে উহা হইতে উহার হক (যাকাত) আদায় করে না, যখন কিয়ামতের দিন আসিবে নিশ্চয় তাহার জন্য আগুনের বহু পাত তৈয়ার করা হইবে এবং সে সমুদয়কে দোযখের আগুনে গরম করা হইবে এবং তাহার পাজর, কপাল এবং পিঠে দাগ দেওয়া হইবে, যখনই উহা ঠাণ্ডা হইয়া আসিবে, পুনরায় উহাকে গরম করা হইবে (তাহার সাথে এইরূপ করা হইবে) সেই দিনে, যাহার পরিমাণ হইবে পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান। (তাহার এ শাস্তি চলিতে থাকিবে) যাবৎ না বন্দাদের বিচার নিষ্পত্তি শেষ করা হইবে। অতঃপর সে তাহার পথ ধরিবে, হয় বেহেশতের দিকে, না হয় দোযখের দিকে।

জিজ্ঞাসা করা হইল, ইয়া রাসুলাল্লাহ্। উট সম্পর্কে কি হইবে? হুযূর (ছাঃ) বলিলেন, কোন উটের অধিকারী যে উহা হইতে উহার হক আদায় করিবে না আর উহার হকসমূহের মধ্যে পানি পানের তারিখে উহার দুধ দোহন করা (এবং অন্যদের দান করাও) এক হক। যখন কিয়ামতের দিন আসিবে, নিশ্চয় তাহাকে এক ধুধু ময়দানে উপুড় করিয়া ফেলা হইবে, আর তাহার সে সকল উট যাহার একটি বাচ্চাও সে সেই দিন হারাইবে না; বরং সকলকে পূর্ণভাবে পাইবে, তাহাকে তাহার ক্ষুর দ্বারা মাড়াইতে থাকিবে এবং মুখ দ্বারা কামড়াইতে থাকিবে। এইভাবে যখনই উহাদের শেষ দল অতিক্রম করিবে পুনঃ প্রথম দল আসিয়া পৌঁছিবে। এইরূপ করা হইবে সেই দিনে, যাহার পরিমাণ হইবে পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান, যাবৎ না আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে বিচার মীমাংসা শেষ হয়। অতঃপর সে তাহার পথ ধরিবে, হয় বেহেশতের দিকে, না হয়। দোযখের দিকে।

তৎপর তাহাকে জিজ্ঞাসা করা হইল, ইয়া রাসুলাল্লাহ। গরু ছাগল সম্পর্কে কি হইবে? হুযুর বলিলেন, প্রত্যেক গরু ও ছাগলের অধিকারী যে উহার পক্ষ হইতে উহার হক আদায় করিবে না, যখন কিয়ামতের দিন আসিবে, নিশ্চয় তাহাকে এক ধুধু মাঠে উপুড় করিয়া ফেলা হইবে, আর তাহার সে সকল গরু ছাগল তাহাকে শিং মারিতে থাকিবে এবং ক্ষুরের দ্বারা মাড়াইতে থাকিবে, অথচ সে দিন তাহার কোন একটি গরু বা ছাগলই শিং বাঁকা শিং হীন বা শিং ভাঙ্গা হইবে না এবং একটি মাত্র গরু ছাগলকেও সে হারাইবে না। যখনই উহার প্রথম দল অতিক্রম করিবে, শেষ দল আসিয়া পৌঁছিবে। (এইরূপ করা হইবে) সেই দিনে, যে দিনের পরিমাণ হইবে পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান, যাবৎ না আল্লাহ্র বন্দাদের বিচার মীমাংসা শেষ হয়। অতঃপর সে তাহার পথ ধরিবে হয় বেহেশতের দিকে, না হয় দোযখের দিকে।

অতঃপর জিজ্ঞাসা করা হইল, ইয়া রাসূলাল্লাহ্। ঘোড়া সম্পর্কে কি হইবে? হুযুর বলিলেন, ঘোড়া তিন প্রকারের। ঘোড়া কাহারও জন্য গোনাহর কারণ, কাহারও জন্য আবরণস্বরূপ, আর কাহারও জন্য সওয়াবের বিষয়। (ক) যে ঘোড়া তাহার মালিকের পক্ষে গোনাহর কারণ, তাহা হইল সে ব্যক্তির ঘোড়া, যে উহাকে পালন করিয়াছে লোক দেখান, গর্ব এবং মুসলমানদের প্রতি শত্রুতার উদ্দেশ্যে। এ ঘোড়া হইল তাহার গোনাহুর কারণ। আর (খ) যে ঘোড়া তাহার মালিকের পক্ষে আবরণস্বরূপ, তাহা হইল সে ব্যক্তির ঘোড়া, যে উহাকে পালন করিয়াছে আল্লাহর রাস্তায়, অতঃপর ভুলে নাই উহার সম্পর্কে ও উহার পিঠ সম্পর্কে আল্লাহর হক। এই ঘোড়া হইল তাহার ইজ্জত-সম্মানের জন্য আবরণস্বরূপ। আর (গ) যে ঘোড়া হইল মালিকের পক্ষে সওয়াবের কারণ, তাহা হইল সে ব্যক্তির ঘোড়া, যে উহাকে পালন করিয়াছে কোন চারণভূমিতে বা ঘাসের বাগানে। শুধু আল্লাহর রাস্তায় মুসলমানদের (দেশ রক্ষার জন্য। তখন তাহার সে ঘোড়া চারণভূমি অথবা বাগানের যাহাকিছু খাইবে, তাহার পরিমাণ তাহার জন্য নেকী লেখা হইবে এবং লেখা হইবে গোবর ও প্রস্রাব পরিমাণ নেকী। আর যদি উহা আপন রশি ছিঁড়িয়া একটি কি দুইটি মাঠও বিচরণ করে, তাহা হইলে নিশ্চয় উহার পদচিহ্ন ও গোবরসমূহ পরিমাণ নেকী তাহার জন্য লেখা হইবে। এ ছাড়া উহার মালিক যদি উহাকে কোন নদীর কিনারে লইয়া যায়, আর উহা নদী হইতে পানি পান করে, অথচ উহার মালিকের ইচ্ছা ছিল না উহাকে পানি পান করান, তথাপি লেখা হইবে উহার পানি পান পরিমাণ তাহার জন্য নেকী।

অতঃপর জিজ্ঞাসা করা হইল, ইয়া রাসূলাল্লাহ্। গাধা সম্পর্কে কি হইবে? হুযুর বলিলেন, গাধার বিষয়ে আমার প্রতি কিছু নাযিল হয় নাই। এই স্বতন্ত্র ও ব্যাপকার্থক আয়াতটি ব্যতীত, “যে ব্যক্তি এক অণু পরিমাণ ভাল কাজ করিবে, সে উহার নেক ফল পাইবে, আর যে এক অণু পরিমাণ মন্দ কাজ করিবে, সে উহার মন্দ ফল ভোগ করিবে।" (অর্থাৎ, গাধার যাকাত দিলে উহারও সওয়াব পাওয়া যাইবে।) — মুসলিম
كتاب الزكاة
اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا مِنْ صَاحِبِ ذَهَبٍ وَلَا فِضَّةٍ لَا يُؤَدِّي مِنْهَا حَقَّهَا إِلَّا إِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ صُفِّحَتْ لَهُ صَفَائِحُ مِنْ نَارٍ فَأُحْمِيَ عَلَيْهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ فَيُكْوَى بِهَا جَنْبُهُ وجبينه وظهره كلما بردت أُعِيدَتْ لَهُ فِي يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ خَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ حَتَّى يُقْضَى بَيْنَ الْعِبَادِ فَيُرَى سَبِيلُهُ إِمَّا إِلَى الْجَنَّةِ وَإِمَّا إِلَى النَّارِ» قِيلَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ فَالْإِبِلُ؟ قَالَ: «وَلَا صَاحِبُ إِبِلٍ لَا يُؤَدِّي مِنْهَا حَقَّهَا وَمِنْ حَقِّهَا حَلْبُهَا يَوْمَ وِرْدِهَا إِلَّا إِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ بُطِحَ لَهَا بِقَاعٍ قَرْقَرٍ أَوْفَرَ مَا كَانَت لَا يفقد مِنْهَا فصيلا وَاحِدًا تَطَؤُهُ بِأَخْفَافِهَا وَتَعَضُّهُ بِأَفْوَاهِهَا كُلَّمَا مَرَّ عَلَيْهِ أولاها رد عَلَيْهِ أخراها فِي يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ خَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ حَتَّى يُقْضَى بَيْنَ الْعِبَادِ فَيُرَى سَبِيلُهُ إِمَّا إِلَى الْجَنَّةِ وَإِمَّا إِلَى النَّار» قيل: يَا رَسُول الله فَالْبَقَرُ وَالْغَنَمُ؟ قَالَ: «وَلَا صَاحِبُ بَقْرٍ وَلَا غَنَمٍ لَا يُؤَدِّي مِنْهَا حَقَّهَا إِلَّا إِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ بُطِحَ لَهَا بِقَاعٍ قَرْقَرٍ لَا يَفْقِدُ مِنْهَا شَيْئًا لَيْسَ فِيهَا عَقْصَاءُ وَلَا جَلْحَاءُ وَلَا عَضْبَاءُ تَنْطِحُهُ بِقُرُونِهَا وَتَطَؤُهُ بِأَظْلَافِهَا كُلَّمَا مَرَّ عَلَيْهِ أُولَاهَا رُدَّ عَلَيْهِ أُخْرَاهَا فِي يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ خَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ حَتَّى يُقْضَى بَيْنَ الْعِبَادِ فَيُرَى سَبِيلُهُ إِمَّا إِلَى الْجَنَّةِ وَإِمَّا إِلَى النَّارِ» . قِيلَ: يَا رَسُول الله فالخيل؟ قَالَ: الْخَيل ثَلَاثَةٌ: هِيَ لِرَجُلٍ وِزْرٌ وَهِيَ لِرَجُلٍ سِتْرٌ وَهِيَ لِرَجُلٍ أَجْرٌ. فَأَمَّا الَّتِي هِيَ لَهُ وِزْرٌ فَرَجُلٌ رَبَطَهَا رِيَاءً وَفَخْرًا وَنِوَاءً عَلَى أَهْلِ الْإِسْلَامِ فَهِيَ لَهُ وِزْرٌ. وَأَمَّا الَّتِي لَهُ سِتْرٌ فَرَجُلٌ رَبَطَهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ ثُمَّ لَمْ يَنْسَ حَقَّ اللَّهِ فِي ظُهُورِهَا وَلَا رِقَابِهَا فَهِيَ لَهُ سِتْرٌ. وَأَمَّا الَّتِي هِيَ لَهُ أَجْرٌ فَرَجُلٌ رَبَطَهَا فِي سَبِيلِ الله لأهل الْإِسْلَام فِي مرج أَو رَوْضَة فَمَا أَكَلَتْ مِنْ ذَلِكَ الْمَرْجِ أَوِ الرَّوْضَةِ مِنْ شَيْءٍ إِلَّا كُتِبَ لَهُ عَدَدَ مَا أَكَلَتْ حَسَنَاتٌ وَكُتِبَ لَهُ عَدَدَ أَرْوَاثِهَا وَأَبْوَالِهَا حَسَنَاتٌ وَلَا تَقْطَعُ طِوَلَهَا فَاسْتَنَّتْ شَرَفًا أَوْ شَرَفَيْنِ إِلَّا كَتَبَ اللَّهُ لَهُ عَدَدَ آثَارِهَا وأوراثها حَسَنَاتٍ وَلَا مَرَّ بِهَا صَاحِبُهَا عَلَى نَهْرٍ فَشَرِبَتْ مِنْهُ وَلَا يُرِيدُ أَنْ يَسْقِيَهَا إِلَّا كَتَبَ اللَّهُ لَهُ عَدَدَ مَا شَرِبَتْ حَسَنَاتٍ قِيلَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ فَالْحُمُرُ؟ قَالَ: مَا أُنْزِلَ عَلَيَّ فِي الْحُمُرِ شَيْءٌ إِلَّا هَذِهِ الْآيَةُ الْفَاذَّةُ الْجَامِعَةُ (فَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ وَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَرَهُ)

الزلزلة. رَوَاهُ مُسلم

হাদীসের ব্যাখ্যা:

'পঞ্চাশ হাজার বছর সময়'— গোনাহগারদের নিকট ইহা এইরূপ দীর্ঘই বোধ হইবে, অথচ নেককারদের নিকট ইহা দুই রাকাত নামায পড়ার সময়ের অধিক মনে হইবে না। ভুলে নাই উহার সম্পর্কে'—অর্থাৎ, আদায় করিয়াছে উহার যাকাত। 'ভুলে নাই উহার পিঠ সম্পর্কে'— অর্থাৎ, আরোহণ করিতে দিয়াছে উহার পিঠে সওয়ারীর মোহতাজ ব্যক্তিকে।
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)