মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
৫- নামাযের অধ্যায়
হাদীস নং: ৯২৭
১৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নাবী (ﷺ)-এর ওপর দরূদ পাঠ ও তার মর্যাদা
৯২৭। হযরত আবু হুরায়রাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, সে অপমানিত হউক, যার নিকট আমার নামোচ্চারণ করলে সে আমার প্রতি দরূদ পাঠ করে না। অপমানিত হউক সে, যার নিকট রমজান মাস এসে তারা গুনাহ মাফের ব্যবস্থা ছাড়াই চলে যায় এবং অপমানিত হউক সে, যার নিকট তার পিতামাতা উভয় কিংবা তাদের একজন বার্ধক্যে উপনীত অথচ তাকে পিতামাতা বেহেশতে পৌঁছায় না। (অর্থাৎ পিতামাতার খেদমত দ্বারা বেহেশত লাভের উপযোগী হয় না।) –তিরমিযী
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «رَغِمَ أَنْفُ رَجُلٍ ذُكِرْتُ عِنْدَهُ فَلَمْ يُصَلِّ عَلَيَّ وَرَغِمَ أَنْفُ رَجُلٍ دَخَلَ عَلَيْهِ رَمَضَانُ ثُمَّ انْسَلَخَ قَبْلَ أَنْ يُغْفَرَ لَهُ وَرَغِمَ أَنْفُ رَجُلٍ أَدْرَكَ عِنْدَهُ أَبَوَاهُ الْكبر أَو أَحدهمَا فَلم يدْخلَاهُ الْجنَّة» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
হাদীসের ব্যাখ্যা:
উক্ত হাদীসে হযরত জিবরাঈল (আঃ) তিনটি বদদোয়া করিয়াছেন এবং হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই তিনটি বদদোয়ার উপর আমীন বলিয়াছেন। প্রথমতঃ হযরত জিবরাঈল (আঃ) এর মত নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতার বদদোয়াই যথেষ্ট ছিল তারপর আবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমীন ইহার সহিত যোগ হইয়া আরও কত কঠিন বানাইয়া দিয়াছে তাহা স্পষ্ট বুঝা যাইতেছে । আল্লাহ তায়ালা মেহেরবানী করিয়া আমাদিগকে এই তিন জিনিস হইতে বাঁচিয়া থাকার তওফীক দান করুন এবং এই সমস্ত গোনাহ হইতে রক্ষা করুন; নচেৎ ধ্বংসের ব্যাপারে কি সন্দেহ থাকিতে পারে। ’দুররে মানসূর’ নামক কিতাবের কোন কোন রেওয়ায়াত দ্বারা বুঝা যায় স্বয়ং হযরত জিবরাঈল (আঃ) হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমীন বলার জন্য বলিয়াছেন অতঃপর হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমীন বলিয়াছেন্ ইহাতে এই বদদোয়া সম্পর্কে আরো বেশী গুরুত্ব বুঝা যায়।
প্রথমতঃ ঐ ব্যক্তি যাহার উপর রমযানের মুবারক মাস অতিবাহিত হইয়া যায় কিন্তু তাহার গোনাহ মাফ হয় না। অর্থাৎ রমযান মোবারক এত বরকত ও কল্যাণের মাস , যে মাসে মাগফেরাত ও আল্লাহর রহমত বৃষ্টির ন্যায় বর্ষিত হেইতে থাকে, এমন মাসও গোনাহ ও গাফলতির মধ্যে কাটিয়া যায়। সুতরাং যে ব্যক্তির রমযান মাস এইভাবে কাটিয়া যায় যে , নিজের বদআমলী ও ত্রুটির কারণে মাগফেরাতের জন্য হইবে? এবং তাহার ধ্বংসের ব্যাপারে কি সন্দেহ থাকিতে পারে? মাগফেরাতের পন্থা হইল , এই মাসে যে সমস্ত আমল রহিয়াছে, যেমন রোযা, তারাবীহ এইগুলি অত্যন্ত এহতেমামের সাথে আদায় করার পর স্বীয় গোনাহ হইতে বেশী বেশী তওবা ও এস্তেগফার করা ।
দ্বিতীয় ব্যাক্তি যাহারা জন্য বদদোয়া করা হইয়াছে সে হইল যাহার সম্মুখে নবী করীম সাল্লাল্লাহহু আলাইহি ওয়াসাল্লাল্লামের নাম উচ্চারণ করা হয় কিন্তু সে তাঁহার প্রতি দুরূদ পড়ে না । এই বিষয়টি আরো রেওয়ায়াতে আসিয়াছে। তাই কতক ওলামায়ে কেরাম বলেন, যখনই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম মোবারক উচ্চারিত হয় তখনই শ্রবণকারীদের উপর দুরূদ পড়া ওয়জিব। যে ব্যক্তি হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম শোনার পর দুরূদ পড়ে না তাহার ব্যাপারে আরো বহু ধমকি ও হুঁশিয়ারীর কথাও তাহাকে জালেম ও জান্নাতের রাস্তাহারা বলা হইয়াছ। এমনও বর্ণিত হইয়াছে যে, সে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেহারা মোবারক দেখিতে পাইবে না । মুহাক্কিক ওলামায়ে কেরাম যদিও এই সমস্ত রেওয়ায়াতের সহজ ব্যাখ্যা দিয়া থাকেন তবুও এই কথা অস্বীকার করার উপায় না যে, যে ব্যাক্তি দুরূদ পড়ে না তাহার সম্বেদ্ধে হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এরশাদসমূহের বাহ্যিক এতই কঠিন যাহা সহ্য করা অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার। আর এইরূপ কেনই বা হইবে না? উম্মতের উপর রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এহসান ও অনুগ্রহ এতই অপরিসীম যাহা লিখায় ও কথায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। ইহাছাড়া উম্মতের উপর তাঁহার হক ও অধিকার এত বেশী যে, সেইগুলির দিকে লক্ষ্য করিলে দুরূদ বর্জনকারী সম্বন্ধে যে কোন ধমকি ও হুঁশিয়ারী যথার্থই মনে হয়। কেবল দুরূদ শরীফ পড়ার যে ফযীলত রহিয়াছে তাহা হইতে মাহরূম থাকাই স্বতন্ত্র একটা বদনসীবি ও দুর্ভাগ্য । ইহার চাইতে বড় ফযীলত আর কি হইতে একবার দুরূদ শরীফ পড়ে আল্লাহতায়ালা তাহার উপর দশবার রহমত নাযিল করেন । তদুপরি ফেরেশতাদের দোয়া , গোনাহ মাফ হওয়া, দরজা বুলন্দ হওয়া, উহুদ পাহাড় পরিমাণ সওয়াব লাভ হওয়া, শাফাআত ওয়াজিব হওয়া, ইত্যাদি বিষয়গুলি অতিরিক্ত । ইহা ছাড়াও বিশেষ সংখ্যায় দুরূদ পাঠ করার দরুন আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ, তাঁহার গজব হইতে মুক্তিলাভ, কেয়মতের বিভীষিকা হইতে নাজাত লাভ, মৃত্যুর আগেই জান্নাতে নিজের ঠিকানা দেখা ইত্যাদি বিষয়ের ওয়াদাও রহিয়াছে। এইসব কিছু ছাড়াও দুরূদ শরীফ পড়িলে দারিদ্র ও অভাব দূর হয়, আল্লাহ ও রাসূলের দরবারে নৈকট্য লাভ হয় , দুশমনের মোকাবিলায় সাহায্য লাভ হয়, অন্তর মোনাফেকী ও মরিচামুক্ত হয় এবং মানুষের অন্তরে তাহার ভালবাসা সৃষ্টি হয়। অধিক পরিমাণে দুরূদ পড়া সম্বন্ধে হাদীস শরীফে আরো অনেক সুসংবাদ রহিয়াছে। ওলামায়ে কেরাম বলেন, জীবনে একবার দুরূদ শরীফ পড়া ফরজ এবং এই ব্যাপারে সকল মাযহাবের ওলামাগণ একমত। অবশ্য বার বার হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লামের নাম মোবারক উচ্চারিত হইল প্রত্যেক বার দরুদ পড়া ওয়াজিব কি না এই ব্যাপারে দ্বিমত রহিয়াছে। কতকের মতে ওয়াজিব আর কতকের মতে মুস্তাহাব।
তৃতীয়তঃ ঐ ব্যক্তি যে পিতামাতা উভয়কে অথবা তাহাদের একজনকে বৃদ্ধিবস্থায় পাইল কিন্তু তাহাদের এই পরিমাণ খেদমত করিল না যাহা দ্বারা সে জান্নাতের উপযুক্ত হইতে পারে । পিতামাতার হক সম্বন্ধে লিখিয়াছেন, জায়েয বিষয়ে তাহাদের কথা মানা জরুরী। ইহাও লিখিয়াছেন, পিতামাতার ুসহিত বেআদবী করিবে না , তাহাদের সহিত অহঙ্কার করিবে না, যদিও তাহারা মুশরেক হয় । নিজের আওয়াজ তাহাদের আওয়াজের চাইতে বড় করিবে না , তাহাদের নাম ধরিয়া ডাকিবে না, কোন কাজে তাহাদের চেয়ে আগে বাড়িবে না, ভাল কাজের আদেশ এবং মন্দকাজের নিষেধের ক্ষেত্রেও তাহাদের সহিত নম্রতা অবলম্বন করিবে। যদি তাহারা না মানে তবে সদ্ব্যবহার করিতে থাকিবে এবং তাহাদের জন্য হেদায়াতের দোয়া করিতে থাকিবে। এক হাদীসে আছে, জান্নাতের দরজাসমূহের মধ্যে সর্বোত্তম দরজা হইতেছে পিতা । তোমার মন চাহিলে উহাকে হেফাজত করিতে পার অথবা উহাকে নষ্ট করিতে পার। জনৈক সাহাবী হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালাল্লামের নিকট জিজ্ঞাসা করিলেন, পিতামাতার হক কি? তিনি বলিলেন, তাহারা তোমার জান্নাত অথবা জাহান্নাম। অর্থাৎ তাহাদের সন্তুষ্টি জান্নাত আর তাহাদের অসন্তুষ্টি জাহান্নাম। এক হাদীসে আছে, বাধ্যগত ছেলে যদি মহব্বতের দৃষ্টিতে পিতামাতার দিকে একবার তাকায় তবে একটি মকবুল হজ্জের সওয়াব লাভ হইবে। এক হাদীসে আছে আল্লাহ তায়ালা শিরকের গোনাহ ছাড়া যত ইচ্ছা মাফ করেন কিন্তু জিতামাতার নাফরমানী ও অবাধ্যতার সাজা মৃত্যর পূর্বেই দুনিয়াতে দিয় দেন । জনৈক সাহাবী আরজ করিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি জিহাদে যাওয়ার ইচ্ছা করিয়াছি। সাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করিলেন, তোমার মা জীবিত আছেন কি ? উত্তরে বলিলেন, জ্বি হাঁ। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন, তাহার খেদমত কর; তাহার পায়ের নীচে তোমার জান্নাত। এক হাদীসে আছে, আল্লাহর সন্তষ্টি পিতার সন্তুষ্টির মধে রহিয়াছে আর আল্লাহর অসন্তুষ্টি পিতার অসন্তুষ্টির মধ্যে রহিয়াছে। উল্লেখিত হাদীসসমূহ ছাড়া আরো বহু হাদীসে পিতামাতার আনুগত্য ও খেদমতের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হইয়াছে। যাহারা গাফিলতি করিয়া এইসব বিষয়ে ত্রুটি করিয়া ফেলিয়াছে এবং বর্তমানে তাহাদের পিতামাতা জীবিত নাই এমতাবস্থায় ইসলামী শরীয়তে ইহার ক্ষতিরপূরণের ব্যবস্থাও রহিয়াছে। এক হাদীসে আছে, কাহারো পিতামাতা যদি এমতাবস্থায় মারা গিয়া থাকে যে, সে তাহাদের অবাধ্যতা করিত তবে তাহাদের জন্য অধিক পরিমাণে দোয়া ও এস্তগফার করিলে সে বাধ্যগত বলিয়া গণ্য হইবে। আরেক হাদীসে আছে, উত্তম সদ্ব্যবহার হইল পিতার মৃত্যুর পর তাহার বন্ধু-বান্ধবের সহিত সদ্ব্যবহার করা।
প্রথমতঃ ঐ ব্যক্তি যাহার উপর রমযানের মুবারক মাস অতিবাহিত হইয়া যায় কিন্তু তাহার গোনাহ মাফ হয় না। অর্থাৎ রমযান মোবারক এত বরকত ও কল্যাণের মাস , যে মাসে মাগফেরাত ও আল্লাহর রহমত বৃষ্টির ন্যায় বর্ষিত হেইতে থাকে, এমন মাসও গোনাহ ও গাফলতির মধ্যে কাটিয়া যায়। সুতরাং যে ব্যক্তির রমযান মাস এইভাবে কাটিয়া যায় যে , নিজের বদআমলী ও ত্রুটির কারণে মাগফেরাতের জন্য হইবে? এবং তাহার ধ্বংসের ব্যাপারে কি সন্দেহ থাকিতে পারে? মাগফেরাতের পন্থা হইল , এই মাসে যে সমস্ত আমল রহিয়াছে, যেমন রোযা, তারাবীহ এইগুলি অত্যন্ত এহতেমামের সাথে আদায় করার পর স্বীয় গোনাহ হইতে বেশী বেশী তওবা ও এস্তেগফার করা ।
দ্বিতীয় ব্যাক্তি যাহারা জন্য বদদোয়া করা হইয়াছে সে হইল যাহার সম্মুখে নবী করীম সাল্লাল্লাহহু আলাইহি ওয়াসাল্লাল্লামের নাম উচ্চারণ করা হয় কিন্তু সে তাঁহার প্রতি দুরূদ পড়ে না । এই বিষয়টি আরো রেওয়ায়াতে আসিয়াছে। তাই কতক ওলামায়ে কেরাম বলেন, যখনই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম মোবারক উচ্চারিত হয় তখনই শ্রবণকারীদের উপর দুরূদ পড়া ওয়জিব। যে ব্যক্তি হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম শোনার পর দুরূদ পড়ে না তাহার ব্যাপারে আরো বহু ধমকি ও হুঁশিয়ারীর কথাও তাহাকে জালেম ও জান্নাতের রাস্তাহারা বলা হইয়াছ। এমনও বর্ণিত হইয়াছে যে, সে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেহারা মোবারক দেখিতে পাইবে না । মুহাক্কিক ওলামায়ে কেরাম যদিও এই সমস্ত রেওয়ায়াতের সহজ ব্যাখ্যা দিয়া থাকেন তবুও এই কথা অস্বীকার করার উপায় না যে, যে ব্যাক্তি দুরূদ পড়ে না তাহার সম্বেদ্ধে হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এরশাদসমূহের বাহ্যিক এতই কঠিন যাহা সহ্য করা অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার। আর এইরূপ কেনই বা হইবে না? উম্মতের উপর রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এহসান ও অনুগ্রহ এতই অপরিসীম যাহা লিখায় ও কথায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। ইহাছাড়া উম্মতের উপর তাঁহার হক ও অধিকার এত বেশী যে, সেইগুলির দিকে লক্ষ্য করিলে দুরূদ বর্জনকারী সম্বন্ধে যে কোন ধমকি ও হুঁশিয়ারী যথার্থই মনে হয়। কেবল দুরূদ শরীফ পড়ার যে ফযীলত রহিয়াছে তাহা হইতে মাহরূম থাকাই স্বতন্ত্র একটা বদনসীবি ও দুর্ভাগ্য । ইহার চাইতে বড় ফযীলত আর কি হইতে একবার দুরূদ শরীফ পড়ে আল্লাহতায়ালা তাহার উপর দশবার রহমত নাযিল করেন । তদুপরি ফেরেশতাদের দোয়া , গোনাহ মাফ হওয়া, দরজা বুলন্দ হওয়া, উহুদ পাহাড় পরিমাণ সওয়াব লাভ হওয়া, শাফাআত ওয়াজিব হওয়া, ইত্যাদি বিষয়গুলি অতিরিক্ত । ইহা ছাড়াও বিশেষ সংখ্যায় দুরূদ পাঠ করার দরুন আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ, তাঁহার গজব হইতে মুক্তিলাভ, কেয়মতের বিভীষিকা হইতে নাজাত লাভ, মৃত্যুর আগেই জান্নাতে নিজের ঠিকানা দেখা ইত্যাদি বিষয়ের ওয়াদাও রহিয়াছে। এইসব কিছু ছাড়াও দুরূদ শরীফ পড়িলে দারিদ্র ও অভাব দূর হয়, আল্লাহ ও রাসূলের দরবারে নৈকট্য লাভ হয় , দুশমনের মোকাবিলায় সাহায্য লাভ হয়, অন্তর মোনাফেকী ও মরিচামুক্ত হয় এবং মানুষের অন্তরে তাহার ভালবাসা সৃষ্টি হয়। অধিক পরিমাণে দুরূদ পড়া সম্বন্ধে হাদীস শরীফে আরো অনেক সুসংবাদ রহিয়াছে। ওলামায়ে কেরাম বলেন, জীবনে একবার দুরূদ শরীফ পড়া ফরজ এবং এই ব্যাপারে সকল মাযহাবের ওলামাগণ একমত। অবশ্য বার বার হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লামের নাম মোবারক উচ্চারিত হইল প্রত্যেক বার দরুদ পড়া ওয়াজিব কি না এই ব্যাপারে দ্বিমত রহিয়াছে। কতকের মতে ওয়াজিব আর কতকের মতে মুস্তাহাব।
তৃতীয়তঃ ঐ ব্যক্তি যে পিতামাতা উভয়কে অথবা তাহাদের একজনকে বৃদ্ধিবস্থায় পাইল কিন্তু তাহাদের এই পরিমাণ খেদমত করিল না যাহা দ্বারা সে জান্নাতের উপযুক্ত হইতে পারে । পিতামাতার হক সম্বন্ধে লিখিয়াছেন, জায়েয বিষয়ে তাহাদের কথা মানা জরুরী। ইহাও লিখিয়াছেন, পিতামাতার ুসহিত বেআদবী করিবে না , তাহাদের সহিত অহঙ্কার করিবে না, যদিও তাহারা মুশরেক হয় । নিজের আওয়াজ তাহাদের আওয়াজের চাইতে বড় করিবে না , তাহাদের নাম ধরিয়া ডাকিবে না, কোন কাজে তাহাদের চেয়ে আগে বাড়িবে না, ভাল কাজের আদেশ এবং মন্দকাজের নিষেধের ক্ষেত্রেও তাহাদের সহিত নম্রতা অবলম্বন করিবে। যদি তাহারা না মানে তবে সদ্ব্যবহার করিতে থাকিবে এবং তাহাদের জন্য হেদায়াতের দোয়া করিতে থাকিবে। এক হাদীসে আছে, জান্নাতের দরজাসমূহের মধ্যে সর্বোত্তম দরজা হইতেছে পিতা । তোমার মন চাহিলে উহাকে হেফাজত করিতে পার অথবা উহাকে নষ্ট করিতে পার। জনৈক সাহাবী হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালাল্লামের নিকট জিজ্ঞাসা করিলেন, পিতামাতার হক কি? তিনি বলিলেন, তাহারা তোমার জান্নাত অথবা জাহান্নাম। অর্থাৎ তাহাদের সন্তুষ্টি জান্নাত আর তাহাদের অসন্তুষ্টি জাহান্নাম। এক হাদীসে আছে, বাধ্যগত ছেলে যদি মহব্বতের দৃষ্টিতে পিতামাতার দিকে একবার তাকায় তবে একটি মকবুল হজ্জের সওয়াব লাভ হইবে। এক হাদীসে আছে আল্লাহ তায়ালা শিরকের গোনাহ ছাড়া যত ইচ্ছা মাফ করেন কিন্তু জিতামাতার নাফরমানী ও অবাধ্যতার সাজা মৃত্যর পূর্বেই দুনিয়াতে দিয় দেন । জনৈক সাহাবী আরজ করিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি জিহাদে যাওয়ার ইচ্ছা করিয়াছি। সাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করিলেন, তোমার মা জীবিত আছেন কি ? উত্তরে বলিলেন, জ্বি হাঁ। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন, তাহার খেদমত কর; তাহার পায়ের নীচে তোমার জান্নাত। এক হাদীসে আছে, আল্লাহর সন্তষ্টি পিতার সন্তুষ্টির মধে রহিয়াছে আর আল্লাহর অসন্তুষ্টি পিতার অসন্তুষ্টির মধ্যে রহিয়াছে। উল্লেখিত হাদীসসমূহ ছাড়া আরো বহু হাদীসে পিতামাতার আনুগত্য ও খেদমতের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হইয়াছে। যাহারা গাফিলতি করিয়া এইসব বিষয়ে ত্রুটি করিয়া ফেলিয়াছে এবং বর্তমানে তাহাদের পিতামাতা জীবিত নাই এমতাবস্থায় ইসলামী শরীয়তে ইহার ক্ষতিরপূরণের ব্যবস্থাও রহিয়াছে। এক হাদীসে আছে, কাহারো পিতামাতা যদি এমতাবস্থায় মারা গিয়া থাকে যে, সে তাহাদের অবাধ্যতা করিত তবে তাহাদের জন্য অধিক পরিমাণে দোয়া ও এস্তগফার করিলে সে বাধ্যগত বলিয়া গণ্য হইবে। আরেক হাদীসে আছে, উত্তম সদ্ব্যবহার হইল পিতার মৃত্যুর পর তাহার বন্ধু-বান্ধবের সহিত সদ্ব্যবহার করা।
.
