আল-আদাবুল মুফরাদ- ইমাম বুখারী রহঃ

আল-আদাবুল মুফরাদের পরিচ্ছেদসমূহ

হাদীস নং: ৯৬৯
৪৩৭. অনুচ্ছেদঃ
৯৬৯. হযরত জাবির ইব্‌ন আব্দুল্লাহ্ (রাযিঃ) বলেন, একদা নবী করীম (ﷺ) মদীনাবাসীদের উর্ধ্ব দিকের পথে বাজারে প্রবেশ করিলেন। তাহার উভয় পাশেই লোক ছিল। একটি (মৃত) কানবিহীন ছাগল ছানা পথে পড়িল। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) উহার একটি কানে ধরিয়া বলিলেনঃ কেহ আছে কি যে, এই মৃত ছাগল ছানাটি এক দেরহাম মূল্যে কিনিতে রাজী? উপস্থিত লোকজন বলিলেনঃ কোন মূল্যেই আমরা উহা কিনিতে রাজী নই। ইহা দ্বারা আমরা কি করিব? নবী করীম (ﷺ) বলিলেন, তোমরা কি উহার মালিক হইতে পছন্দ করিবে? তাহারা বলিলেন, জী না। তিনি উহা আমাদিগকে তিনবার বলিলেন। তখন তাহারা বলিলেন, কসম আল্লাহ্‌র আমরা উহা পছন্দ করি না। যদি উহা জীবিতও হইত তবুও উহা দোষযুক্ত হইত, কেননা, উহার কান নাই। উহা মৃত হওয়া সত্ত্বেও আমরা কি করিয়া উহা পছন্দ করিতে পারি ? রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিলেনঃ কসম আল্লাহ্‌র তোমাদের কাছে উহা যেমন তুচ্ছ আল্লাহ্‌র কাছে দুনিয়া ততোধিক তুচ্ছ।
بَابٌ
حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ عَبْدِ اللهِ قَالَ‏:‏ حَدَّثَنِي الدَّرَاوَرْدِيُّ، عَنْ جَعْفَرٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَرَّ فِي السُّوقِ دَاخِلاً مِنْ بَعْضِ الْعَالِيَةِ وَالنَّاسُ كَنَفَيْهِ، فَمَرَّ بِجَدْيٍ أَسَكَّ، فَتَنَاوَلَهُ فَأَخَذَ بِأُذُنِهِ ثُمَّ قَالَ‏:‏ أَيُّكُمْ يُحِبُّ أَنَّ هَذَا لَهُ بِدِرْهَمٍ‏؟‏ فَقَالُوا‏:‏ مَا نُحِبُّ أَنَّهُ لَنَا بِشَيْءٍ، وَمَا نَصْنَعُ بِهِ‏؟‏ قَالَ‏:‏ أَتُحِبُّونَ أَنَّهُ لَكُمْ‏؟‏ قَالُوا‏:‏ لاَ، قَالَ ذَلِكَ لَهُمْ ثَلاَثًا، فَقَالُوا‏:‏ لاَ وَاللَّهِ، لَوْ كَانَ حَيًّا لَكَانَ عَيْبًا فِيهِ أَنَّهُ أَسَكُّ، وَالأَسَكُّ‏:‏ الَّذِي لَيْسَ لَهُ أُذُنَانِ، فَكَيْفَ وَهُوَ مَيِّتٌ‏؟‏ قَالَ‏:‏ فَوَاللَّهِ، لَلدُّنْيَا أَهْوَنُ عَلَى اللهِ مَنْ هَذَا عَلَيْكُمْ‏.‏

হাদীসের ব্যাখ্যা:

আল্লাহ তা'আলার কাছে দুনিয়া যে কত হীন ও কত তুচ্ছ, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ হাদীছে একটি দৃষ্টান্ত দ্বারা আমাদেরকে তা বুঝিয়েছেন। তিনি একটি মৃত কানকাটা বা ছোট কানের ছাগল ছানা হাতে নিয়ে সাহাবীদের জিজ্ঞেস করেছিলেন, তোমাদের মধ্যে কেউ এটি এক দিরহামে কিনতে পসন্দ করবে কি? কারওই তা পসন্দ করার কথা নয়। এক তো সেটি বড় ছাগল নয়; বরং ছাগলের বাচ্চা। তাও আবার ত্রুটিপূর্ণ। কানকাটা বা ছোট কানের ছাগল ছানা জীবিত থাকলেও টাকা- পয়সা দিয়ে কেউ সেটি কিনতে চাবে না। অথচ এটি জীবিতও নয়! তাই সাহাবায়ে কেরাম উত্তরে বললেন যে, এটি জীবিত থাকলেও তো ছিল ত্রুটিপূর্ণ। ত্রুটি, আবার মরা। এ অবস্থায় কিভাবে এটি এক দিরহাম দ্বারা কেনা যেতে পারে? অর্থাৎ আমাদের মধ্যে কেউ একটি এক দিরহামে কিনতে পসন্দ করবে না। এই জিজ্ঞাসা ও উত্তর দ্বারা যখন উপস্থিত সকলের অন্তরে ছাগল ছানাটির হীনতা স্পষ্ট হয়ে গেল, তখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মোক্ষম কথাটি বললেন। তিনি বললেন- (আল্লাহর কসম, তোমাদের কাছে এ ছাগলছানাটি যেমন তুচ্ছ, আল্লাহর কাছে দুনিয়া এরচে'ও বেশি তুচ্ছ)। এভাবে তিনি প্রিয় সাহাবীদের অন্তরে দুনিয়ার হীনতা ও তুচ্ছতার বোধ সঞ্চারিত করে দিলেন। তিনি ছিলেন এক মহান শিক্ষক। উপযুক্ত সময়ে উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়া ছিল তাঁর বিশেষত্ব।

একবার প্রিয় শিষ্যদের নিয়ে তিনি একটি বাজারের উপর দিয়ে যাচ্ছিলেন। বাজারে বিচিত্র মালামাল থাকে। দোকানে দোকানে নানা ধরনের নানা বর্ণের পণ্য সাজানো থাকে। তা দর্শকের নজর কাড়ে। মনে আকর্ষণ সৃষ্টি করে। এটা দুনিয়ার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ার এক মুহূর্ত। এই মুহূর্তেই অন্তরে দুনিয়ার হীনতা স্পষ্ট করে দেওয়া দরকার। নয়তো অজান্তেই কেউ এর শিকার হয়ে পড়তে পারে। এভাবে কেউ যাতে এর শিকার না হয়ে পড়ে, তাই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে সতর্ক ও সচেতন করার প্রয়োজন বোধ করলেন। তার সুযোগও পেয়ে গেলেন।

বাজারে যেমন হাজারও পণ্যের পসরা সাজানো থাকে, তেমনি তার আশপাশে বর্জ্য ও পরিত্যক্ত বস্তুর ভাগারও থাকে বৈকি। সেরকম একটি স্থান থেকে একটি মরা ছাগলছানা উঁচিয়ে ধরে তার সঙ্গে তিনি দুনিয়ার তুলনা করলেন এবং সাহাবায়ে কেরামকে বুঝিয়ে দিলেন যে, তোমাদের কাছে এই ছাগলছানাটি যেমন নিকৃষ্ট ও মূল্যহীন বস্তু, আল্লাহর কাছে তোমাদের জন্য জান্নাতের বিপরীতে দুনিয়া তারচে'ও বেশি হীন ও নিকৃষ্ট। তাহলে দুনিয়া কত হীন, কত তুচ্ছ বস্তু! আখিরাত ভুলে কোনও মুমিনের এহেন দুনিয়ায় মন দেওয়া সাজে কি?

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. আল্লাহর কাছে এ দুনিয়া অতি হীন ও তুচ্ছ। কোনও মুমিনের এতে মন দেওয়া উচিত নয়।

খ. বাস্তব কোনও দৃষ্টান্ত দ্বারা বিষয়বস্তু বুঝিয়ে দেওয়া ছিল নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষানীতি। যে-কোনও আন্তরিক ও দায়িত্বশীল শিক্ষক এ নীতি অবলম্বন করতে পারে।

গ. অনেক সময় দরস ও শ্রেণীকক্ষের বাইরেও শিক্ষকের কাছে অনেক মূল্যবান শিক্ষা পাওয়া যায়। তাই উদ্যমী শিক্ষার্থীদের যতবেশি সম্ভব শিক্ষকের সাহচর্যে সময় কাটানোর প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
আল-আদাবুল মুফরাদ - হাদীস নং ৯৬৯ | মুসলিম বাংলা