মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

৬- জানাযা-কাফন-দাফনের অধ্যায়

হাদীস নং: ১৫৩৩
১. প্রথম অনুচ্ছেদ - রোগী দেখা ও রোগের সাওয়াব
১৫৩৩। হযরত ওসমান ইবনে আবুল আস (রাঃ) হইতে বর্ণিত আছে, একবার তিনি রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট একটি বেদনার অভিযোগ করিলেন, যাহা তিনি তাহার শরীরে অনুভব করিতেছিলেন। রাসুলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাকে বলিলেন: তুমি তোমার শরীরের সে জায়গায় হাত রাখ, যে জায়গায় বেদনা হইতেছে এবং তিনবার বল, 'বিসমিল্লাহ্' আর সাতবার বল, "আমি আল্লাহর প্রতাপ ও তাহার ক্ষমতার শরণ লইতেছি যাহা আমি অনুভব করিতেছি ও আশঙ্কা করিতেছি তাহার মন্দ হইতে।" ওসমান বলেন, আমি তাহা করিলাম; ফলে আল্লাহ্ আমার শরীরে যাহা ছিল তাহা দূর করিয়া দিলেন। —মুসলিম
بَابُ عِيَادَةِ الْمَرِيْضِ وَثَوَابِ الْمَرَضِ
وَعَنْ عُثْمَانَ بْنِ أَبِي الْعَاصِ أَنَّهُ شَكَا إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَجَعًا يَجِدُهُ فِي جَسَدِهِ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ضَعْ يَدَكَ عَلَى الَّذِي يَأْلَمُ مِنْ جَسَدِكَ وَقُلْ: بِسْمِ اللَّهِ ثَلَاثًا وَقُلْ سَبْعَ مَرَّاتٍ: أَعُوذُ بِعِزَّةِ اللَّهِ وَقُدْرَتِهِ مِنْ شَرِّ مَا أَجِدُ وَأُحَاذِرُ . قَالَ: فَفَعَلْتُ فَأَذْهَبَ اللَّهُ مَا كَانَ بِي. رَوَاهُ مُسلم

হাদীসের ব্যাখ্যা:

হযরত উছমান ইবন আবুল 'আস রাযি. যখন তায়েফ গোত্রের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মদীনা মুনাউওয়ারায় গমন করেন এবং কিছুদিন প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহচর্যে কাটান, সেই সময়ের কথা। তাঁর শরীরের একটি অঙ্গে ব্যথা ছিল। তিনি সে কথা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানালে তাঁকে এই রুকয়া শিখিয়ে দেন যে, ব্যথার জায়গায় হাত রেখে তিনবার বিসমিল্লাহ বলবে, তারপর সাতবার পড়বে– أَعُوذُ بِعِزَّةِ اللهِ وَقُدْرَتِهِ مِنْ شَرِّ مَا أَجِدُ وَأَحَاذِرُ (আমি আল্লাহর পরাক্রম ও তাঁর কুদরতের আশ্রয় গ্রহণ করছি সেই বিষয়ের অনিষ্ট থেকে, যা আমি অনুভব করছি এবং যার আশঙ্কাবোধ করছি)। এ দু'আর মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলার কুদরত ও অসীম ক্ষমতার কথা স্বীকার করার দ্বারা বোঝানো হচ্ছে যে, সবরকম রোগ-বালাই ও বিপদ-আপদও তাঁরই ক্ষমতাধীন। তাঁর ইচ্ছায়ই তা দেখা দেয় এবং তাঁর ইচ্ছায়ই তা দূর হয়। তাই আমি তাঁর ক্ষমতার আশ্রয় গ্রহণ করছি, যাতে তিনি আমার বর্তমান ব্যথা-বেদনা ও কষ্ট-ক্লেশ দূর করে দেন এবং ভবিষ্যতে যে দুঃখ-কষ্ট ও ভয়ভীতির আশঙ্কা আমি করছি, তা থেকেও যেন তিনি আমাকে হেফাজত করেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপশমলাভের এ রুকয়া হযরত উছমান ইবন আবুল 'আস রাযি.- কে শিক্ষা দিলেও এটি কেবল তাঁর জন্যই নির্দিষ্ট নয়; সকলের জন্যই অনুসরণীয়। কাজেই যে-কেউ ব্যথা-বেদনার নিরাময় লাভ করার জন্য পরম বিশ্বাসের সঙ্গে এ রুকয়া অবলম্বন করবে, আশা করা যায় সে এর উপকার পাবে। সুন্নতের অনুসরণ করার কারণে ছাওয়াব তো পাবেই। তাছাড়া এর মধ্যে আল্লাহ তা'আলার যে যিকির আছে তার বরকতও অবশ্যই হাসিল হবে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. রোগ-ব্যাধির কথা এ উদ্দেশ্যে অন্যের কাছে প্রকাশ করা যেতে পারে, যাতে এ বিষয়ে উপযুক্ত পরামর্শ লাভ হয় এবং নিরাময়ের জন্য তার দু'আও পাওয়া যায়।

খ. বেদনার স্থানে হাত রেখে দু'আপাঠের দ্বারা নিশ্চিত উপকার লাভ হয়, যদিও সে উপকারের ধরন-ধারণ সর্বদা উপলব্ধি করা যায় না। উপকার তো আল্লাহ তা'আলা নিজ ইচ্ছামতোই দিয়ে থাকেন, যা সর্বদা বান্দার বোধগম্য হওয়া অপরিহার্য নয়।

গ. রুকয়া ও দু'আপাঠে তিন, সাত ইত্যাদি সংখ্যার বিশেষ আছর আছে। তাই হাদীছে যে ক্ষেত্রে যে সংখ্যার উল্লেখ আছে তা রক্ষা করা চাই।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
মিশকাতুল মাসাবীহ - হাদীস নং ১৫৩৩ | মুসলিম বাংলা