আল-আদাবুল মুফরাদ- ইমাম বুখারী রহঃ
আল-আদাবুল মুফরাদের পরিচ্ছেদসমূহ
হাদীস নং: ১৩২৭
৬৪১- ক্রোধের সময় কি বলবে?
১৩২৭. হযরত সালমান ইব্ন মুরাদ (রাযিঃ) বলেন, একদা দুইব্যক্তি নবী করীম (ﷺ)-এর সম্মুখেই পরস্পর গালাগালিতে লিপ্ত হইল। তন্মধ্যে একজন খুব ক্রুদ্ধ হইয়া উঠিল এবং তাহার চেহারা আরক্তিম হইয়া উঠিল । নবী করীম (ﷺ) তাহার দিকে তাকাইলেন এবং বলিলেন, আমি এমন একটি কথা জানি যাহা ঐ ব্যক্তি বলিলে তাহার এই অবস্থা দূরীভূত হইয়া যাইবে। উহা হইলঃ আউযু বিল্লাহি মিনাশ্ শায়তানির রাজীম-বিতাড়িত শয়তান হইতে আমি আল্লাহ্র শরণ লইতেছি। তখন এক ব্যক্তি গিয়া ঐ ব্যক্তিকে বলিল, জান, তিনি কী বলিয়াছেন ? তিনি বলিয়াছেন : আউযুবিল্লাহি মিনাশ্ শায়তানির রাজীম। তখন সে ব্যক্তি বলিলঃ তুমি কি আমাকে পাগল পাইয়াছ নাকি ?
সালমান ইব্ন মুরাদ বলেন, আমি একদা নবী করীম (ﷺ)-এর নিকট উপবিষ্ট ছিলাম তখন দুই ব্যক্তি পরস্পরে গালাগালি করিতেছিল। তন্মধ্যে একব্যক্তির চেহারা আরক্তিম হইয়া উঠিল এবং তাহার ঘাড়ের শিরাসমূহ ফুলিয়া উঠিল। তখন নবী করীম (ﷺ) ফরমাইলেনঃ আমি এমন একটি কথা জানি যাহা বলিলে তাহার এই অবস্থা তিরোহিত হইবে। তখন উপস্থিত লোকজন ঐ ব্যক্তিকে বলিলেন, নবী করীম (ﷺ) তোমাকে আউযুবিল্লাহি মিনাশ্ শায়তানির রাজীম পড়িতে তথা বিতাড়িত শয়তান হইতে আল্লাহ্র দরবারে আশ্রয় প্রার্থনা করিতে বলিয়াছেন। তখন সে বলিলঃ আমি পাগল নাকি ?
সালমান ইব্ন মুরাদ বলেন, আমি একদা নবী করীম (ﷺ)-এর নিকট উপবিষ্ট ছিলাম তখন দুই ব্যক্তি পরস্পরে গালাগালি করিতেছিল। তন্মধ্যে একব্যক্তির চেহারা আরক্তিম হইয়া উঠিল এবং তাহার ঘাড়ের শিরাসমূহ ফুলিয়া উঠিল। তখন নবী করীম (ﷺ) ফরমাইলেনঃ আমি এমন একটি কথা জানি যাহা বলিলে তাহার এই অবস্থা তিরোহিত হইবে। তখন উপস্থিত লোকজন ঐ ব্যক্তিকে বলিলেন, নবী করীম (ﷺ) তোমাকে আউযুবিল্লাহি মিনাশ্ শায়তানির রাজীম পড়িতে তথা বিতাড়িত শয়তান হইতে আল্লাহ্র দরবারে আশ্রয় প্রার্থনা করিতে বলিয়াছেন। তখন সে বলিলঃ আমি পাগল নাকি ?
بَابُ مَا يَقُولُ إِذَا غَضِبَ
حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللهِ، قَالَ: حَدَّثَنَا أَبُو أُسَامَةَ قَالَ: سَمِعْتُ الأَعْمَشَ يَقُولُ: حَدَّثَنَا عَدِيُّ بْنُ ثَابِتٍ، عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ صُرَدٍ قَالَ: اسْتَبَّ رَجُلاَنِ عِنْدَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، فَجَعَلَ أَحَدُهُمَا يَغْضَبُ، وَيَحْمَرُّ وَجْهُهُ، فَنَظَرَ إِلَيْهِ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ: إِنِّي لَأَعْلَمُ كَلِمَةً لَوْ قَالَهَا لَذَهَبَ هَذَا عَنْهُ: أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ، فَقَامَ رَجُلٌ إِلَى ذَاكَ الرَّجُلِ فَقَالَ: تَدْرِي مَا قَالَ؟ قَالَ: قُلْ: أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ، فَقَالَ الرَّجُلُ: أَمَجْنُونًا تَرَانِي؟. حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عُثْمَانَ قِرَاءَةً، عَنْ أَبِي حَمْزَةَ، عَنِ الْأَعْمَشِ، عَنِ ابْنِ ثَابِتٍ، عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ صُرَدٍ قَالَ: كُنْتُ جَالِسًا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَرَجُلَانِ يَسْتَبَّانِ، فَأَحَدُهُمَا احْمَرَّ وَجْهُهُ، وَانْتَفَخَتْ أَوْدَاجُهُ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنِّي لَأَعْلَمُ كَلِمَةً لَوْ قَالَهَا لَذَهَبَ عَنْهُ مَا يَجِدُ» ، فَقَالُوا لَهُ: إِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «تَعَوَّذْ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ» ، قَالَ: وَهَلْ بِي مِنْ جُنُونٍ؟
হাদীসের ব্যাখ্যা:
হাদীছে দুই ব্যক্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে তারা পরস্পর গালাগালি করছিল, তাদের নাম সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায় না। প্রশ্ন হতে পারে, সাহাবী হয়েও তাঁরা এরকম অসমীচীন কাজ কেন করছিলেন? উত্তর হল, হতে পারে তাঁরা নওমুসলিম ছিলেন ও ইসলামী আদব-কায়দা তাঁরা পুরোপুরি শিখে উঠেননি। হঠাৎ করেই জীবনে আমূল পরিবর্তন হয়ে যাবে, এমনটা সকলের ক্ষেত্রে আশা করা যায় না। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহচর্যের বদৌলতে রাতারাতি পরিবর্তন অধিকাংশের জীবনেই ঘটেছিল। তবে স্বভাবগত কাঠিন্যের কারণে কারও কারও পরিবর্তনে কিছুটা সময়ও লেগেছিল, বিশেষত যারা বেদুঈন সাহাবী ছিলেন। কিছুটা সময় লাগলেও একপর্যায়ে তাদের জীবনে যে পরিবর্তন আসে, সে কারণে নিঃসন্দেহে তাঁরা কিয়ামত পর্যন্ত সমস্ত মানুষের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ হয়ে আছেন। তাঁদের আরও একটা বৈশিষ্ট্য হল প্রথমদিকে কারও কারও দ্বারা ত্রুটি-বিচ্যুতি ঘটে গেলেও সতর্ক করার পর তাওবা করতে ও নিজেদের সংশোধনে মনোযোগী হতে বিলম্ব করতেন না।
যাহোক যে দু'জনের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক হচ্ছিল, তাদের একজনের ক্রোধের মাত্রা ছিল খুব বেশি। রাগে চেহারা লাল হয়ে গিয়েছিল এবং গলার রগ ফুলে উঠেছিল। অতিরিক্ত রাগের ক্ষেত্রে অনেকেরই এমন হতে দেখা যায়। এরূপ রাগে মানুষ হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে। তখন এমন এমন কাণ্ড করে বসে, যা দ্বারা অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যায়। সেরকম ক্ষতিকর কাজ থেকে বাঁচার লক্ষ্যে আগেই রাগ সংবরণ করে ফেলা চাই। এ হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা সংবরণের উপায় শিক্ষা দিয়েছেন। তা হচ্ছে-
أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ
এর অর্থ 'আমি বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করছি।
আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করার উপদেশ দেওয়া হয়েছে এ কারণে যে, অন্তরে ক্রোধ সঞ্চারে শয়তানের বিশেষ ভূমিকা থাকে। ক্রুদ্ধ অবস্থায় হিতাহিত জ্ঞান লোপ পাওয়ার কারণে শয়তান তাকে দিয়ে তার কাঙ্ক্ষিত সব কাজ করিয়ে নিতে পারে। তাই শয়তান ক্রোধ সঞ্চারে উস্কানি দেয় এবং তা যাতে বাড়তে থাকে সেই চেষ্টা চালায়। ‘আউযুবিল্লাহ’ পাঠ বা আল্লাহর আশ্রয়গ্রহণ এমনই এক অস্ত্র, যা ধারণ করলে শয়তান পালাতে বাধ্য হয় এবং তার প্রভাব নষ্ট হয়ে যায়।
অপর এক হাদীছে রাগ নিবারণের জন্য ওযু করতে বলা হয়েছে। তার তাৎপর্য এই যে, শয়তান আগুনের সৃষ্টি। তার কারসাজিতেই ব্যক্তির অন্তরে ক্রোধের আগুন জ্বলে ওঠে। ওযূ করলে সে আগুনে পানি ঢালা হয়। ফলে রাগ নিভে যায়। তাছাড়া ওযূ করার দ্বারা ক্রোধের বিষয় থেকে ব্যক্তির সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়, যেহেতু ওযূ করতে কিছুটা সময় খরচ হয় এবং আলাদা আলাদাভাবে একেকটি অঙ্গ ধোওয়ার প্রতি মনোযোগ দিতে হয়। ততক্ষণে রাগ প্রশমিত হয়ে যায়। এছাড়াও নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রাগের সময় দাঁড়ানো থাকলে বসে পড়। বসা থাকলে শুয়ে পড়। তাতেও রাগ না দূর হলে ওযূ করে দু' রাক'আত নামায পড়। এসব ব্যবস্থা অবলম্বনের পর নিতান্ত হতভাগা ছাড়া আর কারও রাগ বাকি থাকতে পারে না।
রাগ দমনের জন্য নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এতকিছু শিক্ষা এজন্যই দিয়েছেন যে, পূর্বে যেমনটা বলা হয়েছে ক্রুদ্ধ ব্যক্তি কাণ্ডজ্ঞান শূন্য হয়ে যে-কোনও অনাকাঙ্ক্ষিত কাজ করে ফেলতে পারে, যার প্রতিকার সারা জীবনেও সম্ভব হয় না। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে হাদীছের শিক্ষা অনুযায়ী আমল করে ক্রোধ নিয়ন্ত্রণের তাওফীক দান করুন- আমীন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছেও রাগে ধৈর্যধারণের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।
খ. রাগে যেহেতু শয়তানের ভূমিকা থাকে, তাই রাগ উঠলে ‘আউযুবিল্লাহ’ পড়া উচিত।
গ. ওযূ করাও রাগ নিবারণের পক্ষে সহায়ক।
ঘ. এ হাদীছ দ্বারা ইসলামী শিক্ষার পূর্ণাঙ্গতা উপলব্ধি করা যায়। রাগ প্রশমিত করার জন্যও ইসলাম কী কার্যকরী শিক্ষা দান করেছে!
যাহোক যে দু'জনের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক হচ্ছিল, তাদের একজনের ক্রোধের মাত্রা ছিল খুব বেশি। রাগে চেহারা লাল হয়ে গিয়েছিল এবং গলার রগ ফুলে উঠেছিল। অতিরিক্ত রাগের ক্ষেত্রে অনেকেরই এমন হতে দেখা যায়। এরূপ রাগে মানুষ হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে। তখন এমন এমন কাণ্ড করে বসে, যা দ্বারা অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যায়। সেরকম ক্ষতিকর কাজ থেকে বাঁচার লক্ষ্যে আগেই রাগ সংবরণ করে ফেলা চাই। এ হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা সংবরণের উপায় শিক্ষা দিয়েছেন। তা হচ্ছে-
أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ
এর অর্থ 'আমি বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করছি।
আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করার উপদেশ দেওয়া হয়েছে এ কারণে যে, অন্তরে ক্রোধ সঞ্চারে শয়তানের বিশেষ ভূমিকা থাকে। ক্রুদ্ধ অবস্থায় হিতাহিত জ্ঞান লোপ পাওয়ার কারণে শয়তান তাকে দিয়ে তার কাঙ্ক্ষিত সব কাজ করিয়ে নিতে পারে। তাই শয়তান ক্রোধ সঞ্চারে উস্কানি দেয় এবং তা যাতে বাড়তে থাকে সেই চেষ্টা চালায়। ‘আউযুবিল্লাহ’ পাঠ বা আল্লাহর আশ্রয়গ্রহণ এমনই এক অস্ত্র, যা ধারণ করলে শয়তান পালাতে বাধ্য হয় এবং তার প্রভাব নষ্ট হয়ে যায়।
অপর এক হাদীছে রাগ নিবারণের জন্য ওযু করতে বলা হয়েছে। তার তাৎপর্য এই যে, শয়তান আগুনের সৃষ্টি। তার কারসাজিতেই ব্যক্তির অন্তরে ক্রোধের আগুন জ্বলে ওঠে। ওযূ করলে সে আগুনে পানি ঢালা হয়। ফলে রাগ নিভে যায়। তাছাড়া ওযূ করার দ্বারা ক্রোধের বিষয় থেকে ব্যক্তির সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়, যেহেতু ওযূ করতে কিছুটা সময় খরচ হয় এবং আলাদা আলাদাভাবে একেকটি অঙ্গ ধোওয়ার প্রতি মনোযোগ দিতে হয়। ততক্ষণে রাগ প্রশমিত হয়ে যায়। এছাড়াও নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রাগের সময় দাঁড়ানো থাকলে বসে পড়। বসা থাকলে শুয়ে পড়। তাতেও রাগ না দূর হলে ওযূ করে দু' রাক'আত নামায পড়। এসব ব্যবস্থা অবলম্বনের পর নিতান্ত হতভাগা ছাড়া আর কারও রাগ বাকি থাকতে পারে না।
রাগ দমনের জন্য নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এতকিছু শিক্ষা এজন্যই দিয়েছেন যে, পূর্বে যেমনটা বলা হয়েছে ক্রুদ্ধ ব্যক্তি কাণ্ডজ্ঞান শূন্য হয়ে যে-কোনও অনাকাঙ্ক্ষিত কাজ করে ফেলতে পারে, যার প্রতিকার সারা জীবনেও সম্ভব হয় না। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে হাদীছের শিক্ষা অনুযায়ী আমল করে ক্রোধ নিয়ন্ত্রণের তাওফীক দান করুন- আমীন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছেও রাগে ধৈর্যধারণের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।
খ. রাগে যেহেতু শয়তানের ভূমিকা থাকে, তাই রাগ উঠলে ‘আউযুবিল্লাহ’ পড়া উচিত।
গ. ওযূ করাও রাগ নিবারণের পক্ষে সহায়ক।
ঘ. এ হাদীছ দ্বারা ইসলামী শিক্ষার পূর্ণাঙ্গতা উপলব্ধি করা যায়। রাগ প্রশমিত করার জন্যও ইসলাম কী কার্যকরী শিক্ষা দান করেছে!
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
