আল-আদাবুল মুফরাদ- ইমাম বুখারী রহঃ
আল-আদাবুল মুফরাদের পরিচ্ছেদসমূহ
হাদীস নং: ১০৯২
৫০৩. যখন কেহ বলে, আসিতে পারি কি ? এবং সালাম করে না’
১০৯২. রিব্য়ী ইব্ন হিরাশ বলেন, বনী আমের গোত্রের এক ব্যক্তি বর্ণনা করিয়াছেন যে, তিনি একদা নবী করীম (ﷺ)-এর দরবারে উপস্থিত হইয়া বলেনঃ আমি কি ভিতরে আসিতে পারি ? তখন নবী করীম (ﷺ) তাঁহার বাঁদীকে বলিলেনঃ বাহিরে গিয়া তাহাকে বলিয়া দাও, ওহে! তুমি বলঃ আস্সালামু আলাইকুম’, আমি কি ভিতরে আসিতে পারি?’ কেননা, সে যথারীতি সুন্দরভাবে অনুমতি প্রার্থনা করে নাই।
রাবী বলেন, আমি বাঁদীকে বাহিরে আসিবার পূর্বেই তাহা শুনিতে পাইয়া, তৎক্ষণাৎ বলিয়া উঠিলামঃ “আস্-সালামু আলাইকুম! আমি কি ভিতরে আসিতে পারি?” তিনি বলিলেনঃ ও আলাইকা, আস!’ রাবী বলেন, অতঃপর আমি ভিতরে প্রবেশ করিয়া আরয করিলামঃ আপনি কী পয়গাম নিয়া আসিয়াছেন? তিনি ফরমাইলেনঃ উত্তম পয়গাম নিয়া আসিয়াছি ? আমি তোমাদিগের নিকট আসিয়াছি যাহাতে তোমরা এক আল্লাহ্র ইবাদত কর এবং লাত্ ও উয্যার পূজা পরিত্যাগ কর, দিবা রাত্রির মধ্যে পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় কর, বছরে একটি মাস রোযা রাখ, এই ঘরটির (কা’বা ঘরের) হাজ্জ কর এবং তোমাদের ধনীদের সম্পদ হইতে কিছু অংশ উশুল করিয়া তাহা তোমাদিগের গরীবদের মধ্যে বিলাইয়া দাও।
রাবী বলেন, অতঃপর আমি প্রশ্ন করিলাম, এমন কোন ইলম্ আছে কি যাহা আপনারও অজ্ঞাত? তিনি ফরমাইলেনঃ আল্লাহই ভাল জানেন, তবে এমন অনেক ইলম আছে যাহা আল্লাহ্ ছাড়া আর কেহই অবগত নহে। পাঁচটি বস্তু এমন আছে যাহা আল্লাহ্ ছাড়া আর কেহই অবগত নহে। (অতঃপর কুরআনের এই আয়াতটি তিলাওয়াত করেন)**
“কিয়ামতের জ্ঞান কেবল আল্লাহ্র নিকট রহিয়াছে, তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তিনি জানেন যাহা জরায়ুতে আছে। কেহ জানে না আগামীকল্য সে কী অর্জন করিবে এবং কেহ জানে না কোন্ স্থানে তাহার মৃত্যু ঘটিবে। (সূরা লুকমানঃ ৩৪)
রাবী বলেন, আমি বাঁদীকে বাহিরে আসিবার পূর্বেই তাহা শুনিতে পাইয়া, তৎক্ষণাৎ বলিয়া উঠিলামঃ “আস্-সালামু আলাইকুম! আমি কি ভিতরে আসিতে পারি?” তিনি বলিলেনঃ ও আলাইকা, আস!’ রাবী বলেন, অতঃপর আমি ভিতরে প্রবেশ করিয়া আরয করিলামঃ আপনি কী পয়গাম নিয়া আসিয়াছেন? তিনি ফরমাইলেনঃ উত্তম পয়গাম নিয়া আসিয়াছি ? আমি তোমাদিগের নিকট আসিয়াছি যাহাতে তোমরা এক আল্লাহ্র ইবাদত কর এবং লাত্ ও উয্যার পূজা পরিত্যাগ কর, দিবা রাত্রির মধ্যে পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় কর, বছরে একটি মাস রোযা রাখ, এই ঘরটির (কা’বা ঘরের) হাজ্জ কর এবং তোমাদের ধনীদের সম্পদ হইতে কিছু অংশ উশুল করিয়া তাহা তোমাদিগের গরীবদের মধ্যে বিলাইয়া দাও।
রাবী বলেন, অতঃপর আমি প্রশ্ন করিলাম, এমন কোন ইলম্ আছে কি যাহা আপনারও অজ্ঞাত? তিনি ফরমাইলেনঃ আল্লাহই ভাল জানেন, তবে এমন অনেক ইলম আছে যাহা আল্লাহ্ ছাড়া আর কেহই অবগত নহে। পাঁচটি বস্তু এমন আছে যাহা আল্লাহ্ ছাড়া আর কেহই অবগত নহে। (অতঃপর কুরআনের এই আয়াতটি তিলাওয়াত করেন)**
“কিয়ামতের জ্ঞান কেবল আল্লাহ্র নিকট রহিয়াছে, তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তিনি জানেন যাহা জরায়ুতে আছে। কেহ জানে না আগামীকল্য সে কী অর্জন করিবে এবং কেহ জানে না কোন্ স্থানে তাহার মৃত্যু ঘটিবে। (সূরা লুকমানঃ ৩৪)
قَالَ: وَأَخْبَرَنَا جَرِيرٌ، عَنْ مَنْصُورٍ، عَنْ رِبْعِيِّ بْنِ حِرَاشٍ قَالَ: حَدَّثَنِي رَجُلٌ مِنْ بَنِي عَامِرٍ جَاءَ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ: أَأَلِجُ؟ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم لِلْجَارِيَةِ: اخْرُجِي فَقُولِي لَهُ: قُلِ: السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ، أَأَدْخُلُ؟ فَإِنَّهُ لَمْ يُحْسِنِ الِاسْتِئْذَانَ، قَالَ: فَسَمِعْتُهَا قَبْلَ أَنْ تَخْرُجَ إِلَيَّ الْجَارِيَةُ فَقُلْتُ: السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ، أَأَدْخُلُ؟ فَقَالَ: وَعَلَيْكَ، ادْخُلْ، قَالَ: فَدَخَلْتُ فَقُلْتُ: بِأَيِّ شَيْءٍ جِئْتَ؟ فَقَالَ: لَمْ آتِكُمْ إِلاَّ بِخَيْرٍ، أَتَيْتُكُمْ لِتَعْبُدُوا اللَّهَ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، وَتَدَعُوا عِبَادَةَ اللاَّتِ وَالْعُزَّى، وَتُصَلُّوا فِي اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ خَمْسَ صَلَوَاتٍ، وَتَصُومُوا فِي السَّنَةِ شَهْرًا، وَتَحُجُّوا هَذَا الْبَيْتَ، وَتَأْخُذُوا مِنْ مَالِ أَغْنِيَائِكُمْ فَتَرُدُّوهَا عَلَى فُقَرَائِكُمْ، قَالَ: فَقُلْتُ لَهُ: هَلْ مِنَ الْعِلْمِ شَيْءٌ لاَ تَعْلَمُهُ؟ قَالَ: لَقَدْ عَلَّمَ اللَّهُ خَيْرًا، وَإِنَّ مِنَ الْعِلْمِ مَا لاَ يَعْلَمُهُ إِلاَّ اللَّهُ، الْخَمْسُ لاَ يَعْلَمُهُنَّ إِلاَّ اللَّهُ: (إِنَّ اللَّهَ عِنْدَهُ عِلْمُ السَّاعَةِ، وَيُنَزِّلُ الْغَيْثَ، وَيَعْلَمُ مَا فِي الأَرْحَامِ، وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ مَاذَا تَكْسِبُ غَدًا، وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ بِأَيِّ أَرْضٍ تَمُوتُ).
হাদীসের ব্যাখ্যা:
রিব'ঈ ইবন হিরাশ একজন বিখ্যাত ও উচ্চস্তরের তাবি'ঈ। তাঁর সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, তিনি জীবনে কখনও মিথ্যা কথা বলেননি। হিজরী ১০০ সনে তিনি ইন্তিকাল করেন। তিনি এ হাদীছটি বর্ণনা করেছেন যে সাহাবী থেকে, তাঁর নাম তিনি উল্লেখ করেননি। কেবল এতটুকু বলেছেন যে, তিনি আমির গোত্রের এক ব্যক্তি। নাম জানা না থাকায় কোনও অসুবিধা নেই। সমস্ত সাহাবী বিশ্বস্ত। ওই ব্যক্তি একজন সাহাবী ছিলেন, যেমনটা আলোচ্য হাদীছেই স্পষ্ট। কাজেই রিব'ঈ ইবন হিরাশ যখন একজন সাহাবী থেকে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন, তখন এটি বিশ্বাসযোগ্য এবং এর শিক্ষাও অনুসরণীয়।
বর্ণনাটির সারকথা হল, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ ঘরে অবস্থান করছিলেন। এ অবস্থায় আমির গোত্রীয় একজন সাহাবী এসে তাঁর কাছে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। তিনি সালাম না দিয়ে সরাসরি বলেছিলেন- প্রবেশ করব? নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদেমকে হুকুম দিলেন, তুমি তার কাছে যাও এবং তাকে অনুমতি চাওয়ার তরিকা শেখাও। তাকে বলবে - قُلِ السَّلَامُ عَلَيْكُمْ، أَأَدْخُلُ (তুমি বলো- আসসালামু আলাইকুম, প্রবেশ করব)? অর্থাৎ প্রথমে সালাম দেবে, তারপর প্রবেশের অনুমতি চাইবে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ হুকুম বাইর থেকে ওই সাহাবী শুনে ফেললেন। ফলে খাদেমের আর তার কাছে যেতে হল নাঃ তার আগে আগেই সেই সাহাবী বলে উঠলেন- اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ، أَدْخُل (আসসালামু আলাইকুম, প্রবেশ করব)? তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অনুমতি দিলেন এবং তিনি প্রবেশ করলেন। বোঝা গেল অনুমতি চাওয়ার জন্য আগে সালাম দেওয়া জরুরি। প্রথমে সালাম দিয়ে তারপর প্রবেশের অনুমতি চাইতে হবে। অবশ্য কেবল সালাম দেওয়ার দ্বারাও অনুমতি প্রার্থনা হয়ে যায়, যদি অনুমতিদাতা বুঝতে পারে যে, সালাম দেওয়ার উদ্দেশ্য প্রবেশের অনুমতি চাওয়া। সে ক্ষেত্রে আলাদাভাবে 'প্রবেশ করতে পারি?' বলা দরকার পড়ে না। কিন্তু এর বিপরীতটা চলবে না। অর্থাৎ সালাম না দিয়ে কেবল 'প্রবেশ করতে পারি?' বলাটা যথেষ্ট হবে না।
لَا تَأْذَنُوا لِمَنْ لَمْ يَبْدَأ بِالسَّلَامِ
'তোমরা তাকে অনুমতি দেবে না, যে প্রথমে সালাম দেবে না।' (বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান : ৮৪৩৩; মুসনাদে আবু ইয়া'লা : ১৮০৯)
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. কারও ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাওয়ার সময় প্রথমে সালাম দিতে হবে।
খ. কেউ কোনও কাজ সঠিকভাবে করতে না পারলে তাকে তা শিখিয়ে দেওয়া উচিত।
গ. শিক্ষাদানের কাজটি খাদেম বা অন্য কারও মাধ্যমেও করা যেতে পারে।
ঘ. কেউ যথানিয়মে অনুমতি চাইলে বিশেষ ওজর না থাকলে তাকে অনুমতি দেওয়া উচিত।
বর্ণনাটির সারকথা হল, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ ঘরে অবস্থান করছিলেন। এ অবস্থায় আমির গোত্রীয় একজন সাহাবী এসে তাঁর কাছে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। তিনি সালাম না দিয়ে সরাসরি বলেছিলেন- প্রবেশ করব? নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদেমকে হুকুম দিলেন, তুমি তার কাছে যাও এবং তাকে অনুমতি চাওয়ার তরিকা শেখাও। তাকে বলবে - قُلِ السَّلَامُ عَلَيْكُمْ، أَأَدْخُلُ (তুমি বলো- আসসালামু আলাইকুম, প্রবেশ করব)? অর্থাৎ প্রথমে সালাম দেবে, তারপর প্রবেশের অনুমতি চাইবে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ হুকুম বাইর থেকে ওই সাহাবী শুনে ফেললেন। ফলে খাদেমের আর তার কাছে যেতে হল নাঃ তার আগে আগেই সেই সাহাবী বলে উঠলেন- اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ، أَدْخُل (আসসালামু আলাইকুম, প্রবেশ করব)? তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অনুমতি দিলেন এবং তিনি প্রবেশ করলেন। বোঝা গেল অনুমতি চাওয়ার জন্য আগে সালাম দেওয়া জরুরি। প্রথমে সালাম দিয়ে তারপর প্রবেশের অনুমতি চাইতে হবে। অবশ্য কেবল সালাম দেওয়ার দ্বারাও অনুমতি প্রার্থনা হয়ে যায়, যদি অনুমতিদাতা বুঝতে পারে যে, সালাম দেওয়ার উদ্দেশ্য প্রবেশের অনুমতি চাওয়া। সে ক্ষেত্রে আলাদাভাবে 'প্রবেশ করতে পারি?' বলা দরকার পড়ে না। কিন্তু এর বিপরীতটা চলবে না। অর্থাৎ সালাম না দিয়ে কেবল 'প্রবেশ করতে পারি?' বলাটা যথেষ্ট হবে না।
لَا تَأْذَنُوا لِمَنْ لَمْ يَبْدَأ بِالسَّلَامِ
'তোমরা তাকে অনুমতি দেবে না, যে প্রথমে সালাম দেবে না।' (বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান : ৮৪৩৩; মুসনাদে আবু ইয়া'লা : ১৮০৯)
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. কারও ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাওয়ার সময় প্রথমে সালাম দিতে হবে।
খ. কেউ কোনও কাজ সঠিকভাবে করতে না পারলে তাকে তা শিখিয়ে দেওয়া উচিত।
গ. শিক্ষাদানের কাজটি খাদেম বা অন্য কারও মাধ্যমেও করা যেতে পারে।
ঘ. কেউ যথানিয়মে অনুমতি চাইলে বিশেষ ওজর না থাকলে তাকে অনুমতি দেওয়া উচিত।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
