মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

২- ঈমানের অধ্যায়

হাদীস নং: ৩৯
তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৩৯। হযরত আবু হুরায়রাহ (রাযিঃ) বলেন, একদা আমরা হযরত আবু বকর ও উমর (রাযিঃ) সহ একদল লোক রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর চতুষ্পার্শ্বে বসেছিলাম। এমন সময় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের মধ্য হতে উঠে চলে গেলেন এবং ফিরে আসতে এত দেরি করলেন যে, আমরা শঙ্কাগ্রস্ত হয়ে পড়লাম, না জানি আমাদের অনুপস্থিতিতে তিনি কোন বিপদে পড়লেন? এতে আমরা সবাই ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠে দাঁড়ালাম এবং তাঁর খোঁজে বের হলাম। অবশ্য সর্বপ্রথম আমিই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম এবং আমি তার খোঁজে বের হয়ে পড়লাম। এমনিভাবে আমি বনি নাজ্জার গোত্রের জনৈক আনসারীর বাগানের প্রাচীরের নিকট এলাম। আমি তার চতুর্দিকে ঘুরে দেখলাম কোন দরজা আছে কি না, কিন্তু পেলাম না। এক জায়গায় হঠাৎ দেখলাম বাইরের একটা কূপ থেকে একটি ছোট নালা বাগানের ভিতরে প্রবেশ করেছে। শিয়াল যেভাবে আমি নিজেকে সংকুচিত করে তাতে প্রবেশ করলাম এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট গেলাম। তিনি বললেন, আবু হুরায়রাহ না-কি? বললাম হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল। তিনি বললেন, কি হাল তোমার? আমি বললাম, আপনি আমাদের মাঝে ছিলেন এবং উঠে এলেন, কিন্তু এত বিলম্ব করলেন যে, আমরা ভয় পেলাম। আল্লাহ না করুক, আপনি আমাদের অনুপস্থিতিতে কোন বিপদে পড়লেন কি না? এ জন্য আমরা সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়লাম এবং আমিই সর্বপ্রথম ব্যস্ত হয়েছিলাম। অবশেষে আপনার খোঁজে এ বাগানের কাছে আসি এবং আমার দেহ শৃগালের ন্যায় গুটিয়ে এতে প্রবেশ করি। আর বাকী সব লোক আমার পেছনে রয়েছে। অতঃপর হুযুর (ﷺ) তাঁর জুতা জোড়া আমাকে দিয়ে বললেন, হে আবু হুরায়রাহ! আমার জুতা দু'খানা নিয়ে যাও, আর বাগানের বাইরে যাকে পাবে যে স্থির বিশ্বাসে 'আল্লাহ ছাড়া কোন মা'বুদ নেই' বলে সাক্ষ্য দেয়, তাকে বেহেশতের সুসংবাদ দিবে। আবু হুরায়রাহ (রাযিঃ) বলেন, বাইরে আসতেই সর্বপ্রথম হযরত উমর (রাযিঃ)-এর সাথে আমার দেখা হল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এ জুতা জোড়া কেন? বললাম, এ জুতা দু'খানা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর। এ জুতা জোড়াসহ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে পাঠিয়েছেন, যার সাথে আমার সাক্ষাৎ হবে, সে যদি স্থির বিশ্বাসের সাথে সাক্ষ্য দেয়, “আল্লাহ ছাড়া কোন মা'বুদ নেই” আমি তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দেব। এ কথা শুনার সাথে সাথে হযরত উমর (রাযিঃ) আমার বুকে এমন জোরে আঘাত করলেন যে, আমি চিৎ হয়ে পড়ে গেলাম। তারপর বললেন, হে আবু হুরায়রাহ! ফিরে যাও। আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কাছে ফিরে গেলাম এবং কেঁদে ফেললাম। দেখলাম, হযরত উমর (রাযিঃ) আমার ঘাড়ে সওয়ার হয়ে আছেন এবং আমার পেছনে পেছনে এসে উপস্থিত হয়েছেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তখন আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আবু হুরায়রাহ! তোমার কি হয়েছে? বললাম, আমি উমর (রাযিঃ)-এর সাক্ষাৎ পাই এবং আপনি আমাকে যে জন্য পাঠিয়েছেন সে কথা তাঁকে বলি। তখন তিনি আমার বুকে এত জোরে আঘাত করেন যে, আমি চিৎ হয়ে পড়ে যাই। তিনি আমাকে বলেন, ফিরে যাও। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, হে ওমর, তুমি কেন এরূপ করলে? উমর (রাযিঃ) বললেন, আমার মাতা-পিতা আপনার জন্য কোরবান হোক! আপনি কি আবু হুরায়রাহ (রাযিঃ)-কে আপনার জুতাদ্বয় দিয়ে পাঠিয়েছিলেন যে যাকে সে পাবে এমতাবস্থায় যে, স্থির অন্তরে যে সাক্ষ্য দেয়, আল্লাহ ছাড়া কোন মা'বুদ নেই, তাকে বেহেশতের সুসংবাদ দিতে? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, হ্যাঁ। উমর (রাযিঃ) বললেন, এ কাজ করবেন না। কেননা আমার ভয় হয় তা হলে লোকজন এর উপর তাওয়াক্কুল করে বসবে; বরং তাদের আমল করতে দিন। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আচ্ছা ঠিক আছে, তাদের আমল করতে দাও। (মুসলিম)
الفصل الثالث
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: كُنَّا قُعُودًا حَوْلَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَعنا أَبُو بَكْرٍ وَعُمَرُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا فِي نَفَرٍ فَقَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ بَيْنَ أَظْهُرِنَا فَأَبْطَأَ عَلَيْنَا وَخَشِيَنَا أَنْ يُقْتَطَعَ دُونَنَا وَفَزِعْنَا فَقُمْنَا فَكُنْتُ أَوَّلَ مَنْ فَزِعَ فَخَرَجْتُ أَبْتَغِي رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى أَتَيْتُ حَائِطًا لِلْأَنْصَارِ لِبَنِي النَّجَّارِ فَدُرْتُ بِهِ هَلْ أَجِدُ لَهُ بَابًا فَلَمْ أَجِدْ فَإِذَا رَبِيعٌ يَدْخُلُ فِي جَوْفِ حَائِطٍ مِنْ بِئْرٍ خَارِجَةٍ وَالرَّبِيعُ الْجَدْوَلُ فاحتفزت كَمَا يحتفز الثَّعْلَب فَدَخَلْتُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ فَقُلْتُ نَعَمْ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ مَا شَأْنُكَ قُلْتُ كُنْتَ بَيْنَ أَظْهُرِنَا فَقُمْتَ فَأَبْطَأْتَ عَلَيْنَا فَخَشِينَا أَنْ تُقْتَطَعَ دُونَنَا فَفَزِعْنَا فَكُنْتُ أَوَّلَ مَنْ فَزِعَ فَأَتَيْتُ هَذَا الْحَائِطَ فَاحْتَفَزْتُ كَمَا يَحْتَفِزُ الثَّعْلَبُ وَهَؤُلَاء النَّاس ورائي فَقَالَ يَا أَبَا هُرَيْرَة وَأَعْطَانِي نَعْلَيْه قَالَ اذْهَبْ بنعلي هَاتين فَمن لقِيت من وَرَاء هَذَا الْحَائِط يَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ مُسْتَيْقِنًا بِهَا قَلْبُهُ فَبَشِّرْهُ بِالْجَنَّةِ فَكَانَ أَوَّلُ مَنْ لَقِيتُ عُمَرَ فَقَالَ مَا هَاتَانِ النَّعْلَانِ يَا أَبَا هُرَيْرَة فَقلت هَاتَانِ نَعْلَا رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعَثَنِي بِهِمَا مَنْ لَقِيتُ يَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ مُسْتَيْقِنًا بِهَا قَلْبُهُ بَشرته بِالْجنَّةِ فَضرب عمر بِيَدِهِ بَيْنَ ثَدْيَيَّ فَخَرَرْتُ لِاسْتِي فَقَالَ ارْجِعْ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ فَرَجَعْتُ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فأجهشت بكاء وركبني عمر فَإِذا هُوَ على أثري فَقَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا لَك يَا أَبَا هُرَيْرَة قلت لقِيت عمر فَأَخْبَرته بِالَّذِي بعثتني بِهِ فَضرب بَين ثديي فَخَرَرْت لاستي قَالَ ارْجع فَقَالَ لَهُ رَسُول الله يَا عُمَرُ مَا حَمَلَكَ عَلَى مَا فَعَلْتَ قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي أَبَعَثْتَ أَبَا هُرَيْرَةَ بِنَعْلَيْكَ مَنْ لَقِيَ يَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ مُسْتَيْقِنًا بِهَا قَلْبُهُ بَشَّرَهُ بِالْجَنَّةِ قَالَ نَعَمْ قَالَ فَلَا تَفْعَلْ فَإِنِّي أَخْشَى أَنْ يَتَّكِلَ النَّاسُ عَلَيْهَا فخلهم يعْملُونَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فخلهم . رَوَاهُ مُسلم

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটিতে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আবূ হুরায়রা রাযি.-কে নিজের জুতাজোড়া দিয়ে সুসংবাদ দেওয়ার জন্য পাঠান যে, যে ব্যক্তি আন্তরিক বিশ্বাসের সঙ্গে আল্লাহ ছাড়া কোনও মাবুদ নেই বলে সাক্ষ্য দেবে, সে জান্নাত লাভ করবে। এখানে কয়েকটি বিষয় লক্ষণীয়।

(ক) হযরত আবূ হুরায়রা রাযি.-কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের জুতা দিয়েছিলেন কেন? এর উত্তর হল, তাঁকে পাঠানো হচ্ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সুসংবাদ প্রচারের জন্য। মানুষের জন্য জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাতলাভের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আর কিছু নেই। এটিই মানবজীবনের পরম লক্ষ্যবস্তু। এ লক্ষ্যবস্তু হাসিল করতে হলে কালেমা পাঠ করতে হবে এবং এর উপর অটুট বিশ্বাস রাখতে হবে তো এ গুরুত্বপূর্ণ সুসংবাদ প্রচারের জন্য মানুষের কাছে সংবাদবাহীর গুরুত্ব ও বিশ্বস্ততা প্রতিষ্ঠিত হওয়া প্রয়োজন। এতে কোনও সন্দেহ নেই যে, হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. একজন বিশ্বস্ত লোক ছিলেন। সব সাহাবীই বিশ্বস্ত ছিলেন। তা সত্ত্বেও এ সংবাদটি যেহেতু অতীব গুরুত্বপূর্ণ, তাই তাঁর প্রতি মানুষের বাড়তি আস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে নিজ জুতা দিয়ে পাঠিয়েছিলেন। তখনকার আরবে এ রেওয়াজ ছিল যে, প্রেরিত ব্যক্তির প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা জন্মানোর জন্য প্রেরক তাকে নিজ জুতা দিয়ে পাঠাত।

(খ) হাদীছটিতে দেখা যাচ্ছে, কেউ 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু' অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোনও মা'বুদ নেই- এতটুকু সাক্ষ্য দিলেই সে জান্নাত লাভ করবে। এতে 'মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ' অর্থাৎ মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল- এ সাক্ষ্যের উল্লেখ নেই। অথচ আমরা জানি কারও মুমিন হওয়ার জন্য উভয় বিষয়ের সাক্ষ্য দেওয়া জরুরি। আর মুমিন ছাড়া কেউ জান্নাতে যেতে পারবে না। তাহলে এ হাদীছে কালেমার দ্বিতীয় অংশের উল্লেখ নেই কেন?
এর উত্তর হল, 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু'-এর কথা বললে 'মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ'-এর কথা এমনিই এসে যায়। কেননা দুটি মিলে পূর্ণ কালেমা। জান্নাতে যেতে চাইলে পূর্ণ কালেমাই বলতে হবে। তবে ঈমানের সুফল বর্ণনার ক্ষেত্রে সবসময় পূর্ণ কালেমার কথা বলা জরুরি হয় না। প্রথম অংশ বলাই যথেষ্ট। যারা ঈমান সম্পর্কে জ্ঞাত তারা বুঝে নেয় যে, প্রথম অংশ বলার অর্থ এ নয় যে, ঈমানের জন্য বা জান্নাতলাভের জন্য অতটুকুই যথেষ্ট। বরং এতটুকু বলে পূর্ণ ঈমান বা কালেমার উভয় অংশ বোঝানো উদ্দেশ্য। সুতরাং ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ নেই। ভুল বোঝাবুঝি যাতে দেখা না দেয়, সেজন্য অন্যান্য হাদীছও সামনে রাখা দরকার। কেননা কোনও কোনও হাদীছে পূর্ণ কালেমার কথাই উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকেই বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
و الذي نفْسُ محمدٍ بيدِهِ ، لا يسمعُ بي أحدٌ من هذه الأمةِ ، لا يهودِيٌّ ، و لا نصرانِيٌّ ، ثُمَّ يموتُ ولم يؤمِنْ بالذي أُرْسِلْتُ به ، إلَّا كان من أصحابِ النارِ
‘যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ তাঁর শপথ! এ মানবগোষ্ঠীর যে-কোনও ইহুদি বা খ্রিষ্টান আমার সম্পর্কে শুনবে, তা সত্ত্বেও এ অবস্থায় মারা যাবে যে, আমি যা সহ প্রেরিত হয়েছি তার উপর ঈমান আনেনি, সে অবশ্যই জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।'(সহীহ মুসলিম: ১৫৩; মুসনাদে আহমাদ: ৮১৮৮; মুসনাদে আবু দাউদ তয়ালিসী: ৫১১; মুসনাদুল বাযযার: ৩০৫০; সহীহ ইবনে হিব্বান: ৪৮৮০; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ৫৬)

হযরত মু'আয ইবন জাবাল রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
مَا مِنْ أَحَدٍ يَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، صِدْقًا مِنْ قَلْبِهِ، إِلَّا حَرَّمَهُ اللهُ عَلَى النَّارِ.
‘যে-কেউ খাঁটিমনে সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোনও মা'বুদ নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল, আল্লাহ অবশ্যই তার জন্য জাহান্নাম হারাম করবেন।’(সহীহ বুখারী: ১২৮; সহীহ মুসলিম: ৩২; মুসনাদুল হুমায়দী: ৩৬৯; মুসনাদে আহমাদ : ২২০৬০; সহীহ ইবনে হিব্বান: ২০০; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ৪৯)

(গ) প্রশ্ন হতে পারে, এ হাদীছে কেবল কালেমা পাঠ করলেই জান্নাত লাভ হবে, তবে কি শরী'আতের অন্যান্য আদেশ-নিষেধ মানার কোনও প্রয়োজন নেই?
এর উত্তর হল, কালেমা পাঠ দ্বারা মূলত জান্নাতলাভের উপযুক্ততা প্রমাণিত হয়। এক ব্যক্তি যত নেক আমলই করুক, সে যদি কালেমার উপর বিশ্বাসী না হয়, তবে সে কিছুতেই জান্নাত পাবে না। পক্ষান্তরে কেউ যদি কালেমার উপর বিশ্বাসী অবস্থায় মারা যায়, অপরদিকে সে কোনও পাপকর্মও করে, তবে সে অবশ্যই জান্নাত লাভ করবে। হাঁ, পাপকর্মের কারণে প্রথমে তাকে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে। তারপর সে জান্নাতে যাবে। সুতরাং কেউ যদি শুরুতেই জান্নাতে যেতে চায় এবং কামনা করে জাহান্নামের আগুন যাতে তাকে কিছুতেই স্পর্শ করতে না পারে, তবে কালেমায় বিশ্বাসের সঙ্গে তাকে পূর্ণ শরী'আতের উপর আমল করতে হবে। এ বিষয়টি কুরআনের বিভিন্ন আয়াত ও বহু হাদীছে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। যেমন ইরশাদ হয়েছে-
وَمَنْ يَعْمَلْ مِنَ الصَّالِحَاتِ مِنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَأُولَئِكَ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ وَلَا يُظْلَمُونَ نَقِيرًا (124)
‘আর যে ব্যক্তি সৎকাজ করবে, সে পুরুষ হোক বা নারী, যদি সে মুমিন হয়ে থাকে, তবে এরূপ লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি সামান্য পরিমাণও জুলুম করা হবে না।’(সূরা নিসা (৪), আয়াত ১২৪)

হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
كُلُّ أُمَّتِي يَدخُلُونَ الجَنَّةَ إلاَّ مَنْ أبَى قيلَ : وَمَنْ يَأبَى يَا رَسُولَ اللهِ ؟ قَالَ مَنْ أَطَاعَنِي دَخَلَ الجَنَّةَ وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ أبَى
আমার উম্মতের সকলেই জান্নাতে প্রবেশ করবে। তবে যারা অস্বীকার করে তারা নয়। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কে অস্বীকার করে? তিনি বললেন, যে আমার আনুগত্য করে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে আর যে আমার অবাধ্যতা করে সে-ই অস্বীকার করে। (সহীহ বুখারী: ৭২৮০; মুসনাদে আহমাদ: ৮৭১২; সহীহ ইবনে হিব্বান: ১৭)

তাছাড়া বিভিন্ন হাদীছে ব্যভিচার করা, হারাম খাওয়া, অহংকার করা, আত্মীয়তা ছিন্ন করা, চোগলখোরি করা, অপবাদ দেওয়া প্রভৃতি গুনাহ সম্পর্কে সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছে যে, এসব করলে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে। সুতরাং শুরুতে জান্নাত লাভ করার জন্য সমস্ত গুনাহ থেকে বিরত থাকা এবং পূর্ণ শরী'আতের অনুসরণ করা অবশ্যকর্তব্য।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. কাউকে গুরুত্বপূর্ণ কোনও সংবাদ জানানোর জন্য পাঠানো হলে তার প্রতি শ্রোতাদের আস্থা ও বিশ্বস্ততা প্রতিষ্ঠার জন্য প্রেরকের পক্ষ থেকে কোনও ব্যবস্থাগ্রহণ বাঞ্ছনীয়।

খ. জান্নাতলাভের জন্য পূর্ণ কালেমায় বিশ্বাস অপরিহার্য শর্ত।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
মিশকাতুল মাসাবীহ - হাদীস নং ৩৯ | মুসলিম বাংলা