আল জামিউল কাবীর- ইমাম তিরমিযী রহঃ

৪৬. কুরআনের তাফসীর অধ্যায়

হাদীস নং: ৩১০৪
আন্তর্জাতিক নং: ৩১০৪
সূরা তাওবা
৩১০৪. মুহাম্মাদ ইবনে বাশশার (রাহঃ) ..... আনাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। হুযাইফা (রাযিঃ) উছমান ইবনে আফফান (রাযিঃ)-এর কাছে এলেন। উছমান (রাযিঃ) তখন আরমেনিয়া ও আযারবায়জান বিজয়ে ইরাকবাসীদের সঙ্গে শামবাসীদেরও যুদ্ধ-যাত্রার জন্য প্রস্তুত করছিলেন। হুযাইফা (রাযিঃ) কুরআনের (পাঠের) ক্ষেত্রে এদের পরস্পর মতানৈক্য দেখেছিলেন। তিনি উছমান (রাযিঃ)-কে বললেনঃ হে আমীরুল মু’মিনীন! ইয়াহূদ নাসারারা যেরূপ মতানৈক্যে লিপ্ত হয়েছিল, আল্লাহর কিতাবে সেরূপ মতানৈক্যে লিপ্ত হওয়ার পূর্বে এ উম্মতকে আপনি রক্ষা করুন।

তখন উছমান (রাযিঃ) এই বলে হাফসা (রাযিঃ)-এর কাছে লোক পাঠালেন যে, আপনার কাছে রক্ষিত কুরআনের লিপিবদ্ধ কপিগুলো আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিন, আমরা এটির বিভিন্ন কপি করে পুনরায় আপনার কাছে ফেরত পাঠাব।

হাফসা (রাযিঃ) কুরআনের লিপিবদ্ধ কপিগুলো উছমান ইবনে আফফান (রাযিঃ)-এর কাছে পাঠিয়ে দিলেন।

উছমান (রাযিঃ) যায়দ ইবনে ছাবিত, সাঈদ ইবনে আস, আব্দুর রহমান ইবনে হারিছ ইবনে হিশাম ও আব্দুল্লাহ্ ইবনে যুবাইর (রাযিঃ)-এর কাছে কপিগুলো পাঠিয়ে বললেন যে, তোমরা এই কপিগুলো মুসহাফে লিপিবদ্ধ কর। এই তিনজন কুরাইশী গ্রুপকে বললেনঃ তোমাদের এবং যায়দ ইবনে ছাবিতের মাঝে মতানৈক্য দেখা গেলে কুরাইশী ভাষা অনুসারে তা লিপিবদ্ধ করবে। কেননা কুরআন কুরাইশদের ভাষা অনুসারেই নাযিল হয়েছে।

যা হোক, তারা কুরআনের লিপিবদ্ধ কপিগুলো বিভিন্ন মুসহাফে লিপিবদ্ধ করেন। উছমান (রাযিঃ) বিভিন্ন দিকে তাদের কপি করা মুসহাফগুলো পাঠালেন।

যুহরী (রাহঃ) বলেনঃ খারিজা ইবনে যায়দ আমাকে বর্ণনা করেন যে, যায়দ ইবনে ছাবিত (রাযিঃ) বলেছেনঃ সূরা আহযাবের একটি আয়াত আমি খূঁজে পাচ্ছিলাম না। অথচ রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-কে তা পাঠ করতে আমি শুনেছি। সেটি হলঃ

مِنَ الْمُؤْمِنِينَ رِجَالٌ صَدَقُوا مَا عَاهَدُوا اللَّهَ عَلَيْهِ فَمِنْهُمْ مَنْ قَضَى نَحْبَهُ

মুমিনদের মধ্যে কিছু লোক আল্লাহর সঙ্গে তাদের কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করেছে। এদের কেউ কেউ শাহাদত বরণ করেছে এবং কেউ কেউ প্রতীক্ষায় রয়েছে। (৩৩ : ২৩)

পরে তালাশ করে খুযায়মা ইবনে ছাবিত কিংবা আবু খুযায়মার কাছে সেটি পেলাম এবং উক্ত সূরায় তা যুক্ত করে দিলাম।

যুহরী (রাহঃ) বলেনঃ একদিন তারাالتابوت এবংالتابوه নিয়ে মতানৈক্য করেন। কুরাইশীরা বললেনঃ التابوت যায়দ (রাযিঃ) বললেনঃالتابوه তাঁদের এ মতানৈক্যের বিষয়টি উছমান (রাযিঃ)-এর কাছে পেশ করা হলে তিনি বললেনঃ তোমরাالتابوت লিখ। কেননা কুরআন কুরাইশের ভাষায় নাযিল হয়েছে।

যুহরী বলেনঃ উবাইদুল্লাহ ইবনে উতবা বলেছেন যে, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযিঃ) যায়দ ইবনে ছাবিতের এ তৈরী কপি পছন্দ করেন নি। তিনি বলেছেনঃ হে মুসলিম সম্প্রদায়! কুরআনের মুসহাফ লিপিবদ্ধ করার কাজে আমাকে দূরে রাখা হয়েছে আর এর দায়িত্ব বহন করেছে এমন এক ব্যক্তি যে আল্লাহর কসম আমি যখন ইসলাম গ্রহণ করি তখন সে ছিল এক কাফিরের ঔরসে। (এই কথা বলে তিনি যায়দ ইবনে ছাবিতের দিকে ইঙ্গিত করেছেন)।

আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রাযিঃ) বলেছেনঃ হে ইরাকবাসী! তোমাদের কাছে যে মুসহাফগুলো রয়েছে সেগুলো লুকিয়ে রাখ। আল্লাহ্ তাআলা বলেছেনঃ

وَمَنْ يَغْلُلْ يَأْتِ بِمَا غَلَّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ

এবং কেউ অন্যায়ভাবে কিছু গোপন করলে যা সে অন্যায়ভাবে গোপন করবে কিয়ামতের দিন সে তা নিয়ে আসবে। (৩ : ১৬১) সুতরাং তোমরা তোমাদের মুসহাফসহ আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাত করতে পারবে। যুহরী বলেনঃ বিশিষ্ট সাহাবীগণের অনেকই ইবনে মাসউদ (রাযিঃ)-এর এ বক্তব্য অপছন্দ করেছেন বলে আমি সংবাদ পেয়েছি।
বুখারি

(আবু ঈসা বলেন) হাদীসটি হাসান-সহীহ। এটি হল যুহরী (রাহঃ) -এর রিওয়ায়াত। তাঁর রিওয়ায়াত ছাড়া এটি সম্পর্কে আমাদের কিছু জানা নেই।
بَابٌ: وَمِنْ سُورَةِ التَّوْبَةِ
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ مَهْدِيٍّ، حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ سَعْدٍ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ حُذَيْفَةَ، قَدِمَ عَلَى عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ وَكَانَ يُغَازِي أَهْلَ الشَّامِ فِي فَتْحِ أَرْمِينِيَّةَ وَأَذْرَبِيجَانَ مَعَ أَهْلِ الْعِرَاقِ فَرَأَى حُذَيْفَةُ اخْتِلاَفَهُمْ فِي الْقُرْآنِ فَقَالَ لِعُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ أَدْرِكْ هَذِهِ الأُمَّةَ قَبْلَ أَنْ يَخْتَلِفُوا فِي الْكِتَابِ كَمَا اخْتَلَفَتِ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى فَأَرْسَلَ إِلَى حَفْصَةَ أَنْ أَرْسِلِي إِلَيْنَا بِالصُّحُفِ نَنْسَخُهَا فِي الْمَصَاحِفِ ثُمَّ نَرُدُّهَا إِلَيْكِ فَأَرْسَلَتْ حَفْصَةُ إِلَى عُثْمَانَ بِالصُّحُفِ فَأَرْسَلَ عُثْمَانُ إِلَى زَيْدِ بْنِ ثَابِتٍ وَسَعِيدِ بْنِ الْعَاصِي وَعَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ الْحَارِثِ بْنِ هِشَامٍ وَعَبْدِ اللَّهِ بْنِ الزُّبَيْرِ أَنِ انْسَخُوا الصُّحُفَ فِي الْمَصَاحِفِ وَقَالَ لِلرَّهْطِ الْقُرَشِيِّينَ الثَّلاَثَةِ مَا اخْتَلَفْتُمْ فِيهِ أَنْتُمْ وَزَيْدُ بْنُ ثَابِتٍ فَاكْتُبُوهُ بِلِسَانِ قُرَيْشٍ فَإِنَّمَا نَزَلَ بِلِسَانِهِمْ . حَتَّى نَسَخُوا الصُّحُفَ فِي الْمَصَاحِفِ بَعَثَ عُثْمَانُ إِلَى كُلِّ أُفُقٍ بِمُصْحَفٍ مِنْ تِلْكَ الْمَصَاحِفِ الَّتِي نَسَخُوا . قَالَ الزُّهْرِيُّ وَحَدَّثَنِي خَارِجَةُ بْنُ زَيْدِ بْنِ ثَابِتٍ أَنَّ زَيْدَ بْنَ ثَابِتٍ قَالَ فَقَدْتُ آيَةً مِنْ سُورَةِ الأَحْزَابِ كُنْتُ أَسْمَعُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقْرَؤُهَا : ( مِنَ الْمُؤْمِنِينَ رِجَالٌ صَدَقُوا مَا عَاهَدُوا اللَّهَ عَلَيْهِ فَمِنْهُمْ مَنْ قَضَى نَحْبَهُ ) فَالْتَمَسْتُهَا فَوَجَدْتُهَا مَعَ خُزَيْمَةَ بْنِ ثَابِتٍ أَوْ أَبِي خُزَيْمَةَ فَأَلْحَقْتُهَا فِي سُورَتِهَا . قَالَ الزُّهْرِيُّ فَاخْتَلَفُوا يَوْمَئِذٍ فِي التَّابُوتِ وَالتَّابُوهِ فَقَالَ الْقُرَشِيُّونَ التَّابُوتُ . وَقَالَ زَيْدٌ التَّابُوهُ . فَرُفِعَ اخْتِلاَفُهُمْ إِلَى عُثْمَانَ فَقَالَ اكْتُبُوهُ التَّابُوتُ فَإِنَّهُ نَزَلَ بِلِسَانِ قُرَيْشٍ . قَالَ الزُّهْرِيُّ فَأَخْبَرَنِي عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُتْبَةَ أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ مَسْعُودٍ كَرِهَ لِزَيْدِ بْنِ ثَابِتٍ نَسْخَ الْمَصَاحِفِ وَقَالَ يَا مَعْشَرَ الْمُسْلِمِينَ أُعْزَلُ عَنْ نَسْخِ كِتَابَةِ الْمُصْحَفِ وَيَتَوَلاَّهَا رَجُلٌ وَاللَّهِ لَقَدْ أَسْلَمْتُ وَإِنَّهُ لَفِي صُلْبِ رَجُلٍ كَافِرٍ يُرِيدُ زَيْدَ بْنَ ثَابِتٍ وَلِذَلِكَ قَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْعُودٍ يَا أَهْلَ الْعِرَاقِ اكْتُمُوا الْمَصَاحِفَ الَّتِي عِنْدَكُمْ وَغُلُّوهَا فَإِنَّ اللَّهَ يَقُولُ : ( وَمَنْ يَغْلُلْ يَأْتِ بِمَا غَلَّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ) فَالْقُوا اللَّهَ بِالْمَصَاحِفِ . قَالَ الزُّهْرِيُّ فَبَلَغَنِي أَنَّ ذَلِكَ كَرِهَهُ مِنْ مَقَالَةِ ابْنِ مَسْعُودٍ رِجَالٌ مِنْ أَفَاضِلِ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم . قَالَ هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ . وَهُوَ حَدِيثُ الزُّهْرِيِّ لاَ نَعْرِفُهُ إِلاَّ مِنْ حَدِيثِهِ .
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
জামে' তিরমিযী - হাদীস নং ৩১০৪ | মুসলিম বাংলা