আল-আদাবুল মুফরাদ- ইমাম বুখারী রহঃ

আল-আদাবুল মুফরাদের পরিচ্ছেদসমূহ

হাদীস নং: ১১৭২
৫৫৩- খাটে উপবেশন।
১১৭২. আবু রিফা'আ আদওয়ী (রাযিঃ) বলেন, একদা নবী করীম (ﷺ)-এর নিকট গিয়া উপস্থিত হইলাম। তিনি তখন খুত্‌বা দিতেছিলেন। আমি বলিলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! এক আগন্তুক দীন সম্পর্কে আপনাকে জিজ্ঞাসা করার জন্য হাজির হইয়াছে, সে তাঁহার দীন সম্পর্কে কিছুই জানে না। তিনি তখন খুত্‌বা বাদ দিয়া আমার দিকে মনোনিবেশ করিলেন। এই সময় তাঁহার জন্য একখানা চেয়ার আনা হইল, আমার ধারনা হইল উহার পাহাগুলি লৌহ নির্মিত। (অধঃস্তন রাবী হুমাইদ বলেন, আমি দেখিয়াছি উহা ছিল কাল কাঠের। অনেকটা লৌহ বলিয়া ধারনা হইত।) তিনি তাহাতে বসিলেন এবং আমাকে দ্বীনের শিক্ষা দিতে লাগিলেন, যে শিক্ষা আল্লাহ্‌ তাহাকে দান করিয়াছেন। অতঃপর আমি তাঁহার খুত্‌বা অবশিষ্ট অংশ সম্পূর্ণ করিলেন।
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ يَزِيدَ، قَالَ‏:‏ حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ الْمُغِيرَةِ، عَنْ حُمَيْدِ بْنِ هِلاَلٍ، عَنْ أَبِي رِفَاعَةَ الْعَدَوِيِّ قَالَ‏:‏ انْتَهَيْتُ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ يَخْطُبُ، فَقُلْتُ‏:‏ يَا رَسُولَ اللهِ، رَجُلٌ غَرِيبٌ جَاءَ يَسْأَلُ عَنْ دِينِهِ، لاَ يَدْرِي مَا دِينُهُ، فَأَقْبَلَ إِلَيَّ وَتَرَكَ خُطْبَتَهُ، فَأَتَى بِكُرْسِيٍّ خِلْتُ قَوَائِمَهُ حَدِيدًا، قَالَ حُمَيْدٌ‏:‏ أُرَاهُ خَشَبًا أَسْوَدَ حَسَبُهُ حَدِيدًا، فَقَعَدَ عَلَيْهِ، فَجَعَلَ يُعَلِّمُنِي مِمَّا عَلَّمَهُ اللَّهُ، ثُمَّ أَتَمَّ خُطْبَتَهُ، آخِرَهَا‏.‏

হাদীসের ব্যাখ্যা:

একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভাষণ দিচ্ছিলেন। সে ভাষণ জুমু'আর খুতবাও হতে পারে কিংবা অন্য কোনও উপলক্ষ্যে প্রদত্ত বক্তব্যও হতে পারে। যাই হোক না কেন, তাঁর বক্তৃতাদানকালে হযরত আবূ রিফা'আ রাযি. মসজিদে উপস্থিত হলেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সম্বোধন করে বললেন যে, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি একজন বহিরাগত ব্যক্তি। দীনের পরিচয় আমার জানা নেই। আমি তা শেখার জন্য আপনার কাছে এসেছি।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কথার গুরুত্ব উপলব্ধি করলেন এবং তাঁর আগ্রহের মূল্যায়ন করলেন। সুতরাং তিনি খুতবা বন্ধ করে দিলেন। তারপর মিম্বর থেকে নেমে আবু রিফা'আ রাযি.-এর কাছে চলে গেলেন। সেখানে একটি চেয়ার নিয়ে আসা হল। তিনি তাতে বসে তাঁকে শিক্ষাদান করলেন। হযরত আবু রিফা'আ রাযি. বলেন-
وَجَعَلَ يُعَلِّمُنِي مِمَّا عَلَّمَهُ اللَّهُ (এবং আল্লাহ তা'আলা তাঁকে যা-কিছু শিখিয়েছেন তা থেকে আমাকে শিক্ষা দিতে লাগলেন)। বলাবাহুল্য আল্লাহ তা'আলা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যা-কিছু শিক্ষা দিয়েছিলেন তার সবটা ছিল দীন সম্পর্কিত। অর্থাৎ ঈমান-আকীদা, ইবাদত-বন্দেগী, আখলাক-চরিত্র ইত্যাদি। এক মজলিসে দীনের যাবতীয় বিষয় শেখানো তো সম্ভব নয়। এজন্যই বলেছেন “...তা থেকে আমাকে শিক্ষা দিতে লাগলেন”। অর্থাৎ উপস্থিতভাবে একজন মুমিন-মুসলিমরূপে আমার জন্য যা-কিছু জরুরি মনে হয়েছিল তা শিক্ষা দিতে লাগলেন।

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতের প্রতি কতটা দরদী ছিলেন এবং তিনি কী পরিমাণ বিনয়ী ছিলেন, তা এ ঘটনা দ্বারা কিছুটা অনুমান করা যায়। কেউ যখন বক্তৃতা দেয়, তখন তার মন-মস্তিষ্ক পুরোপুরিভাবে নিজ আলোচ্য বিষয় ও উপস্থিত শ্রোতাদের উপর নিবদ্ধ থাকে। এ অবস্থায় কেউ তার বক্তব্যে ব্যাঘাত সৃষ্টি করলে সে তা আদৌ পসন্দ করে না। বরং তাতে খুব বিরক্তি বোধ করে। সাধারণ কেউ হলে তো মারমুখী হয়ে ওঠে। সাধারণ কেউ বক্তার বক্তৃতার মাঝখানে কথা বলার সাহসও করে না। কিন্তু এখানে আমরা কী দেখছি? এক সাধারণ বহিরাগত ব্যক্তি এসে মানবতার বাদশা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তির বক্তৃতার মাঝখানে কথা বলছে। আর তিনি তার সে কথায় বিরক্ত হননি; বরং তার আবদার রক্ষার্থে নিজ বক্তৃতা স্থগিত রাখছেন। তার ইচ্ছা পূরণার্থে মিম্বর থেকে নেমে তার কাছে চলে যাচ্ছেন এবং স্থির ও শান্তভাবে বসে তাকে তার প্রয়োজনীয় বিষয়ে শিক্ষাদান করছেন। মানুষকে মর্যাদা দান করা, ব্যক্তির শিখতে চাওয়ার আগ্রহকে সম্মান জানানো এবং মর্যাদার সর্বোচ্চ শিখরে অধিষ্ঠিত থাকা সত্ত্বেও একজন সাধারণ ব্যক্তির প্রতি বিনয়-নম্র আচরণ করার এমন সুমহান আখলাক-চরিত্রের দৃষ্টান্ত নবীর শিক্ষালয় ছাড়া আর কোথায় মিলতে পারে?

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. শিক্ষকের কর্তব্য শিক্ষার্থীর প্রতি নম্র-কোমল আচরণ করা।

খ. দীন সম্পর্কে কেউ কিছু জানতে চাইলে তার সে আগ্রহের মূল্য দেওয়া উচিত।

গ. যে ব্যক্তি উঁচু পর্যায়ের লোক হবে, তার মধ্যে ততোটাই বিনয় থাকা বাঞ্ছনীয়।

ঘ. দীন সম্পর্কে কারও কাছে কিছু জানতে চাইলে বিনয় ও আদবের সঙ্গে জিজ্ঞেস করতে হবে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
আল-আদাবুল মুফরাদ - হাদীস নং ১১৭২ | মুসলিম বাংলা