আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৪৮- নবীগণের আঃ আলোচনা

হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ৩৪৫৭
২০৪৭. বনী ইসরাইলের ঘটনাবলীর বিবরণ
৩২১১। ইমরান ইবনে মাইসারা (রাহঃ) .... আনাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তাঁরা (সাহাবাগণ নামাযের জামাআতে শরীক হওয়ার জন্য) আগুন জ্বালানো এবং ঘন্টা বাজানোর কথা উল্লেখ করলেন। তখনই তাঁরা ইয়াহুদী ও নাসারার কথা উল্লেখ করলেন। এরপর বিলাল (রাযিঃ)- কে আযানের শব্দগুলো দু দু বার করে এবং ইকামতের শব্দগুলো বেজোড় করে বলতে আদেশ দেয়া হল।

হাদীসের ব্যাখ্যা:

বেজোড় ইকামত সম্পর্কে আনাস রা. বর্ণিত হাদীসটির ব্যাখ্যা :

ইকামতের বাক্যগুলো একবার করে পড়ার ব্যাপারে একটি মাত্র সহীহ হাদীস আছে, যা বুখারী, মুসলিমসহ অনেক হাদীসের কিতাবে বর্ণিত হয়েছে। হাদীসটি বর্ণনা করেছেন হযরত আনাস রা.। তিনি বলেছেন:

امر بلال ان يشفع الاذان ويوتر الاقامة

অর্থাৎ বিলালকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে আযানের বাক্যগুলো জোড় বলতে, আর ইকামতের বাক্যগুলো বেজোড় বলতে। হাদীসটির বাহ্যিক অর্থ থেকে বোঝা যায়- ইকামতের বাক্যগুলো একবার করে বলতে হবে।

যারা এ হাদীসটির বাহ্যিক অর্থ অনুসারে আমল করেন তারাও কিন্তু এর উপর পুরোপুরি আমল করেন না। কেননা সকলে শুরু ও শেষে আল্লাহু আকবার দুবার করেই বলেন। এতো জোড় সংখ্যা। ইমাম নববী র. মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থে এই সমস্যার সমাধানে বলেছেন, যেহেতু আল্লাহু আকবার দুবার বললেও এক নিঃশ্বাসে বলা হয় তাই এটাকে একবারের অর্থেই ধরা হবে। জোড় ধরা হবে না। হানাফী আলেমগণ বলেন, একথা তো অন্যান্য বাক্যগুলোর ক্ষেত্রেও বলা যায়। অন্যান্য বাক্যগুলোও যদি এক নিঃশ্বাসে পড়া হয় তবে দুবার করে পড়লেও একবারই ধরা হবে, জোড় ধরা হবে না। অর্থাৎ প্রতিটি বাক্য বলা তো হচ্ছে দুবার করে। কিন্তু এক নিঃশ্বাসে বলার কারণে তাকে বেজোড় ধরা হবে। এ হিসেবে হানাফী মত আদৌ এ হাদীসের বিরোধী নয়। কেননা তাঁরা বলেছেন, সুন্নাত হলো প্রথম চার বার আল্লাহু আকবার এক নিঃশ্বাসে পড়বে। যাতে বিলাল রা. এর এ হাদীস অনুসারেও আমল হয়ে যায়।

আর যদি এ হাদীসও বাস্তবিকপক্ষেই বেজোড় অর্থে ধরা হয়, তবে বলব, উলামায়ে কেরামের অনেকের মতে,এ হাদীসটি মানসূখ। অর্থাৎ এ হাদীসে যে একবার করে বলতে বলা হয়েছে, এটি পূর্বে ছিল। পরবর্তীকালে এ আদেশটি রহিত হয়ে গেছে। যার প্রমাণ পূর্ববর্তী হাদীসগুলো। ইমাম তাহাবী র. বলেছেন:

ثم ثبت هو من بعد على التثنية في الإقامة بتواتر الآثار في ذلك فعلم أن ذلك هو ما أمر به.

অর্থাৎ পরবর্তীতে বিলাল রা. ইকামতের বাক্যগুলো দুবার করেই বলতেন; যা বহু সংখ্যক হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। বোঝা গেল তিনি পরে এই নিয়ম অনুসরণের জন্যই আদিষ্ট হয়েছিলেন।

খোদ আল্লামা শাওকানী র. -যিনি নিজেও লা-মায্হাবী ছিলেন- আবূ মাহযূরা রা. এর হাদীসের ভিত্তিতে বিলাল রা. এর একবার বলার আমলকে মানসূখ বা রহিত বলে মত প্রকাশ করেছেন। তাঁর প্রসিদ্ধ গ্রন্থ নায়লুল আওতারে তিনি লিখেছেন-

وهو متأخر عن حديث بلال الذي فيه الأمر بإيتار الإقامة لأنه بعد فتح مكة لأن أبا محذورة من مسلمة الفتح وبلال أمر بإفراد الإقامة أول ما شرع الأذان فيكون ناسخا . وقد روى أبو الشيخ ( أن بلالا أذن بمنى ورسول الله صلى الله عليه وآله وسلم ثَمَّ مرتين مرتين وأقام مثل ذلك ) إذا عرفت هذا تبين لك أن أحاديث تثنية الإقامة صالحة للاحتجاج بها لما أسلفناه وأحاديث إفراد الإقامة وإن كانت أصح منها لكثرة طرقها وكونها في الصحيحين لكن أحاديث التثنية مشتملة على الزيادة فالمصير إليها لازم لا سيما مع تأخر تاريخ بعضها كما عرفناك .

অর্থাৎ হযরত বিলাল রা. থেকে বর্ণিত একবার বলার আদেশ সম্বলিত হাদীসটি আগের এবং হযরত আবূ মাহযূরা রা. এর এ হাদীস তার পরের। কারণ এটি মক্কা বিজয়ের পরের ঘটনা। আবূ মাহযূরা রা. মক্কা বিজয়কালে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। আর হযরত বিলাল রা.কে বেজোড় শব্দে ইকামত দিতে বলা হয়েছিল প্রথম যখন আযানের বিধান দেওয়া হয় সেই সময়। কাজেই হযরত আবূ মাহযূরা রা.এর হাদীস এটাকে রহিত করে দিয়েছে। তাছাড়া আবুশ্ শায়খ র. বর্ণনা করেছেন যে, বিলাল রা. মিনায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপস্থিতিতে আযান ও ইকামতের বাক্যগুলো দুবার করে বলেছেন।

এ আলোচনা থেকে নিশ্চয়ই পাঠকের সামনে সুস্পষ্ট হয়ে গেছে যে, ইকামতের বাক্যগুলো দুবার করে বলার হাদীসগুলো প্রমাণস্বরূপ পেশ করার উপযুক্ত। আর একবার করে বলার হাদীস যদিও অধিক সনদে ও বুখারী মুসলিমে বর্ণিত হওয়ার কারণে অধিক সহীহ, কিন্তু দুবার বলার হাদীসগুলোতে বাড়তি বিষয় রয়েছে। তাই এগুলো অনুসারে আমল করাই উচিত্র্র। বিশেষত একারণেও যে, এর কোনও কোনওটি পরবর্তী কালের। নায়লুল আওতার ২/২২

পরিশেষে একটি কথা বলতে চাই। ইকামতের বাক্যগুলো একবার করে বলা হবে না দুবার করে, এ নিয়ে ফকীহ ইমামগণের মধ্যেও দ্বিমত ছিল। কিন্তু ঝগড়া ছিল না। বরং ইমাম ইবনু আব্দিল বার র. উল্লেখ করেছেন যে, ইমাম আহমাদ, ইসহাক, দাউদ যাহেরী ও ইবনে জারীর তাবারী র. প্রমুখ এ এখতেলাফকে মুবাহ এখতেলাফ আখ্যা দিয়েছেন, এবং বলেছেন যেভাবেই করুক জায়েয হবে। এমনকি লা-মাযহাবী আলেম তিরমিযী শরীফের ভাষ্যকার মুবারকপুরী সাহেবও লিখেছেন,

ما ذهب إليه الإمام أحمد وإسحاق بن راهويه وغيرهما من جواز إفراد الإقامة وتثنيتها هو القول الراجح المعمول عليه بل هو المتعين عندي.

একবার করে বলা বা দুবার করে বলা উভয়টিই জায়েয বলে আহমাদ ও ইসহাক ইবনে রাহূয়াহ যে মত অবলম্বন করেছেন সেটিই অগ্রগণ্য ও নির্ভরযোগ্য মত। এমনকি আমার দৃষ্টিতে সেটিই সুনিশ্চিত্র্র।

ইকামতের বাক্যগুলো দু’বার করে বলা সুন্নত:

প্রতি ফরজ নামাযের আগে ইকামত দেওয়া সুন্নতে মুআক্কাদা। ইকামতের বাক্যসমূহ নিম্নরূপ—

اللَّهُ أَكْبَرُ ، اللَّهُ أَكْبَرُ ، اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ ، أَشْهَدُ أَنْ لاَ إلَهَ إِلاَّ اللَّهُ ، أَشْهَدُ أَنْ لاَ إلَهَ إِلاَّ اللَّهُ ، أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ ، أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ ، حَيَّ عَلَى الصَّلاَةِ ، حَيَّ عَلَى الصَّلاَةِ ، حَيَّ عَلَى الْفَلاَحِ ، حَيَّ عَلَى الْفَلاَحِ ، قَدْ قَامَتِ الصَّلاَةُ ، قَدْ قَامَتِ الصَّلاَةُ ، اللَّهُ أَكْبَرُ ، اللَّهُ أَكْبَرُ ، لاَ إلَهَ إِلاَّ اللَّهُ

উপরে যেমন লেখা হল ইকামতের বাক্যসমূহ এভাবে জোড়ায় জোড়ায় দেওয়া সুন্নত। নিচে এর দলিল পেশ করা হল।

জোড় শব্দে ইকামত দেওয়ার দলিল

১. হযরত আব্দুর রাহমান ইবনে আবী লায়লা র. বলেন-

حَدَّثَنَا أَصْحَابُ مُحَمَّد صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ؛ أَنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ زَيْدٍ الأَنْصَارِيَّ جَاءَ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , فَقَالَ : يَا رَسُولَ اللهِ ، رَأَيْتُ فِي الْمَنَامِ كَأَنَّ رَجُلاً قَامَ وَعَلَيْهِ بُرْدَانِ أَخْضَرَانِ عَلَى جِذْمَةِ حَائِطٍ ، فَأَذَّنَ مَثْنَى ، وَأَقَامَ مَثْنَى ، وَقَعَدَ قَعْدَةً ، قَالَ : فَسَمِعَ ذَلِكَ بِلاَلٌ ، فَقَامَ فَأَذَّنَ مَثْنَى ، وَأَقَامَ مَثْنَى ، وَقَعَدَ قَعْدَةً. رواه ابن ابى شيبة فى المصنف) ২১৩১(
واخرجه الطحاوى ১/১০০-১০২ و ابن خزيمة فى صحيحه ৩৮০ والبيهقى ১/৪২০ من طريق ابن ابى شيبة. قال ابن حزم الظاهرى : هذا اسناد فى غاية الصحة. وقال الماردينى فى الجوهر النقى : رجاله على شرط الصحيح.

অর্থ: মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন যে, আব্দুল্লাহ ইবনে যায়দ আল আনসারী রা. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসলেন এবং বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি স্বপ্নে দেখলাম, এক ব্যক্তি যার পরনে ছিল সবুজ রং এর চাদর ও লুঙ্গি, যেন দেয়ালের এক পাশে দাঁড়িয়ে জোড়া জোড়া শব্দে আযান দিলেন এবং ইকামতও দিলেন জোড়া জোড়া শব্দে। আর (আযান ও ইকামতের মাঝখানে) কিছু‏ক্ষণ বসে রইলেন। তিনি বলেন, পরে বিলাল রা. তা শুনলেন এবং তিনিও জোড়া জোড়া শব্দে আযান দিলেন এবং জোড়া জোড়া শব্দে ইকামত দিলেন। আর (আযান ও ইকামতের মাঝখানে) একটু বসলেন।

ইবনে আবী শায়বা, আল মুসান্নাফ, হাদীস নং ২১৩১; তাহাবী. ১/৪২০; সহীহ ইবনে খুযাইমা হা.৩৮০; সুনানে কুবরা, বাইহাকী ১/৪২০

ইবনে হায্ম রহ. বলেছেন, এ হাদীসটির সনদ সর্বোচ্চ মানের সহীহ। আলাউদ্দীন মারদীনী র. বলেছেন-এটি সহীহ হাদীসের মানোত্তীর্ণ।

২. আব্দুল্লাহ ইবনে যায়দ রা. থেকে বর্ণিত-

قال كان أذان رسول الله صلى الله عليه و سلم شَفْعًا شَفْعًا في الأذان والإقامة. رواه الترمذى-১৯৪.

অর্থ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আযান ও ইকামত ছিল জোড়া জোড়া শব্দে। তিরমিযী, হা. ১৯৪

৩. আব্দুর রাহমান ইবনে আবী লায়লা র. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

كَانَ عَبْدُ اللهِ بْنُ زَيْدٍ الأَنْصَارِيُّ مُؤَذِّنُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم يَشْفَعُ الأَذَانَ وَالإِقَامَةَ. رواه ابن ابى شيبة فى المصنف رقم ২১৫১

অর্থ: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুয়ায্যিন আব্দুল্লাহ ইবনে যায়দ আল আনসারী রা. আযান ও ইকামত জোড়া জোড়া শব্দে দিতেন। মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ২১৫১

৪. ইবনে আবী লায়লা র. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

حَدَّثَنَا أَصْحَابُنَا ؛ أَنَّ رَجُلاً مِنَ الأَنْصَارِ جَاءَ فَقَالَ : يَا رَسُولَ اللهِ ، إِنِّي لَمَّا رَجَعْتُ الْبَارِحَةَ وَرَأَيْتُ مِنَ اهْتِمَامِكَ ، رَأَيْتُ كَأَنَّ رَجُلاً قَائِمًا عَلَى الْمَسْجِدِ عَلَيْهِ ثَوْبَانِ أَخْضَرَانِ فَأَذَّنَ ، ثُمَّ قَعَدَ قَعْدَةً ، ثُمَّ قَامَ فَقَالَ مِثْلَهَا ، غَيْرَ أَنَّهُ قَالَ : قَدْ قَامَتِ الصَّلاَةُ. رواه ابن ابى شيبة فى المصنف رقم-২১৩৭ وابو داود رقم ৫০৬ كلاهما من طريق شعبة عن عمرو بن مرة به.

অর্থ: আমাদের উস্তাদগণ (সাহাবীগণ) আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন যে, আনসার গোতের জনৈক ব্যক্তি এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! গতকাল যখন আমি ফিরে গেলাম এবং আপনার পেরেশানী দেখলাম, তখন আমি স্বপ্নে দেখলাম একজন লোক যেন মসজিদে দাঁড়িয়ে আছে। তার পরিধানে ছিল সবুজ রং এর দুটি কাপড়। তিনি আযান দিলেন। পরে একটু বসলেন। অতঃপর আবার দাঁড়ালেন এবং আগের মতোই বললেন। শুধু এবার قَدْ قَامَتِ الصَّلاَةُ বেশি বললেন। মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ২১৩৭; আবূ দাউদ, হাদীস নং ৫০৬।

৫. আবু মাহযূরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন-

أن النبي صلى الله عليه وسلم علمه الأذان تسع عشرة كلمة والإقامة سبع عشرة كلمة قال أبو عيسى هذا حديث حسن صحيح. اخرجه الترمذى رقم- ১৯২ والطيالسى رقم ১৩৫৪ والدارمى ১১৯৬، ১১৯৭ والنسائى ৬৩০

অর্থ: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে আযানের কালিমা (বাক্য) ১৯ টি ও ইকামতের কালিমা ১৭ টি শিখিয়েছেন। তিরমিযী, হাদীস নং ১৯২; আবূ দাউদ তায়ালিসী, হাদীস নং ১৩৫৪; দারিমী, হাদীস নং ১১৯৬, ১৯৯৭; নাসাঈ, হাদীস নং ৬৩০। ইমাম তিরমিযী বলেছেন, হাদীসটি সহীহ ।

৬. আবূ মাহযূরা রা. বলেন-

عَلَّمَنِي النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم الأَذَانَ تِسْعَ عَشْرَةَ كَلِمَةً وَالإِقَامَةَ سَبْعَ عَشْرَةَ كَلِمَةً ، الأَذَانُ : . . . . وَالإِقَامَةُ : اللَّهُ أَكْبَرُ ، اللَّهُ أَكْبَرُ ، اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ ، أَشْهَدُ أَنْ لاَ إلَهَ إِلاَّ اللَّهُ ، أَشْهَدُ أَنْ لاَ إلَهَ إِلاَّ اللَّهُ ، أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ ، أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ ، حَيَّ عَلَى الصَّلاَةِ ، حَيَّ عَلَى الصَّلاَةِ ، حَيَّ عَلَى الْفَلاَحِ، حَيَّ عَلَى الْفَلاَحِ ، قَدْ قَامَتِ الصَّلاَةُ ، قَدْ قَامَتِ الصَّلاَةُ ، اللَّهُ أَكْبَرُ ، اللَّهُ أَكْبَرُ ، لاَ إلَهَ إِلاَّ اللَّهُ.اخرجه ابن ابى شيبة رقم- ২১৩২ وابو داود رقم ৫০২ كلاهما من طريق همام عن عامر الاحول. وفى طريق لابى داود وعلمنى الاقامة مرتين. رقم৫০১

অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে আযানের কালিমা শিখিয়েছেন ১৯ টি , আর ইকামতের কালিমা শিখিয়েছেন ১৭ টি। আযানের কালিমাগুলি হলো ..., আর ইকামতের কালিমাগুলি হলো- আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার। আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার। আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্, আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ। হাইয়্যা আলাস্ সালাহ, হাইয়্যা আলাস্ সালাহ। হাইয়্যা আলাল্ ফালাহ, হাইয়্যা আলাল্ ফালাহ। কাদ্ কামাত্রিস্ সালাহ, কাদ্ কামাত্রিস্ সালাহ। আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ২১৩২; আবূদাউদ, হাদীস নং ৫০২। এ হাদীসটি মুসলিম শরীফেও উদ্ধৃত হয়েছে। তবে সেখানে ইকামতের উল্লেখ আসে নি। আর আযানের কালিমাগুলোর মধ্যে শুরুতে আল্লাহু আকবার চারবারের স্থানে দুবার উল্লেখ করা হয়েছে। বর্ণনাকারীর সংক্ষেপায়নের কারণে এমনটি ঘটেছে। (দ. মুসলিম শরীফ, হাদীস : ৩৭৯)

আবূ দাউদ শরীফের আরেকটি বর্ণনায় আছে- আবু মাহযূরা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ইকামতের কালিমা দু‘বার করে বলা শিখিয়েছেন। (হাদীস নং ৫০১)

৭. আসওয়াদ ইবনে ইয়াযীদ র. থেকে বর্ণিত আছে যে,

أن بلالا كان يثني الأذان ويثني الإقامة.اخرجه عبد الرزاق ১/৪৬২ والطحاوى ১/১০২ والدارقطنى ১/২৪২ كلهم عن معمر عن حماد عن إبراهيم عنه.واخرجه عبد الرزاق ايضارقم- ১৭৯১ عن الثوري عن أبي معشر عن إبراهيم عن الأسود عن بلال قال كان أذانه وإقامته مرتين مرتين. قال الماردينى فى الجوهر النقى:هذا سند جيد.

অর্থ: বিলাল রা. আযান (এর কালিমাগুলি) দু‘বার করে বলতেন, ইকামতও দু‘বার করে বলতেন। মুসান্নাফে আব্দুর রায্যাক, ১ খ, ৪৬২পৃ; তাহাবী, ১ খ, ১০২ পৃ;।

আব্দুর রায্যাক অন্য একটি সনদে আসওয়াদ র. থেকে বর্ণনা করেছেন যে, বিলাল রা. আযান ও ইকামত দুবার দুবার করে বলতেন। (দ. ১/ ৪৬৩) আল্লামা মারদীনী র. বলেছেন-এটি একটি উত্তম সনদ।

৮. সুওয়ায়দ ইবনে গাফালা বলেন,

سمعت بلالا يؤذن مثنى ويقيم مثنى اخرجه الطحاوى ১/১০১

অর্থঃ আমি বিলাল রা. কে আযান ও ইকামত দুবার দুবার করে বলতে শুনেছি। তাহাবী, ১/১০১

৯. ইবরাহীম নাখায়ী বলেন,

إن بلالا كان يثني الأذان والإقامة. أخرجه ابن أبي شيبة (২১৫৫) قال: حدثنا أبو أسامة (حماد بن أسامة) عن سعيد (ابن أبي عروبة) عن أبي معشر (زياد بن كليب) عنه.

বিলাল রা. আযান ও ইকামত দিতেন জোড়া জোড়া বাক্যে। ইবনে আবী শায়বা (২১৫৫)

১০.হযরত আবূ জুহায়ফা রা. থেকে বর্ণিত আছে যে,

ان بلالا كان يؤذن للنبى صلى الله عليه وسلم مثنى مثنى ويقيم مثنى مثنى. اخرجه الطبرانى فى الكبير ৯/১৯২ والدارقطنى ১/২৪২ وفى اسناده زياد بن عبد الله البكائى مختلف فيه واحتج به مسلم.

অর্থ: বিলাল রা. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য আযান দিতেন জোড় শব্দে, ইকামতও দিতেন জোড় শব্দে। তাবারানী, ৯/১৯২ দারাকুতনী, ১/২৪২

১০. হাজান্না ইবনে কায়স থেকে বর্ণিত আছে যে,

أَنَّ عَلِيًّا كَانَ يَقُولُ : الأَذَانُ مَثْنَى وَالإِقَامَةُ ، وَأَتَى عَلَى مُؤَذِّنٍ يُقِيمُ مَرَّةً مَرَّةً ، فَقَالَ : أَلاَ جَعَلْتَهَا مَثْنَى ؟ لاَ أُمَّ لِلْآخِرِ. اخرجه ابن ابى شيبة رقم-২১৪৯

অর্থ: আলী রা. বলতেন, আযান ও ইকামতের বাক্যগুলো দুবার করে বলতে হবে। তিনি একজন মুয়াযযিনকে একবার একবার করে ইকামত বলতে শুনলেন। এবং তাকে বললেন, দুবার করে বললে না কেন? হতভাগার মা না থাক্। মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ২১৪৯।

১১. উবায়দ র. বলেন,

ان سلمة كان يثنى الاقامة . اخرجه الطحاوى ১/১০২

অর্থ: সালামা (ইবনুল আক্ওয়া) রা. ইকামতের শব্দগুলো দুবার করে বলতেন। তাহাবী, ১/১০২

১২. আবূ ইসহাক র. বলেন,

كَانَ أَصْحَابُ عَلِيٍّ ، وَأَصْحَابُ عَبْدِ اللهِ يَشْفَعُونَ الأَذَانَ وَالإِقَامَةَ. اخرجه ابن ابى شيبة رقم-২১৫৪

অর্থ: হযরত আলী রা. ও আব্দুল্লাহ ইবনে মাস্উদ রা. এর শিষ্যগণ আযান ও ইকামতের বাক্যগুলি দুবার দুবার করে বলতেন। মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ২১৫৪।

১৩. মুজাহিদ র. থেকে বর্ণিত,

ذكر له الإقامة مرة مرة فقال هذا شيء قد استخفته الأمراء الإقامة مرتين مرتين.رواه عبد الرزاق فى المصنف رقم-১৭৯৩

অর্থ: তার নিকট ইকামতের বাক্যগুলো একবার করে বলার পসঙ্গ তুলে ধরা হলে তিনি বললেন, (বনি উমাইয়্যার) শাসকরা এটা সংক্ষেপ করেছে। ইকামতের শব্দগুলো হবে দুবার করে। মুসান্নাফে আব্দুর রায্যাক, ১/৪৬৩; তাহাবী, ১/১০১

১৪. ইবরাহীম নাখায়ী রা. বলেন,

لاَ تَدَعُ أَنْ تُثَنِّيَ الإِقَامَةَ. اخرجه ابن ابى شيبة رقم- ২১৫৩ والإمام محمد فى كتاب الحجة على اهل المدينة ص.২২

অর্থ: আযান ও ইকামতের শব্দগুলো দুবার দুবার করে বলতে ছাড়বে না। মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ২১৫৩; ইমাম মুহাম্মাদ কৃত কিতাবুল হুজ্জাহ আলা আহলিল মাদীনা, পৃ. ২২।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
সহীহ বুখারী - হাদীস নং ৩২১১ | মুসলিম বাংলা