আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ
৪৯- নবীজী সাঃ ও সাহাবা রাঃ ; মর্যাদা ও বিবিধ ফাযায়েল
হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ৩৭৯২
২১১৮. আনসারদের সম্পর্কে নবী করীম (ﷺ)- এর উক্তিঃ তোমরা ধৈর্যধারণ করবে অবশেষে আমার সঙ্গে হাওযে কাউসারের নিকট সাক্ষাত করবে। এ হাদীসটি আব্দুল্লাহ ইবনে যায়দ (রাযিঃ) নবী কারীম (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেছেন
৩৫২১। মুহাম্মাদ ইবনে বাশশার (রাহঃ) .... উসায়দ ইবনে হুযায়র (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, একজন আনসারী বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ, আপনি কি আমাকে অমুকের ন্যায় দায়িত্বে নিয়োজিত করবেন না? তিনি (রাসূলুল্লাহ (ﷺ)) বললেন, তোমরা আমার ওফাতের পর অপরকে অগ্রাধিকার দেওয়া দেখতে পাবে, তখন তোমরা ধৈর্যধারণ করবে অবশেষে আমার সাথে সাক্ষাত হবে হাউযে কাউসারে।
মুহাম্মাদ ইবনে বাশশার (রাহঃ) .... হিশাম (রাহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনে মালেক (রাযিঃ) থেকে শুনেছি, তিনি বলেন, (রাসূলুল্লাহ (ﷺ)) বললেন, তোমরা আমার ওফাতের পর অপরকে অগ্রাধিকার দেওয়া দেখতে পাবে, তখন তোমরা ধৈর্যধারণ করবে অবশেষে আমার সাথে সাক্ষাত করবে এবং তোমাদের সাথে সাক্ষাতের স্থান হল হাউযে কাউসার।
মুহাম্মাদ ইবনে বাশশার (রাহঃ) .... হিশাম (রাহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনে মালেক (রাযিঃ) থেকে শুনেছি, তিনি বলেন, (রাসূলুল্লাহ (ﷺ)) বললেন, তোমরা আমার ওফাতের পর অপরকে অগ্রাধিকার দেওয়া দেখতে পাবে, তখন তোমরা ধৈর্যধারণ করবে অবশেষে আমার সাথে সাক্ষাত করবে এবং তোমাদের সাথে সাক্ষাতের স্থান হল হাউযে কাউসার।
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছে জনৈক আনসারী সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে সরকারি কোনও পদ চেয়েছিলেন। সেই সাহাবী কে, তাঁর নাম এখানে বলা হয়নি। কেউ বলেন, হযরত উসায়দ রাযি. নিজেই। অন্যান্য হাদীছে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কারও পক্ষ থেকে পদ চাওয়া পসন্দ করতেন না। তিনি বলতেন, যারা কোনও পদে নিযুক্ত হতে চায়, আমরা তাদের সেই পদে নিযুক্ত করি না। বস্তুত রাষ্ট্রীয় পদ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। সে পদের দায়িত্ব যথাযথভাবে আদায় করতে না পারলে আখিরাতে কঠিন জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে। এ কারণেই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত মিকদাম রাযি.-কে লক্ষ্য করে বলেছিলেন, হে মিকদাম! তুমি যদি আমীর, কাযী ও গোত্রীয় প্রতিনিধি না হওয়া অবস্থায় মারা যেতে পার, তবে সফলকাম হয়ে গেলে। অবশ্য কেউ যদি দায়িত্ব না চায় এবং তার উপর তা চাপিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে সাহায্য লাভ হয়ে থাকে। তাই দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়া হলে তা গ্রহণ করতে বাধা নেই। যাহোক যখন আনসারী ব্যক্তি দায়িত্ব চাইলেন, তখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জবাবে বললেন, আমার পর তোমরা অচিরেই দেখতে পাবে তোমাদের উপর (অন্যায়ভাবে) অন্যদের প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। তখন ধৈর্যধারণ করো।
কাউকে রাষ্ট্রীয় কোনও পদে নিযুক্ত না করার একটা কারণ তো এই হতে পারে যে, সেই ব্যক্তি ওই পদ প্রার্থনা করেছে। আর প্রার্থনাকারীকে পদে নিযুক্ত না করাই ইসলামের নীতি, যেমন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ক্ষেত্রে পদ প্রদান করেননি। আরেকটা কারণ ক্ষমতাসীনদের অন্যায় পক্ষপাত। নিজ পক্ষীয় লোক না হওয়ার কারণে তারা প্রকৃত হকদারকে বঞ্চিত করে। পক্ষের লোক অনুপযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও তাকে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত করে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সাহাবীকে সে ব্যাপারে সান্ত্বনা দান করলেন। তিনি হয়তো বোঝাচ্ছিলেন, আমি তো তোমাকে নিয়োগ দান করছি না তুমি চাওয়ার কারণে। কিন্তু একটা সময় আসবে, হকদার হওয়া সত্ত্বেও তোমাদেরকে হক থেকে বঞ্চিত করা হবে। বঞ্চিত করা হলেও তোমরা আমীরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে না। সবর অবলম্বন করবে এবং যথারীতি আমীরের আনুগত্য করে যাবে। তা করতে পারলে আমার সংগে হাউযে কাউসারে সাক্ষাত লাভ করতে পারবে।
বোঝা গেল, সরকারের পক্ষ থেকে প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে ধৈর্যধারণ করতে পারলে তার পুরস্কার হচ্ছে আখিরাতে হাওযে কাউসারে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাক্ষাতলাভ এবং তাঁর হাতে হাওযে কাউসারের পানি পান করতে পারা। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে সেই সৌভাগ্য দান করুন।
হাওযে কাউসার
‘হাওযে কাউসার’ আখিরাতের একটি বিশাল জলাশয়ের নাম। তার দৈর্ঘ্য উদয়াচল থেকে অস্তাচলের দূরত্ব পরিমাণ। তার পানি দুধের চেয়ে সাদা, মধুর চেয়ে মিষ্ট। বিভিন্ন হাদীছে হাওযে কাউসারের বিভিন্ন অবস্থা বর্ণিত হয়েছে। নিচে কয়েকটি হাদীছ উল্লেখ করা গেল।
ইমাম মুসলিম রহ. হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন। হঠাৎ তাঁর কিছুটা তন্দ্রাভাব দেখা দেয়। তারপর তিনি মুচকি হাসি দিয়ে মাথা তুললেন। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি হাসছেন কেন? তিনি বললেন, এইমাত্র আমার প্রতি একটি সূরা নাযিল হয়েছে। তারপর তিনি বিসমিল্লাহর সাথে সূরা কাউসার পাঠ করলেন। তারপর বললেন, তোমরা কি জান কাউসার কী? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তিনি বললেন, এটা একটা নহর। আমার প্রতিপালক আমাকে দেবেন বলে ওয়াদা করেছেন। এর কল্যাণ প্রভূত।কিয়ামতের দিন এ হাওযের তীরে আমার উম্মত উপস্থিত হবে। এর পানপাত্র আকাশের তারকারাজির মত (অসংখ্য হবে)। কোনও কোনও বান্দাকে এর কাছে আসতে বাধা দেওয়া হবে। আমি বলব, হে আমার রব্ব্! এরা তো আমার উম্মত। তিনি বলবেন, আপনি জানেন না। আপনার পর এরা কী সব কাণ্ড করেছে।
বুখারী ও মুসলিম শরীফে হযরত আনাস রাযি. সূত্রে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
دَخَلْتُ الْجَنَّةَ ، فَإِذَا أَنَا بِنَهْرٍ حَافَتَاهُ خِيَامُ اللُّؤْلُؤِ ، فَضَرَبْتُ بِيَدِي إِلَى مَا يَجْرِي فِيهِ الْمَاءُ ، فَإِذَا مِسْكٌ أَذْفَرُ ، قُلْتُ مَا هَذَا يَا جِبْرِيلُ قَالَ هَذَا الْكَوْثَرُ الَّذِي أَعْطَاكَهُ اللَّهُ
‘আমি জান্নাতে প্রবেশ করলাম। সেখানে একটি নহর দেখতে পেলাম, যার দু'তীরে মণিমুক্তার ছাউনী। আমি তার প্রবাহে হাত রাখলাম। দেখলাম তা খাঁটি মিস্ক। আমি বললাম, হে জিবরাঈল এটা কী? তিনি বললেন, এটাই কাউসার, যা আল্লাহ আপনাকে দান করেছেন।”
তিরমিযী শরীফে হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
هُوَ أَشَدُّ بَيَاضًا مِنَ اللَّبَنِ، وَأَحْلَى مِنَ العَسَلِ، فِيهِ طُيُورٌ أَعْنَاقُهَا كَأَعْنَاقِ الجُزُرِ، قَالَ عُمَرُ رَضِيَ اللهُ عَنهُ: يَا رَسُولَ اللهِ، إِنَّهَا لَنَاعِمَةٌ، قَالَ: آكِلُهَا أَنْعَمُ مِنْهَا
‘তা দুধের চেয়েও সাদা, মধুর চেয়েও মিষ্টি। তাতে উটের গলার মত গলাবিশিষ্ট পাখি আছে। একথা শুনে হযরত উমর রাযি. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তা তো ভারী উপভোগের হবে। তিনি বললেন, যারা তা খাবে, তারা অনেক বেশি সুখী হবে।
হাওযে কাউসার সংক্রান্ত হাদীছ প্রচুর। হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি., হযরত ‘উমর ফারূক রাযি. হযরত উছমান গনী রাযি. ও হযরত আলী রাযি.-সহ পঞ্চাশেরও বেশি সংখ্যক সাহাবী থেকে হাওযে কাউসারের কথা বর্ণিত আছে। ইমাম সুয়ূতী রহ ‘বুদুরুস-সাফিরা' গ্রন্থে এ সম্পর্কিত প্রায় সত্তরটি হাদীছ বর্ণনা করেছেন।
এ বরকতময় হাওয থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতে যারা পানি পান করবে, আল্লাহ তা'আলা নিজ মেহেরবানীতে আমাদেরকেও তাদের মধ্যে শামিল রাখুন- আমীন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. রাষ্ট্রীয় কোনও দায়িত্বপূর্ণ পদ প্রার্থনা করা পসন্দনীয় নয়। তা থেকে বিরত থাকা উচিত।
খ. নিজ স্বার্থহানিতে ধৈর্যধারণ হাওযে কাউসারের পানি পানের সৌভাগ্য লাভ হওয়ার একটি বড় উপায়।
গ. হাওযে কাউসার সত্য। তাতে বিশ্বাস রাখা উচিত। আখিরাতে তার পানি পান করতে পারা অনেক বড় সৌভাগ্যের ব্যাপার। সেই সৌভাগ্য তারই নসিব হবে, যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত অনুযায়ী জীবনযাপন করবে।
কাউকে রাষ্ট্রীয় কোনও পদে নিযুক্ত না করার একটা কারণ তো এই হতে পারে যে, সেই ব্যক্তি ওই পদ প্রার্থনা করেছে। আর প্রার্থনাকারীকে পদে নিযুক্ত না করাই ইসলামের নীতি, যেমন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ক্ষেত্রে পদ প্রদান করেননি। আরেকটা কারণ ক্ষমতাসীনদের অন্যায় পক্ষপাত। নিজ পক্ষীয় লোক না হওয়ার কারণে তারা প্রকৃত হকদারকে বঞ্চিত করে। পক্ষের লোক অনুপযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও তাকে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত করে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সাহাবীকে সে ব্যাপারে সান্ত্বনা দান করলেন। তিনি হয়তো বোঝাচ্ছিলেন, আমি তো তোমাকে নিয়োগ দান করছি না তুমি চাওয়ার কারণে। কিন্তু একটা সময় আসবে, হকদার হওয়া সত্ত্বেও তোমাদেরকে হক থেকে বঞ্চিত করা হবে। বঞ্চিত করা হলেও তোমরা আমীরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে না। সবর অবলম্বন করবে এবং যথারীতি আমীরের আনুগত্য করে যাবে। তা করতে পারলে আমার সংগে হাউযে কাউসারে সাক্ষাত লাভ করতে পারবে।
বোঝা গেল, সরকারের পক্ষ থেকে প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে ধৈর্যধারণ করতে পারলে তার পুরস্কার হচ্ছে আখিরাতে হাওযে কাউসারে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাক্ষাতলাভ এবং তাঁর হাতে হাওযে কাউসারের পানি পান করতে পারা। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে সেই সৌভাগ্য দান করুন।
হাওযে কাউসার
‘হাওযে কাউসার’ আখিরাতের একটি বিশাল জলাশয়ের নাম। তার দৈর্ঘ্য উদয়াচল থেকে অস্তাচলের দূরত্ব পরিমাণ। তার পানি দুধের চেয়ে সাদা, মধুর চেয়ে মিষ্ট। বিভিন্ন হাদীছে হাওযে কাউসারের বিভিন্ন অবস্থা বর্ণিত হয়েছে। নিচে কয়েকটি হাদীছ উল্লেখ করা গেল।
ইমাম মুসলিম রহ. হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন। হঠাৎ তাঁর কিছুটা তন্দ্রাভাব দেখা দেয়। তারপর তিনি মুচকি হাসি দিয়ে মাথা তুললেন। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি হাসছেন কেন? তিনি বললেন, এইমাত্র আমার প্রতি একটি সূরা নাযিল হয়েছে। তারপর তিনি বিসমিল্লাহর সাথে সূরা কাউসার পাঠ করলেন। তারপর বললেন, তোমরা কি জান কাউসার কী? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তিনি বললেন, এটা একটা নহর। আমার প্রতিপালক আমাকে দেবেন বলে ওয়াদা করেছেন। এর কল্যাণ প্রভূত।কিয়ামতের দিন এ হাওযের তীরে আমার উম্মত উপস্থিত হবে। এর পানপাত্র আকাশের তারকারাজির মত (অসংখ্য হবে)। কোনও কোনও বান্দাকে এর কাছে আসতে বাধা দেওয়া হবে। আমি বলব, হে আমার রব্ব্! এরা তো আমার উম্মত। তিনি বলবেন, আপনি জানেন না। আপনার পর এরা কী সব কাণ্ড করেছে।
বুখারী ও মুসলিম শরীফে হযরত আনাস রাযি. সূত্রে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
دَخَلْتُ الْجَنَّةَ ، فَإِذَا أَنَا بِنَهْرٍ حَافَتَاهُ خِيَامُ اللُّؤْلُؤِ ، فَضَرَبْتُ بِيَدِي إِلَى مَا يَجْرِي فِيهِ الْمَاءُ ، فَإِذَا مِسْكٌ أَذْفَرُ ، قُلْتُ مَا هَذَا يَا جِبْرِيلُ قَالَ هَذَا الْكَوْثَرُ الَّذِي أَعْطَاكَهُ اللَّهُ
‘আমি জান্নাতে প্রবেশ করলাম। সেখানে একটি নহর দেখতে পেলাম, যার দু'তীরে মণিমুক্তার ছাউনী। আমি তার প্রবাহে হাত রাখলাম। দেখলাম তা খাঁটি মিস্ক। আমি বললাম, হে জিবরাঈল এটা কী? তিনি বললেন, এটাই কাউসার, যা আল্লাহ আপনাকে দান করেছেন।”
তিরমিযী শরীফে হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
هُوَ أَشَدُّ بَيَاضًا مِنَ اللَّبَنِ، وَأَحْلَى مِنَ العَسَلِ، فِيهِ طُيُورٌ أَعْنَاقُهَا كَأَعْنَاقِ الجُزُرِ، قَالَ عُمَرُ رَضِيَ اللهُ عَنهُ: يَا رَسُولَ اللهِ، إِنَّهَا لَنَاعِمَةٌ، قَالَ: آكِلُهَا أَنْعَمُ مِنْهَا
‘তা দুধের চেয়েও সাদা, মধুর চেয়েও মিষ্টি। তাতে উটের গলার মত গলাবিশিষ্ট পাখি আছে। একথা শুনে হযরত উমর রাযি. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তা তো ভারী উপভোগের হবে। তিনি বললেন, যারা তা খাবে, তারা অনেক বেশি সুখী হবে।
হাওযে কাউসার সংক্রান্ত হাদীছ প্রচুর। হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি., হযরত ‘উমর ফারূক রাযি. হযরত উছমান গনী রাযি. ও হযরত আলী রাযি.-সহ পঞ্চাশেরও বেশি সংখ্যক সাহাবী থেকে হাওযে কাউসারের কথা বর্ণিত আছে। ইমাম সুয়ূতী রহ ‘বুদুরুস-সাফিরা' গ্রন্থে এ সম্পর্কিত প্রায় সত্তরটি হাদীছ বর্ণনা করেছেন।
এ বরকতময় হাওয থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতে যারা পানি পান করবে, আল্লাহ তা'আলা নিজ মেহেরবানীতে আমাদেরকেও তাদের মধ্যে শামিল রাখুন- আমীন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. রাষ্ট্রীয় কোনও দায়িত্বপূর্ণ পদ প্রার্থনা করা পসন্দনীয় নয়। তা থেকে বিরত থাকা উচিত।
খ. নিজ স্বার্থহানিতে ধৈর্যধারণ হাওযে কাউসারের পানি পানের সৌভাগ্য লাভ হওয়ার একটি বড় উপায়।
গ. হাওযে কাউসার সত্য। তাতে বিশ্বাস রাখা উচিত। আখিরাতে তার পানি পান করতে পারা অনেক বড় সৌভাগ্যের ব্যাপার। সেই সৌভাগ্য তারই নসিব হবে, যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত অনুযায়ী জীবনযাপন করবে।


বর্ণনাকারী: