মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

৫- নামাযের অধ্যায়

হাদীস নং: ১২৫৭
৩৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - বিতরের সালাত
১২৫৭। হযরত সা'দ ইবনে হিশাম তাবেয়ী বলেন, একদা আমি হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর নিকট যাইয়া তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলাম, হে উন্মুল মু'মিনীন। আমাকে রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আখলাক (চরিত্র) সম্পর্কে অবহিত করুন। তিনি বলিলেন, তুমি কি কোরআন পড় না? আমি উত্তর করিলাম, হ্যাঁ, (নিশ্চয়ই পড়ি।) তিনি বলিলেন, নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আখলাক ছিল কোরআন। অতঃপর আমি বলিলাম, হে উম্মুল মু'মিনীন! এবার আমাকে অবহিত করুন রাসুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিভিন্ন সম্বন্ধে। তিনি বলিলেন, আমরা তাহার মেসওয়াক এবং ওযুর পানি প্রস্তুত রাখিতাম। অতঃপর আল্লাহ তাআলা রাতে যখন চাহিতেন তাহাকে উঠাইয়া দিতেন এবং তিনি উঠিয়া মেসওয়াক করিতেন এ ওযু করিতেন, তৎপর নয় রাকআত নামায পড়িতেন- যাহার অষ্টম রাকআত ব্যতীত তিনি কোথাও বসিতেন না। অষ্টম রাকআতে বসিয়া তিনি আল্লাহর যিকির, হামদ ও সানা এবং দো'আ করিতেন, অতঃপর দাঁড়াইতেন কিন্তু সালাম ফিরাইতেন না। তৎপর নবম রাকআত পঁড়িতেন, অতঃপর বসিতেন এবং আল্লাহর যিকির, হামদ, সানা ও দোআ করিতেন, তৎপর আমাদিগকে শুনাইয়া সালাম ফিরাইতেন। অতঃপর অর্থাৎ, সালাম ফিরানোর পর বসিয়া দুই রাকআত পড়িতেন, এই হইল মোট এগার রাকআত। হে আমার প্রিয় বৎস! কিন্তু যখন রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বয়স বেশী হইল এবং তিনি ভারী হইয়া গেলেন, (তাহাজ্জুদসহ) সাত রাকআত দ্বারা বিভিন্ন পড়িতেন, অতঃপর দুই রাকআত পূর্বের ন্যায় বসিয়া পড়িতেন—এই হইল নয় রাকআত। হে আমার প্রিয় বংস! এতদ্ব্যতীত নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিয়ম ছিল, তিনি যখন কোন নামায পড়িতেন সর্বদা উহাকে অব্যাহত রাখাই ভালবাসিতেন। অতএব, যখন নিদ্রার প্রভাব অথবা কোন পীড়ার দরুন তাঁহার রাত্রির নামায ফউত হইয়া যাইত, তিনি দিনের বেলায় (দ্বিপ্রহরের পূর্বে) বার রাকআত নামায পড়িয়া লইতেন। এছাড়া আমি অবগত নহি যে, নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনও এক রাত্রিতে পূর্ণ কোরআন তেলাওয়াত করিয়াছেন অথবা ভোর পর্যন্ত সমস্ত রাত্রি নামাযে কাটাইয়াছেন, না তিনি রমযান ব্যতীত কোন পূর্ণ মাস রোযা রাখিয়াছেন। মুসলিম
بَابُ الْوِتْرِ
وَعَن سعد بن هِشَام قَالَ انْطَلَقْتُ إِلَى عَائِشَةَ فَقُلْتُ يَا أُمَّ الْمُؤْمِنِينَ أَنْبِئِينِي عَنْ خُلُقِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَتْ: أَلَسْتَ تَقْرَأُ الْقُرْآنَ؟ قُلْتُ: بَلَى. قَالَتْ: فَإِنَّ خُلُقَ نَبِيِّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ الْقُرْآنَ. قُلْتُ: يَا أُمَّ الْمُؤْمِنِينَ أَنْبِئِينِي عَنْ وَتْرِ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَتْ: كُنَّا نُعِدُّ لَهُ سِوَاكَهُ وَطَهُورَهُ فَيَبْعَثُهُ اللَّهُ مَا شَاءَ أَنْ يَبْعَثَهُ مِنَ اللَّيْلِ فَيَتَسَوَّكُ وَيَتَوَضَّأُ وَيُصَلِّي تِسْعَ رَكَعَاتٍ لَا يَجْلِسُ فِيهَا إِلَّا فِي الثَّامِنَةِ فَيَذْكُرُ اللَّهَ وَيَحْمَدُهُ وَيَدْعُوهُ ثُمَّ يَنْهَضُ وَلَا يُسَلِّمُ فَيُصَلِّي التَّاسِعَةَ ثُمَّ يَقْعُدُ فَيَذْكُرُ اللَّهَ وَيَحْمَدُهُ وَيَدْعُوهُ ثُمَّ يُسَلِّمُ تَسْلِيمًا يُسْمِعُنَا ثُمَّ يُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ بَعْدَمَا يُسَلِّمُ وَهُوَ قَاعد فَتلك إِحْدَى عشرَة رَكْعَة يابني فَلَمَّا أَسَنَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَخَذَ اللَّحْمَ أَوْتَرَ بِسَبْعٍ وَصَنَعَ فِي الرَّكْعَتَيْنِ مِثْلَ صَنِيعِهِ فِي الْأُولَى فَتِلْكَ تِسْعٌ يَا بُنَيَّ وَكَانَ نَبِيُّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا صَلَّى صَلَاةً أَحَبَّ أَنْ يُدَاوِمَ عَلَيْهَا وَكَانَ إِذَا غَلَبَهُ نَوْمٌ أَوْ وَجَعٌ عَنْ قِيَامِ اللَّيْلِ صَلَّى مِنَ النَّهَارِ ثِنْتَيْ عَشْرَةَ رَكْعَةً وَلَا أَعْلَمُ نَبِيَّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَرَأَ الْقُرْآنَ كُلَّهُ فِي لَيْلَةٍ وَلَا صَلَّى لَيْلَةً إِلَى الصُّبْحِ وَلَا صَامَ شهرا كَامِلا غير رَمَضَان. رَوَاهُ مُسلم

হাদীসের ব্যাখ্যা:

'নবী করীমের আখলাক ছিল কোরআন' – অর্থাৎ, তিনি কোরআনের নির্দেশ অনুযায়ীই নিজকে গড়িয়া তুলিয়াছিলেন, অথবা কোরআনই তাঁহার আখলাকের সাক্ষ্য। কোরআনে রহিয়াছে, আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ
انك لعلى خلق عظيم "আপনি মহান চরিত্রের উপর অধিষ্ঠিত আছেন।" 'অষ্টম রাকআত ব্যতীত কোথাও বসিতেন না'—ইহা জায়েয আছে একথা দেখাইবার জন্যই হুযুর (ﷺ) এইরূপ করিয়াছেন—যদিও ইহা উত্তম নহে। উত্তম প্রত্যেক দুই রাকআতে বসাই। 'অতঃপর বসিয়া দুই রাকআত পড়িতেন — বিতিরের পরও নফল পড়া জায়েয, আমাদেরকে একথা বুঝাইবার জন্যই তিনি কখনও ইহা পড়িয়াছেন। অন্যথায় শেষ রাত্রিতে বিতির পড়িলে বিতিরকেই শেষ নামায করিতে তিনি বলিয়াছেন।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান