মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
৬- জানাযা-কাফন-দাফনের অধ্যায়
হাদীস নং: ১৬৮৮
৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - জানাযার সাথে চলা ও সালাতের বর্ণনা
১৬৮৮। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী করীম (ﷺ) হইতে জানাযার নামায সম্পর্কে বর্ণনা করেন যে, নবী করীম (ﷺ) উহাতে এইরূপ দো'আ করিতেন, “হে আল্লাহ্! তুমি তাহার প্রতিপালক প্রভু, তুমি তাহাকে সৃষ্টি করিয়াছ, তুমি তাহাকে ইসলামের প্রতি পথ প্রদর্শন করিয়াছ এবং তুমি তাহার প্রাণ সংহার করিয়াছ। (প্রভু হে,) তুমি তাহার গুপ্ত ও ব্যক্ত সকল কিছু জান। আমরা (তোমার নিকট তাহার) সুপারিশকারীরূপে আসিয়াছি, তুমি তাহাকে ক্ষমা কর।” –আবু দাউদ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الصَّلَاةِ عَلَى الْجَنَازَةِ: اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبُّهَا وَأَنْتَ خَلَقْتَهَا وَأَنْتَ هَدَيْتَهَا إِلَى الْإِسْلَامِ وَأَنْتَ قَبَضْتَ رُوحَهَا وَأَنْتَ أَعْلَمُ بِسِرِّهَا وَعَلَانِيَتِهَا جِئْنَا شُفَعَاءَ فَاغْفِرْ لَهُ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছে জানাযার নামাযের আরেকটি দু'আ বর্ণিত হয়েছে। দু'আটি সংক্ষিপ্ত, তবে ব্যাপক অর্থবোধক। এতে আল্লাহ তা'আলার বিশেষ কয়েকটি গুণের উল্লেখ রয়েছে। বলা হয়েছে-
اللهُمْ أَنْتَ رَبُّهَا (হে আল্লাহ! আপনিই তার রব্ব)। অর্থাৎ আপনিই এ মায়্যিতের প্রতিপালক। আপনি তাকে সৃষ্টি করার পর তার জীবনরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সকল আসবাব-উপকরণের ব্যবস্থা করেন। ক্ষুধা নিবারণের জন্য খাদ্য ও পিপাসা নিবারণের জন্য পানি দিয়েছেন। শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য দিয়েছেন বাতাস ও অক্সিজেন। বিশ্রামের জন্য রাতের অন্ধকার, কাজকর্মের জন্য দিনের আলো, চলাফেরার জন্য রাস্তাঘাট ও চাষাবাদের জন্য উর্বর ভূমি দান করেছেন। দিয়েছেন মাথা গোঁজার ঠাঁই, অসুখ-বিসুখের দাওয়াই। এ জগতে রয়েছে প্রাণরক্ষা ও প্রাণবিস্তারের বিপুল আয়োজন। এ মায়্যিত যতদিন জীবিত ছিল, অবারিতভাবে এসব ভোগ করেছে।
وَأَنْتَ خَلَقْتَهَا (আপনিই তাকে সৃষ্টি করেছেন)। তার কোনও অস্তিত্ব ছিল না। আপনিই তাকে নাস্তি থেকে অস্তিত্বে আনয়ন করেছেন। তাকে বানিয়েছেন মানুষ। তার প্রতি এ আপনার বিশাল অনুগ্রহ। আপনি সৃষ্টি না করলে সে অস্তিত্ব পেত না। আপনি মানুষ না বানালে সে মানুষ হতে পারত না। আপনিই তাকে মানুষরূপে পৃথিবীতে আপনি এনেছিলেন। আপনার রহমতেই সে মানুষরূপে দুনিয়ায় জীবিত ছিল এখন সে দুনিয়া থেকে চিরবিদায় গ্রহণ করেছে।
وَأَنْتَ هَدَيْتهَا لِلْإِسْلَامٍ (আপনিই তাকে ইসলামের হিদায়াত দিয়েছেন)। অর্থাৎ আপনার হিদায়াত ও পথনির্দেশ তো সকলের জন্যই অবারিত ছিল। আপনি সকলের জন্যই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পাঠিয়েছেন। সকলের জন্যই কুরআন নাযিল করেছেন। কিন্তু ঈমান আনার সৌভাগ্য সকলের হয়নি। আপনার তাওফীক ও মেহেরবানিতেই এ মায়্যিত ঈমান আনতে পেরেছিল। আপনার সাহায্যেই সে হিদায়াত গ্রহণ করেছিল। আপনি যদি হিদায়াত গ্রহণের তাওফীক না দিতেন, তবে সে কিছুতেই ইসলাম গ্রহণ ও লালন করতে পারত না।
وَأَنْتَ قَبَضْتَ رُوْحَهَا (আপনিই তার রূহ কবজ করেছেন)। অর্থাৎ আপনিই হায়াত ও মওতের মালিক। আপনি নির্ধারিত আয়ু দিয়ে এ মায়্যিতকে দুনিয়ায় পাঠিয়েছিলেন। যতদিন আয়ু ছিল, সে জীবিত ছিল। আয়ু শেষ হয়ে গেলে আপনি তার জান কবজ করে নিয়েছেন। মালাকুল মাওত তার প্রাণ নিয়ে নিয়েছে আপনারই নির্দেশে। আপনার নির্দেশে হওয়ায় তা যেন আপনিই করেছেন।
وَأَنْتَ أَعْلَمُ بِسِرِّهَا وَعَلَانِيَتِهَا (এবং আপনিই তার গুপ্ত ও প্রকাশ্য বিষয়সমূহ ভালো জানেন)। অর্থাৎ অন্তরে সে যে আকীদা-বিশ্বাস লালন করত এবং কাজকর্ম সে যে নিয়তের সঙ্গে করত, তা কেবল আপনিই জানেন। কেননা এসব অন্তরের বিষয়। মানুষের অন্তরের খবর আপনি ছাড়া আর কেউ জানে না। আপনি জানেন তার প্রকাশ্য কাজকর্মও। তা আপনি যেমন পরিপূর্ণ জানেন, তেমনটা আর কেউ জানে না। সুতরাং হে আল্লাহ! আমরা আমাদের বাহ্যদৃষ্টিতে যতটুকু দেখেছি সে হিসেবেই আমরা তার হিদায়াতপ্রাপ্তির সাক্ষ্য দিই। প্রকৃত অবস্থা তো আপনিই ভালো জানেন।
وَقَدْ جِئْنَاكَ شُفَعَاءَ لَهُ، فَاغْفِرْ لَهُ (আমরা তার জন্য সুপারিশকারী হয়ে আপনার কাছে এসেছি। আপনি তাকে ক্ষমা করুন)। অর্থাৎ আমাদের বাহ্য জ্ঞান অনুযায়ী আমরা তার জন্য সুপারিশ করছি। আমরা কেবল সুপারিশই করতে পারি, এর বেশি কিছু নয়। আপনি মেহেরবানি করে আমাদের সুপারিশ কবুল করুন। তার জীবনের যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দিন। আপনি মহাক্ষমাশীল।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. আল্লাহ তা'আলাই সারা জাহানের সৃষ্টিকর্তা ও প্রতিপালক। তাঁরই হাতে হায়াত ও মাওত।
খ. হিদায়াত আল্লাহ তা'আলারই হাতে। তিনি যাকে তাওফীক দেন, কেবল সেই তা গ্রহণ করতে পারে।
গ. দু'আর শুরুতে আল্লাহ তা'আলার গুণগান করে নেওয়া চাই। এটা দু'আ কবুলের পক্ষে সহায়ক।
ঘ. জানাযার নামায মূলত মায়্যিতের জন্য দু'আ ও তার মাগফিরাতের সুপারিশ।
ঙ. কারও সম্পর্কে সাক্ষ্য দেওয়া হলে তা তার বাহ্যিক অবস্থা অনুযায়ীই দেওয়া হয়। গুপ্ত ও প্রকৃত অবস্থা আল্লাহ তা'আলাই জানেন। তাই তা আল্লাহর উপরই ছেড়ে দেওয়া চাই। তা বিচার করা মানুষের কাজ নয়।
اللهُمْ أَنْتَ رَبُّهَا (হে আল্লাহ! আপনিই তার রব্ব)। অর্থাৎ আপনিই এ মায়্যিতের প্রতিপালক। আপনি তাকে সৃষ্টি করার পর তার জীবনরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সকল আসবাব-উপকরণের ব্যবস্থা করেন। ক্ষুধা নিবারণের জন্য খাদ্য ও পিপাসা নিবারণের জন্য পানি দিয়েছেন। শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য দিয়েছেন বাতাস ও অক্সিজেন। বিশ্রামের জন্য রাতের অন্ধকার, কাজকর্মের জন্য দিনের আলো, চলাফেরার জন্য রাস্তাঘাট ও চাষাবাদের জন্য উর্বর ভূমি দান করেছেন। দিয়েছেন মাথা গোঁজার ঠাঁই, অসুখ-বিসুখের দাওয়াই। এ জগতে রয়েছে প্রাণরক্ষা ও প্রাণবিস্তারের বিপুল আয়োজন। এ মায়্যিত যতদিন জীবিত ছিল, অবারিতভাবে এসব ভোগ করেছে।
وَأَنْتَ خَلَقْتَهَا (আপনিই তাকে সৃষ্টি করেছেন)। তার কোনও অস্তিত্ব ছিল না। আপনিই তাকে নাস্তি থেকে অস্তিত্বে আনয়ন করেছেন। তাকে বানিয়েছেন মানুষ। তার প্রতি এ আপনার বিশাল অনুগ্রহ। আপনি সৃষ্টি না করলে সে অস্তিত্ব পেত না। আপনি মানুষ না বানালে সে মানুষ হতে পারত না। আপনিই তাকে মানুষরূপে পৃথিবীতে আপনি এনেছিলেন। আপনার রহমতেই সে মানুষরূপে দুনিয়ায় জীবিত ছিল এখন সে দুনিয়া থেকে চিরবিদায় গ্রহণ করেছে।
وَأَنْتَ هَدَيْتهَا لِلْإِسْلَامٍ (আপনিই তাকে ইসলামের হিদায়াত দিয়েছেন)। অর্থাৎ আপনার হিদায়াত ও পথনির্দেশ তো সকলের জন্যই অবারিত ছিল। আপনি সকলের জন্যই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পাঠিয়েছেন। সকলের জন্যই কুরআন নাযিল করেছেন। কিন্তু ঈমান আনার সৌভাগ্য সকলের হয়নি। আপনার তাওফীক ও মেহেরবানিতেই এ মায়্যিত ঈমান আনতে পেরেছিল। আপনার সাহায্যেই সে হিদায়াত গ্রহণ করেছিল। আপনি যদি হিদায়াত গ্রহণের তাওফীক না দিতেন, তবে সে কিছুতেই ইসলাম গ্রহণ ও লালন করতে পারত না।
وَأَنْتَ قَبَضْتَ رُوْحَهَا (আপনিই তার রূহ কবজ করেছেন)। অর্থাৎ আপনিই হায়াত ও মওতের মালিক। আপনি নির্ধারিত আয়ু দিয়ে এ মায়্যিতকে দুনিয়ায় পাঠিয়েছিলেন। যতদিন আয়ু ছিল, সে জীবিত ছিল। আয়ু শেষ হয়ে গেলে আপনি তার জান কবজ করে নিয়েছেন। মালাকুল মাওত তার প্রাণ নিয়ে নিয়েছে আপনারই নির্দেশে। আপনার নির্দেশে হওয়ায় তা যেন আপনিই করেছেন।
وَأَنْتَ أَعْلَمُ بِسِرِّهَا وَعَلَانِيَتِهَا (এবং আপনিই তার গুপ্ত ও প্রকাশ্য বিষয়সমূহ ভালো জানেন)। অর্থাৎ অন্তরে সে যে আকীদা-বিশ্বাস লালন করত এবং কাজকর্ম সে যে নিয়তের সঙ্গে করত, তা কেবল আপনিই জানেন। কেননা এসব অন্তরের বিষয়। মানুষের অন্তরের খবর আপনি ছাড়া আর কেউ জানে না। আপনি জানেন তার প্রকাশ্য কাজকর্মও। তা আপনি যেমন পরিপূর্ণ জানেন, তেমনটা আর কেউ জানে না। সুতরাং হে আল্লাহ! আমরা আমাদের বাহ্যদৃষ্টিতে যতটুকু দেখেছি সে হিসেবেই আমরা তার হিদায়াতপ্রাপ্তির সাক্ষ্য দিই। প্রকৃত অবস্থা তো আপনিই ভালো জানেন।
وَقَدْ جِئْنَاكَ شُفَعَاءَ لَهُ، فَاغْفِرْ لَهُ (আমরা তার জন্য সুপারিশকারী হয়ে আপনার কাছে এসেছি। আপনি তাকে ক্ষমা করুন)। অর্থাৎ আমাদের বাহ্য জ্ঞান অনুযায়ী আমরা তার জন্য সুপারিশ করছি। আমরা কেবল সুপারিশই করতে পারি, এর বেশি কিছু নয়। আপনি মেহেরবানি করে আমাদের সুপারিশ কবুল করুন। তার জীবনের যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দিন। আপনি মহাক্ষমাশীল।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. আল্লাহ তা'আলাই সারা জাহানের সৃষ্টিকর্তা ও প্রতিপালক। তাঁরই হাতে হায়াত ও মাওত।
খ. হিদায়াত আল্লাহ তা'আলারই হাতে। তিনি যাকে তাওফীক দেন, কেবল সেই তা গ্রহণ করতে পারে।
গ. দু'আর শুরুতে আল্লাহ তা'আলার গুণগান করে নেওয়া চাই। এটা দু'আ কবুলের পক্ষে সহায়ক।
ঘ. জানাযার নামায মূলত মায়্যিতের জন্য দু'আ ও তার মাগফিরাতের সুপারিশ।
ঙ. কারও সম্পর্কে সাক্ষ্য দেওয়া হলে তা তার বাহ্যিক অবস্থা অনুযায়ীই দেওয়া হয়। গুপ্ত ও প্রকৃত অবস্থা আল্লাহ তা'আলাই জানেন। তাই তা আল্লাহর উপরই ছেড়ে দেওয়া চাই। তা বিচার করা মানুষের কাজ নয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
