মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

৫- নামাযের অধ্যায়

হাদীস নং: ৮০১
১০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতের নিয়ম-কানুন
৮০১। হযরত আবু হুমাইদ সায়েদী (রাযিঃ) রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর দশজন সাহাবীর মধ্যে বললেন, আমি আপনাদের তুলনায় রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নামায সম্পর্কে বেশী অবগত। তারা বললেন, তবে তা আপনি আমাদের নিকট বলুন। তখন তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন নামাযে দাঁড়াতেন তখন দুহাত উপরে তুলতেন। তা দু'কাঁধ বরাবর করতেন। তারপর তাকবীর বলতেন, তারপর কিরাত পাঠ করতেন। অতঃপর তাকবীর বলতেন এবং দু'হাত উঠাতেন! তা কাঁধ বরাবর করতেন। অতঃপর রুকূ করতেন এবং দু'হাতের তালুকে দু' হাঁটুর উপরে রাখতেন। এ সময় পিঠ সোজা রাখতেন। মাথা নীচের দিকেও বেশী ঝুকাতেন না এবং বেশী উপরেও উঠাতেন না। অতঃপর মাথা তুলতেন এবং বলতেন, সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ। তারপর সোজা হয়ে দুহাত তুলতেন। তা দু' কাঁধ বরাবর করতেন। তারপর বলতেন, আল্লাহু আকবার। তারপর সিজদাহ-এর জন্য যমিনের দিকে ঝুঁকতেন। সিজদায় দু' হাতকে দু' পাঁজর হতে পৃথক রাখতেন এবং দু' পায়ের আঙ্গুলসমূহ (কিবলার দিকে) ঘুরিয়ে দিতেন। তারপর মাথা তুলতেন এবং তাঁর বাম পা বিছিয়ে দিয়ে তার উপর বসতেন। অতঃপর তিনি সোজা হয়ে থাকতেন, যেন তাঁর প্রত্যেক হাড় নিজ নিজ স্থানে ঠিকভাবে বসে যায়। এরপর তিনি দ্বিতীয় সিজদায় যেতেন। তারপর মাথা তুলতে তুলতে আল্লাহু আকবার বলতেন এবং বাম পা বিছিয়ে তার উপর বসতেন। এ সময় এমনভাবে সোজা হয়ে বসে থাকতেন যেন তাঁর সমস্ত হাড় আপন আপন স্থানে বসে যায়। তারপর তিনি দাঁড়িয়ে যেতেন। অতঃপর দ্বিতীয় রাকাতেও এরূপ করতেন। তারপর যখন দু' রাকাত শেষে দাঁড়িয়ে যেতেন তখনও তাকবীর বলতেন এবং দুহাত তুলতেন। তা দু' কাঁধ বরাবর করতেন, যেভাবে নামায শুরুর তাকবীরের সময় করেছিলেন। অতঃপর তিনি তার অবশিষ্ট নামাযেও এরূপ করতেন। অবশেষে যখন তিনি নামাযের শেষ সিজদায় পৌছতেন, যার পর সালাম ফেরাতে হয়। তখন বাম পা পেছনের দিকে বিছিয়ে দিতেন এবং বাম নিতম্বের উপর বসতেন। তারপর সালাম ফেরাতেন। তখন তারা বলে উঠলেন, আপনি সত্য বলেছেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরূপেই নামায পড়তেন। —আবু দাউদ, দারেমী
আর তিরমিযী এবং ইবনে মাজাহ এই মর্মে বর্ণনা করেছেন, তিরমিযী বলেছেন যে, এটা হাসান, ছহীহ হাদীস।
আবু দাউদের এক বর্ণনায় আবু হুমাইদের হাদীসে রয়েছে, অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) রুকূ করতেন এবং দু’ হাত দু' হাঁটুর উপর রাখতেন যেন তা মজবুতভাবে ধরে রেখেছেন। এ সময় তিনি উভয় হাত ধনুকের মত করতেন এবং দুই পার্শ্বদেশ হতে দূরে রাখতেন। আবু হুমাইদ আরও বলেন, তারপর তিনি সিজদাহ করতেন এবং নাসিকা ও ললাটকে ঠিকভাবে যমিনে লাগাতেন এবং দু'হাত দু' পাঁজর হতে দূরে রাখতেন এবং তিনি দু'হাত যমিনে স্থাপন করতেন; দু' কাঁধ বরাবর। আর দু’ উরুকে ফাঁক করে রাখতেন। পেট দু' উরুর উপরে ঠেকাতেন না। এভাবে তিনি সিজদাহ শেষ করে বসতেন। বাম পা বিছিয়ে দিতেন এবং ডান পায়ের অগ্রভাগকে কিবলার দিকে ঘুরিয়ে দিলেন। আর ডান করতলকে ডান হাঁটুর উপর এবং বাম করতলকে বাম হাঁটুর উপর রাখতেন এবং শাহাদাত অঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করলেন।
আবু দাউদের বর্ণনান্তরে রয়েছে, যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দু' রাকাতের পর বসতেন তখন বাম পায়ের পেটের উপর বসতেন আর ডান পা খাড়া করে রাখতেন। আর যখন তিনি চতুর্থ রাকাতে পৌঁছতেন তখন বাম নিতম্ব যমিনে ঠেকাতেন এবং উভয় পা একদিক দিয়ে বের করে দিতেন অর্থাৎ বের করে দিতেন ডানদিক দিয়ে ।
عَن أبي حميد السَّاعِدِيّ قَالَ فِي عشرَة مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَنَا أَعْلَمُكُمْ بِصَلَاةِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالُوا فَاعْرِضْ. قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا قَامَ إِلَى الصَّلَاة يرفع يَدَيْهِ حَتَّى يُحَاذِيَ بِهِمَا مَنْكِبَيْهِ ثُمَّ يُكَبِّرُ ثُمَّ يَقْرَأُ ثُمَّ يُكَبِّرُ وَيَرْفَعُ يَدَيْهِ حَتَّى يُحَاذِيَ بِهِمَا مَنْكِبَيْهِ ثُمَّ يَرْكَعُ وَيَضَعُ رَاحَتَيْهِ عَلَى رُكْبَتَيْهِ ثُمَّ يَعْتَدِلُ فَلَا يُصَبِّي رَأْسَهُ وَلَا يُقْنِعُ ثُمَّ يَرْفَعُ رَأْسَهُ فَيَقُولُ: «سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ» ثُمَّ يَرْفَعُ يَدَيْهِ حَتَّى يُحَاذِيَ بِهِمَا مَنْكِبَيْهِ مُعْتَدِلًا ثُمَّ يَقُولُ: «اللَّهُ أَكْبَرُ» ثُمَّ يَهْوِي إِلَى الْأَرْضِ سَاجِدًا فَيُجَافِي يَدَيْهِ عَن جَنْبَيْهِ وَيفتح أَصَابِعَ رِجْلَيْهِ ثُمَّ يَرْفَعُ رَأْسَهُ وَيُثْنِي رِجْلَهُ الْيُسْرَى فَيَقْعُدُ عَلَيْهَا ثُمَّ يَعْتَدِلُ حَتَّى يَرْجِعَ كل عظم إِلَى مَوْضِعِهِ مُعْتَدِلًا ثُمَّ يَسْجُدُ ثُمَّ يَقُولُ: «اللَّهُ أَكْبَرُ» وَيَرْفَعُ وَيَثْنِي رِجْلَهُ الْيُسْرَى فَيَقْعُدُ عَلَيْهَا ثُمَّ يَعْتَدِلُ حَتَّى يَرْجِعَ كُلُّ عَظْمٍ إِلَى مَوْضِعِهِ ثُمَّ يَنْهَضُ ثُمَّ يَصْنَعُ فِي الرَّكْعَةِ الثَّانِيَةِ مِثْلَ ذَلِكَ ثُمَّ إِذَا قَامَ مِنَ الرَّكْعَتَيْنِ كَبَّرَ وَرَفَعَ يَدَيْهِ حَتَّى يُحَاذِيَ بِهِمَا مَنْكِبَيْهِ كَمَا كَبَّرَ عِنْدَ افْتِتَاحِ الصَّلَاةِ ثُمَّ يَصْنَعُ ذَلِكَ فِي بَقِيَّةِ صَلَاتِهِ حَتَّى إِذَا كَانَتِ السَّجْدَةُ الَّتِي فِيهَا التَّسْلِيمُ أَخَّرَ رِجْلَهُ الْيُسْرَى وَقَعَدَ مُتَوَرِّكًا عَلَى شِقِّهِ الْأَيْسَرِ ثُمَّ سَلَّمَ. قَالُوا: صَدَقْتَ هَكَذَا كَانَ يُصَلِّي. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد والدارمي وَرَوَى التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ مَعْنَاهُ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ

وَفِي رِوَايَةٍ لِأَبِي دَاوُدَ مِنْ حَدِيثِ أَبِي حُمَيْدٍ: ثُمَّ رَكَعَ فَوَضَعَ يَدَيْهِ عَلَى رُكْبَتَيْهِ كَأَنَّهُ قَابِضٌ عَلَيْهِمَا وَوَتَّرَ يَدَيْهِ فَنَحَّاهُمَا عَنْ جَنْبَيْهِ وَقَالَ: ثُمَّ سَجَدَ فَأَمْكَنَ أَنْفَهُ وَجَبْهَتَهُ الْأَرْضَ وَنَحَّى يَدَيْهِ عَنْ جَنْبَيْهِ وَوَضَعَ كَفَّيْهِ حَذْوَ مَنْكِبَيْهِ وَفَرَّجَ بَيْنَ فَخِذَيْهِ غَيْرَ حَامِلٍ بَطْنَهُ عَلَى شَيْءٍ مِنْ فَخِذَيْهِ حَتَّى فَرَغَ ثُمَّ جَلَسَ فَافْتَرَشَ رِجْلَهُ الْيُسْرَى وَأَقْبَلَ بِصَدْرِ الْيُمْنَى عَلَى قِبْلَتِهِ وَوَضَعَ كَفَّهُ الْيُمْنَى عَلَى رُكْبَتِهِ الْيُمْنَى وَكَفَّهُ الْيُسْرَى عَلَى رُكْبَتِهِ الْيُسْرَى وَأَشَارَ بِأُصْبُعِهِ يَعْنِي السَّبَّابَةَ. وَفِي أُخْرَى لَهُ: وَإِذَا قَعَدَ فِي الرَّكْعَتَيْنِ قَعَدَ عَلَى بَطْنِ قَدَمِهِ الْيُسْرَى وَنَصَبَ الْيُمْنَى وَإِذَا كَانَ فِي الرَّابِعَةِ أَفْضَى بِوَرِكِهِ الْيُسْرَى إِلَى الْأَرْضِ وَأَخْرَجَ قَدَمَيْهِ مِنْ نَاحِيَةٍ وَاحِدَة
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান