মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

৫- নামাযের অধ্যায়

হাদীস নং: ৯১২
১৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - তাশাহুদ
৯১২। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যোবায়ের (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, নবী পাক (ﷺ) তাশাহহুদ পড়ার সময়ে তর্জনী অঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করতেন কিন্তু তা নাড়াতেন না। -আবু দাউদ, নাসায়ী কিন্তু আবু দাউদ
এ প্রসঙ্গে বলেছেন যে, এই সময় তাঁর দৃষ্টি তাঁর ইশারার দিক ছাড়া অন্যদিকে যেত না।
وَعَن عبد الله بن الزبير قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُشِيرُ بِأُصْبُعِهِ إِذَا دَعَا وَلَا يُحَرِّكُهَا. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيّ وَزَاد أَبُو دَاوُد وَلَا يُجَاوز بَصَره إِشَارَته

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, তাশাহহুদের সময় ইশারা করতে গিয়ে আঙ্গুল বারংবার নাড়াচাড়া করবে না।
ফায়দা : উপরিউক্ত নিয়মের বিপরীতে কেউ কেউ শাহাদাত আঙ্গুল নাড়াচাড়া করতে থাকে। দলীল হিসেবে নাসাঈ শরীফে বর্ণিত এ হাদীস পেশ করে থাকে যে,ثُمَّ قَبَضَ اثْنَتَيْنِ مِنْ أَصَابِعِهِ وَحَلَّقَ حَلْقَةً، ثُمَّ رَفَعَ إِصْبَعَهُ فَرَأَيْتُهُ يُحَرِّكُهَا يَدْعُو بِهَا “রসূলুল্লাহ স. দুটি আঙ্গুল গুটিয়ে বৃত্ত তৈরী করলেন আর আঙ্গুল উঠালেন। আমি দেখেছি তিনি সেটা নাড়াচাড়া করছেন, তা দ্বারা দুআ করছেন”। (নাসাঈ: ৮৯২) এ হাদীসের ব্যাপারে আলস্নামা ইবনে খুযাইমা রহ. বলেন: لَيْسَ فِي شَيْءٍ مِنَ الْأَخْبَارِ «يُحَرِّكُهَا» إِلَّا فِي هَذَا الْخَبَرِ زَائِدٌ ذِكْرُهُ “শুধু এই হাদীসটি ব্যতীত কোন হাদীসের মধ্যে আঙ্গুল নাড়াচাড়া করার অংশটি নেই। এটা এ হাদীসে অতিরিক্ত বর্ণিত হয়েছে। (সহীহ ইবনে খুযাইমা: ৭১৪ নাম্বার হাদীসের আলোচনায়)
শায়খ শুআইব আরনাউত রহ. বলেন: حديث صحيح دون قوله: "فرأيته يحركها يدعو بها" فهو شاذ انفرد به زائدة- وهو ابن قدامة- من بين أصحاب عاصم بن كليب “ওয়ায়েল বিন হুজ্র রা.-এর হাদীসটি সহীহ। তবে আঙ্গুল নাড়াচাড়া করার অংশটি শায (অপ্রবল)। কেননা, আছেম বিন কুলাইবের ছাত্রদের মধ্যে যায়েদা বিন কুদামা ব্যতীত আর কেউ এ অংশটি বর্ণনা করেননি”। (মুসনাদে আহমাদ: ১৮৮৭০ নাম্বার হাদীসের আলোচনায়) আলস্নামা ইবনে খুযাইমা রহ. এবং শায়খ শুআইব আরনাউতের মনত্মব্য থেকে প্রমাণিত হলো যে, এ হাদীসে আঙ্গুল নাড়াচাড়া করার অংশটি সহীহ নয়।
ইমাম বায়হাকী রহ. বলেন: فَيُحْتَمَلُ أَنْ يَكُونَ الْمُرَادُ بِالتَّحْرِيكِ الْإِشَارَةَ بِهَا لَا تَكْرِيرَ تَحْرِيكِهَا فَيَكُونَ مُوَافِقًا لِرِوَايَةِ ابْنِ الزُّبَيْر “হতে পারে আঙ্গুল নাড়াচাড়ার দ্বারা উদ্দেশ্য আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করা; বারবার নাড়াচাড়া করা নয়। তাহলে এ হাদীসটির বক্তব্য (পূর্ববর্ণিত) হযরত আব্দুলস্নাহ বিন যুবায়ের রা.-এর হাদীসের মূল বক্তব্য অনুযায়ী হয়ে যাবে”। (সুনানুল কুবরা লিলবায়হাকী: ২৭৮৭) ইমাম বায়হাকী রহ.-এর এ মনত্মব্য দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, আঙ্গুল নাড়াচাড়া করার বাক্যটি যদি আমরা সহীহ মেনে নেই তাহলেও এটা দ্বারা উদ্দেশ্য ইশারা করা, বারবার নাড়াচাড়া করতে থাকা নয়। তাহলে আলস্নামা ইবনে খুযাইমা, ইমাম বায়হাকী রহ. এবং শায়খ শুআইব আরনাউতের বক্তব্য মতে তাশাহহুদে আঙ্গুল নাড়াচাড়া করা সহীহ নয়। অথবা ঐ বাক্য দ্বারা একবার নেড়ে ইশারা করা উদ্দেশ্য, বারবার নাড়াচাড়া করা উদ্দেশ্য নয়।
আঙ্গুল উঠিয়ে সামান্য নোয়ানো অবস্থায় ধরে রাখার একটি হাদীস আবু দাউদ শরীফের ৯৯১ নাম্বার বর্ণিত হয়েছে। মাযহাব বিরোধীদের গুরম্নজন শায়খ আলবানী এ হাদীসটিকে জঈফ বলেছেন। (জঈফ আবু দাউদ-১৭৬) শায়খ শুআইব আরনাউত রহ. এ হাদীসের বিভিন্ন বর্ণনা একত্রিত করে বলেন, حديث صحيح لغيره، دون قوله: قد حناها شيئاً “ হাদীসটি অবশিষ্ট অংশ সহীহ লিগাইরিহী”। তবে আঙ্গুল উঠিয়ে সামান্য নোয়ানো অবস্থায় ধরে রাখার অংশটি সহীহ নয়। (মুসনাদে আহমাদ: ১৫৮৬৬ নাম্বার হাদীসের তাহকীকে) এ থেকে প্রমাণিত হলো যে, আঙ্গুল উঠিয়ে সামান্য নোয়ানো অবস্থায় ধরে রাখার হাদীস সহীহ নয়। সুতরাং কেবল সহীহ হাদীস ব্যতীত অন্য কিছু না মানার দাবীদারদের উচিত হবে আঙ্গুল নাড়াচাড়া করা বা আঙ্গুল উঠিয়ে সামান্য নোয়ানো অবস্থায় ধরে রাখার এ আমলটি পরিহার করা।
উলেস্নখ্য, শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করার পদ্ধতি এই যে: আঙ্গুল উঠিয়ে আবার নামানো, আঙ্গুল উঠিয়ে ধরে না রাখা। বিদায় হজ্বে রসূলুলস্নাহ স. আরাফার ময়দানের ঐতিহাসিক ভাষণে আকাশের দিকে যে ইশারা করেছিলেন তার বিবরণ মুসলিম শরীফে এভাবে পেশ করা হয়েছে فَقَالَ بِإِصْبَعِهِ السَّبَّابَةِ يَرْفَعُهَا إِلَى السَّمَاءِ وَيَنْكُتُهَا إِلَى النَّاسِ “তিনি শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করলেন, তা আকাশের দিকে উঠালেন এবং মানুষের দিকে নামালেন”। (মুসলিম: ২৮২১) আঙ্গুল উঠিয়ে ধরে রাখা বা নাড়াচাড়া করা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান