আল-আদাবুল মুফরাদ- ইমাম বুখারী রহঃ
আল-আদাবুল মুফরাদের পরিচ্ছেদসমূহ
হাদীস নং: ১১২২
৫২১- যিম্মীর জন্য কিভাবে দুআ করবে?
১১২২. হযরত আবু মুসা (রাযিঃ) বলেন, ইয়াহুদীরা নবী করীম (রাযিঃ)-এর ধারে আসিয়া হাঁচি দিত এই আশায় যে, তিনি তাহাদিগকে 'ইয়ারহামুকাল্লাহু' বলিয়া (তাহাদের জন্য রহমতের দু'আ করিয়া) জবাব দিবেন; কিন্তু তিনি জবাব দিতেন 'ইয়াহ্দীকুমুল্লাহ্ ইউলিহ বালাকুম' বলিয়া। অর্থাৎ আল্লাহ তোমাদিগকে হিদায়াত করুন এবং তোমাদের অবস্থা সংশোধন করিয়া দিন!
وَعَنْ حَكِيمِ بْنِ دَيْلَمٍ، عَنْ أَبِي بُرْدَةَ، عَنْ أَبِي مُوسَى قَالَ: كَانَ الْيَهُودُ يَتَعَاطَسُونَ عِنْدَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم رَجَاءَ أَنْ يَقُولَ لَهُمْ: يَرْحَمُكُمُ اللَّهُ، فَكَانَ يَقُولُ: يَهْدِيكُمُ اللَّهُ وَيُصْلِحُ بَالَكُمْ.
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছটিতে ইহুদিদের সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে যে, তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে এই আশায় হাঁচি দিত যে, তিনি তাদের জন্য يَرْحَمُكُمُ اللَّهُ (আল্লাহ তোমাদের উপর রহম করুন) বলে দু'আ করবেন। হাদীছটির শব্দ হল ا يَتَعَاطَسوْنَ তার মানে স্বাভাবিকভাবে হাঁচি না আসলেও তারা হাঁচির ভান করত। কৃত্রিমভাবে হাঁচির আওয়াজ করত। এর দ্বারা অনুমান করা যায় তারা প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দু'আ পাওয়ার কী গভীর আকাঙ্ক্ষা তাদের অন্তরে পোষণ করত। প্রশ্ন হচ্ছে, যে ইহুদিরা সর্বতোভাবে তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করত, তাঁর প্রতি শত্রুতা পোষণ করত, তাঁকে শহীদ করে দেওয়া পর্যন্ত অপচেষ্টা চালাত, তারা কেন তাঁর দু'আ পাওয়ার আশা করত?
প্রকৃতপক্ষে তাদেরও বিশ্বাস ছিল তিনি সত্যিই আল্লাহ তা'আলার নবী। তিনিই সেই নবী, যাঁর সম্পর্কে তাদের কিতাব তাওরাতসহ পূর্ববর্তী সমস্ত আসমানী কিতাবে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে। তারা তাঁর প্রতি শত্রুতা পোষণ করত কেবল দুনিয়ার হীন স্বার্থে। তারা তাঁর বিরোধিতা করত কেবলই ঈর্ষাবশত। তো যেহেতু তারা তাঁকে সত্যনবী বলে বিশ্বাস করত, তাই তাদের এ বিশ্বাসও ছিল যে, তিনি দু'আ করলে তা কবুল হবে। তিনি রহমতের দু'আ করলে অবশ্যই তারা সে দু'আর কল্যাণ ও বরকত লাভ করবে। কিন্তু তাদের সে আশা ছিল দুরাশা মাত্র। কেননা কুফরের উপর অবিচল থেকে আল্লাহ তা'আলার রহমত পাওয়া যেতে পারে না। আল্লাহর সত্যনবীর প্রতি শত্রুতা পোষণ করে রহমতের আশা করা বৃথা।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহুদীদের সে চালাকি ঠিকই বুঝতে পারতেন। তাই তারা হাঁচি দিয়ে যতই اَلْحَمْدُ لِلَّهِ বলুক না কেন, তিনি তার উত্তরে কিছুতেই يَرْحَمُكُم الله বলতেন না।
তবে হাঁ, হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন রহমতের নবী। তিনি রহমাতুল-লিল-আলামীন হয়ে এসেছেন। তাই তিনি নিজের পক্ষ থেকে তাদের প্রতি রহমতের আচরণ করতেন। তিনি তাদের প্রতি নগদে আল্লাহর রহমত বর্ষিত হওয়ার দু'আ না করে আগামীতে যাতে আল্লাহর রহমত লাভের উপযুক্ত হতে পারে সেজন্য দু'আ করতেন যে- يَهْدِيكُمُ اللهُ وَيُصْلِحُ بَالَكُمْ (আল্লাহ তোমাদের হিদায়াত দান করুন এবং তোমাদের অবস্থা দুরস্ত করে দিন)। অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা তোমাদেরকে ইসলামের সত্যতা বুঝে তা গ্রহণ করার তাওফীক দান করুন। তিনি তোমাদের মনের বক্রতা দূর করে দিন। হিংসা-বিদ্বেষ ও কপটতা থেকে তোমাদের মুক্তিদান করুন। যাতে পার্থিব হীন স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে স্বচ্ছ ও উদার মনে তোমরা চিন্তা করতে পার এবং ইসলামের সত্যতা উপলব্ধি করে এর শোভা-সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে তোমরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আমার প্রতি ঈমান আনতে পার। যদি খুশিমনে অকৃত্রিমভাবে আমার প্রতি ঈমান আন, তবে দুনিয়া-আখিরাত উভয় স্থানে তোমরা আল্লাহ তা'আলার রহমত পাওয়ার উপযুক্ত হয়ে যাবে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. সত্য বুঝতে পারলেও সত্য গ্রহণ করা সম্ভব হয় না, যদি না আল্লাহ তা'আলা তাওফীক দেন। ইহুদিরা বুঝত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তাআ’লার সত্যনবী। কিন্তু মেনে নেওয়ার সদিচ্ছা না থাকার কারণে তারা আল্লাহর তাওফীক লাভ করেনি। ফলে ঈমানও আনতে পারেনি।
খ. ভালো কিছু পাওয়ার আশা থাকলেই তা পাওয়া যায় না, যদি না পাওয়ার অনুকূলে নিজের সঠিক ও উপযুক্ত চেষ্টাটা থাকে।
গ. কেবল আশা করাই যথেষ্ট নয়। আল্লাহর রহমত পাওয়ার জন্য সঠিক পথ ও পন্থাও অনুসরণ করতে হবে।
ঘ. মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন রহমতের নবী। তাই ইহুদিদের হাজার দুর্বৃত্তপনা সত্ত্বেও তিনি তাদের ধ্বংসের নয়; বরং হিদায়াত ও সংশোধনের জন্য দু'আ জারি রেখেছিলেন।
প্রকৃতপক্ষে তাদেরও বিশ্বাস ছিল তিনি সত্যিই আল্লাহ তা'আলার নবী। তিনিই সেই নবী, যাঁর সম্পর্কে তাদের কিতাব তাওরাতসহ পূর্ববর্তী সমস্ত আসমানী কিতাবে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে। তারা তাঁর প্রতি শত্রুতা পোষণ করত কেবল দুনিয়ার হীন স্বার্থে। তারা তাঁর বিরোধিতা করত কেবলই ঈর্ষাবশত। তো যেহেতু তারা তাঁকে সত্যনবী বলে বিশ্বাস করত, তাই তাদের এ বিশ্বাসও ছিল যে, তিনি দু'আ করলে তা কবুল হবে। তিনি রহমতের দু'আ করলে অবশ্যই তারা সে দু'আর কল্যাণ ও বরকত লাভ করবে। কিন্তু তাদের সে আশা ছিল দুরাশা মাত্র। কেননা কুফরের উপর অবিচল থেকে আল্লাহ তা'আলার রহমত পাওয়া যেতে পারে না। আল্লাহর সত্যনবীর প্রতি শত্রুতা পোষণ করে রহমতের আশা করা বৃথা।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহুদীদের সে চালাকি ঠিকই বুঝতে পারতেন। তাই তারা হাঁচি দিয়ে যতই اَلْحَمْدُ لِلَّهِ বলুক না কেন, তিনি তার উত্তরে কিছুতেই يَرْحَمُكُم الله বলতেন না।
তবে হাঁ, হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন রহমতের নবী। তিনি রহমাতুল-লিল-আলামীন হয়ে এসেছেন। তাই তিনি নিজের পক্ষ থেকে তাদের প্রতি রহমতের আচরণ করতেন। তিনি তাদের প্রতি নগদে আল্লাহর রহমত বর্ষিত হওয়ার দু'আ না করে আগামীতে যাতে আল্লাহর রহমত লাভের উপযুক্ত হতে পারে সেজন্য দু'আ করতেন যে- يَهْدِيكُمُ اللهُ وَيُصْلِحُ بَالَكُمْ (আল্লাহ তোমাদের হিদায়াত দান করুন এবং তোমাদের অবস্থা দুরস্ত করে দিন)। অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা তোমাদেরকে ইসলামের সত্যতা বুঝে তা গ্রহণ করার তাওফীক দান করুন। তিনি তোমাদের মনের বক্রতা দূর করে দিন। হিংসা-বিদ্বেষ ও কপটতা থেকে তোমাদের মুক্তিদান করুন। যাতে পার্থিব হীন স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে স্বচ্ছ ও উদার মনে তোমরা চিন্তা করতে পার এবং ইসলামের সত্যতা উপলব্ধি করে এর শোভা-সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে তোমরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আমার প্রতি ঈমান আনতে পার। যদি খুশিমনে অকৃত্রিমভাবে আমার প্রতি ঈমান আন, তবে দুনিয়া-আখিরাত উভয় স্থানে তোমরা আল্লাহ তা'আলার রহমত পাওয়ার উপযুক্ত হয়ে যাবে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. সত্য বুঝতে পারলেও সত্য গ্রহণ করা সম্ভব হয় না, যদি না আল্লাহ তা'আলা তাওফীক দেন। ইহুদিরা বুঝত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তাআ’লার সত্যনবী। কিন্তু মেনে নেওয়ার সদিচ্ছা না থাকার কারণে তারা আল্লাহর তাওফীক লাভ করেনি। ফলে ঈমানও আনতে পারেনি।
খ. ভালো কিছু পাওয়ার আশা থাকলেই তা পাওয়া যায় না, যদি না পাওয়ার অনুকূলে নিজের সঠিক ও উপযুক্ত চেষ্টাটা থাকে।
গ. কেবল আশা করাই যথেষ্ট নয়। আল্লাহর রহমত পাওয়ার জন্য সঠিক পথ ও পন্থাও অনুসরণ করতে হবে।
ঘ. মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন রহমতের নবী। তাই ইহুদিদের হাজার দুর্বৃত্তপনা সত্ত্বেও তিনি তাদের ধ্বংসের নয়; বরং হিদায়াত ও সংশোধনের জন্য দু'আ জারি রেখেছিলেন।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
