আল জামিউল কাবীর- ইমাম তিরমিযী রহঃ

৪৭. নবীজী ﷺ থেকে বর্ণিত যাবতীয় দোয়া-জিকির

হাদীস নং: ৩৫১৮
আন্তর্জাতিক নং: ৩৫১৮
শিরোনামবিহীন পরিচ্ছেদ
৩৫১৮. হাসান ইবনে আরাফা (রাহঃ) ...... আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ তাসবীহ হল পাল্লার অর্ধেক, আলহামদুলিল্লাহ পরিপূর্ণ করে পাল্লা। আর লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু—এমন কালিমা যার মধ্যে এবং আল্লাহর মধ্যে কোন প্রতিবন্ধকতা নেই; সরাসরি আল্লাহর কাছে পৌছে যায়।



(আবু ঈসা বলেন) এই সূত্রে হাদীসটি গারীব। এর সনদটি মজবুত নয়।
باب
حَدَّثَنَا الْحَسَنُ بْنُ عَرَفَةَ، حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ عَيَّاشٍ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ زِيَادِ بْنِ أَنْعُمٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ يَزِيدَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " التَّسْبِيحُ نِصْفُ الْمِيزَانِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ يَمْلَؤُهُ وَلاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ لَيْسَ لَهَا دُونَ اللَّهِ حِجَابٌ حَتَّى تَخْلُصَ إِلَيْهِ " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ وَلَيْسَ إِسْنَادُهُ بِالْقَوِيِّ .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

‘আলহামদুলিল্লাহ' বলার ফযীলত
হাদীছে বলা হয়েছে, 'আলহামদুলিল্লাহ' মীযান ভরে ফেলে। আলহামদুলিল্লাহ অর্থ 'সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর'। একথা বলে আল্লাহ তা'আলার যাবতীয় গুণাবলীর প্রতি ঈমানের স্বীকারোক্তিদান, তাঁর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ ও তাঁর প্রদত্ত নি'আমতসমূহের জন্যে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা হয়। সমস্ত প্রশংসা বলতে ফিরিশতা, মানুষ ও জিন্নসহ কুল মাখলুকের মুখে আদায়কৃত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমুদয় প্রশংসা বোঝানো উদ্দেশ্য। অর্থাৎ সরাসরি আল্লাহর যে প্রশংসা করা হয় তা তো আল্লাহরই, আর যে সকল প্রশংসা কোনও সৃষ্টিকে লক্ষ্য করে করা হয়ে থাকে তাও মূলত আল্লাহরই প্রশংসা। কেননা মানবজগত, জড়জগত ও উদ্ভিতজগত থেকে শুরু করে নভোমণ্ডল, নক্ষত্রমণ্ডল ও ফিরিশতা জগত পর্যন্ত ও প্রতিপালন আল্লাহ তা'আলারই কাজ। সমস্ত মাখলুক আল্লাহরই সৃষ্টি আর তাদের যাবতীয় গুণ তাঁরই প্রদত্ত। কাজেই এর কোনওটির প্রশংসা করলে তাতে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তা'আলারই প্রশংসা করা হয়। বস্তুত আল্লাহ তা'আলার যথার্থ প্রশংসা কোনও সৃষ্টির পক্ষে সম্ভব নয়, যেহেতু আল্লাহ তাআলার যাবতীয় গুণ সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান আয়ত্ত করা আমাদের সাধ্যাতীত এবং তাঁর সৃষ্টির বিপুলতা সম্পর্কেও পূর্ণাঙ্গ ধারণালাভ অসম্ভব। এ জন্যেই নবী কারীম সল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

اللهم لا تحصي ثناء عليك أنت كما أثنيت على نفسك

হে আল্লাহ! আমরা তোমার পুরোপুরি প্রশংসা করতে সক্ষম নই। তুমি নিজে নিজের যেমন প্রশংসা করেছ, তুমি তেমনই।
আল্লাহ তা'আলার যে-কোনও নি'আমত ভোগের পর তাঁর কৃতজ্ঞতাস্বরূপ আলহামদুলিল্লাহ বলা হয়ে থাকে। বিভিন্ন হাদীছে এর অনেক ফযীলত বর্ণিত হয়েছে, যেমন এক হাদীছে আছে- “ যে ব্যক্তি এক লোকমা খাবার খায় বা এক ঢোক পানি পান করে, তারপর আলহামদুলিল্লাহ বলে, তার অতীতের সমস্ত (সগীরা) গুনাহ মাফ হয়ে যায়।”
আর এ হাদীছে তো বলাই হয়েছে যে, আলহামদুলিল্লাহ মীযান ভরে ফেলে। মীযান বলতে ওই তুলাদণ্ড বোঝানো হয়েছে, যা দ্বারা বান্দার আমল পরিমাপ করা হবে। সেটি কেমন, কী তার রূপ, ইহজগতে তা অনুমান করা সম্ভব নয়। কুরআন ও হাদীছে আমাদেরকে মীযান দ্বারা পরিমাপ করার কথা অবগত করা হয়েছে। আমরা তাতে বিশ্বাস রাখি। এর বেশি খোঁড়াখুঁড়ি করার কোনও প্রয়োজন আমাদের নেই।
বান্দার আমল বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। কোনও আমল হয় অন্তর দ্বারা, যেমন অন্তরের বিশ্বাস। কোনওটি মুখের দ্বারা, যেমন যিকর ও তিলাওয়াত। কোনওটি অন্যান অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দ্বারা, যেমন পা দিয়ে মসজিদের দিকে চলা, হাত দ্বারা এতিমের মাধ্য হাত বুলানো, কান দ্বারা কুরআন তিলাওয়াত শোনা ইত্যাদি। এসব আমল কিভাবে পরিমাপ করা হবে তা আল্লাহ তা'আলাই জানেন। আমরা এর সত্যতায় বিশ্বাস রাখি বিশেষত বর্তমানকালে যখন বাতাসের ওজন মাপা হচ্ছে, শব্দের মাত্রা পরিমাপ করা যায় এবং শীত ও তাপ পরিমাপের ব্যাপারটাও আমরা সবাই জানি, তখন বান্দার যাবতীয় আমল পরিমাপ করা যায় এমন কোনও যন্ত্র সৃষ্টি করা আল্লাহর পক্ষে কঠিন হবে কেন? 'আলহামদুলিল্লাহ' কিভাবে মীযান ভরে ফেলবে তার স্বরূপও আল্লাহ তা'আলাই ভালো জানেন। হতে পারে এর ছওয়াব এত বেশি, যা মীযান ভরে ফেলবে। অথবা আলহামদুলিল্লাহকে বিশেষ কোনও রূপ দান করা হবে, যা দ্বারা মীযান ভরে যাবে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

এ হাদীছ দ্বারা হামদ ও তাসবীহের যে ফযীলত জানা গেল, তা অর্জনের লক্ষ্যে অবসর সময়ে এবং কাজের ফাঁকে ফাঁকে এসব যিকরে রত থাকা উচিত।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
জামে' তিরমিযী - হাদীস নং ৩৫১৮ | মুসলিম বাংলা