আল-আদাবুল মুফরাদ- ইমাম বুখারী রহঃ
আল-আদাবুল মুফরাদের পরিচ্ছেদসমূহ
হাদীস নং: ২৬
১৩– মুশরিক পিতার সহিত সদ্ব্যবহার।
২৬। হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবন উমর (রাযিঃ) বলেন, একদা হযরত উমর (রাযিঃ) একটি কারুকার্যখচিত বহুমূল্য পিরহান বিক্রি হইতে দেখিলেন। তখন তিনি বলিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! উহা আপনি ক্রয় করিয়া নিন। জুমু'আর দিন ও বহিরাগত প্রতিনিধি দলসমূহের সহিত সাক্ষাতকালে উহা আপনি পরিধান করিবেন।
তিনি বলিলেন ঃ কেবল সেই সব লােকই পরিবে, যাহাদের পরকাল বলিতে কিছু নাই । অতঃপর পরবর্তীকালে অনুরূপ কিছু সংখ্যক কারুকার্য খচিত পিরহান নবী করীম (ﷺ)-এর দরবারে আসিল। তিনি তাহার একটি হযরত উমরের কাছে পাঠাইয়া দিলে। হযরত হযরত উমর (রাযিঃ) তখন (নবী করীমের খেদমতে উপস্থিত হইয়া) আরজ করিলেন ঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ! কেমন করিয়া আমি উহা পরিধান করিব ? আপনি তাে উহা পরিধান সম্পর্কে যাহা বলিয়াছেন, বলিয়াছেনই ? রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ফরমাইলেন ঃ আমি উহা তােমার পরিধানের জন্য পাঠাই নাই, বরং এই জন্য পাঠাইয়াছি যে, উহা তুমি বিক্রি করিয়া দিবে অথবা কাহাকেও পরিতে দিবে। একথা শুনিয়া হযরত উমর (রাযিঃ) উহা তাহার জনৈক মক্কাবাসী ভাইয়ের জন্য পাঠাইয়া দিলেন-যিনি তখনও ইসলাম গ্রহণ করেন নাই।
তিনি বলিলেন ঃ কেবল সেই সব লােকই পরিবে, যাহাদের পরকাল বলিতে কিছু নাই । অতঃপর পরবর্তীকালে অনুরূপ কিছু সংখ্যক কারুকার্য খচিত পিরহান নবী করীম (ﷺ)-এর দরবারে আসিল। তিনি তাহার একটি হযরত উমরের কাছে পাঠাইয়া দিলে। হযরত হযরত উমর (রাযিঃ) তখন (নবী করীমের খেদমতে উপস্থিত হইয়া) আরজ করিলেন ঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ! কেমন করিয়া আমি উহা পরিধান করিব ? আপনি তাে উহা পরিধান সম্পর্কে যাহা বলিয়াছেন, বলিয়াছেনই ? রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ফরমাইলেন ঃ আমি উহা তােমার পরিধানের জন্য পাঠাই নাই, বরং এই জন্য পাঠাইয়াছি যে, উহা তুমি বিক্রি করিয়া দিবে অথবা কাহাকেও পরিতে দিবে। একথা শুনিয়া হযরত উমর (রাযিঃ) উহা তাহার জনৈক মক্কাবাসী ভাইয়ের জন্য পাঠাইয়া দিলেন-যিনি তখনও ইসলাম গ্রহণ করেন নাই।
بَابُ بِرِّ الْوَالِدِ الْمُشْرِكِ
حَدَّثَنَا مُوسَى، قَالَ: حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ مُسْلِمٍ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ دِينَارٍ قَالَ: سَمِعْتُ ابْنَ عُمَرَ يَقُولُ: رَأَى عُمَرُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ حُلَّةً سِيَرَاءَ تُبَاعُ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، ابْتَعْ هَذِهِ، فَالْبَسْهَا يَوْمَ الْجُمُعَةِ، وَإِذَا جَاءَكَ الْوُفُودُ، قَالَ: إِنَّمَا يَلْبَسُ هَذِهِ مَنْ لاَ خَلاَقَ لَهُ، فَأُتِيَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم مِنْهَا بِحُلَلٍ، فَأَرْسَلَ إِلَى عُمَرَ بِحُلَّةٍ، فَقَالَ: كَيْفَ أَلْبَسُهَا وَقَدْ قُلْتَ فِيهَا مَا قُلْتَ؟ قَالَ: إِنِّي لَمْ أُعْطِكَهَا لِتَلْبَسَهَا، وَلَكِنْ تَبِيعَهَا أَوْ تَكْسُوَهَا، فَأَرْسَلَ بِهَا عُمَرُ إِلَى أَخٍ لَهُ مِنْ أَهْلِ مَكَّةَ قَبْلَ أَنْ يُسْلِمَ.
হাদীসের ব্যাখ্যা:
১. এই হাদীসে বর্ণিত হযরত উমর (রা)-এর প্রস্তাব ও আচরণের দ্বারা দুইটি কথা জানা গেল ঃ
ক. ইসলাম সরল ও অনাড়ম্বর বেশভূষা ও জীবন-যাত্রার প্রবক্তা হইলেও বিশেষ বিশেষ পর্ব ও উপলক্ষে একটু উন্নতমানের বেশভূষা পরিধান নিন্দনীয় নহে।
খ.আত্মীয়-স্বজন মুসলমান না হইলেও তাহাদের সহিত সৌজন্যমূলক আচরণ করা ইসলামের শিক্ষার পরিপন্থী নহে, বরং ইহাই বাঞ্ছনীয়। এ প্রসঙ্গে একথা উল্লেখ করা অপ্রাসঙ্গিক হইবে না যে, যাকাতের অর্থ ব্যয়ের
একটি উল্লেখযােগ্য খাত হইল মু'আলালাফাতুল-কুলুব’ যাহার সম্পূর্ণটাই অমুসলিমদের মধ্যে ব্যয়িত হওয়াই বিধেয়। আত্মীয়-অনাত্মীয় নির্বিশেষে যে কোন অমুসলিম উহা পাইতে পারে। অনুরূপভাবে কুরবাণীর গােশতও অমুসলিম আত্মীয়-প্রতিবেশী এবং নিঃস্বজনকে দেওয়া চলে।
২. হাদীছে জানানো হয়েছে, রেশমী পোশাক পরে এমন ব্যক্তি, আখিরাতে যার কোনও অংশ নেই। অর্থাৎ যে ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না। তার মানে এটা অমুসলিমদের পোশাক। অন্য হাদীছে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি দুনিয়ায় রেশমী পোশাক পরে, সে আখিরাতে রেশমী পোশাক পরবে না। আর এ কারণে মুমিনদেরকে রেশমী পোশাক পরতে নিষেধ করা হয়েছে। সারমর্ম হল- রেশমি পোশাক দুনিয়ায় অমুসলিমদের পোশাক। তাই মুসলিম ব্যক্তির জন্য দুনিয়ায়। এটা পরা জায়েয নয়। তা সত্ত্বেও কোনও মুসলিম ব্যক্তি যদি রেশমী পোশাক পরে, তবে আখিরাতে সে এ পোশাক পরতে পারবে না। অর্থাৎ এ হুকুম অমান্য করার কারণে সে শুরুতে জান্নাতে যেতে পারবে না। জান্নাতের পোশাক রেশমী পোশাক। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
وَلِبَاسُهُمْ فِيهَا حَرِيرٌ
‘সেখানে তাদের পোশাক হবে রেশমের’ (সূরা ফাতির, আয়াত ৩৩)
কাজেই 'দুনিয়ায় যে মুমিন রেশমী পোশাক পরে, আখিরাতে সে তা পরবে না' দ্বারা বোঝানো হয়েছে সে প্রথমে জান্নাতে যেতে পারবে না। প্রথমে তাকে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে। শাস্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ঈমানের বদৌলতে সে জান্নাত লাভ করবে। জান্নাত লাভ করার পর জান্নাতের অপরাপর নি'আমতের মতো রেশমী পোশাকও সে পাবে। কেউ কেউ বলেন, দুনিয়ায় যে মুমিন ব্যক্তি রেশমী পোশাক পরবে, সে জান্নাত লাভ করলেও জান্নাতের অন্যান্য নি'আমত ঠিকই পাবে, কিন্তু রেশমী পোশাক পাবে না।
প্রশ্ন দাঁড়ায়, তবে তো তার মনে রেশমী পোশাক না পাওয়ার কষ্ট থেকে যাবে, অথচ জান্নাত কষ্টের জায়গা নয়?
এর উত্তর হল, জান্নাতে এমন ব্যক্তির অন্তর থেকে রেশমী পোশাকের চাহিদাই দূর করে দেওয়া হবে। অন্তরে যখন এ পোশাকের চাহিদা থাকবে না, তখন না পাওয়ার দরুন কোনও কষ্টও সে পাবে না, যেমন সাধারণ স্তরের জান্নাতীগণ উচ্চস্তরের জান্নাতবাসীগণের মতো মর্যাদা না পাওয়ার কারণে কোনও কষ্ট বোধ করবে না।
হাদীছের মূল বার্তা হল মুমিনদেরকে রেশমী পোশাক সম্পর্কে সতর্ক করা, যাতে তারা এটা না পরে। কেননা এটা পরলে শরী'আতের হুকুম অমান্য করা হবে। পরিণামে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে, যদি না আল্লাহ তা'আলা মাফ করেন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. দুনিয়ায় রেশমী পোশাক অমুসলিমদের পোশাক। তাই মুসলিমদেরকে অবশ্যই এ পোশাক পরিধান করা হতে বিরত থাকতে হবে।
খ. রেশমী পোশাক পরিধান করলে আখিরাতে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে।
গ. দুনিয়ায় রেশমী পোশাক পরিধান করলে জান্নাতে এ নি'আমত থেকে বঞ্চিত থাকতে হবে।
ক. ইসলাম সরল ও অনাড়ম্বর বেশভূষা ও জীবন-যাত্রার প্রবক্তা হইলেও বিশেষ বিশেষ পর্ব ও উপলক্ষে একটু উন্নতমানের বেশভূষা পরিধান নিন্দনীয় নহে।
খ.আত্মীয়-স্বজন মুসলমান না হইলেও তাহাদের সহিত সৌজন্যমূলক আচরণ করা ইসলামের শিক্ষার পরিপন্থী নহে, বরং ইহাই বাঞ্ছনীয়। এ প্রসঙ্গে একথা উল্লেখ করা অপ্রাসঙ্গিক হইবে না যে, যাকাতের অর্থ ব্যয়ের
একটি উল্লেখযােগ্য খাত হইল মু'আলালাফাতুল-কুলুব’ যাহার সম্পূর্ণটাই অমুসলিমদের মধ্যে ব্যয়িত হওয়াই বিধেয়। আত্মীয়-অনাত্মীয় নির্বিশেষে যে কোন অমুসলিম উহা পাইতে পারে। অনুরূপভাবে কুরবাণীর গােশতও অমুসলিম আত্মীয়-প্রতিবেশী এবং নিঃস্বজনকে দেওয়া চলে।
২. হাদীছে জানানো হয়েছে, রেশমী পোশাক পরে এমন ব্যক্তি, আখিরাতে যার কোনও অংশ নেই। অর্থাৎ যে ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না। তার মানে এটা অমুসলিমদের পোশাক। অন্য হাদীছে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি দুনিয়ায় রেশমী পোশাক পরে, সে আখিরাতে রেশমী পোশাক পরবে না। আর এ কারণে মুমিনদেরকে রেশমী পোশাক পরতে নিষেধ করা হয়েছে। সারমর্ম হল- রেশমি পোশাক দুনিয়ায় অমুসলিমদের পোশাক। তাই মুসলিম ব্যক্তির জন্য দুনিয়ায়। এটা পরা জায়েয নয়। তা সত্ত্বেও কোনও মুসলিম ব্যক্তি যদি রেশমী পোশাক পরে, তবে আখিরাতে সে এ পোশাক পরতে পারবে না। অর্থাৎ এ হুকুম অমান্য করার কারণে সে শুরুতে জান্নাতে যেতে পারবে না। জান্নাতের পোশাক রেশমী পোশাক। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
وَلِبَاسُهُمْ فِيهَا حَرِيرٌ
‘সেখানে তাদের পোশাক হবে রেশমের’ (সূরা ফাতির, আয়াত ৩৩)
কাজেই 'দুনিয়ায় যে মুমিন রেশমী পোশাক পরে, আখিরাতে সে তা পরবে না' দ্বারা বোঝানো হয়েছে সে প্রথমে জান্নাতে যেতে পারবে না। প্রথমে তাকে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে। শাস্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ঈমানের বদৌলতে সে জান্নাত লাভ করবে। জান্নাত লাভ করার পর জান্নাতের অপরাপর নি'আমতের মতো রেশমী পোশাকও সে পাবে। কেউ কেউ বলেন, দুনিয়ায় যে মুমিন ব্যক্তি রেশমী পোশাক পরবে, সে জান্নাত লাভ করলেও জান্নাতের অন্যান্য নি'আমত ঠিকই পাবে, কিন্তু রেশমী পোশাক পাবে না।
প্রশ্ন দাঁড়ায়, তবে তো তার মনে রেশমী পোশাক না পাওয়ার কষ্ট থেকে যাবে, অথচ জান্নাত কষ্টের জায়গা নয়?
এর উত্তর হল, জান্নাতে এমন ব্যক্তির অন্তর থেকে রেশমী পোশাকের চাহিদাই দূর করে দেওয়া হবে। অন্তরে যখন এ পোশাকের চাহিদা থাকবে না, তখন না পাওয়ার দরুন কোনও কষ্টও সে পাবে না, যেমন সাধারণ স্তরের জান্নাতীগণ উচ্চস্তরের জান্নাতবাসীগণের মতো মর্যাদা না পাওয়ার কারণে কোনও কষ্ট বোধ করবে না।
হাদীছের মূল বার্তা হল মুমিনদেরকে রেশমী পোশাক সম্পর্কে সতর্ক করা, যাতে তারা এটা না পরে। কেননা এটা পরলে শরী'আতের হুকুম অমান্য করা হবে। পরিণামে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে, যদি না আল্লাহ তা'আলা মাফ করেন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. দুনিয়ায় রেশমী পোশাক অমুসলিমদের পোশাক। তাই মুসলিমদেরকে অবশ্যই এ পোশাক পরিধান করা হতে বিরত থাকতে হবে।
খ. রেশমী পোশাক পরিধান করলে আখিরাতে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে।
গ. দুনিয়ায় রেশমী পোশাক পরিধান করলে জান্নাতে এ নি'আমত থেকে বঞ্চিত থাকতে হবে।
২. ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
