মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

৬- জানাযা-কাফন-দাফনের অধ্যায়

হাদীস নং: ১৬০৫
২. প্রথম অনুচ্ছেদ - মৃত্যু কামনা ও মৃত্যুকে স্মরণ করা
১৬০৫। হযরত জাবের (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাঁহার ইন্তেকালের তিন দিন পূর্বে বলিতে শুনিয়াছি, তোমাদের কেহ যেন আল্লাহর প্রতি সুধারণা পোষণ না করিয়া না মরে। —মুসলিম
بَابُ تَمَنِّي الْمَوْتِ وَذِكْرِه
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَبْلَ مَوْتِهِ بِثَلَاثَةِ أَيَّامٍ يَقُولُ: «لَا يَمُوتَنَّ أَحَدُكُمْ إِلَّا وَهُوَ يُحْسِنُ الظَّنَّ بِاللَّه» . رَوَاهُ مُسلم

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটি মৃত্যুকালে আল্লাহর রহমত সম্পর্কে নিরাশ হতে নিষেধ করে ও আশাবাদী থাকতে উৎসাহ যোগায়। বরং আশাবাদী থাকার জন্য জোর নির্দেশ এ হাদীছে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, মৃত্যুর সময় যেন প্রত্যেকেই আল্লাহ সম্পর্কে অবশ্যই সুধারণা পোষণ করে। আল্লাহ সম্পর্কে সুধারণা পোষণের অর্থ হল অন্তরে এই আশা রাখা যে, তিনি রহমত করবেন ও ক্ষমা করবেন। মৃত্যুকালে ভয়ের তুলনায় আশা বেশি রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এ কারণে যে, ভয়ের যা উদ্দেশ্য তা এ সময়ে পূরণ হওয়া কঠিন। ভয়ের উদ্দেশ্য হল পাপাচার ও মন্দকাজ থেকে বিরত থাকা এবং সৎকর্ম ও ইবাদত-বন্দেগীতে সচেষ্ট থাকা। মৃত্যু যখন হাজির হয়ে যায়, তখন তো এর কোনও সুযোগ থাকে না। তাই এ অবস্থায় রহমতের আশা রাখাই বাঞ্ছনীয়। এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে-
يُبْعَثُ كُلُّ عَبْد عَلَى مَا مَاتَ عَلَيْهِ
'প্রত্যেক বান্দাকে কবর থেকে সেই অবস্থায় উঠানো হবে, যে অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে।

আবুল আসওয়াদ জুরাশী রাযি.-এর মুমূর্ষু অবস্থায় হযরত ওয়াছিলা ইবনুল আসকা' রাযি. তাঁকে দেখতে গেলে আবুল আসওয়াদ রাযি. তাঁর ডান হাত নিয়ে নিজ চোখে-মুখে লাগান, যেহেতু তিনি সে হাত দ্বারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বায়'আত গ্রহণ করেছিলেন। হযরত ওয়াছিলা রাযি. তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, আপনি নিজ প্রতিপালক সম্পর্কে কী ধারণা করেন? তিনি ইশারায় জানালেন যে, ভালো। তখন ওয়াছিলা রাযি. বললেন, সুসংবাদ গ্রহণ করুন। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ তা'আলা বলেন, আমি আমার বান্দার ধারণার সঙ্গে থাকি। সুতরাং সে আমার সম্পর্কে যা ইচ্ছা ধারণা করুক।

এ কারণেই উলামায়ে কেরাম মুমূর্ষু ব্যক্তির সামনে আল্লাহর রহমত সম্পর্কে আলোচনা করতে বলেন, যাতে সে ক্ষমালাভের ব্যাপারে আশাবাদী হয়ে ওঠে। এমনিভাবে মুমূর্ষু ব্যক্তির বিশেষ কোনও সৎকর্ম থাকলে তার সামনে তাও তুলে ধরা ভালো, যাতে তার অসিলায় তার অন্তরে নাজাতের আশা সঞ্চার হয়।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

মৃত্যুকালে আল্লাহর রহমত ও ক্ষমালাভের আশা রাখা উচিত। উপস্থিত ব্যক্তিদেরও কর্তব্য মুমূর্ষু ব্যক্তিকে আশান্বিত করে তোলার চেষ্টা করা।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
মিশকাতুল মাসাবীহ - হাদীস নং ১৬০৫ | মুসলিম বাংলা