আল জামিউল কাবীর- ইমাম তিরমিযী রহঃ

৪৮. নবীজী সাঃ ও সাহাবা রাঃ ; মর্যাদা ও বিবিধ ফাযায়েল

হাদীস নং: ৩৭৮৮
আন্তর্জাতিক নং: ৩৭৮৮
পরিচ্ছেদ : নবী (ﷺ) পরিবারের গুণাবলী
৩৭৮৮। আলী ইবন মুনযির কূফী (রাহঃ)... যায়দ ইবন আরকাম (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নবী (ﷺ) বলেছেন: আমি তোমাদের কাছে এমন কিছু বস্তু রেখে যাচ্ছি তোমরা যদি সেসব ধারণ করে রাখ, তবে আমার পরে তোমরা কখনও পথভ্রষ্ট হবে না। এর একটি আরেকটির চেয়ে মহান - তা হল আল্লাহর কিভাব। আকাশ থেকে যমীন পর্যন্ত বিস্তৃত এক সুদৃঢ় রশি; আর আমার পরিবার - আমার আহলে বায়ত। হাওযে কাওছারে আমার কাছে আগমন করা পর্যন্ত এরা আর বিচ্ছিন্ন হবে না কখনও। তোমরা লক্ষ্য রাখবে এতদুভয়ের ব্যাপারে তোমরা আমার পর কিরূপ ব্যবহার করছ।
باب مناقب أهل بيت النبي صلى الله عليه وسلم
حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ المُنْذِرِ الكُوفِيُّ قَالَ: حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ فُضَيْلٍ قَالَ: حَدَّثَنَا الأَعْمَشُ، عَنْ عَطِيَّةَ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، وَالأَعْمَشُ، عَنْ حَبِيبِ بْنِ أَبِي ثَابِتٍ، عَنْ زَيْدِ بْنِ أَرْقَمَ قَالَا: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " إِنِّي تَارِكٌ فِيكُمْ مَا إِنْ تَمَسَّكْتُمْ بِهِ لَنْ تَضِلُّوا بَعْدِي أَحَدُهُمَا أَعْظَمُ مِنَ الآخَرِ: كِتَابُ اللَّهِ حَبْلٌ مَمْدُودٌ مِنَ السَّمَاءِ إِلَى الأَرْضِ. وَعِتْرَتِي أَهْلُ بَيْتِي، وَلَنْ يَتَفَرَّقَا حَتَّى يَرِدَا عَلَيَّ الحَوْضَ فَانْظُرُوا كَيْفَ تَخْلُفُونِي فِيهِمَا «هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ»

হাদীসের ব্যাখ্যা:

কুরআন মাজীদ আঁকড়ে ধরে রাখার তাগিদ
ইরশাদ করেন-
(আল্লাহর কিতাব)। অর্থাৎ প্রথমটি হচ্ছে কুরআন মাজীদ। তাতে কিয়ামত পর্যন্ত সমস্ত মানুষের জন্য হিদায়াত ও পথনির্দেশ আছে। তাতে আছে পথচলার আলো। আমি দুনিয়া থেকে চলে যাওয়ার পরও এ হিদায়াত ও আলো তোমাদের মধ্যে থাকবে। কিয়ামত পর্যন্ত তা সুরক্ষিত থাকার নিশ্চয়তা আছে। কেউ তা বিকৃত করতে পারবে না। তোমাদের দোজাহানের মুক্তি ও সফলতার লক্ষ্যে অনুসরণীয় সবকিছুই এতে বিদ্যমান আছে। যে-কোনও পরিস্থিতিতেই এ কিতাব তোমাদের পথ দেখাবে। যত জটিল সমস্যাই হোক না কেন, এর আলোকে তোমরা তার সমাধান করতে পারবে। এর অনুসরণ করলে তোমাদের পথ হারানোর কোনও ভয় নেই। কোনও জটিলতার আবর্তে পড়ে থাকার কোনও আশঙ্কা নেই। যেমন অপর এক বর্ণনায় আছে-

وَهُو حبْلُ اللَّه، منِ اتَّبَعه كَانَ عَلَى الهُدى، ومَنْ تَرَكَهُ كانَ عَلَى ضَلالَةٍ

(আর তা হচ্ছে আল্লাহর রশি। যে ব্যক্তি তার অনুসরণ করবে সে হিদায়াতের উপর থাকবে। আর যে তা পরিত্যাগ করবে সে পথভ্রষ্ট হবে)। সুতরাং তোমাদের কাজ কেবল সর্বাবস্থায় এ কিতাব আঁকড়ে ধরে থাকা।
তিনি কুরআন মাজীদ আঁকড়ে ধরে রাখার প্রতি উৎসাহ দান করেন। কোনও অবস্থায়ই তা থেকে বিচ্যুত না হওয়ার তাগিদ দেন। প্রকাশ থাকে যে, কুরআন আঁকড়ে ধরার জন্য হাদীছের অনুসরণ অপরিহার্য। কুরআনের সঙ্গে হাদীছের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। কাজেই কুরআনের পাশাপাশি হাদীছকেও আঁকড়ে ধরতে হবে। বিদায় হজ্জের এক ভাষণে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

تَرَكْتُ فِيْكُمْ أَمْرَيْنِ، لَنْ تَضِلُّوْا مَا تَمَسَّكْتُمْ بِهِمَا: كِتَابَ اللَّهِ وَسُنَّةَ نَبِيِّهِ

‘আমি তোমাদের মধ্যে দুটি বস্তু রেখে যাচ্ছি। যতক্ষণ তোমরা তা আঁকড়ে ধরে রাখবে, কস্মিনকালেও পথভ্রষ্ট হবে না –আল্লাহর কিতাব ও তাঁর নবীর সুন্নত।

তারপর দ্বিতীয় বিষয়টি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন-

أَهْلُ بَيْتِي،

(আমার আহলে বায়ত)। অর্থাৎ দ্বিতীয় যে মর্যাদাপূর্ণ বিষয় তোমাদের মধ্যে রেখে যাচ্ছি তা হচ্ছে আমার আহলে বায়ত। সাবধান! তোমরা তাদের মর্যাদা রক্ষা করো। কিছুতেই তাদের অমর্যাদা করো না।

অপর এক বর্ণনায় আছে, হযরত যায়দ ইবন আরকাম রাযি, যখন হাদীছটি বর্ণনা করা শেষ করলেন, তখন হুসায়ন ইবন সাবরা রহ. তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীগণ তাঁর আহলে বায়ত কি না। তিনি স্বীকার করলেন যে, তারাও আহলে বায়ত। তবে তিনি আরও বৃহত্তর অর্থে আহলে বায়তের ব্যাখ্যা দিলেন। বললেন- তবে (সাধারণভাবে) আহলে বায়ত বলতে তাদেরকে বোঝানো হয়, যাদের জন্য সদাকা (খাওয়া) হারাম করা হয়েছে। আর তারা হচ্ছেন- আলীর বংশধরগণ, আকীলের বংশধরগণ, জাফরের বংশধরগণ এবং আব্বাসের বংশধরগণ। পরিভাষায় তাদেরকে সায়্যিদ বলা হয়। তাদের জন্য সদাকা অর্থাৎ যাকাত, ফিতরা, মানত ইত্যাদি খাওয়া জায়েয নয়। আরও বৃহত্তর পরিসরে বনূ হাশিমের জন্যও সদাকা যাকাত খাওয়া খারাম।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. মুসলিম উম্মাহ'র মধ্যে আহলে বায়তের বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। তাদের সে মর্যাদা রক্ষা করা সকলের অবশ্যকর্তব্য।

খ. কুরআন মাজীদ আল্লাহর কিতাব, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিজের রচনা নয়।

গ. যে ব্যক্তি কুরআন মাজীদ শক্ত করে ধরে রাখবে, সে হিদায়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে, পথভ্রষ্টতার শিকার হবে না।

ঘ. কুরআনই আলো। সর্বপ্রকার অন্ধকার ও পাশববৃত্তি থেকে মুক্ত আলোকিত জীবন গড়ার একমাত্র উপায় কুরআনের অনুসরণ।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
জামে' তিরমিযী - হাদীস নং ৩৭৮৮ | মুসলিম বাংলা