আল-আদাবুল মুফরাদ- ইমাম বুখারী রহঃ

আল-আদাবুল মুফরাদের পরিচ্ছেদসমূহ

হাদীস নং: ৩৫০
১৬০- সাক্ষাৎ করিতে গিয়া খাওয়া-দাওয়া করা
৩৫০। হযরত ইব্‌ন উমর (রাযিঃ) বর্ণনা করেন যে, একদা হযরত উমর (রাযিঃ) একটি রেশমী জুব্বা পাইয়া নবী করীম (ﷺ)-এর দরবারে লইয়া আসিলেন এবং আরয করিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনি উহা ক্রয় করিয়া নিন এবং উহা জুমু’আর সময় অথবা যখন বিভিন্ন প্রতিনিধিদল আপনার সহিত সাক্ষাৎ করিতে আসে তখন পরিধান করিবেন। তখন রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিলেনঃ উহা তো কেবল সেই ব্যক্তিই পরিধান করিবে যাহার পরকালে কোন প্রাপ্য থাকিবে না। পরবর্তীকালে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর দরবারে অনুরূপ কয়েকটি রেশমী জুব্বা আসিল। তিনি উহার একটি জুব্বা উমরের জন্য, একটি জুব্বা উসামার জন্য, একটি জুব্বা আলী (রাযিঃ)-এর জন্য পাঠাইয়া দিলেন। তখন উমর (রাযিঃ) আরয করিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনি উহা আমার নিকট পাঠাইয়াছেন অথচ আপনি উহা সম্পর্কে যাহা বলিয়াছেন, তাহা তো আমি শুনিয়াছি (এমতাবস্থায় আমি উহা কিভাবে পরিধান করি?) তখন নবী করীম (ﷺ) বলিলেনঃ উহা তুমি বিক্রয় করিয়া দাও অথবা উহা দ্বারা তোমার অপর কোন প্রয়োজন পূরণ কর।
حَدَّثَنَا الْمَكِّيُّ، قَالَ‏:‏ حَدَّثَنَا حَنْظَلَةُ، عَنْ سَالِمِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ‏:‏ سَمِعْتُ عَبْدَ اللهِ بْنَ عُمَرَ قَالَ‏:‏ وَجَدَ عُمَرُ حُلَّةَ إِسْتَبْرَقٍ، فَأَتَى بِهَا النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ‏:‏ اشْتَرِ هَذِهِ، وَالْبَسْهَا عِنْدَ الْجُمُعَةِ، أَوْ حِينَ تَقْدِمُ عَلَيْكَ الْوُفُودُ، فَقَالَ عَلَيْهِ الصَّلاَةُ وَالسَّلاَمُ‏:‏ إِنَّمَا يَلْبَسُهَا مَنْ لاَ خَلاَقَ لَهُ فِي الْآخِرَةِ، وَأُتِيَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم بِحُلَلٍ، فَأَرْسَلَ إِلَى عُمَرَ بِحُلَّةٍ، وَإِلَى أُسَامَةَ بِحُلَّةٍ، وَإِلَى عَلِيٍّ بِحُلَّةٍ، فَقَالَ عُمَرُ‏:‏ يَا رَسُولَ اللهِ، أَرْسَلْتَ بِهَا إِلَيَّ، لَقَدْ سَمِعْتُكَ تَقُولُ فِيهَا مَا قُلْتَ‏؟‏ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم‏:‏ تَبِيعُهَا، أَوْ تَقْضِي بِهَا حَاجَتَكَ‏.‏

হাদীসের ব্যাখ্যা:

হাদীছে জানানো হয়েছে, রেশমী পোশাক পরে এমন ব্যক্তি, আখিরাতে যার কোনও অংশ নেই। অর্থাৎ যে ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না। তার মানে এটা অমুসলিমদের পোশাক। অন্য হাদীছে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি দুনিয়ায় রেশমী পোশাক পরে, সে আখিরাতে রেশমী পোশাক পরবে না। আর এ কারণে মুমিনদেরকে রেশমী পোশাক পরতে নিষেধ করা হয়েছে। সারমর্ম হল- রেশমি পোশাক দুনিয়ায় অমুসলিমদের পোশাক। তাই মুসলিম ব্যক্তির জন্য দুনিয়ায়। এটা পরা জায়েয নয়। তা সত্ত্বেও কোনও মুসলিম ব্যক্তি যদি রেশমী পোশাক পরে, তবে আখিরাতে সে এ পোশাক পরতে পারবে না। অর্থাৎ এ হুকুম অমান্য করার কারণে সে শুরুতে জান্নাতে যেতে পারবে না। জান্নাতের পোশাক রেশমী পোশাক। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
وَلِبَاسُهُمْ فِيهَا حَرِيرٌ
‘সেখানে তাদের পোশাক হবে রেশমের’ (সূরা ফাতির, আয়াত ৩৩)

কাজেই 'দুনিয়ায় যে মুমিন রেশমী পোশাক পরে, আখিরাতে সে তা পরবে না' দ্বারা বোঝানো হয়েছে সে প্রথমে জান্নাতে যেতে পারবে না। প্রথমে তাকে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে। শাস্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ঈমানের বদৌলতে সে জান্নাত লাভ করবে। জান্নাত লাভ করার পর জান্নাতের অপরাপর নি'আমতের মতো রেশমী পোশাকও সে পাবে। কেউ কেউ বলেন, দুনিয়ায় যে মুমিন ব্যক্তি রেশমী পোশাক পরবে, সে জান্নাত লাভ করলেও জান্নাতের অন্যান্য নি'আমত ঠিকই পাবে, কিন্তু রেশমী পোশাক পাবে না।

প্রশ্ন দাঁড়ায়, তবে তো তার মনে রেশমী পোশাক না পাওয়ার কষ্ট থেকে যাবে, অথচ জান্নাত কষ্টের জায়গা নয়?
এর উত্তর হল, জান্নাতে এমন ব্যক্তির অন্তর থেকে রেশমী পোশাকের চাহিদাই দূর করে দেওয়া হবে। অন্তরে যখন এ পোশাকের চাহিদা থাকবে না, তখন না পাওয়ার দরুন কোনও কষ্টও সে পাবে না, যেমন সাধারণ স্তরের জান্নাতীগণ উচ্চস্তরের জান্নাতবাসীগণের মতো মর্যাদা না পাওয়ার কারণে কোনও কষ্ট বোধ করবে না।

হাদীছের মূল বার্তা হল মুমিনদেরকে রেশমী পোশাক সম্পর্কে সতর্ক করা, যাতে তারা এটা না পরে। কেননা এটা পরলে শরী'আতের হুকুম অমান্য করা হবে। পরিণামে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে, যদি না আল্লাহ তা'আলা মাফ করেন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. দুনিয়ায় রেশমী পোশাক অমুসলিমদের পোশাক। তাই মুসলিমদেরকে অবশ্যই এ পোশাক পরিধান করা হতে বিরত থাকতে হবে।

খ. রেশমী পোশাক পরিধান করলে আখিরাতে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে।

গ. দুনিয়ায় রেশমী পোশাক পরিধান করলে জান্নাতে এ নি'আমত থেকে বঞ্চিত থাকতে হবে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
আল-আদাবুল মুফরাদ - হাদীস নং ৩৫০ | মুসলিম বাংলা